আসানসোলের রামসায়ের ময়দান
যাত্রার আসর বসেছে। একটি সামাজিক যাত্রাপালা হবে সেখানে। যাত্রাটির নাম ‘মেয়েরা কবে স্বাধীন হবে’। হাজার দর্শকের ভিড়। দারুণ চলল সেই পালা। যাত্রা শেষ হল কিন্তু তারপরেও সবাই বসে রয়েছেন, নড়ছেন না। কেন? তার কারণ, তাঁদের প্রিয় অভিনেত্রী বীণা দাশগুপ্ত এবার মঞ্চে গান পরিবেশন করবেন। নিজের অভিনীত পুরনো যাত্রাপালাগুলো থেকে তিনি দুটো গান গাইবেনই। এটাই উনি সাধারণত করে থাকেন। অপূর্ব গানের গলা তাঁর। সময় খানিকটা এগিয়ে এসেছে। এখন অভিজ্ঞতায় বেশ প্রাজ্ঞ বীণা দাশগুপ্ত। দর্শকদের এই অনুরোধটুকু রাখতেই হয় তাঁকে যাত্রার আসরে এসে। আর সেই আশায় অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন দর্শক। সময় বয়ে যায়। অবশেষে মঞ্চে উঠলেন বীণা দাশগুপ্ত। তিনি তখন যাত্রালক্ষ্মী। তাঁর হাত ধরে যাত্রার স্বর্ণযুগ দেখে ফেলেছেন যাত্রামোদী দর্শক। সেই স্বর্ণযুগের সাক্ষী ছিলেন অনেকেই— বীণা দাশগুপ্ত তাঁদের অন্যতম। তাঁকে দেখে দর্শক আসনে আনন্দের জোয়ার এল। কেউ অনুরোধ করলেন— ‘‘নটি বিনোদিনী’র ‘যেন ঠাঁই পাই তব চরণে’ গানটি শোনাতে হবে।” আবার কেউ বললন— ‘‘মীরার বঁধূয়া’ যাত্রাপালার ‘জাত সঁপেছি কৃষ্ণপায়ে’ গানটা শোনাতে।” দুটো গানই গাইলেন তিনি। মুগ্ধ দর্শকদের করতালি-ধ্বনিতে ভরে উঠল চারপাশ।
আরও পড়ুন-ইস্টবেঙ্গলে আজ সলমন
যাত্রার তখন সুদিন। সেই ষাট-সত্তরের দশকে এই ‘মীরার বঁধূয়া’ যাত্রাপালাটি দেখতে ট্রাক্টরে চড়ে বর্ধমানের অগ্রদ্বীপ থেকে লোক এসেছিল। নিরুপায় হয়ে যাত্রা শুরুর আগেই টিন খুলে দিতে হয়েছিল যাত্রা-আয়োজকদের।
নটি বিনোদিনী বীণা
১৮৭৪ সালে শত্রুসংহার নাটকে আত্মপ্রকাশ করেন বিনোদিনী দাসী দ্রৌপদীর সখী হিসেব। তারপর বাকিটা ইতিহাস। নাট্যসম্রাট গিরিশ ঘোষের হাতে মাটির পুতুলের মতো গড়ে ওঠা সেই বিনোদিনীর দাসী থেকে নটি হয়ে ওঠা প্রথম মহিলা সুপারস্টার। নটি বিনোদিনী, যিনি শুধু নিজে সুপারস্টার হননি, অনেককে সুপারস্টার করেছেন। কে নেই সেই তালিকায়? তাঁর চরিত্রে অভিনয় করে খ্যাতির শীর্ষে উঠেছেন যাত্রা, নাটক, সিনেমা— সব মাধ্যমগুলি মিলিয়ে প্রায় অন্তত একডজন অভিনেত্রী। যাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন বীণা দাশগুপ্ত। ‘নটী বিনোদিনী’র চরিত্রে অভিনয় করে তাঁর জনপ্রিয়তা তুঙ্গে ওঠে। ১৯৭৩ সালে অরুণ দাশগুপ্ত, বীণা দাশগুপ্ত অভিনীত যাত্রাপালা ‘নটি বিনোদিনী’ গোটা পশ্চিমবঙ্গে সাড়া ফেলে দেয়। এই পালার নির্দেশকও ছিলেন অরুণ দাশগুপ্ত। এর জন্য শ্রেষ্ঠ নির্দেশনার পুরস্কারও পান তিনি। এই ‘নটি বিনোদিনী’ই বীণা দাশগুপ্তকে উন্নীত করল যাত্রালক্ষ্মী বীণা দাশগুপ্ত হিসেবে। সেই কারণেই পরবর্তীকালে তিনি যেখানে যেতেন যাত্রার শেষে এই পালার বিখ্যাত গানটি সবাই শুনতে চাইতেন।
আসানসোলের সেই যাত্রার আসর এবং এমন অনেক আসর প্রমাণ করেছিল বীণা দাশগুপ্তর প্রতি হাজার হাজার মানুষের অসম্ভব প্রত্যাশার কথা। যাকে একঝলক দেখার জন্য সারারাত অপেক্ষা করতেন দর্শক। যাত্রামঞ্চের দাপুটে অভিনেত্রী বীণা দাশগুপ্ত। আপ্রাণ ভালবেসেছিলেন অভিনয় এবং যাত্রাকে। একবার বলেছিলেন, ‘‘অভিনয় আমার জীবনের সর্বস্ব, তাই দর্শকদের আনন্দ দেওয়ার জন্য আমার চেষ্টা সর্বক্ষণ একইরকম থাকে।’’
আরও পড়ুন-হোমস্টে মার্ডারস
ছোট্ট নিমাই
১৯৪৮— মতান্তরে ১৯৫২ সালের বাংলাদেশের তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ফরিদপুরে জন্ম বীণার। বাবা রমেশচন্দ্র ভট্টাচার্য, মা অরুণাবালা দেবী। বাবা পালাগান লিখতেন, অভিনয় করতেন, গান গাইতেন। কীর্তনের আসর মাতিয়ে দিতেন। বাবার সুযোগ্যা কন্যা বীণাও ওই ছোট্ট বয়সে নিমাই সেজে আসর মাত করতেন। মেয়ে বীণার গানের গলা ছিল অসাধারণ। দরদি মরমি কণ্ঠে কীর্তন গাইতেন। মেয়ের প্রতিভায় অবাক পিতা। এদিকে সংসারে ভীষণ অভাব, অর্থের টানে মেয়ের পড়াশুনো চালাতে পারলেন না বেশিদিন। আঠারো বছরে বাবার উদ্যোগে যাত্রায় অভিনয় শুরু। তাঁর প্রথম নাট্যশিক্ষক ছিলেন শান্তি চক্রবর্তী। এরপর কলকাতায় চলে আসেন এবং যাদবপুর অঞ্চলে থাকতেন বীণা। তাঁর প্রথম যাত্রাপালা শৌখিন যাত্রাদলের ‘নাচমহল’ ও ‘সিরাজদ্দৌলা’। এরপর একের পর এক সুপারহিট নাটক উপহার দেন তিনি। প্রভাস অপেরা, লোকনাট্য, নট্ট কোম্পানি, অগ্রগামী, সত্যনারায়ণ, ভৈরব অপেরা, নবরঞ্জন অপেরায় তাঁর বহু নাটক মঞ্চস্থ হয়। তাঁর অসাধারণ অভিনয়-গুণে এবং গানে জনপ্রিয় হতে শুরু করলেন। ধীরে ধীরে কলকাতার চিৎপুর পাড়ার খ্যাতনামা অভিনেত্রী হয়ে উঠলেন বীণা দাশগুপ্ত। একদিকে, যাত্রার উত্তমকুমার নামে খ্যাত নট স্বপনকুমার ও অন্যদিকে বীণা। এরপর সেই চিরন্তন জুটি বীণা দাশগুপ্ত এবং অভিনেতা, নির্দেশক অরুণ দাশগুপ্তর পর্ব শুরু হয়। একের পর এক সফল যাত্রাপালা উপহার দিয়েছেন তাঁরা যা দর্শক মনে রাখবে আজন্মকাল।
আরও পড়ুন-মহানগর নয়, চারুলতাই মানিককাকুর সেরা ছবি : জয়া বচ্চন
মিলেমিশে আত্মহারা
অভিনয় চলাকালীন দর্শকদের মাঝে ছুটে চলে যেতেন যাত্রালক্ষ্মী। ‘আমি নিমাই-এর মা’ পালায় শচীমাতার চরিত্রে অনবদ্য অভিনয় করেছিলেন বীণা। সেই যাত্রাপালার শেষদৃশ্যটি করার সময় নিমাই নিমাই… বলে মঞ্চ থেকে নেমে দর্শকদের মাঝে ভিড়ে মিশে আত্মহারা হয়ে যেতেন। এমনটা কেন হত— সেই প্রশ্ন করলে একবার তিনি বলেছিলেন, ‘‘শচীমাতার আবেগকে আমি কিছুতেই নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারি না। নিমাইয়ের খোঁজে যাত্রার আসরের আনাচ-কানাচে আমি তখন পাগলিনীর মতো ওইভাবে ছুটে যাই। আসলে আমি দর্শকদের সঙ্গে ওইভাবেই একাত্ম হতে চাই।’’ ‘নদের নিমাই’ যাত্রাপালায় শচীমাতার চরিত্রে তাঁর অভিনয় দেখে দর্শকরা চোখের জল ধরে রাখতে পারতেন না। এমন আত্মহারা অভিনেত্রী ক’জনই বা হন!
আরও পড়ুন-দিনের কবিতা
অরুণ-বীণার জুটি
স্বপনকুমার-স্বপ্নাকুমারী, বেলা সরকার-বিজন মুখার্জি জুটির তখন খুব কাটতি। ষাট, সত্তরের দশকে তখন শক্তিশালী জুটিরা আসতেন মঞ্চে। জুটিতেই তৈরি হত এক-একটা দুর্দান্ত যাত্রাপালা। ঠিক সেই মাহেন্দ্রক্ষণে জুটি বাঁধলেন বীণা দাশগুপ্ত এবং অরুণ দাশগুপ্ত। বীণা দাশগুপ্তর সঙ্গে স্বপনকুমারও জুটি বেঁধেছেন। কিন্তু সবচেয়ে জনপ্রিয় হল বীণা-অরুণ দাশগুপ্তর জুটি। তাঁর অভিনয়ের দক্ষতার আসল কারিগর হলেন অরুণ দাশগুপ্ত। বীণাকে গড়ে তুলতে সবচেয়ে সক্রিয় ভূমিকা ছিল তাঁর। তিনি একাধারে ছিলেন বীণা দাশগুপ্তর গুরু। নট্ট কোম্পানির রমারমার যুগে যাঁদের কৃতিত্ব সবচেয়ে বেশি, তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন অরুণ দাশগুপ্ত। ১৯২৮ সালে উত্তর কলকাতার কুমোরটুলিতে জন্ম প্রবাদপ্রতিম এই অভিনেতা অরুণ দাশগুপ্তর। উত্তরা পালায় তাঁর প্রথম যাত্রাভিনয়। খ্যাতি ছড়িয়ে পড়তে সময় লাগল না। মাঝে মাঝে শৌখিন নাট্যদলে যেতেন। এরপর এসে পড়লেন ভারতীয় রূপনাট্যমে। ‘বিদ্যাপতি’ পালার মাধ্যমে পেশাদারভাবে যাত্রাজগতে প্রবেশ অরুণ দাশগুপ্তর। এরপর একে একে নবযুগ অপেরা, বীণাপাণি নাট্যকোম্পানি, বৈকুণ্ঠ যাত্রা সমাজ, নট্ট কোম্পানি, শ্রীমা ও জনতা অপেরা এবং সবশেষে অগ্রগামী যাত্রাদলে অভিনয় করেন। অরুণ দাশগুপ্ত তাঁর জীবনের প্রথম পর্বে নবযুগ অপেরায় যখন অভিনয় করছেন তখন বীণা দাশগুপ্তর সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। এখানে ভৈরব গঙ্গোপাধ্যায় রচিত ‘নাচমহল’ ও ‘সিরাজদ্দৌলা’ পালায় অভিনয় করলেন দু’জনে একসঙ্গে। দু’জনের মধ্যে ধীরে ধীরে সখ্য গড়ে ওঠে।
আরও পড়ুন-সুন্দরবনে তৎপরতা শুরু বিপর্যয় মোকাবিলা দলের নদীপথে মহড়া, স্থলপথে চলছে মাইকিং
পরবর্তী জীবনে ষাটের দশকের শেষ দিকে অভিনেতা ও পরিচালক অরুণ দাশগুপ্ত এবং বীণা দাশগুপ্ত পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন। স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে দীর্ঘ কয়েক বছর বিভিন্ন যাত্রা দলে অভিনয় করেছেন এবং অরুণ দাশগুপ্ত অভিনয়ের পাশাপাশি পরিচালনাও করেছেন। বিশেষত নট্ট কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পর। যার মধ্যে অন্যতম ‘রাজা রামমোহন’, ‘নটী বিনোদিনী’, ‘মীরার বঁধুয়া’, ‘চাঁদ বিবি’, ‘মা-মাটি-মানুষ’, ‘অচল পয়সা’, ‘তালপাতার সেপাই’, ‘ব্রজের বাঁশরী’ ‘জাত সঁপেছি কৃষ্ণ পায়ে’, ‘মা বিক্রির মামলা’-সহ একাধিক পালা। বাংলা যাত্রাজগতে অরুণ দাশগুপ্ত অবশ্যই একটি উল্লেখযোগ্য নাম। অভিনয় এবং পরিচালনা দুটো ক্ষেত্রেই তিনি ছিলেন সমান দক্ষ।
আরও পড়ুন-পথ দুর্ঘটনায় আহতের উদ্ধারকীরকে হয়রানির হাত থেকে রক্ষা করতে উদ্যোগী রাজ্য
‘নটি বিনোদিনী’ যাত্রাপালার একটি দৃশ্য। রসরাজ অমৃতলালের সঙ্গে বিনোদিনী দেখা করতে এসেছেন গিরিশ ঘোষের কাছে। বিনোদিনী করজোড়ে গিরিশ ঘোষকে বলছেন, ‘‘আপনি আমাকে শিখিয়ে-পড়িয়ে মানুষ করে নিন মাস্টারমশাই। আপনি যা বলবেন আমি তাই শুনব।’’ এমনকী তাঁর উদ্দেশে গেয়েছিলেন সেই বিখ্যাত গানটি ‘যেন ঠাঁই পাই তব চরণে…।’ মঞ্চে যাত্রাপালার আসরে বিনোদিনী বীণা দাশগুপ্ত গিরিশরূপী অরুণ দাশগুপ্তকে বাস্তবে সেই কথাই যেন বারবার বলতেন। নিজে হাতে করে গড়ছিলেন বীণাকে অরুণ দাশগুপ্ত।
গুরু-শিষ্যার এই অমোঘ সম্পর্ক পেশাগত জীবন এবং ব্যক্তিগত জীবনেও ছিল অক্ষুণ্ণ। একটি সাক্ষাৎকারে বীণা দাশগুপ্ত স্বামী অরুণ দাশগুপ্ত সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘‘উনিই আমাকে ঠিকমতো তৈরি করেছেন, অভিনয়ের যেটুকু শিখেছি তাঁর কৃতিত্ব পুরোটাই ওনার।’’
আরও পড়ুন-লাইনচ্যুত ডাউন বর্ধমান-ব্যান্ডেল লোকাল! ১০ ঘণ্টার ওপর বন্ধ ট্রেন-চলাচল, দুর্ভোগে যাত্রীরা
অভিনয়ের মেজাজটাই আসল
ষাটের দশকে তখন যাত্রায় মাইকের ব্যবহার ছিল না। সত্তরের দশকে মাইকের প্রচলন হয়েছে। তখনকার দিনে এক-একটা যাত্রায় পাঁচ হাজারের ওপর দর্শক হত। এত লোক যে, স্টেজে উঠে মাইক ছাড়া অভিনেতা বা অভিনেত্রীদের চিৎকার করে সংলাপ বলতে হত যাতে একেবারে শেষ সারির দর্শকাসন পর্যন্ত সেই গলা পৌঁছয়। মাইক নেই তাই চিৎকার করে বলা ছাড়া তখন গতি নেই। সেটার কারণেই যাত্রাকে মেলোড্রামাটিক আখ্যা দেওয়া হত। এই ট্রাডিশনটা কিন্তু ওখান থেকেই এসেছে যে যাত্রা মানেই চিৎকার। পরবর্তীকালে অনেক মাইকের ব্যবহার শুরু হওয়ার পর কমে গিয়েছিল সেই সমস্যা। বীণা দাশগুপ্ত গর্ব করতেন এই যাত্রা মাধ্যমটি নিয়ে। তিনি একবার এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘‘যাত্রা অন্যান্য মাধ্যমের চেয়ে বরাবরই বেশ আলাদা। যাত্রার অভিনেতা-অভিনেত্রীদের নিজের গলাতেই গান গাইতে হয়, সিনেমার মতো তাঁদের লিপ মেলালে চলে না। নিজেদেরই মেক-আপ করতে হয়। এখানে কোনও মেক-আপ আর্টিস্ট বলে কিছু হয় না।’’
আরও পড়ুন-অভিষেককে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত কাশীপুর
শিল্পীর নিজস্ব গ্রিনরুমটা ছিল তাঁর কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ। যা সব জায়গায় একইরকমভাবে সাজানো হত। একইরকম ভাবেই তৈরি করা হত সেই গ্রিনরুম। নিজের গ্রিনরুমে সেই চেনা পরিবেশে না বসলে, সেখানে মেক-আপ না করলে ঠিক যাত্রার মেজাজটা তৈরি হত না তাঁর। সহকর্মী বা নতুনদের জন্য বীণাদির স্নেহের অন্ত ছিল না। আশির দশকে তখন সদ্য থিয়েটার থেকে যাত্রায় এলেন রুমা দাশগুপ্ত। অভিনয় করছিলেন ঠিকই, কিন্তু কোথাও একটা খামতি থেকে যাচ্ছিল। কারণ থিয়েটার আর যাত্রার মধ্যে একটা তফাত রয়েছে সেটা বুঝতে পারছিলেন না। একদিন সকলের আড়ালে তাঁকে ডেকে বুঝিয়ে দিলেন ভুলটা ঠিক কোথায় হচ্ছে। হাতে ধরে তাঁকে যাত্রার অভিনয়-স্টাইল শেখালেন। শিল্পী সংগঠন যাত্রাপ্রহরীর জয়েন্ট সেক্রেটারি পদে ছিলেন বীণা দাশগুপ্ত। পরিবার, দুই সন্তান এবং পুত্রবধূদের সঙ্গে ছিল মধুর সম্পর্ক।
আরও পড়ুন-তৃণমূলকে শক্তিশালী করতে চাই : মুকুল সাংমা
যাত্রায় যখন অপূরণীয় ক্ষতি
প্রথম পর্বে নায়িকা হিসেবে এবং পরবর্তী পর্বে চরিত্রাভিনেত্রী হিসেবে চুটিয়ে অভিনয় করে গেছেন বীণা দাশগুপ্ত। শুধু যাত্রা নয়, তিনটে বাংলা ছবি যার মধ্যে অন্যতম হল শত্রুমিত্র এবং গুরু শিষ্যা এবং একটি টিভি সিরিয়ালেও কাজ করেছেন। কিন্তু জীবনের শেষদিন পর্যন্ত আঁকড়ে ধরে রেখেছিলেন যাত্রাকেই। ২০০৫ সালের ৪ এপ্রিল ‘আমি রাম রহিমের মা’ পালা শেষ করে বর্ধমানের একটি গ্রাম থেকে ফিরছিলেন তিনি। ফেরার সময় একটি মালবাহী গাড়ির সঙ্গে তাঁর গাড়ির সংঘর্ষ হয় এবং ঘটনাস্থলেই মাত্র ৫২ বছর বয়সে মৃত্যু হয়। যাত্রাজগতে এক অপূরণীয় ক্ষতি হয়, এক স্বর্ণযুগের অবসান হয় বীণার দাশগুপ্তের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে।