প্রতিবেদন : এবার ভরা এজলাসের মধ্যেই ধরা পড়ল জয়েন্ট এন্ট্রান্স (Joint Entrance) পরীক্ষার্থীর জালিয়াতি। এজলাসের মধ্যেই ফোনে কিউ আর কোড স্ক্যান করে জালিয়াতি ধরা পড়ার পর জালিয়াতকে ছেড়েও দেওয়া হল। বুধবার কলকাতা হাইকোর্টে বিচারপতি কৌশিক চন্দর এজলাসের এই ঘটনায় হইচই পড়ে গিয়েছে। একইসঙ্গে এই প্রশ্নও উঠেছে, শিক্ষার আঙিনায় সংশ্লিষ্ট বোর্ডের বা শিক্ষা দফতরের কোনও সামান্যতম ভুল-ত্রুটি থাকলেও সেখানে ইডি-সিবিআইয়ের নিদান দেওয়া হচ্ছে। অথচ এর উল্টোটা হলে তখন বিচারপতিরা হঠাৎ দয়ালু হয়ে উঠছেন। এক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। স্রেফ নাদান বলে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে ওই জালিয়াত ছাত্রকে। ঠিক কী ঘটেছিল আদালতে? চলতি বছরে জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষা দেওয়া এক ছাত্র মামলা ঠুকে অভিযোগ করেন, পরীক্ষার ফলাফলে তাঁর র্যাঙ্কে ভুল আছে। এর বিহিত চাই।
ওই ছাত্রের দাবি, তিনি যখন প্রথম ওয়েবসাইটে নিজের র্যাঙ্ক দেখেন তখন তাঁর জিএমআর বা জেনারেল মেরিট র্যাঙ্ক ছিল ১৬ এবং পিএমআর বা ফার্মেসি মেরিট র্যাঙ্ক ছিল ২৪১। কিন্তু পরে তিনি আবার যখন পরীক্ষা করেন তখন দেখা যায় তাঁর জিএমআর হয়েছে ১৪৩৯ এবং পিএমআর হয়েছে ৩২৮৫। এরপরই আদালতের দ্বারস্থ হয়ে ওই ছাত্রটি অনিয়মের অভিযোগ করে বোর্ডের বিরুদ্ধে।
আরও পড়ুন- জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধীকরণ, আধার ব্যবহারের ছাড়পত্র কেন্দ্রের
প্রথমে এই মামলার শুনানি চলাকালীন বিচারপতি কৌশিক চন্দ জয়েন্ট এন্ট্রান্স (Joint Entrance) বোর্ডের আইনজীবী অমিতাভ চৌধুরিকে বলেন, এরকম জালিয়াতির ঘটনায় সিবিআইকে তদন্তভার কেন দেওয়া দেওয়া হবে না! এর পিছনে কতবড় চক্র রয়েছে কারা যুক্ত তা খুঁজে দেখা দরকার। আরও একটি বড়সড় দুর্নীতির গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। তখন বোর্ডের আইনজীবী উত্তরপত্রে থাকা কিউ আর কোডের উল্লেখ করে বলেন, তা স্ক্যান করে দেখা হোক। বিচারপতি কৌশিক চন্দ নিজের ফোন থেকেই কিউ আর কোড স্ক্যান করলে বুঝতে পারেন ওই ছাত্র জালিয়াতি করেছে। আসলে দ্বিতীয়বার যে র্যাঙ্ক সংক্রান্ত নথি ডাউনলোড করেছেন সেটিই আসল। প্রথমটি জাল। পরপর দুটি ফোন থেকে কিউ আর কোড যাচাইয়ের পর ওই ছাত্রের জালিয়াতি স্পষ্ট হয়ে যায় বিচারপতির কাছে৷ ওই ছাত্রটিও এরপর স্বীকার করে নেন জালিয়াতির বিষয়টি। কিন্তু তিনি ওই ছাত্রকে কোনও শাস্তি না দিয়ে ছেড়ে দেন। এমনকী জয়েন্ট এনট্রান্স বোর্ডকেও বলেন, তারা যেন কোনও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেয়। এখানেই তৃণমূল কংগ্রেসের প্রশ্ন হল, সরকারি সিস্টেমে সামান্য অনিচ্ছাকৃত ভুল পেলেও তা গর্হিত অপরাধ-সংগঠিত অপরাধ বলে দাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সিবিআই-ইডি-সহ যত কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা আছে তাদের তদন্ত করতে বলা হচ্ছে। একবারও ভেবে দেখা হচ্ছে না এতে যার বা যাদের বিরুদ্ধে এই নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে তারা কতটা দোষী বা আদৌ দোষী কি না, সঙ্গে রয়েছে মিডিয়া ট্রায়াল। সামাজিক হেনস্থার মুখে পড়তে হচ্ছে ওই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও তার গোটা পরিবারকে। ঘটনার তদন্ত হওয়ার আগেই পর্যবেক্ষণের নামে যা বলা হচ্ছে তাতে নিমেষে তদন্ত প্রক্রিয়া শেষের আগেই, বিচারের আগেই এক বা একাধিক লোক ভিলেনে পরিণত হচ্ছে। কিন্তু এর উল্টো ঘটনা হলে তখন এত দয়া-দাক্ষিণ্য কীসের? তার মানে শুধুমাত্র সরকারকে-বোর্ডকে অপদস্থ করতে, হেয় করতেই আদালতের একাংশ দিনের পর দিন এই কাজ করে চলেছেন নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য নিয়ে। এর বিচার কে করবে? তবে এখন মানুষ সবই বুঝতে পারছেন। কতটা সত্যি বিচার আর কতটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।