অলোক সরকার: ৪৭ বলে ৯৮ নট আউট থেকে যশস্বী জয়সোয়াল যখন ফিরে আসছেন, সবার আগে নাইট (KKR vs RR) ক্রিকেটাররাই দৌড়ে এসে তাঁকে অভিনন্দন জানালেন। গ্যালারিও সেই মুডে। তখনও বিহ্বল ভাব কাটেনি কারও। ক্রিস গেইল, বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা কোনও আইপিএল ম্যাচে এমন দাপুটে ইনিংস খেলেছেন বলে মনে পড়ছে না। ১৩ বলে হাফ সেঞ্চুরি। কে এল রাহুলকে টপকে নতুন রেকর্ড। কিন্তু যেভাবে সেঞ্চুরি ফেলে দিয়ে ম্যাচ নিয়ে গেলেন, সেটা তাঁকে মহানায়ক বানিয়ে দিল।
দশটার পর ইডেন ফাঁকা হতে শুরু করেছিল। যাঁরা থাকলেন, তাঁদের অনেকেই এবার রাজস্থান সমর্থক! কিছু করার নেই। নাইটদের ঘরের মাঠে রাজস্থান এভাবে ম্যাচ নিয়ে গেলে লোকে কী করবে! যশস্বী ও সঞ্জু স্যামসন (৪৮ নট আউট) মিলে ম্যাচটা এমনভাবে ছিনিয়ে নিলেন যে, বেগুনি গ্যালারি অতঃপর আওয়াজ তুলল, আসছে বছর আবার হবে! অর্থাৎ বিদায় ২০২৩।
৪১ বল বাকি রেখে ম্যাচ নিয়ে গেল রাজস্থান (KKR vs RR)। জিতে তারা প্লে-অফের দৌড়ে এগিয়ে গেল। আর কেকেআর সেই ১০ পয়েন্টেই আটকে থাকল। আর কোনও সুযোগ আছে? কার্যত নেই। কিন্তু অঙ্কের হিসাবে পুরোপুরি উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু অতি বড় সমর্থকও এটা বিশ্বাস করছে না যে শেষ চারে নাইটরা আছে।
যশস্বী যেভাবে শুরু করেছিলেন, তাতে মনে হচ্ছিল জয়ের সঙ্গে নেট রানরেটটাও দেখছে রাজস্থান। কিন্তু নীতীশ রানা কেন প্রথম ওভারে বল করতে এসে সুবিধা করে দিলেন, তার জবাব কে দেবে! হাতে তিনজন মহাত্রাস স্পিনার থাকতেও নীতীশ এসে চ্যালেঞ্জটাই হালকা করে দিলেন। প্রথম ওভারে যশস্বী ২২ রান তুলে নেওয়ার পর ম্যাচ এত সহজ হয়ে গেল যে পরে ৮.১ ওভারে ১০০/১ করে ফেলে রাজস্থান রয়্যালস। তারপর ১৩.১ ওভারে ম্যাচ শেষ। তাও নাইটদের মাঠে।
পরের দিকে উইকেট আরও স্লো হয়ে গিয়েছিল, এটা ঘটনা। কিন্তু কেকেআরের স্পিনাররা এই ক’দিন যে ত্রাসের ব্যাপারটা তৈরি করেছিলেন, সেটা এই এক ম্যাচে জলে চলে গেল। বাটলার (০) দ্বিতীয় ওভারে রান আউট হওয়ার পর ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ ছিল। বোর্ডে রাজস্থানের রান তখন ৩০/১। কিন্তু এরপর সঞ্জু এসে যশস্বীর পাশে দাঁড়াতেই আস্তে আস্তে জয়ের দিকে এগিয়ে গেল ‘আর আর’। শেষমেশ জিতল অনায়াসে।
ক্রিকেট নিউজিল্যান্ডের বার্ষিক চুক্তি থেকে ট্রেন্ট বোল্ট নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন বিশ্বজুড়ে টি-২০ লিগ খেলবেন বলে। কিন্তু এখন যত বিশ্বকাপ সামনে আসছে, তাঁর আকুতি বাড়ছে মেগা ইভেন্টে খেলার জন্য। কোথায় যেন বোল্টের নিজেকে প্রমাণ করার তাগিদও ছিল। আর সেই তাগিদ থেকে যাবতীয় ঝাল উগরে দিলেন নাইটদের দুই ওপেনারের উপর। যার ফল এটাই ২.২ ওভারে জেসন রয় (১০) আউট। নাইটদের প্রথম উইকেট চলে গেল স্রেফ ১৪ রানে।
দাঁড়ান, বোল্টের বিধ্বংসী মেজাজ কিন্তু মিইয়ে যায়নি। এবার তাঁর শিকার রহমানুল্লাহ গুরবাজ(১৮)। বোর্ডে ২৯/২। কেকেআর সত্যিই চাপে। যে চাপটা পরে একটু কাটল ভেঙ্কটেশ (৫৫) আর নীতীশের (২২) ব্যাটে। ৪৮ রানের পার্টনারশিপ খুব বড় নয়। কিন্তু এই জুটি কলকাতা নাইট রাইডার্সকে লড়াইয়ের জায়গা দিল। নাইটরা সামান্য ঘুরে দাঁড়াল। নাহলে ‘আর আর’ বোলারদের আক্রমণে খুব বিপদে পড়েছিল কেকেআর।
কিন্তু দলটা যখন প্রায় দাঁড়িয়ে গিয়েছে, তখন রাসেল (১০) উইকেট দিয়ে গেলেন আসিফকে। অফ স্ট্যাম্পের উপর শর্ট পিচড বল। অনায়াসে স্কোয়ার কাট মারতে পারতেন। সেটা না করে পয়েন্টের উপর দিয়ে ওড়াতে গিয়ে ধরা পড়লেন অশ্বিনের হাতে। রাসেল পরপর দুটো ম্যাচে কেকেআর ব্যাটিংকে ভরসা দিয়েছেন। কিন্তু এদিন এমন এক সময়ে নাইটদের ফেলে গেলেন, যেখান থেকে ভেঙ্কটেশ ও রিঙ্কু কেকেআরকে টেনে নিয়ে যেতে পারেন, অথৈ জলেও ফেলতে পারেন!
সঞ্জু টসে জিতে কেকেআরকে আগে ব্যাট করতে দেন। এটা এমন এক ম্যাচ যেখানে স্পিনারদের বাজিমাত করার ছিল। যে উইকেটে খেলা হল, সেটা স্লো টার্নার। কিন্তু প্রথম দু’ওভারে যে মার আশ্বিন খেলেন তাতে এটা সেই উইকেটই কি না সন্দেহ হচ্ছিল। শেষমেশ ৪ ওভারে ৩২ রান অশ্বিনের। তবে তিনি যেটা পারেননি, সেটাই করলেন যুজবেন্দ্র চাহাল। হাওয়ায় খুব বেশি বল রাখেন না তিনি। বদলে বাইশ গজ থেকে যে কামড় পান, সেটাই পার্থক্য গড়ে দিল। ভেঙ্কটেশ (৫৭), নীতীশ, শার্দূল (১), রিঙ্কু (১৫), টপাটপ সবাইকে তুলে কেকেআরকে ১৪৯/৮-এ আটকে দিলেন। চাহালের গড় ৪-০-২৫-৪। পার্পল ক্যাপ গেল তাঁর মাথাতেই। এই আইপিএলে ২১ উইকেট হল চাহালের। সবমিলিয়ে ১৮৭। ডোয়েন ব্র্যাভোর ১৮৩ উইকেটকে টপকে গেলেন তিনি।
আরও পড়ুন: লাইনচ্যুত ডাউন বর্ধমান-ব্যান্ডেল লোকাল! ১০ ঘণ্টার ওপর বন্ধ ট্রেন-চলাচল, দুর্ভোগে যাত্রীরা