প্রতিবেদন : সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, গোষ্ঠী সংঘর্ষ ও অন্যান্য কারণে ইন্টারনেট পরিষেবা (Internet Shutdown) বন্ধ রাখার ক্ষেত্রে বিশ্বের মধ্যে শীর্ষে ভারত। ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে এই নিয়ে একটানা পাঁচবার শীর্ষস্থানে রয়েছে মোদির ভারত। দেখা যাচ্ছে, ২০১৬ সাল থেকে এপর্যন্ত বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখার মোট ঘটনার ৫৮ শতাংশই ঘটেছে ভারতে।
অ্যাক্সেস নাও ও কিপ ইট অন নামে দু’টি আন্তর্জাতিক সমীক্ষক সংস্থার পরিসংখ্যান থেকে জানা গিয়েছে, ২০২২ সালে গোটা বিশ্বে প্রশাসনিক নির্দেশে মোট ১৮৭ বার ইন্টারনেট বন্ধ (Internet Shutdown) রাখা হয়েছিল। যার মধ্যে শুধুমাত্র ভারতেই সর্বাধিক ৮৪ বার বন্ধ রাখা হয়েছিল ইন্টারনেট পরিষেবা। অর্থাৎ ভারতকে বাদ দিয়ে গোটা বিশ্বে ইন্টারনেট বন্ধ ছিল ১০৩ বার। ইন্টারনেট বন্ধের নিরিখে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন। ২০২২ সালে ইউরোপের এই দেশে মোট ২২ বার ইন্টারনেট বন্ধ রাখা হয়। অর্থাৎ দ্বিতীয় স্থানে থাকলেও যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন রয়েছে ভারতের কয়েক যোজন পিছনে।
সমীক্ষার পরিসংখ্যান থেকে জানা গিয়েছে, ৮৪ বারের মধ্যে শুধু জম্মু-কাশ্মীরেই গত বছর ৪৯ বার ইন্টারনেট বন্ধ রাখা হয়েছিল। ২০২২ সালের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে ভূস্বর্গে ইন্টারনেট বন্ধ রাখা হয়েছিল ১৬ বার। রাজস্থানে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছিল ১২ বার।
আরও পড়ুন: ফের মাসের প্রথম দিন বাড়ল রান্নার গ্যাসের দাম
অভিজ্ঞতা বলছে, ২০১৯ সালের অগাস্ট মাসে জম্মু-কাশ্মীরের উপর থেকে বিশেষ রাজ্যের মর্যাদা প্রত্যাহারের পর থেকেই সেখানে নিয়মিত ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছিল প্রশাসন। ২০২১ সালে কৃষক আন্দোলন চলাকালীন দিল্লি-সহ বিভিন্ন এলাকায় দীর্ঘসময় ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়। ২০২২ সালেও যার ব্যতিক্রম হয়নি। ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখার কারণে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছে ভারত। বন্ধজনিত আর্থিক ক্ষতির নিরিখে ভারত রয়েছে তৃতীয় স্থানে। ২০২১ সালে ভারতে মোট ১১৫৭ ঘণ্টা ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ ছিল। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছোটখাটো হিংসা ও অশান্তির ঘটনায় প্রায়শই ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখার নজির তৈরি করেছে ভারত।
তবে শুধু ২০২২ সালে নয়, ২০১৭ সাল থেকেই গোটা বিশ্বে ইন্টারনেট বন্ধ রাখার নিরিখে শীর্ষেই রয়েছে ভারত। মোদি সরকার বারবার গণতন্ত্রের কথা বলে থাকে। কিন্তু এই পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে, ভারতে গণতন্ত্র আদৌ স্বাভাবিক অবস্থায় নেই। বরং মোদি জমানার এই কয়েক বছরে দেশে অশান্তি, অসহিষ্ণুতা, বিদ্বেষ সবকিছুই বেড়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সবকা সাথ-এর কথা বললেও বাস্তবে তাঁর সরকার ও দল যে গণতন্ত্রিক পরিসরকে সংকুচিত করছে, ইন্টারনেট বন্ধ রাখার এই পরিসংখ্যান তারই নিদর্শন। দেশে ও রাজ্যে ইন্টারনেট বন্ধ করার ক্ষমতা রয়েছে কেন্দ্রীয় ও রাজ্যগুলির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের।