সৌপ্তিক বন্দ্যোপাধ্যায় : দশমী মানে দুর্গা নাম। দশমী মানে মিষ্টি, কোলাকুলি। দশমী মানে চোখ ছলছল জলে মা’কে আরও একবার বিদায় জানানো। কিন্তু এই পরিবারে দশমীতেই হয় আসল উৎসব। যার শুরু হয় নবমীতে।
নবমীর নিশিকে যখন বাঙালি আঁকড়ে ধরে রাখার চেষ্টা করে তখন বাঁকুড়ার সেন পরিবারে শুরু হয় উৎসব। মাছ মাংসে বিশাল উৎসবের চেহারা নেয় দশমীতে। বাঁকুড়া জেলার সেন পরিবারে হয় এক ব্যতিক্রমী দুর্গাপুজো। অন্যান্য পুজোর থেকে এই পুজো ব্যতিক্রমী এই কারণেই যে এখানে দুর্গাপুজো দুই দিনের। নবমী ও দশমী।
প্রায় ২০০ বছরের বেশি প্রাচীন বাঁকুড়ার আকুই গ্রামের পশ্চিমপাড়ায় এই দুর্গাপুজো। এখানে মায়ের মুর্তি আসে না। ঘটে দেবীর আরাধনা হয়। অনেক আগে , পরিবারের যখন জমিদারি ছিল তখন দেবীমূর্তি আসত। মূর্তি পুজো যে কবে বন্ধ হয়েছে সেটা কারোও ঠিক জানা নেই। কিন্তু ভাটা পড়েনি ব্যতিক্রমী উৎসব ও দশমীর মহাবনভোজনে।
এই বাড়িতে নবমী আর দশমীর দিন বলি দেওয়ার রীতি রয়েছে। নবমীর দিন চালকুমড়ো এবং গোড়ালেবু বলি দেওয়া হয় এবং দশমীর দিন বলি দেওয়া হয় চ্যাঙমাছ ও গোড়ালেবু। আর এই চ্যাঙমাছ বলির পর হইহই করে খাওয়াদাওয়া হয় বাড়িতে। বিশেষ মেনু পাঁঠার মাংস।
যে বাড়িতে দুর্গাপুজোয় পুজো হয়, সে বাড়িতে দশমীতে পাঁঠার মাংসও হয়। দুর্গামালায় অর্থাৎ বাড়ির দুর্গামণ্ডপে ঘটপুজোর কিছুক্ষণের মধ্যেই হইহই করে কড়াইতে ওঠে কিলো কিলো পাঁঠার মাংস। বাড়ির উঠানে জ্বলে উনুন। রান্না হয় হইহল্লা করে। জেঠিমা, মা, বৌদি, দিদিদের সঙ্গত দেয় বাড়ির ছোটরাও।
পরিবারের এক সদস্য শ্রয়ন সেন জানিয়েছেন , “মাংস মানে আমরা পাঁঠার মাংসই বুঝি। মুরগির মাংস ওই বাড়িতে অন্য সময়েও ঢুকতেই দেওয়া হয় না। অনেকেই জিজ্ঞাসা করতে পারেন এই বাজারে এখনও কিলো কিলো পাঁঠার মাংস কারা সাবার করে? আমরাই করি। বাঙালির বাড়িতে এখন পাঁঠার মাংস অতীত, মুরগি রান্নাই বেশি হয়। কিন্তু আমাদের এটা দশমীর রীতি, তাই যাই হোক না কেন পাঁঠার মাংস রান্না হবেই।”
পাঁঠার মাংস দিয়ে দুপুর খাওয়ার পাশাপাশি, খাওয়ার জন্য থালা হিসেবে যা ব্যবহার করা হয়, তাও দারুণ একটা জিনিস। পদ্ম পাতা। শাল পাতা, কলা পাতা তো এসবে আম বাঙালি খেতে অভ্যস্ত , কিন্তু পদ্ম পাতায় খাওয়াদাওয়া খুব একটা দেখা যায় না। সেই দৃশ্যের দেখা মেলে এই বাড়িতে। আসলে পুকুর পাড় থেকে পদ্ম পাতা তুলে আনা হল। দশমীর দুপুরে পদ্ম পাতায় পাত পেড়ে পাঁঠার মাংস দিয়ে জমে ওঠে বনভোজন।