‘কবিতা চাই, কবিতা চাই, কবিতা চাই, কবিতা চাই।’ লম্বা ছিপছিপে গড়নের এক যুবক হেঁকে বেড়ান মেলা জুড়ে। লিটল ম্যাগাজিন মেলাই হোক বা কলকাতা বইমেলা। তিনি ঘুরে বেড়ান। আপনমনে। ঠোঁটের কোণে লেগে থাকে হাসি।
যুবকটির নাম নীহাররঞ্জন মজুমদার। থাকেন সোদপুরে। সম্পাদনা করেন ‘নীহারিকা’ পত্রিকা। তাঁকে চেনেন ছোট এবং বড় মাপের অনেকেই। পত্রিকার কলেবর খাটো নয়। মাঝেমধ্যেই প্রকাশ করেন বিশেষ সংখ্যা। কীভাবে প্রকাশ করেন? আহামরি উপার্জন নয় তাঁর। নেন না তেমন কারো সাহায্যও। যে-সময় কিছু চতুর হিসেবি সম্পাদক সৌজন্য সংখ্যা দিতে অপারগ, লেখকদেরও হাসি মুখে কিনে নিতে বলেন, সেই সময় নীহার এক উজ্জ্বল ব্যতিক্রম। অন্য সম্পাদকদের মতো বিন্দুমাত্র সাহায্য প্রার্থনা করেন না। বিনা পয়সায় পত্রিকা তুলে দেন লেখক-পাঠকদের হাতে।
আরও পড়ুন-নাট্যপত্র বিক্রেতা
লকডাউনের সময় মহা সমস্যায় পড়েছিলেন। একজন লেখকের ফেসবুক-পোস্টে জানতে পারি অর্থকষ্টে রয়েছেন নীহার। ফোন করি। হাসি ছড়িয়ে তিনি বলেন, একটু সমস্যায় পড়েছিলাম দাদা। মিটে গেছে। আপাতত প্রয়োজন হচ্ছে না।
মনে হয়েছিল, এ-যুগে এতটা সৎ কেউ হতে পারে? অনায়াসেই তিনি সাহায্য নিতেই পারতেন। কিন্তু তিনি সেটা করেননি। মনে মনে বেড়ে গিয়েছিল শ্রদ্ধা।
অনেকেই তাঁকে পাগল মনে করেন। কেউ কেউ করেন রঙ্গ-রসিকতা। সেসবে পাত্তা দেন না। অদ্ভুত এক তাচ্ছিল্য ছুঁড়ে দেন নীহার। স্থির থাকেন নিজ লক্ষ্যে।
আরও পড়ুন-বাঁধাই কর্মী
নিয়মিত দেখা হয় তাঁর সঙ্গে। লিটিল ম্যাগাজিন মেলায়, কলকাতা বইমেলায়। মেলায় না এলে যে ভাত হজম হয় না তাঁর। এই বইমেলাতেও সারা মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। প্রায় প্রতিদিনই। ‘কবিতা চাই, কবিতা চাই, কবিতা চাই, কবিতা চাই’— নিঃস্বার্থভাবে হেঁকে বেড়াচ্ছেন। কবিতা চাইছেন প্রবীণ ও নবীনদের কাছ থেকে, পরের সংখ্যার জন্য। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস হয়তো এঁদের মতো মানুষকে মনে রাখবে না। অসংখ্য উজ্জ্বল নাম ও মুখের ভিড়ে হারিয়ে যাবেন। তবু মনে হয়, সাহিত্য এবং বইমেলার এমন নিঃস্বার্থ বন্ধু আর কে আছে?