অতিমারি আমাদের ঠেলে দিয়েছিল বিরাট এক দুর্বিপাকের দিকে। এই পর্বে, অর্থাৎ করোনাকালে, ভারতের অগ্রগমন অভাবের দিকে, অন্নহীনতার দিকে। লক্ষ লক্ষ মানুষ কর্মচ্যুত, কাজ হারালেন, রোজগার খোয়ালেন। মোদি সরকারের নির্বুদ্ধিতা আর ঔদাসীন্য মানুষকে দিশাহারা করে ছাড়ল।
একদিকে মানুষের যখন ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা, তখন মোদি-শাহরা (BJP Government) বিভিন্ন রাজ্যের নির্বাচনে ডাবল ইঞ্জিন বানানোর নোংরা খেলায় মেতে উঠল। তারা হিন্দুত্বের নাম বিলিয়ে সমাজে বিচ্ছিন্নতার সৃষ্টি করে ভোটে জেতার দামামা বাজিয়ে চলল। আর রাষ্ট্রের সেই ব্যর্থতার জেরে বেড়ে গেল দেশের ক্রাইম।
কী নিষ্ঠুর পরিহাস! নেদারল্যান্ডসের মতো দেশগুলো যখন কারাগার তুলে দিয়ে দেশকে অপরাধমুক্ত করায় প্রয়াসী হচ্ছে, আমরা তখন আরও জেলখানা বানাতে উঠে-পড়ে লাগলাম।
বছর তিনেক আগের এক রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, সারা দেশে আরও ১৯৯টি জেল বানাতে কেন্দ্র খরচ করবে ১৮০০ কোটি টাকা। পাঁচশো টাকা চুরি করা অপরাধী সাজা পায়, অথচ দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা মেরে দিয়ে বিদেশ পালানো অপরাধীদের টিকিও ছুঁতে পারে না সরকার। উল্টে সরকারি সহায়তায় তাঁদের বিদেশ পালানো নিয়ে অভিযোগ ওঠে। এ পর্যন্ত দেশের ৩০-৩২ জন ‘শিল্পপতি’ তকমাধারী ব্যক্তি দেশের লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা প্রতারণা করে বিদেশে পালিয়ে সুখের জীবন ভোগ করছেন। তাঁদের ব্যাপারে মোদি সরকার কিস্যু করতে পারেনি। মাঝে মাঝে আমরা তাদের ধরে আনার ব্যাপারে কিছু ফাঁপা বুলি শুনি। অচিরে প্রমাণিত হয়, জুমলা রাজের বাকি প্রতিশ্রুতির মতো এটিও একটি গালগল্প। আর কী আশ্চর্যের কথা! পলাতকদের মধ্যে অধিকাংশেরও বেশি মোদি-শাহের মতোই গুজরাতের ভূমিপুত্র। এ একেবারে কাকতালীয় ব্যাপার, সন্দেহ নেই, তাই না!
আরও পড়ুন: আলমারিতে মিলল মায়ের টুকরো দেহ, গ্রেফতার কীর্তিমান মেয়ে
দেশের নানা প্রান্তে নাৎসি জার্মানির আদলে বেশ কিছু কনসেনট্রেশন ক্যাম্প বানানোর চিন্তাও রয়েছে মোদি-শাহ সরকারের। ২০১৯-এ দেশের সাধারণ নির্বাচনের পর সিএএ যন্ত্রকে মজবুত করার চেষ্টা করেছিল এই সরকার। দেশের মানুষের সামগ্রিক চাপের মুখে পিছু হটতে হয়েছে তাদের। লক্ষ্য এখন ২০২৪ সালের নির্বাচন। এই নির্বাচনে জিতে আসতে পারলে ফের সেই সিএএ যন্ত্রে তেল দেওয়া হবে। কনসেনট্রেশন ক্যাম্পও ভরিয়ে ফেলার ভাবনা রয়েছে বিজেপির অন্দরে। এ-ছাড়াও ভোট যত এগবে, ততই ভক্তদের নব দেশপ্রেমে উজ্জীবিত করবে বিজেপি। এসব ছক আর অপ্রকাশ্য নয়।
মনে পড়ে, পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের পর সন্ত্রাস নিয়ে হেরো বিজেপির সে কী চিৎকার! কেন্দ্রের প্রতিনিধিরা পর্যন্ত সন্ত্রাস ধরতে দৌড়ে এলেন। অথচ ত্রিপুরায় কী ঘটছে? সেখানে জেতার পর বিরোধীদের ধুনে দিচ্ছে বিজেপি। অনেকের বাড়ি ভাঙচুর করেছে, আগুন লাগিয়ে দিয়েছে বহু বাড়িতে। বিরোধী নেতা ও কর্মীরা দলে দলে ঘরছাড়া। কয়েকদিন আগে এক প্রতিনিধি দল গিয়েছিল সন্ত্রাস কবলিত এলাকা পরিদর্শনে। তাঁদের মধ্যে ছিলেন আটজন সাংসদও। বিজেপির পেটোয়া গুন্ডারা তাঁদের পথ আটকায়। প্রতিনিধি দল গুন্ডাদের হাতে তাঁরা আক্রান্ত হন।
মহামান্য মোদিবাবুর (BJP Government) অসংখ্য পদক্ষেপের মধ্যে ‘হামসে বড়কর কৌন’ জাতীয় ভাবনার প্রকাশ স্পষ্ট। বারবার সমালোচিত হলেও ভুল স্বীকার তাঁর অভিধানে নেই। বেশ কয়েকবার সুপ্রিম কোর্টও এই সরকারের কাজের সমালোচনা করেছে। কয়েকদিন আগে ফের মুখ খুলতে হল সুপ্রিম কোর্টকে। শীর্ষ আদালতের নির্দেশে স্পষ্ট হয়েছে যে, প্রধানমন্ত্রী একতরফা সিদ্ধান্ত নিয়ে কাউকে আর নির্বাচন কমিশনের সদস্য করতে পারবেন না। নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে সেই মামলায় কার্যত হার হল সরকারের। সেই নিয়োগ কমিটিতে থাকবেন দেশের প্রধান বিচারপতি, প্রধানমন্ত্রী এবং বিরোধী নেতা। এই নির্দেশ চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল আগামী বছরের নির্বাচনে জেতার জন্য যে কয়েকটি কৌশল বিজেপি অবলম্বন করেছিল, তার মধ্যে একটি ছিল বশংবদ নির্বাচন কমিশন। এটা তো জলের মতো পরিষ্কার যে, নির্বাচন কমিশনে নিজের লোক থাকলে অনেক সুবিধা হয়।
গেরুয়া পার্টির (BJP Government) দ্বিচারিতার এমন তালিকা বানালে হাজার পাতার চার্জশিট হয়ে যেতে পারে। দেখলেও হাসি পায়, পদ্মপক্ষ নিজেদের ঘরে দুর্নীতিতে অভিযুক্ত একগাদা নেতাকে নিয়েও অন্যের দুর্নীতি খুঁজে চলেছে। চালুনি ছুঁচের ছিদ্র খুঁজছে। আসলে নিজস্ব এজেন্সিকে ব্যবহার করার সুযোগ নিয়ে চেষ্টা চলছে বিরোধী শিবিরকে চূর্ণ করে দেওয়ার। চেষ্টা চলছে বিরোধী নেতাদের বশ মানানোর জন্য ভয় দেখানোর খেলা।
কথায় বলে, বাঘের আগে ফেউ যায়। সেই কায়দায় ভোটের আগে বিরোধীদের বাড়ি বাড়ি সিবিআই, ইডি, ইনকাম ট্যাক্সও যায়। বিজেপি বুঝিয়ে দিচ্ছে, আমার নিরাপদ ছত্রছায়ায় এলে তুমি গঙ্গার মতো পবিত্র হয়ে যাবে। কোনও তদন্তই আর তোমাকে ছুঁতে পারবে না। শুধু তাই নয়, তুমি মুখ্যমন্ত্রীও হয়ে যেতে পার। দুটি বিরাট কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত ছিলেন অসমের হিমন্ত বিশ্বশর্মা এবং মধ্যপ্রদেশের শিবরাজ সিং চৌহান। তাঁরা এখন ওই দুই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী।
জানি না, লোডশেডিং অধিকারীকে সেই গাজর দেখিয়েই এখন নাচাচ্ছে কিনা পদ্মপক্ষ।