আমেদাবাদ, ৯ মার্চ : দিনের শেষে অস্ট্রেলিয়া ২৫৫/৪। তবু স্বস্তি দিচ্ছে মোতেরার স্কোরবোর্ড। সারাদিনে পনেরোটা উইকেট পড়েনি! পড়লে আবার টেস্ট ক্রিকেট রক্ষায় জোরালো আওয়াজ উঠত প্রাক্তনদের গলায়।
ছবিটা যে খেলার শেষে এরকম দেখাল, তার কারণ উপমহাদেশের এক অস্ট্রেলীয়। উসমান খোয়াজার জন্ম পাকিস্তানে। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ায়। আগের দু’বার ভারতে এসে খালি হাতে ফিরেছেন। শেষমেশ নিজের চতুর্দশ টেস্ট সেঞ্চুরি এই মোতেরায়। মহম্মদ শামিকে স্কোয়ার লেগ বাউন্ডারিতে পাঠিয়ে লাফিয়ে উঠলেন। এত গরমে ছ’ঘণ্টার লড়াই শেষে তৃপ্তির হাসি। দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী এদিন স্টেডিয়ামে এসে ক্রিকেটারদের সঙ্গে পরিচিত হয়েছেন। আর এমন দিনেই খোয়াজার অসামান্য কীর্তি।
আরও পড়ুন-পুরীধামে আগুন
পিটার হ্যান্ডসকম্ব (১৭) মহম্মদ শামির যে বলে বোল্ড হলেন, সেটা সম্ভবত দিনের সেরা। অফ স্ট্যাম্প থেকে বলটা কাট করে ভিতরে এল। লাইন মিস করলেন অস্ট্রেলীয় ব্যাটার। কিন্তু এতেই সবটা লেখা শেষ হয়ে যাচ্ছে না। বলতে হবে, তার আগে উমেশ যাদব পরপর শর্ট বলে চাপে রেখেছিলেন তাঁকে। হ্যান্ডসকম্ব সেই চাপেরই শিকার হলেন।
আরও পড়ুন-মিডিয়ার প্রচারে কান নয়, বাড়ি বাড়ি যান, শ্রমিকভাইদের উদ্দেশে বললেন ঋতব্রত
প্রথম দিনেই ১৪-১৫টা উইকেট পড়েছে এই সিরিজে। কিন্তু মোতেরায় অন্য ছবি দেখা গেল এদিন। প্রথম ঘণ্টায় কোনও উইকেট নেই। পরের ঘণ্টায় দুটি উইকেট। লাঞ্চ থেকে চায়ে আবার কোনও উইকেট নেই। শুধু শেষ সেশনে ফের দুই উইকেট। কোন জাদুতে এটা হল? কোথায় গেল এক হাত করে স্পিন? এইজন্য যে, টার্নার থেকে আমেদাবাদ ফিরেছে একদম স্পোর্টিং উইকেটে। এখানে স্পিনারদের জন্য সাজানো বাগান নেই!
প্রচুর চর্চা হয়েছে এই উইকেট নিয়ে। লাল নাকি কালো মাটির উইকেট। বল আগের মতো ঘুরবে নাকি ঘুরবে না। শেষবেলায় রোহিত যখন দ্বিতীয় নতুন বল উমেশের হতে তুলে দিলেন, খেলার বয়স ৮১ ওভার। আগের তিন টেস্টে কোনও ইনিংস এতদূর আসেনি! উমেশের এই ওভারেই উঠল ১২ রান। সেটা নাকি বৃহস্পতিবার সারাদিনে এক ওভারে সর্বোচ্চ রান তখনও পর্যন্ত।
আরও পড়ুন-ভোটমুখী রাজ্যে মোদির আগে ইডি পৌঁছে যায়, তোপ কেসিআর কন্যার
আগে ব্যাট করে বিনা উইকেটে ৬১ রান তুলে ফেলেছিল অস্ট্রেলিয়া। সেটাও বিরল ছবি। অন্তত এই সিরিজের প্রেক্ষিতে। এত বড় ওপেনিং পার্টনারশিপ কোথায় হল! কিন্তু ট্রাভিস হেড (৩২) অশ্বিনের বলে ফিরে যাওয়ার পর লাবুশানেও (৩) ফিরলেন ১১ রান যোগ হতেই। প্রথম ঘণ্টায় বিনা উইকেটে ৫৬ রান তুলে ফেলার পর দ্বিতীয় ঘণ্টায় ১৯ রান তুলতেই ২ উইকেট হারিয়ে বসেছিল অস্ট্রেলিয়া।
কিন্তু এটা ইন্দোর নয় যে, উইকেট পড়া শুরু হলে পড়তেই থাকবে! ওপেনার খোয়াজা হোলকার স্টেডিয়ামের ঘূর্ণিব্যূহে হাফ সেঞ্চুরি করে এসেছেন। এখানে সেঞ্চুরি করেও অপরাজিত। রোহিতদের জন্য আরও চাপের কারণ হতে যাচ্ছিলেন অধিনায়ক স্টিভ স্মিথ। কিন্তু জাদেজাকে থার্ডম্যানে খেলতে গিয়ে প্লেড অন হয়ে গেলেন ৩৮ রান করে। তার আগে ১৩৫টি বল খেলেছেন অস্ট্রেলিয়ার স্ট্যান্ড ইন ক্যাপ্টেন। তাঁর আর খোয়াজার ৯৮ রানের পার্টনারশিপ ভারতের ম্যাচে ফেরার রাস্তা আটকে দিয়েছিল।
আরও পড়ুন-যে নামে কেন্দ্রের আপত্তি, তাঁকেই বড় দায়িত্ব দিলেন প্রধান বিচারপতি
পরের পার্টনারশিপটা অবশ্য ভারতের উপরেই চাপ ফিরিয়ে দিল। খোয়াজা নট আউট ১০৪ রানে। কিন্তু তাঁর পাশে ক্যামেরুন গ্রিন (৪৯ নট আউট) বোঝালেন কেন তিনি এই দলের খুব গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কেন তিনি থাকা মানে এই অস্ট্রেলিয়া দলের ভারসাম্য রক্ষিত হয়। এই জুটিতে এখনও পর্যন্ত উঠে এসেছে ৮৫ রান। বেশিরভাগ রানই এল নতুন বল নেওয়ার পর। ৩৫ ডিগ্রি গরমের কথা মাথায় রেখেও নতুন বলে ভারতীয় সিমারদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
আরও পড়ুন-মাফিয়াদের হাতে আক্রান্ত টহলরত বনকর্মীরা, অসম থেকে পাচারকারী ঢুকছে বাংলায়
শুক্রবার খোয়াজা-গ্রিন জুটি যত এগোবে, চাপ ততই বাড়বে রোহিতদের উপর। এদিকে, দুই প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার কড়াকড়িতে ম্যাচের আগে মাঠে গা ঘামানোর সুযোগ পেলেন না স্টিভ স্মিথ, বিরাট কোহলিরা। তাই মাঠের বাইরে ওয়ার্ম-আপ করতে হয় দু’দেশের ক্রিকেটারদের। যা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া।