জয়িতা মৌলিক, ঢাকা: পদ্মার ইলিশ হোক বা পদ্মানদীর মাঝি, ভূপেন হাজারিকার গান কিংবা জলবণ্টন চুক্তির আলোচনা— পদ্মার সঙ্গে বাঙালির নানা সেন্টিমেন্ট জড়িয়ে। এবার সেই পদ্মার উপর বিরাট সেতু। বাংলাদেশের গর্ব। সেইসঙ্গে পরবর্তী নির্বাচনে শাসকদলের শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞাপন। তবে, বিতর্ক আর গুজব শুরু থেকেই জড়িয়ে গিয়েছে পদ্মাসেতুর (Bangladesh- Padma Bridge) সঙ্গে।
দীর্ঘ ৬.১৫ কিলোমিটার সেতু চলে গিয়েছে পদ্মার বুক চিরে। মোট পিলারের সংখ্যা ৪২। তৈরি করেছে মূলত চিনা সংস্থা। গত বছর ২৫ জুন উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পদ্মাসেতুতে ওঠার মুখেই ডানদিকে রয়েছে বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুরাল। ঘন কুয়াশায় বছরের এই সময়টা পদ্মাসেতুর আশপাশের দৃশ্যমানতা অত্যন্ত কম। তবে স্পষ্ট দেখা গিয়েছে নদীর চরে গড়ে উঠেছে বসতবাড়ি, সেনা ছাউনি থেকে শুরু করে বাগান। পদ্মাসেতুতে (Bangladesh- Padma Bridge) মাঝারি গাড়ির জন্য টোল ফি তেরোশো টাকা। আর বাসের জন্য পাঁচ হাজার টাকা।
আরও পড়ুন-খাদ্যের অধিকার মৌলিক অধিকার কোনও দয়ার দান নয়
আগামী নির্বাচনে পদ্মাসেতুকেই উন্নয়নের শ্রেষ্ঠ নিদর্শন বলে তুলে ধরতে চায় আওয়ামি লিগ। তবে, এই সেতুর সঙ্গে জড়িয়ে আছে একাধিক বিতর্ক। বিএনপি-সহ অন্যান্য বিরোধীদের মতে, সেতুর কাজের বরাত নিয়ে বিস্তর দুর্নীতি হয়েছে। হয়েছে স্বজনপোষণ। শাসকদলের ঘনিষ্ঠরাই কাজের সুযোগ পেয়েছেন। এমনকী, নেতা-নেত্রীদের আত্মীয়রাও আছে তালিকায়। আর তাতেই হয়েছে দুর্নীতি। প্রচুর টাকা নয়ছয় হয়েছে। তবে, এই কথা মানতে নারাজ শাসকদল আওয়ামি লিগ। তাদের মতে, বাংলাদেশের মাইলস্টোন পদ্মাসেতু। বিরোধীরা উন্নয়নের পরিপন্থী বলেই এই ধরনের বিতর্ক ছড়াচ্ছে। তবে, শুধু বিতর্কই যে জড়িয়ে আছে তা নয়, পদ্মাসেতু তৈরির সময় থেকেই রটেছে বিভিন্ন গুজব। হঠাৎ করে রটে এই সেতু নির্মাণ করতে নাকি শ্রমিকদের মাথা লাগবে। ফলে শ্রমিক অপহরণ করা হচ্ছে! এই ভুয়ো খবর ছড়িয়ে পড়ায় বিভিন্ন জায়গায় অনেক ভবঘুরে মানুষকে চোরধরা সন্দেহে মারধর করা হয়েছে। পাশাপাশি, কাজের জন্য শ্রমিক পেতেও অসুবিধার মুখে পড়েছিল নির্মাণকারী সংস্থা। শেষ পর্যন্ত সরকারের তরফে বিজ্ঞপ্তি জারি করে এই ভুয়ো খবর ছড়ানো থেকে মানুষকে আটকানো হয়েছিল। এইসব পার করেই আজ গাড়ি চলাচলের রাস্তা, রেললাইন, গ্যাস পাইপলাইন— সব নিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের গর্বের পদ্মাসেতু। ভাবটা এমন, ‘‘তার গায়ে লাগে না ধুলো (বিতর্ক)’’।