প্রতিবেদন : লড়াই করে সাকেত গোখেলের জামিন ছিনিয়ে আনল তৃণমূল কংগ্রেস। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশে শুক্রবার সকালে পাঁচ সদস্যের একটি ডেলিগেশন টিম গুজরাত পৌঁছে যায়। সঙ্গে ছিলেন একজন আইনজীবী ও সাকেতের মা। এদিন গুজরাতের আমেদাবাদ আদালতে দলের জাতীয় মুখপাত্র সাকেত গোখেলের জামিন মঞ্জুর করেন বিচারক। এর আগে তিনদিনে দু’বার সাকেতকে গ্রেফতার করা হয়। কেন এই গ্রেফতার মোদি-শাহর পুলিশ তার কোনও সদুত্তর দিতে পারেনি বলে জানান সাংসদ ডাঃ শান্তনু সেন, যিনি এই ডেলিগেশন টিমের সদস্য। বাকিরা হলেন সাংসদ দোলা সেন, খলিলুর রহমান, অসিত মাল ও সুনীল মণ্ডল। সাংসদ দোলা সেন বলেন, বিজেপি যা চাইবে সেটাই আইন। এটা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার চূড়ান্ত নিদর্শন।
আরও পড়ুন-১৫ বছর পলাতক থাকার পর দিঘা থেকে গ্রেফতার খুনি
দিন চারেক আগে দিল্লি থেকে রাজস্থান যাওয়ার পথে বিমানবন্দরেই সাকেতকে গ্রেফতার করে গুজরাত নিয়ে যাওয়া হয়। ভয়াবহ মোরবি সেতু নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ট্যুইট করাতেই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। এরপরই তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনকে সবটা অবহিত করা হয়। তৃণমূলের কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সাকেতের গ্রেফতারের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে ট্যুইট করেন। তিনি লিখেছেন, তিনদিনের ব্যবধানে দু’বার সাকেত গোখেলকে গ্রেফতার করল গুজরাত পুলিশ। যেখানে এখনও আদর্শ আচরণ বিধি কার্যকর রয়েছে। নির্বাচন কমিশন পুরোপুরি আত্মসমর্পণ করেছে এবং বিজেপির আজ্ঞাবহ হিসেবে কাজ করছে। গণতন্ত্রকে হত্যা করা হচ্ছে। এর আগে সাকেতের গ্রেফতারের নিন্দা করেছিলেন দলনেত্রী ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার দলের তরফে কমিশনে চিঠি দিয়ে বলা হয়েছে, অবিলম্বে সাকেত গোখেলকে মিথ্যা ভয় দেখিয়ে গ্রেফতারের ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের নির্দেশ দিতে হবে৷ এইভাবে তাঁকে মানসিক ও শারীরিকভাবে হেনস্তা করার প্রবণতা বন্ধ করতে হবে। একইসঙ্গে বাহুবল কাজে লাগিয়ে এই ঘটনায় যুক্ত পুলিশ আধিকারিকদের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ করতে হবে। স্মারকলিপিতে স্বাক্ষর করেছেন রাজ্যসভায় তৃণমূলের দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন এবং মুখ্যসচেতক সুখেন্দুশেখর রায় এবং রাজ্যসভার সাংসদ মৌসম বেনজির নুর, লোকসভার মুখ্যসচেতক কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং প্রবীণ সাংসদ সৌগত রায়।
আরও পড়ুন-বিয়েবাড়িতে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ, মৃত একাধিক, আহত ৬০
এদিকে এদিন সংসদে সাকেত গোখেলকে পরপর দু’বার গ্রেফতারের প্রতিবাদে সরব হন তৃণমূল সাংসদরা। সাকেতের গ্রেফতারের বিরুদ্ধে রাজ্যসভায় জিরো আওয়ারে সরব হন সাংসদ জহর সরকার। সেই সময় সভা পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন রাজ্যপাল এবং রাজ্যসভার চেয়ারম্যান জগদীপ ধনকড়। জহর সরকার বলেন, ‘‘আমাদের জাতীয় মুখপাত্র সাকেত গোখেলকে গ্রেফতার করে গুজরাত নিয়ে যাওয়া হয়েছে।” চেয়ারম্যান এবং সংসদের থেকে সাকেতের গ্রেফতার নিয়ে ন্যায়বিচারের দাবি জানান তিনি।
গুজরাত পৌঁছে সাকেতের আইনজীবী ইজাজ কুরেশির হাতে মামলা সংক্রান্ত নথিপত্র তুলে দেন তৃণমূল সাংসদরা। তারপর মোরবি রওনা হন তাঁরা। সেখানে পৌঁছে মোরবি থানায় স্মারকলিপি জমা দেন তৃণমূল সাংসদরা। হাতের পোস্টারে লেখা ছিল, সাকেতের পাশে রয়েছে তৃণমূল। ভয় পেয়েছে বিজেপি, মোরবির ঘটনায় কোনও গ্রেফতার নয়, সাকেতকে গ্রেফতার করা হল।
আরও পড়ুন-সেই মেসিই আজ ভরসা, রণকৌশল তৈরি ভ্যান গলের
সাকেত গোখেলের মা নীলা গোখেলের সঙ্গে দেখা করেন তৃণমূল সাংসদরা। তৃণমূলের সংসদীয় প্রতিনিধি দলকে নীলা গোখেল বলেন, আমি এখানে সাকেত গোখেলের মা নই। আমি তৃণমূলের মুখপাত্রের মা। আমার ছেলে অভিযুক্ত কারণ, সে সত্যি বলেছে। তারজন্য আমি গর্বিত। পুলিশের ভ্যানে সাকেতকে চারঘণ্টার সড়কপথে মোরবি থেকে আমেদাবাদ নিয়ে যাওয়া হয়। পুলিশ ভ্যানের পিছনেই ছিলেন তাঁর মা নীলা গোখেল।
আরও পড়ুন-তৃণমূল সোশ্যাল মিডিয়া সেল আরও শক্তিশালী হচ্ছে
জামিনের পর সাকেতকে সঙ্গে নিয়ে ফেরার পথে সাংসদ ডাঃ শান্তনু সেন তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা এখানকার এসপি অফিসে বসে কথা বলতে গিয়ে বুঝলাম কেন আমাদের জাতীয় মুখপাত্র সাকেত গোখেলকে গ্রেফতার করা হল তার কোনও উত্তরই ওদের কাছে নেই। বিজেপির মতো স্বৈরাচারী-ফ্যাসিস্ট সরকার না থাকলে এটা করা যায় না। সাংসদ দোলা সেনের কথায়, মোদি হ্যায় তো মুমকিন হ্যায়। ওদের যা মর্জি সেটাই আইন। মোরবির ভয়াবহ সেতু দুর্ঘটনার পরও কেউ গ্রেফতার হল না। অথচ প্রতিবাদ করে ট্যুইট করায় সাকেতকে গ্রেফতার করা হল। ওরা জোর করে ওকে আটকে রেখেছিল। কেন ১২৫ ধারা দেওয়া হয়েছিল? আমরা আজ না পৌঁছলে সাকেতকে ওরা আাদালতেও হাজির করাত না। এতটাই প্রতিহিংসাপরায়ণ বিজেপি।