প্রতিবেদন : দেশের সীমান্ত এলাকার সুরক্ষা মজবুত করতে বিএসএফ ও রাজ্য প্রশাসনের মধ্যে সমন্বয় বাড়ানোর ওপরে জোর দিচ্ছে কেন্দ্র। সেই কাজে সফল হতে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরামর্শ মেনে নিল কেন্দ্রের মোদি সরকার। মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শে এবার বিএসএফকে আরও নমনীয় হওয়ার নির্দেশ দিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পৌরোহিত্যে শনিবার নবান্ন লাগোয়া সভাঘরে এরাজ্য সহ পূর্বের মোট চার রাজ্যকে নিয়ে পূর্বাঞ্চলীয় পরিষদের বৈঠক বসে। সেই বৈঠকে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। যার মধ্যে অন্যতম সীমান্ত সুরক্ষায় কেন্দ্রীয় বাহিনী ও রাজ্য পুলিশের মধ্যে সমন্বয় বৃদ্ধি।
আরও পড়ুন-তাঁতশিল্পীদের নিয়ে অভিষেকের ভাবনা
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, বৈঠকে এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে ঔদ্ধত্য ত্যাগ করে আরও নমনীয় হতে হবে। রাজ্য পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে কাজ করতে হবে। তবেই এই সমন্বয় সম্ভব। মুখ্যমন্ত্রীর এই মতকে সমর্থন জানান কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এরপরেই তিনি বৈঠকে উপস্থিত বিএসএফের ডিজিকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে অমিত শাহ বৈঠকে উপস্থিত সব রাজ্যের মন্ত্রী ও আমলাদের বলেন, সীমান্ত রক্ষার দায়িত্ব কেবলমাত্র সীমান্তরক্ষী বাহিনীর নয়। দায়িত্ব নিতে হবে রাজ্য সরকারকেও। এদিকে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিভিন্ন রাজ্যের সীমান্তে ফেন্সিং ও সেক্টর অফিস তৈরি করার জন্য মাত্রাতিরিক্ত জমি চাইছে বলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বৈঠকে অভিযোগ করেন। শাহ বিএসএফকে এই বিষয়টি নিয়েও নমনীয় হওয়ার নির্দেশ দেন বলে খবর। একই সঙ্গে পূর্বাঞ্চলের প্রতিবেশী রাজ্যগুলোর মধ্যে বিভিন্ন নদ-নদীর জলবণ্টন সমস্যার সমাধানে আন্তঃরাজ্য কমিটি গঠন করার প্রস্তাব দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
আরও পড়ুন-নীতি আয়োগের কথা বলে আরতি কটন মিল বিক্রির চেষ্টা
জল বণ্টনে নিজেদের মধ্যে বিরোধ রুখতে পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড ও বিহারকে নিয়ে একটি যৌথ কমিটি গঠন করার কথা বলেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। বৈঠক নিয়ে সরকারি ভাবে কোনও তরফেই কিছু জানানো হয়নি। তবে সূত্রের খবর, বৈঠকে আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিযয় উঠে আসে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য—
গঙ্গা-পদ্মার ভাঙন, নদীভাঙন সমস্যার স্থায়ী সমাধানে দ্রুত একটি মাস্টার প্ল্যান গ্রহণের জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে দাবি জানান।
আরও পড়ুন-জলঙ্গির কৃষক পাবেন বিনামূল্যে সেচের জল
রেলের জমিতে উচ্ছেদ-পুনর্বাসন বিভিন্ন রাজ্যে রেলের অনেক জমি জবরদখল হয়ে যাওয়ায় প্রকল্প তৈরিতে সমস্যা হচ্ছে বলে বৈঠকে উপস্থিত রেল বোর্ডের সদস্য ব্রিজেশ কুমার অভিযোগ জানান। রাজ্যগুলোর তরফে পাল্টা জানানো হয়, উপযুক্ত পুনর্বাসন ছাড়া কাউকে উচ্ছেদ করা যাবে না। রেলের অব্যবহৃত জমি কীভাবে গঠনমূলক কাজে ব্যবহার করা যায় রাজ্যগুলিকে সেই বিষয়েও ভেবে দেখার কথা বলা হয়।
বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের মধ্যে সম্পর্কের উন্নতি ও সমন্বয় বৃদ্ধির উপরে জোর দেন।
একশো দিনের কাজ, আমফান ক্ষতিপূরণে কেন্দ্রের বঞ্চনা আলোচ্যসূচিতে না থাকলেও এদিনের বৈঠকে ১০০ দিনের কাজে বকেয়া আটকে রাখা এবং আবাস যোজনা প্রকল্পে রাজ্যকে বঞ্চনার বিষয় নিয়ে সরব হন মুখ্যমন্ত্রী। এনিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্যের অফিসারদের মধ্যে কিছুক্ষণ চাপানউতোর চলে। পরে এই সংক্রান্ত সমস্ত নথিপত্র এবং মুখ্যমন্ত্রীর পাঠানো একাধিক চিঠি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হাতে তুলে দেওয়া হয় বলে সূত্রের খবর।
আরও পড়ুন-এমপি কাপ: সুজয়, আকাশের হ্যাটট্রিক
শনিবার নবান্নের বৈঠকে শাহ ও মমতার পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন, বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদব এবং ওড়িশার নবীন পট্টনায়কের মন্ত্রিসভার প্রবীণ মুখ প্রদীপ আমাত। শাহের সঙ্গে ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব অজয় ভাল্লা। পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির মধ্যে সমন্বয়, নিরাপত্তা, সমস্যা সমাধানের কৌশল ইত্যাদি বিষয় সামনে রেখে গত ৫ নভেম্বর নবান্ন সভাঘরে পূর্বাঞ্চল পরিষদের ওই বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা পিছিয়ে যায়। বৈঠকের শুরুতে আয়োজক রাজ্য হিসাবে পশ্চিমবঙ্গের তরফে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সহ অন্যান্য রাজ্য থেকে আসা অতিথিদের হাতে ডোকরার দুর্গা প্রতিমা, বাঁকুড়ার ঘোড়া, কাঁথা স্টিচের উত্তরীয় ও হলুদ গোলাপের স্তবক তুলে দেওয়া হয়। বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সুন্দর ব্যবস্থাপনার জন্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।