প্রতিবেদন : বাম আমলে চাকরির দুর্নীতি-চিরকুট-সুপারিশ ও কোটারি নিয়ে হাটে হাঁড়ি ভেঙে ভেঙে দিলেন উদয়ন গুহ। তাঁর বাবা প্রয়াত ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা কমল গুহও যে চিরকুটের সুপারিশে কোটারিতে বহু মানুষকে চাকরি দিয়েছেন সেকথাও স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী। প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক হওয়ার জন্য কোনও যোগ্যতার মানই ছিল না। মাধ্যমিক পাশ হলেই কোটায় চাকরি হয়ে যেত।
আরও পড়ুন-শহিদ মিনারেই সভা, চূড়ান্ত প্রস্তুতি শুরু
সার্টিফিকেট থাকলেই হত। এটা কি দুর্নীতি নয়? প্রশ্ন উদয়নের। একইসঙ্গে তাঁর মন্তব্য, বাম আমলে কোটার চাকরি ভাগ হত। সেই সময় আমি ফরওয়ার্ড ব্লক করতাম। বলতে দ্বিধা নেই, চাকরির একটা বড় ভাগ থাকত সিপিএমের দখলে, দ্বিতীয় পার্টি হিসেবে একটা অংশ ফরওয়ার্ড ব্লকের জন্য আর বাকি সামান্য অংশ আরএসপি, সিপিআইয়ের নামে ভাগ হত। কোটা অনুযায়ী যার নাম দেওয়া হত সেই হয়ে যেত মাস্টার। প্রাক্তন ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা এবং বর্তমানে দিনহাটার বিধায়ক ও উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীর এই বিস্ফোরক মন্তব্যের পর মুখ লুকোনোর জায়গা খুঁজে পাচ্ছে না সিপিএম। নিজেদের অতীত দুর্নীতি ও চিরকুটে চাকরির ‘কারনামা’ এভাবে একজন প্রাক্তন বাম নেতা প্রকাশ্যে এনে হাটে হাঁড়ি ভেঙে দেওয়ায় পরিস্থিতি সামলাতে জুতসই যুক্তি খুঁজছেন সিপিএমের ফেসবুক ও ভার্চুয়াল নেতা-নেত্রীরা।
আরও পড়ুন-কড়া পদক্ষেপ নিল রাজ্য, ২৩ হাজার শিক্ষককে শো-কজ, অনুপস্থিত কর্মীদের বেতন কাটার নির্দেশ
শনিবার দিনহাটায় নিজের বাড়িতে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে উদয়ন গুহ বলেন, এই দুর্নীতির দায় আমারও। এই দায় আমি এড়াতে চাইছি না। আমি চাইছি সত্যিটা সামনে আসুক। কিন্তু আমি যখন বিধায়ক হয়েছি তখন তো এই সিস্টেমটা ছিল না। তখন তো কোটা সিস্টেম উঠে গেছে। মুখ্যমন্ত্রীর কোটায় ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হয়েছে। জয়েন্টে ভাল রেজাল্ট করেও চাকরি হয়নি মেধাবী ছাত্রদের। তখন তো ডাক্তারিতে সিট অনেক কম থাকত। সেকেন্ড ডিভিশনে পাশ করে মুখ্যমন্ত্রীর কোটায় ডাক্তার হয়েছে অনেকেই। আমার কাছে ১০০ জনের নামের তালিকা আছে। যদি কেউ দেখতে চায় আমি দেখিয়ে দিতে পারি। আর কয়েকজন মিলে বসে যদি আলোচনা করি তাহলে সেই নামের তালিকা আরও দীর্ঘ হবে। সাফ কথা উদয়নের।
আরও পড়ুন-মাঝ আকাশে অচেতন পাইলট, বিমান নামালেন যাত্রী কাম পাইলট
এই ঘটনায় প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, সবাই জানে কী ঘটেছে। একক ভাবে তৃণমূলকে যেভাবে আক্রমণ করছে, শুরু কাদের হাত দিয়ে? আমাদের দলের লোকজনকে তো বহিষ্কার করা হয়েছে। তদন্তের আওতায় তারা পড়েছে। যারা করে গেছে তাদেরও তদন্তের আওতার মধ্যে আনা হোক। সুজন চক্রবর্তীর স্ত্রীর চাকরির ক্ষেত্রে অনিয়ম হয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক ও মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, উদয়ন গুহ যা বলেছেন, তা বাম জমানার দুর্নীতির প্রতিফলন। কমল গুহ একজন প্রতিষ্ঠিত নেতা ছিলেন। ওদের কোটা ছিল। সিপিএম বড় শরিক তাই বেশি পেত, বাকিরা কম পেত। এটা তারই প্রতিধ্বনি।
আরও পড়ুন-ভোটের মুখে বাতিল মুসলিমদের সংরক্ষণ
কুণালের সংযোজন, সিপিএমের হোলটাইমার মানেই একটা করে সরকারি চাকরি। এরা এত সৎ যে বাড়িতে বাড়িতে সরকারি চাকরি হয়েছে। তখন তো মুখের কথায় চাকরি হত। হোলটাইমারদের চাকরিজনিত লেভি পার্টি পেত। হাজার হাজার কমরেডকে আর্থিক সুবিধে দেওয়া হয়েছে এবং এভাবেই দলীয় তহবিল গড়ে উঠেছে অনৈতিকভাবে।