প্রতিবেদন : ডিএ নিয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষকরা ব্যাপক ক্ষোভের মুখে পড়লেন অভিভাবকদের। শিক্ষকদের নীতি, আদর্শ, দায়িত্ববোধ, বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন অভিভাবকেরা। ওই শিক্ষকদের কাছে রীতিমতো কৈফিয়ত তলব করলেন তাঁরা। অনেক জায়গাতেই শনিবার স্কুলে প্রবেশ করার সময় রীতিমতো বিক্ষোভের মুখে পড়লেন শুক্রবার অনুপস্থিত শিক্ষকেরা।
আরও পড়ুন-দিনের কবিতা
পালাবার পথ পেলেন না তাঁরা। মাথাভাঙায় স্কুলের সামনে শিক্ষকদের বসিয়ে রেখে ক্ষোভ উগরে দিলেন সাধারণ মানুষ। লক্ষণীয়, শুক্রবার কিছু শিক্ষকের অনুপস্থিতি দেখে বহু স্কুলে অভিভাবকদের পাশাপাশি ক্ষোভে ফেটে পড়েছিলেন স্থানীয় মানুষও। মথুরাপুর থেকে মালদহ, বাঁকুড়া থেকে পশ্চিম মেদিনীপুর, পূর্ব মেদিনীপুর, দুর্গাপুর, পূর্বস্থলী— সব জায়গাতেই একই ছবি। একই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। প্রশ্ন একটাই, যাঁদের নীতিবোধের বালাই নেই তাঁরা শিক্ষকতা পেশায় আসেন কেন?
আরও পড়ুন-মেয়েদের ভবিষ্যৎ ভেবে ২৯ বছর পর দ্বিতীয়বার বিয়ে কেরলের দম্পতির
মালদহের মানিকচকের তিলকসুন্দরী, মথুরাপুর বিএসএস এবং নাজিরপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের অভিভাবকেরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েছিলেন শুক্রবার। যার রেশ ছিল এদিনও। তাঁদের বক্তব্য, ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনা বন্ধ রেখে এই আন্দোলন-ধর্মঘট কেন? কোভিড-ত্রাসে এমনিতেই যথেষ্ট ব্যাঘাত ঘটেছে ক্লাসে। এরপরেও শিক্ষকদের এই দায়িত্বজ্ঞানহীনতা? ছাত্র-ছাত্রীদের কথা না ভেবে নিজেদের স্বার্থটাই বড় কথা হল শিক্ষকদের? না পড়িয়ে বেতন নিতে বিবেকে বাধে না আন্দোলনকারীদের? মথুরাপুর বিএসএস বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কাছে কৈফিয়ত চান অভিভাবক এবং স্থানীয়রা।
আরও পড়ুন-হঠাৎ ছুটিতে আদানি সংস্থার কর্তা, জল্পনা
একদিকে যখন আন্দোলনের নামে কিছু শিক্ষকের আদর্শহীন আচরণ তখন সম্পূর্ণ অন্য ছবি দেখল দক্ষিণ ২৪ পরগনার মথুরাপুরের কৃষ্ণচন্দ্রপুর হাইস্কুল। অনুপস্থিত শিক্ষকদের অভাবই বুঝতে দিল না পরিচালন সমিতি। পড়ুয়াদের প্রতি সহানুভূতি নিয়ে এগিয়ে এলেন পরিচালন সমিতির সদস্যরা। এলেন তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সুন্দরবন সাংগঠনিক জেলা সভাপতি বাপি হালদারও। স্কুলের সভাপতি ক্লাস নিতে শুরু করলেন নিজেই। স্থানীয় প্রাইভেট টিউটর এবং প্রাক্তনীদের দিয়ে ক্লাস সচল রাখার ব্যবস্থা করল ম্যানেজিং কমিটি। আপ্লুত পড়ুয়ারা। এবং অভিভাবকেরাও। বহু জায়গায় ক্লাস স্বাভাবিক রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছেন পার্শ্বশিক্ষকেরাও।
আরও পড়ুন-১২১ হাসপাতালে ৫ হাজার বেড, অ্যাডিনো রুখতে তৈরি টাস্ক ফোর্স
আন্দোলনকারী শিক্ষকদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের স্বতঃস্ফূর্ততার সাক্ষী হয়ে রইল রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের অনেক স্কুলই। বাঁকুড়ার গঙ্গাজলঘাটির নিধিরামপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়, দুর্লভপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়, দেউলি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সারেঙ্গার ব্রাহ্মণডাঙা প্রাথমিক, গুনিয়াদা, বড়দি কাদাপাথর, বেলাটিকরি, শালডহরা প্রাথমিক বিদ্যালয়, পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুরের আনন্দপুর, ঝাঁটিয়ারা প্রাথমিক বিদ্যালয়, পূর্ব মেদিনীপুরের রামনগর ১ নম্বর ব্লকের খাদালগোবরা জুনিয়র বেসিক স্কুল, পূর্বস্থলী ১ নম্বর ব্লকের হাটশিমলা জুনিয়র হাইস্কুল, কাঁকসার মালানদিঘি উচ্চ বিদ্যালয়, দুর্গাপুরের কাণ্ডেশ্বর প্রাথমিক বিদ্যালয়, মঙ্গলকোটের কাশেমনগর গার্লস হাইস্কুল, বর্ধমান মির্জাপুরের নরেন্দ্রনাথ প্রাথমিক বিদ্যালয়— সব জায়গাতেই আন্দোলনকারী অনুপস্থিত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ক্ষোভের বিস্ফোরণ।
আরও পড়ুন-কবিতাকে টানা ৮ ঘণ্টা জেরা ইডির
সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনা, মাথাভাঙার পচাগড়ে কুঞ্জবিহারী প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং জুনিয়র হাইস্কুলের শিক্ষকদের শনিবার স্কুলের বাইরে বসিয়ে রেখে বিক্ষোভ দেখালেন অভিভাবকেরা। পরে পুলিশি হস্তক্ষেপে শিক্ষকেরা ঢুকতে পারলেন স্কুলে।