বিদেশ বোস: আর্জেন্টিনা ডাচ চ্যালেঞ্জে নামার আগেই নেইমারদের কাঁদিয়ে বিশ্বকাপের শেষ চারে জায়গা করে নিয়েছিল ক্রোয়েশিয়া। বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা ব্রাজিল ভক্তদের হৃদয় ভেঙেছিল। বাঙালিও বিশ্বকাপের সময় ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা নিয়ে দু’ভাগ হয়ে যায়। কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে ব্রাজিলের বিদায়ের পর আমরা তাকিয়ে ছিলাম লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে কী করে, তা দেখার জন্য।
কিন্তু শেষ আটের লড়াইয়ে মেসি ম্যাজিকে আর্জেন্টিনা ২-০ গোলে এগিয়ে গিয়েও নির্ধারিত সময়ের খেলা ২-২ গোলে শেষ হয়। নিজে গোল করে, সতীর্থকে দিয়ে গোল করিয়ে দলের জয় প্রায় নিশ্চিত করে দিয়েছিল মেসি।
আরও পড়ুন-রাজ্যসভায় পেশ অভিন্ন দেওয়ানি বিধি বিল, তৃণমূলসহ বিরোধীদের ক্ষোভের মুখে সরকার
কিন্তু শেষ দিকে আর্জেন্টিনার ভুলের সুযোগ নিয়ে দুর্দান্তভাবে লড়াইয়ে ফিরে খেলায় সমতা ফেরায় নেদারল্যান্ডস। শেষ পর্যন্ত অতিরিক্ত সময়ে গড়াল খেলা। সুপারসাব উইঘর্স্ট জোড়া গোল করে কমলাবাহিনীকে ম্যাচে ফিরিয়ে নায়ক। এর কৃতিত্ব ডাচ কোচ ভ্যান গলের। যদিও শেষ হাসি আর্জেন্টিনার। টাই ব্রেকারে ৪-৩ গোলে নেদারল্যান্ডসকে হারাল মেসিরা। টাই ব্রেকারে জয়ের নায়ক আর্জেন্টিনার গোল কিপার মার্টিনেজ।
নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে দাপটেই শুরু করেছিল লিওনেল স্কালোনির দল। কিন্তু অভিজ্ঞ ডাচ কোচ লুইস ভ্যান গল যেভাবে রণনীতি সাজিয়েছিলেন, তাতে মেসিদের কাজটা সহজ ছিল না। ৩-৪-২-১ ফর্মেশনে দল সাজিয়েছিলেন ডাচ কোচ। দুই উইংকে সচল রেখে রক্ষণ জমাট রাখছিল নেদারল্যান্ডস।
আরও পড়ুন-কোর্টে লড়াই পরাস্ত বিজেপি, মোরবিতে সাকেতের জামিন
যে কারণে আর্জেন্টিনা বল দখলে রেখে শুরু থেকে বেশি আক্রমণে গেলেও ভার্জিল ভ্যান ডাইকের নেতৃত্বে থাকা ডাচ রক্ষণকে টলাতে পারেনি। ডি জং, ডি রুনরা নিচে নেমে এসে ডিফেন্সিভ স্ক্রিন তৈরি করছিল। তাই শুরুতে কিছুতেই গোলের লকগেট খুলতে পারছিল না আর্জেন্টিনা। তার মধ্যেই বার তিনেক ডেনজেল ডেমফ্রিস, মেমফিস ডিপেরা আক্রমণ তুলে এনে আর্জেন্টিনা রক্ষণকে চাপে ফেলেছে।
কিন্তু এই দলে যে একটা ম্যাজিশিয়ান রয়েছে। সেই ম্যাজিশিয়ান মেসিই শেষ পর্যন্ত গোলের দরজা খুলে ফেলে। অথচ ম্যাচের প্রথম ২৫-৩০ মিনিট মেসিকে সেভাবে বল ধরতেই দেয়নি ডাচরা। একজন ওর গায়ের সঙ্গে সর্বক্ষণ সেঁটে থাকছিল। ডাবল কভারিংয়ে আরও এক বা দু’জন চলে আসছিল। কিন্তু মেসির মতো বিশ্বসেরা ফুটবলারকে বেশিক্ষণ আটকে রাখা যে যায় না, সেটা আরও একবার প্রমাণিত হল। খেলার ৩৫ মিনিটে সেই মেসি ম্যাজিকেই এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। প্রায় ৩০ গজ দূরে বল ধরে মেসি। ঘাড়ের কাছে প্রতিপক্ষের চার ডিফেন্ডারকে নিয়ে সামনে এগিয়ে যায়। এর পর ডিফেন্স চেরা এমন একটা পাস বাড়াল মেসি, সেখান থেকে মোলিনার গোল করা ছাড়া আর কোনও রাস্তা ছিল না। গোলের ঠিকানা লেখা পাসটা থালায় সাজিয়ে দিয়েছিল মেসি। বল ধরে আগুয়ান ডাচ গোলরক্ষক নোপার্টের ডান দিক দিয়ে বল জালে জড়িয়ে দেয় মোলিনা। এর পর বার বার ডাচ চক্রব্যূহ ভেদ করে বেরিয়ে আমাদের মুগ্ধ করল মেসি। প্রথমার্ধে নিজেই গোলের খাতায় নাম লেখাতে পারত আর্জেন্টিনার অধিনায়ক। বক্সের উপর পিছন দিক থেকে ঘুরে যে শটটা নিয়েছিল মেসি সেটা একটু সাইডে থাকলেই বল গোলরক্ষকের হাতে না গিয়ে জালে জড়াত।
আরও পড়ুন-১৫ বছর পলাতক থাকার পর দিঘা থেকে গ্রেফতার খুনি
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে গোল শোধের চেষ্টায় মরিয়া হয় নেদারল্যান্ডস। কোডি গাকপোকে উপরে তুলে এনে আক্রমণে ঝাঁঝ বাড়ানোর চেষ্টা করে তারা। কিন্তু আর্জেন্টিনার বক্সে বিপদ ঘটেনি। বরং দ্রুত ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় স্কালোনির ছেলেরা। নেতৃত্বে সেই দুরন্ত মেসি। তাঁর পাস থেকে গোলের সুযোগ নষ্ট করেন ম্যাক আলিস্টার। ৬৩ মিনিটে মেসির ফ্রি-কিক অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। ৭১ মিনিটে দ্বিতীয় গোল পেয়ে যায় আর্জেন্টিনা। আকুনাকে বক্সের মধ্যে ফাউল করে ডামফ্রিস। পেনাল্টি থেকে দুর্দান্ত শটে গোল করে মেসি। বিশ্বকাপের আসরে দেশের জার্সিতে ১০ গোল করে ছুঁয়ে ফেলে গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতাকে। কিন্তু খেলার শেষ লগ্নে ম্যাচে ফেরে ডাচরা। ৮৩ মিনিটে একটি গোল শোধ করে নেদারল্যান্ডস। সুপারসাব উইঘর্স্ট হেডে গোল করে। ইনজুরি টাইমে উইঘর্স্ট আরও একটি গোল করে খেলায় সমতা ফেরায়।