রান্নায় নিজের অস্তিত্ব খুঁজে পান ইন্দুবালা

হইচই প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পেয়েছে ওয়েব সিরিজ 'ইন্দুবালা ভাতের হোটেল'। নাম ভূমিকায় শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়। কল্লোল লাহিড়ীর উপন্যাস অবলম্বনে তৈরি। দেবালয় ভট্টাচার্য পরিচালিত সিরিজটি মানকচুবাটা এবং মাছের ঝোলের পবিত্র স্মৃতি জাগিয়ে তুলেছে। লিখলেন অংশুমান চক্রবর্তী

Must read

চমক ছিল ফার্স্ট লুকে! চেনার উপায় ছিল না শুভশ্রীকে দেখে! বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির গ্ল্যামার কুইন শেষমেশ বৃদ্ধার চরিত্রে! তা-ও আবার ওয়েব সিরিজে! বিশ্বাস করেননি কেউ কেউ। নেটিজেনদের একাংশের প্রশ্ন ছিল, হিরোইন পারবেন তো?


অপেক্ষার অবসান। সম্প্রতি হইচই প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পেয়েছে ‘ইন্দুবালা ভাতের হোটেল’। এর মধ্যেই দেখেছেন অসংখ্য মানুষ। সিরিজটি ভেসে যাচ্ছে প্রশংসা-বন্যায়। ইন্দুবালা চরিত্রে শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায় ফাটিয়ে দিয়েছেন। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গলার স্বর বদল, হাঁটাচলা, অভিব্যক্তি, সবকিছুতেই অনবদ্য তিনি। দর্শকরা তাঁকে নতুন ভাবে চেনার সুযোগ পেলেন। এই সুযোগ দিয়েছেন পরিচালক দেবালয় ভট্টাচার্য।

আরও পড়ুন-ভারতের অস্কার জয়গাথা

তিনি জানালেন, ‘‘অনেকেই জানতে চেয়েছেন, শুভশ্রী কেন? আশা করি দর্শকরা উত্তর পেয়েছেন। কাজটা করব মনস্থির করার পর ভাবছিলাম, কে হতে পারে ইন্দুবালা? তখন আমার মনের মধ্যে লম্বা, ছিপছিপে গড়নের কিছু মহিলার ছবি ভেসে ওঠে। সেখান থেকেই হয়তো শুভশ্রীকে কানেক্ট করেছি। মনে হয়েছিল, ও-ই পারবে। প্রস্তাব দিতেই শুভশ্রী সঙ্গে সঙ্গে রাজি। ওয়েব সিরিজের কথা জেনেও। শুধুমাত্র চরিত্রের কথা ভেবে। শুভশ্রীর মধ্যে অদ্ভুত একটা খোঁজ রয়েছে। ভাল কিছু করতে চাওয়ার খোঁজ। কাজটা শুরু থেকেই আমাকে চ্যালেঞ্জ দিয়েছে। সাধারণ দর্শকদের জন্যই বানিয়েছি। এটা দেখে ভাল লাগছে, সিরিজটা দর্শকদের মনে ধরেছে। প্রচুর ফিডব্যাক পাচ্ছি। এতটা প্রশংসিত হবে ভাবতেই পারিনি।’’

আরও পড়ুন-ভরসার ভেলা, সুস্থ পথ চলা ভ্যাকসিন

‘ইন্দুবালা ভাতের হোটেল’-এর কাহিনি দানা বেঁধেছে ইন্দুবালাকে ঘিরেই। তিনি পূর্ববঙ্গের এক সাধারণ মহিলা। জন্ম এবং বেড়ে ওঠা খুলনার কলাপোতা গ্রামে। পদ্মাপাড়ের মেঠো গন্ধ, আমবাগান, বৃষ্টিভেজা কচুবনের সঙ্গে তাঁর বাল্যপ্রেম। বাবা-মা-ঠাকুমার বড় আদরের। বিয়ের পর দেশত্যাগ। স্বামী রতনলাল মল্লিকের হাত ধরে আসা কলকাতার ছেনু মিত্তির লেনের দোতলা বাড়িতে। সঙ্গে নিয়ে এলেন স্মৃতির পাহাড়। শ্বশুরবাড়িতে জুটতে থাকে লাঞ্ছনা। পান না স্বামীর ভালবাসা। সবার মাঝে একা হয়ে যান ইন্দুবালা। অকালমৃত্যু হয় স্বামীর। দুই সন্তানের মুখ চেয়ে ইন্দুবালা ধরেন সংসারের হাল। ঠাকুমার রান্নার কথা মনে পড়ে। খোলেন ‘ইন্দুবালা ভাতের হোটেল’। কাহিনির মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ, দেশভাগের রক্তাক্ত ইতিহাস, সবই রয়েছে।

আরও পড়ুন-আজ ৩০ থেকে ৪০ কিমি বেগে ঝোড়ো হাওয়া, ঝড়ে বিপর্যস্ত ট্রেন পরিষেবা

উপন্যাসের লেখক কল্লোল লাহিড়ী। কথা হল তাঁর সঙ্গেও। জানালেন, ‘‘ইন্দুবালা চরিত্রটা এসেছে মা মাসি ঠাকুরমা দিদিমাদের দেখেই। যখনই আমরা কোনও খাবার খাই, তখন শুধুমাত্র খাই না, যিনি রাঁধেন, অনেকসময় তাঁর সম্পর্কেও জানতে চাই, কথা বলি, গল্প করি। একটা খাবার তখন আর খাবার থাকে না। কোথাও একটা স্মৃতি আর ইতিহাস বেয়ে অনেক দূর গড়িয়ে যায়। যাঁরা দু’বেলা আমাদের সামনে খাবার বেড়ে দিচ্ছেন, তাঁরাই কিন্তু ইন্দুবালা চরিত্রের অনুপ্রেরণা।’’

আরও পড়ুন-দ্বিচারী কংগ্রেস, বিকল্প নীতিতে লড়বে তৃণমূল

তিনি আরও বলেন, ‘‘বইটা প্রকাশিত হয়েছে ২০২০ সালে। তার অনেক আগে থেকেই চলছিল কাজ। পরিচালক দেবালয় আমার কাছের বন্ধু। এই বইটার সঙ্গে দেবালয়, আমি এবং আমাদের পুরো ইউনিট প্রায় শুরু থেকেই জড়িত। সাহিত্য থেকে চলচ্চিত্রায়ণ একটা অন্য পরিগ্রহণ। দেবালয় যেভাবে ইন্দুবালাকে দেখেছেন, তাতে আমি খুব খুশি। শুভশ্রীর অভিনয় খুবই ভাল। প্রশংসা করার কোনও ভাষা নেই। যথেষ্ট পরিশ্রম করেছেন। ওয়ার্কশপের মধ্যে দিয়ে নিজেকে তৈরি করেছেন ইন্দুবালা চরিত্রটার জন্য। নারী বা পুরুষ নয়, চরিত্রটাকে আমি মানুষ হিসেবে দেখেছি। আমরা যে কাজের মধ্য দিয়ে স্বাধীন চেতনা খুঁজে পাই, সেটাই আমাদের কাছে মুক্তি। ইন্দুবালা এমন একজন মহিলা, যিনি নিজের অস্তিত্ব এবং স্বাধীনতা খুঁজে পেয়েছিলেন রান্নার মধ্যে দিয়ে।’’

আরও পড়ুন-কর্মসূচি পালন, শৃঙ্খলায় জোর দিলেন অভিষেক

কিশোরী ইন্দুবালা চরিত্রে অভিনয় করেছেন পারিজাত চৌধুরী। দারুণ সপ্রতিভ লেগেছে তাঁকে। তিনি এপারের মানুষ। তবে তাঁর বাঙাল ভাষার উচ্চারণে কোথাও ছন্দপতন ঘটেনি। ইন্দুবালার কলাপোতা গ্রাম থেকে কলকাতায় আসার যে জার্নি, সেখানেই শামিল হয়েছেন তিনি। জানা গেছে, এই চরিত্রের জন্য সবজি কাটা, বাটনা বাটা, মাছ কাটা, চন্দ্রবুলি বানানো, সবই শিখতে হয়েছে তাঁকে।
আরও একটি উজ্জ্বল চরিত্র সঞ্চারী। কৃষ্ণনগরের ১৯ বছরের মেয়ে। একজন ব্লগার। পড়াশোনার জন্য কলকাতায়। ৭৫ বছরের ইন্দুবালার সঙ্গে জমে ওঠে তাঁর ভাব। সঞ্চারী চরিত্রে প্রাণবন্ত অভিনয় করেছেন অঙ্গনা রায়।

আরও পড়ুন-দ্বিচারী কংগ্রেস, বিকল্প নীতিতে লড়বে তৃণমূল

অন্যান্য চরিত্রে স্নেহা চট্টোপাধ্যায়, প্রতীক দত্ত, মিঠু চক্রবর্তী, দেবপ্রতিম দাশগুপ্তের অভিনয় প্রশংসার দাবি রাখে। সিনেমাটোগ্রাফার রম্যদীপ দারুণ কাজ করেছেন। চমৎকার সম্পাদনা সংলাপ ভৌমিকের। সোমনাথ কুণ্ডুর মেকআপ এককথায় অসাধারণ। মন ছুঁয়ে যায় সিরিজের গান। অমিত চট্টোপাধ্যায়ের সুরে ইমন চক্রবর্তীর গাওয়া ‘পাখিদের স্মৃতি’ মনকে অন্য জগতে নিয়ে যায়।
সিরিজটি জাগিয়ে তোলে মানকচুবাটা এবং মাছের ঝোলের পবিত্র স্মৃতি। প্রথম সিজনে রয়েছে চারটি এপিসোড। দ্বিতীয় সিজনে থাকবে বাকি চারটি। তার জন্য অপেক্ষা ২৪ মার্চ পর্যন্ত।

Latest article