ল্যাটিন শব্দ Perfumare থেকেই এসছে পারফিউম বা সুগন্ধি। বাংলা করলে যার অর্থ ধোঁয়ার মাধ্যমে যে সুগন্ধি ছড়ায়। ঐতিহাসিকদের মতে, খ্রিস্টপূর্ব ২০০০ বছর আগে মিশরে প্রথম সুগন্ধির অস্তিত্ব মেলে। এ ছাড়াও সুগন্ধি তৈরি শিল্প প্রাচীন মেসোপটেমিয়া, সিন্ধু সভ্যতায় শুরু হয়েছিল। ভারতে সুগন্ধির ব্যবহার প্রথম শুরু হয় আরবদের হাত ধরে। আরবে একটা জায়গা রয়েছে যাকে ‘সুগন্ধি ভূমি’ বলা হয়। ২০০৩ সালে প্রত্নতাত্ত্বিকরা সাইপ্রাসে আবিষ্কার করেছিলেন বিশ্বের প্রাচীনতম সূগন্ধি তৈরির কারখানা। মিশরীয়রা বিশ্বাস করতেন সুগন্ধি হচ্ছে ঈশ্বরের ঘাম। সুগন্ধি ব্যবহারের বিবর্তন এসেছে দিনে দিনে। ঈশ্বর ছাড়াও পারফিউমের এই ধোঁয়ার সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে পড়েছে নারী। যুগে যুগে নারীর অঙ্গে লেপটে থেকেছে সুগন্ধির ধোঁয়া। সুন্দর গন্ধের সঙ্গে তাঁদের ভারি যোগসাজশ। সেই কোন যুগ থেকে নারীকে আকর্ষণীয় করে তোলার অন্যতম অনুষঙ্গ হল সুগন্ধি। প্রেম, ভালবাসা, মান, অভিমান, হাসি, কান্না সবকিছুর সঙ্গে জড়িয়ে সুগন্ধি।
আরও পড়ুন-বেনজির পরিস্থিতি ত্রিপুরা বিধানসভায়, সাসপেন্ড হলেন ৫ বিরোধী বিধায়ক
ইতিহাসে সুগন্ধি ও নারী
মিশরীয় ফারাও রাজা-রানিরা অনেকরকম সুগন্ধি ব্যবহার করতেন যার প্রমাণ হল ফারাও তুতেনখামেনের মমি। এই মমি আবিষ্কারের সময় তুতেনখামেনের সমাধিস্থলের ভিতরে একটা তীব্র ঝাঁঝালো সুগন্ধ বেরচ্ছিল। বিশেষজ্ঞদের অনুমান যা আসলে দামি সুগন্ধিই। মিশরের রানিরা মাথায় একধরনের মোম সেঁটে রাখতেন। প্রচণ্ড তাপে সেই মোম গলে শরীরের কোষে কোষে ছড়িয়ে যেত সুগন্ধ। এটা কিন্তু মিশরের রাজারাও করতেন। তবে ফারাও রাজা-রানিদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সুগন্ধপ্রেমী ছিলেন রানি ক্লিওপেট্রা। পারফিউমের খোশবাই তিনি শুধু পছন্দ করতেন এমন নয়, তিনি সুগন্ধি বুঝতেনও। তিনি নাকি ধূপের ধোঁয়ায় সারাদিন নিজেকে আচ্ছন্ন করে রাখতেন। সুগন্ধি প্রস্তুতকারকরা প্রথম একটি ফর্মুলার মাধ্যমে ক্লিওপেট্রার জন্য একটি পারফিউম তৈরি করেছিলেন যার নাম দেন ‘কিফি’। ঐতিহাসিকদের মতে সেই কিফি-ই হচ্ছে সুগন্ধির ইতিহাসে প্রথম পারফিউম। ক্লিওপেট্রা একটা সময় পারফিউমের কারখানাও খুলেছিলেন।
আরও পড়ুন-বাংলা ভাগের ছক কষছে ওরা
মোঘল অন্দরমহলে না ঢুকলে সুগন্ধি-চর্চার কথা সম্পূর্ণ হয় না। মুঘল যুগে সুগন্ধি-চর্চা সবচেয়ে বেশি ছিল জাহাঙ্গির এবং তাঁর স্ত্রী সম্রাজ্ঞী নুরজাহানের সময়। নুরজাহানের সময় তাঁর সবচেয়ে পছন্দের সুগন্ধি ছিল গোলাপি আতর। যাকে ‘আতরে জাহাঙ্গিরি’ বলে সবাই চিনত। নুরজাহানের বিলাসবহুল স্নানঘরের চৌবাচ্চায় গোলাপের পাপড়ি মিশ্রিত জলে ছড়ানো থাকত নানান সুগন্ধিনির্যাস। যার মধ্যে আতর, চন্দন-সহ আরও নানা প্রসাধনী সুগন্ধিও থাকত। কোনও এক গবেষক-সাহিত্যিক লিখেছিলেন, নুরজাহান সুরভিত হতেন গোলাপের নির্যাস দিয়ে স্নান করে যার দৈনিক খরচ ছিল তৎকালীন তিন হাজার টাকা।
আরও পড়ুন-৩২ হাজার চাকরি বাতিল নয় : কোর্ট
ভারতবর্ষের সুগন্ধিচর্চার উল্লেখ মেলে হিন্দু আয়ুর্বেদিক গ্রন্থ সুশ্রুত ও চরক সংহিতায়। সেখানে আতরের কথা বলা হয়েছে। প্রখ্যাত ইতিহাসবিদদের মতে, আরবরা এদেশে আসার পরেই ভারতে সুগন্ধিচর্চা শুরু হয়। কিন্তু বাঙালির সুগন্ধি বলতে তখন শুধুমাত্র চন্দন ব্যবহারের কথাই পাওয়া যায়। নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যর ‘প্রাচীন ভারতীয় সমাজ’ বইটিতে রয়েছে নেপালের মেয়েরা গ্রীষ্মকালে মুখে কস্তুরীচূর্ণ ব্যবহার করত। শোনা যায় ঠাকুর পরিবারের স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ সুগন্ধি পছন্দ করতেন এবং পরিবারের রমণীরা গোলাপ, জুঁইয়ের সুগন্ধি মাখতেন। ঠাকুরবাড়ি থেকে নিয়মিত বরাত যেত আতরের। অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর এক স্মৃতিকথায় সুগন্ধি নিয়ে বলেছেন— ‘তাঁর দিদিমা অর্থাৎ গিরীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্ত্রী যোগমায়া ছিলেন অতি রূপবতী মহিলা। পাশ দিয়ে চলে গেলে মনে হতো পদ্মগন্ধ ছড়াচ্ছে কেউ।’ সেই দিদিমার সাতনরী হারটা শুঁকে দেখতেন তাঁর নাতি-নাতনিরা। আতর, চন্দনের সুগন্ধ লেগে থাকত সেই হারে। আতর মাখবারই বেশি রেওয়াজ ছিল।
আরও পড়ুন-রাজ্যপালের ভাষণ! লঙ্ঘিত নির্বাচনবিধি
প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ নীহাররঞ্জন রায় লিখেছেন, ‘‘সধবা নারীরা কপালে পরিতেন কাজলের টিপ এবং সীমান্তে সিঁদূরের রেখা, পায়ে পরিতেন লাক্ষারস, অলক্তক, দেহ ও মুখমণ্ডলের প্রসাধনে ব্যবহার করতেন চন্দনের গুঁড়া, চন্দনপঙ্ক, মৃগনাভি জাফরান ইত্যাদি।”
ভারতের তুলনায় তখনও সুগন্ধি ব্যবহারে অনেকটা পিছিয়ে ইউরোপ। ইউরোপের প্রথম সুগন্ধির ব্যবহার শুরু হয় হাঙ্গেরীয় রানি ‘এলিজাবেথ অব পোল্যান্ড’-এর হাত ধরে। তিনি যে পারফিউমটি ব্যবহার করতেন সেটার নাম ‘হাঙ্গেরিয়ান ওয়াটার’। সেই পারফিউমটি নাকি তৈরি করা হয়েছিল রোজমেরি ফুলের নির্যাস দিয়ে।
আরও পড়ুন-বেলডাঙায় খুন তৃণমূল কর্মী, নন্দীগ্রামে অপহৃত দলীয় প্রার্থী
ফরাসি সুগন্ধি তুলনাহীন। সেই সুগন্ধের প্রেমে পড়েননি এমন নারী নেই। ফ্রান্সের প্রথম সুগন্ধির প্রচলন করেছিলেন রানি ক্যাথেরিন মেডিসি।
ক্যাথেরিন মেডিসির জন্ম ইতালির ফ্লোরেন্স শহরে ১৫১৯ খ্রিস্টাব্দে ওই দেশের বিখ্যাত মেডিসি পরিবারে। ক্যাথেরিনের বিয়ে হয় ফ্রান্সের রাজা দ্বিতীয় হেনরির সঙ্গে। ক্যাথেরিন যখন রানি হয়ে ফ্রান্সে আসেন তখন তিনি তাঁর ব্যক্তিগত সুগন্ধি প্রস্তুতকারকদেরও সঙ্গে করে নিয়ে আসেন। রানি ক্যাথরিন তাঁর স্বামী রাজা হেনরিকেও সুগন্ধি নিয়ে সচেতন করে তোলেন। তিনিই প্যারিসে প্রথম পারফিউমের দোকান খোলেন। কথিত আছে, তাঁর ওই পারফিউমের দোকানের নিচে একটি সুড়ঙ্গ পথ তৈরি করা হয়েছিল যাতে খুব গোপনীয়তার সঙ্গে তাঁর ভবন থেকে সুড়ঙ্গ পথে ব্যক্তিগত পারফিউম প্রস্তুতকারকের বাসভবনে যাতায়াত করা যায়। কারণ তিনি চাইতেন সুগন্ধির নতুন নতুন ফর্মুলা যেন কোনওভাবে কারও কাছে ফাঁস হয়ে না যায়। ক্যাথরিন মেয়েদের মধ্যে হ্যাট এবং দস্তানা বা হাতের মোজার প্রচলন করেছিলেন। সেই দস্তানাতেও ব্যবহৃত হত সুগন্ধি।
আরও পড়ুন-বিস্ফোরণে তৃণমূল কর্মীর প্রাণ গেল, রেজিনগরে ভীত ভোটাররা
ফ্রান্সের রাজা অষ্টাদশ লুই এবং রানি মেরি আঁতোয়ানেত দু’জনেই ছিলেন সুগন্ধির খুব অনুরাগী। বিশেষ করে রানি ছিলেন ভীষণ ভোগবিলাসী। তাঁর সুগন্ধিগুলো তৈরি করতে খরচা হত শত সহস্র মুদ্রা। আঁতোয়ানেত প্রাকৃতিক সুগন্ধ খুব পছন্দ করতেন। রানির ফুলের প্রতি অসম্ভব ভালবাসা ছিল, তাই পারফিউমে তাঁর পছন্দের ফুলের নির্যাস ব্যবহার করা হত। রানির দস্তানাতেও সুগন্ধি ব্যবহার হত। আঁতোয়ানেতের স্নানের জলেও সুগন্ধি দেওয়া হত যার অন্যতম উপাদানগুলো ছিল সুইট আমন্ড, পাইন নাটস, লিলি, গোলাপ ও আরও নানাধরনের সুগন্ধি দ্রব্য। কথিত আছে, ফরাসি বিপ্লবের সময় রানি আঁতোয়ানেত যখন পালাচ্ছিলেন তখন পালাতে পারেননি। বাদ সেধেছিল তাঁর পারফিউম। তাঁর শরীর থেকে ভেসে আসা কড়া সুগন্ধি এতটাই ছড়িয়ে পড়ছিল যে বিপ্লবীরা খুঁজে পেয়ে গিয়েছিলেন তাঁকে।
আরও পড়ুন-প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আপত্তিকর মন্তব্য দেশদ্রোহিতা নয়, বলছে কর্ণাটক হাইকোর্ট
আমাদের বঙ্গদেশে আলিবর্দি খানের দৌহিত্র বাংলার নবাব যুবরাজ সিরাজদ্দৌলার বেগম লুৎফাউন্নিসাও সুগন্ধি ভালবাসতেন। গভীর আকর্ষণ ছিল তাঁর সুগন্ধির প্রতি। ফুল এবং চন্দন ছিল তাঁর ভীষণ প্রিয়। গ্রীষ্মের প্রবল গরমের হাত থেকে মুক্তি পেতে লুৎফাউন্নিসা স্নানের জলে পারস্যের সুগন্ধি ঢেলে স্নান করতেন। লুৎফার নিজের ব্যবহৃত সুগন্ধির মধ্যে চন্দন ও কস্তুরীর সুগন্ধ রাখতেন। তা ছাড়া জটামাংশী নামক একটি গাছের শেকড় দিয়েও তাঁর পোশাককে সুগন্ধি করে নিতেন।
আরও পড়ুন-প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আপত্তিকর মন্তব্য দেশদ্রোহিতা নয়, বলছে কর্ণাটক হাইকোর্ট
আধুনিক পারফিউম
আধুনিক চিকিৎসাশাস্ত্রের জনক, জ্যোতির্বিজ্ঞানী, রসায়নবিদ, গণিতবিদ, দার্শনিক ইবনে সিনা আধুনিক পারফিউমের আবিষ্কারক। যিনি রসায়নের মূলনীতিসমূহকে সুগন্ধি প্রস্তুত প্রণালীতে ব্যবহার করেছিলেন এবং ফুলের মনমাতানো সৌরভ সুগন্ধি-সামগ্রীতে সঞ্চিত করতে পেরেছিলেন।
ব্যবহারিক দিক থেকে তো বটেই, উৎপাদনের উৎস ভেদেও সুগন্ধির রয়েছে নানান বিভাজন। যেমন—ফুলের গন্ধযুক্ত যেসব পারফিউম রয়েছে সেগুলো ফ্লোরাল গ্রুপের অর্ন্তগত। জেসমিন, বেলী, জুঁই, গোলাপ, লিলি-অব-দ্য-ভ্যালি, লাইল্যাক, কারনেশন, গার্ডিনিয়া, হায়াসিন্থ, নার্সিসাস, কমলালেবুর ফুলের সুগন্ধ এর মধ্যে জনপ্রিয়। ভেষজ সুগন্ধির মধ্যে রয়েছে টাটকা খড়, ঘাস, অর্কিড ইত্যাদির ছোঁয়া।
স্পাইসি ব্লেন্ডস জাতীয় পারফিউমে রয়েছে কারনেশন, লবঙ্গ, দারুচিনি, তেজপাতা, গোলমরিচ, এলাচ, ক্যারাওয়ে, বেসিল প্রভৃতি উপাদান। উডি ফ্যামিলির পারফিউম হল বিখ্যাত ‘ইন্টিমেট’ চন্দন কাঠ, সিডার কাঠ, গুইয়াক কাঠ প্রভৃতির সুগন্ধি থেকে৷
আরও পড়ুন-৩২ হাজার শিক্ষক নিয়োগ মামলায় সুপ্রিম কোর্টে জয় রাজ্যের, জোর ধাক্কা বিরোধীদের
সুগন্ধি তৈরিতে নারী
মেয়েরা শুধু সুগন্ধি ভালবাসেন এমন নয়, কেউ কেউ রয়েছেন যাঁরা বিশ্বের নামকরা পারফিউমারও অর্থাৎ সুগন্ধি তৈরিও করেছেন। বিশ্বের প্রথম নথিভুক্ত পারফিউমার হলেন মেসোপটামিয়ার এক রসায়নবিদ মহিলা যিনি পারফিউম তৈরি করেছিলেন নাম তাপুতি। হাজার হাজার বছর ধরে মেয়েরা সুগন্ধি শিল্পে তাঁদের অবদান রেখেছে। আধুনিক যেসব মহিলা সুগন্ধি তৈরি করছেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন সুইস পারফিউমার ক্রিস্টিন নাগেল ২০১৬ সালে হার্মেস-এ ইন হাউজ পারফিউমার হিসেবে কাজ শুরু করেন। এরপর ইতালি গিয়ে তিনি পারফিউম তৈরিকে কেরিয়ার হিসেবে বেছে নেন। তিনি নারসিসো রদ্রিগেজ, মিস ডিওর চেরি, উডের মতো বিশেষ পারফিউম তৈরি করেছিলেন। তাঁর তৈরি সুগন্ধি ‘ফ্রাগরেন্স ফাউন্ডেশন ফ্রান্স’-এর তরফ থেকে পেয়েছে বেস্ট উইমেন ফ্রাগরেন্সের সম্মান, এছাড়া পেয়েছেন মেরি ক্লেয়ার ইন্টারন্যাশনাল ফ্রাগরেন্স অ্যাওয়ার্ড।
আরও পড়ুন-শিবপুর-এ অনন্য স্বস্তিকা
সোফিয়া লেব প্যারিসের এই পারফিউমার জিভুদান পারফিউমারি স্কুলে পড়াশুনো করেন এরপর আইএফএফ-এ বা ইন্টারন্যশনাল ফ্লেভার, অ্যান্ড ফ্রাগরেন্স-এর জুনিয়র পারফিউমার হিসেবে যোগদান করেন। তিনি যে পারফিউমগুলো তৈরি করেছেন, তা এক একটা মাস্টারপিস। যার মধ্যে অন্যতম বুলগারি’স ক্লাসিক ফ্রাগরেন্সকে নতুন করে আধুনিক পছন্দ অনুযায়ী তৈরি করেন।
এরপরে যার কথা বলতেই হয় তিনি হলেন ফ্রেঞ্চ মাস্টার পারফিউমার এবং জিভুদান পারফিউমারি স্কুলের ডিরেক্টর ক্যালিস বেকার। ১৯৯৯-তে ‘ডিওর’-এর মতো বিখ্যাত সংস্থার সঙ্গে কাজ করার সময় তিনি অ্যাওয়ার্ড উইনিং পারফিউম তৈরি করেন। যার মধ্যে অন্যতম হল ক্রিশ্চিয়ান ডিওরের জে’আডর। টমি হিলফাইজারের টমি গার্ল, এস্টি লডারের বিয়ন্ড প্যারাডাইস ফর মেন এবং উইমেন দুটোই ইত্যাদি। বেকার তার পারফিউম শিল্পে কৃতিত্বের জন্য পেয়েছেন লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড। এছাড়া তালিকায় রয়েছেন জার্মান পারফিউমার ডানিয়েলা অ্যানড্রের, ফরাসি পারফিউমার অ্যানে ফ্লিপো-সহ আরও অনেকেই।
আরও পড়ুন-চলন্ত ফলকনামা এক্সপ্রেসে অগ্নিকাণ্ড, আতঙ্ক
সুগন্ধি ও আজকের নারী
হলিউড, বলিউড সেলিব্রিটি থেকে রয়্যাল ফ্যামিলি অর্থাৎ রাজপরিবারে রমণী এবং আজকে হালফ্যাশনের নারী— কে নেই যাঁর সুগন্ধির প্রতি প্রেম আর প্যাশন নেই। সেলিব্রিটি পারফিউম শব্দটা খুব জনপ্রিয়। এই ধরনের পারফিউম শুধু সেলিব্রিটিদের ব্যক্তিত্ব, স্টাইল, রুচি, পছন্দ অনুযায়ী ডিজাইন করা হয়। এই তালিকায় রয়েছেন ব্রিটনি স্ফিয়ার থেকে জেনিফার লোপেজ সবাই। প্রত্যেকের নামে রয়েছে একটা করে পারফিউম। এ ছাড়াও সুগন্ধি-প্রেমীদের মধ্যে রয়েছেন বহু বিখ্যাত নারী, যেমন অভিনেত্রী গ্রেস কেলি, ইংল্যান্ড রাজপরিবারের রানি এলিজাবেথ, মেগান মার্কল, গ্রিসের রানি ও ফরাসি অভিনেত্রী ক্লটিল্ডে কোরাও, মার্কিন সংগীতশিল্পী বিয়ন্সে, মার্কিন মডেল সোফিয়া রিচ প্রমুখ। এঁরা সবাই সুগন্ধির বিষয়ে বেশ শৌখিন। ফ্যাশন, অভিনয়, মডেলিং— সবকিছুর বাইরে গিয়ে বলিউডি সেলেব নারীরাও সুগন্ধির বিষয় বেশ খুঁতখুঁতে এবং শৌখিন। দীপিকা পাড়ুকোন, প্রিয়াঙ্কা চোপড়া, সোনম কাপুর, কঙ্গনা রানাওয়াত, অদিতি রাও হায়দরি, আলিয়া ভট্ট— শেষ হবে না তালিকা।
আরও পড়ুন-বিশ্বভারতীর কদর্য আক্রমণ অমর্ত্যকে
দীপিকার পছন্দের তালিকায় রয়েছে এসটি লডার মডার্ন মিউজ, হুগো বসের মতো পারফিউম। প্রিয়াঙ্কা চোপড়া তো যেখানেই যান দেশে-বিদেশ তাঁর সঙ্গে ত্রুশারদি দনা অডি পারফিউম থাকবেই। তাঁর পছন্দের ফ্রাগরেন্স নোট হল অরেঞ্জ ব্লজম, ওয়াটার লিলি এবং জাসমিন টি। সোনমের পছন্দ বাইরেডো জিপসি ওয়াটার। অদিতি রাও হায়দরির পছন্দের পারফিউম গুচি ব্লুম। রেঙ্গুন ক্রিপার টিউবার রোজ আর জাসমিনের মিশেল রয়েছে তাঁর পারফিউমে। কঙ্গনা রানাওয়াতের পছন্দ শানেল-নং ফাইভের সুগন্ধি। শানেল শুধু তাঁর সুগন্ধের জন্যই নয়, দামের জন্যও পরিচিত। নারী এবং সুগন্ধির এই চলাচল চিরন্তন যুগে যুগে। সেলেব নয়, সাধারণ মেয়েরাও সুগন্ধি ব্যবহার করেন। গ্রীষ্মপ্রধান এই দেশে সম্প্রতি ডিওডোরেন্টের চল হলেও স্টাইল স্টেটমেন্টে সবার আগে রয়েছে পারফিউম। প্রেম, আবেগ, রাগ, অভিমান, চঞ্চলতা, নিশ্চুপতা, কোমলতা, কাঠিন্য সবকিছুর বহিঃপ্রকাশে পারফিউমের জুড়ি নেই। সুগন্ধিতেই বুঝে ফেলা যায় নারীর মন, রুচি, পছন্দ— সব।