To me, India’s always represented ‘everything’, it represents ‘all’, Everything is here. You can stay here forever, and you’ll never feel like you’ve missed out on life.
—Chris Martin
আরও পড়ুন-ফুরুন গাঁও
এই সর্বগুণাধার হওয়াটাই ভারতের নিজস্বতা। এই সর্ববিধ হয়ে ওঠার মধ্যেই ভারতের সার্বিক গ্রহণযোগ্যতা নিহিত। বহুত্ববাদই ভারতের আত্মা।
মোদিতন্ত্র এই কথাটা ভুলিয়ে দিতে বসেছিল।
কিন্তু ২৬ দলের মহাজোটের বার্তা যখন প্রকাশিত হল ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টাল ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স সংক্ষেপে INDIA-র মাধ্যমে, তখনই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট বিজেপি আবিষ্কার করতে বাধ্য হল তার বিস্মৃতপ্রায় NDA-কে। বিজেপির একক দাপটে যে রাজনৈতিক জোট বিস্মৃতির অতলে জায়গা করে নিয়েছিল, INDIA-র ধাক্কায় সেই জোট খাড়া করা প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা লক্ষণীয়ভাবে সকলের বিস্ময় উদ্রেক করল। ৩০টি দলকে খুঁজে পেতে পুনরায় NDA-কে শ্বাসবায়ু জোগানোয় মরিয়া প্রয়াস দেখে মনে পড়ে গেল একটি বহুকালাগত বাংলা প্রবচন— ঠেলার নাম বাবাজি।
আরও পড়ুন-ব্রডের রেকর্ডের দিনে স্বস্তিতে নেই অস্ট্রেলিয়া
ঝুটগুরু নরেন্দ্র মোদি দুঃস্বপ্নেও ভাবেননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে এরকম একটা মহাভারতীয় জোটের মুখে পড়বে হবে তাঁর চ্যালাচামুণ্ডাদের। ঝুটগুরু এখন পরিবারতন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রবল সরব, দারুণ সতর্ক। অথচ গত বিধানসভা উপনির্বাচনে হরিয়ানায় আদমপুরে, তেলেঙ্গানার মুনুগোড়ে আর উত্তরপ্রদেশের গোলা গোরখনাথে, তিনটে আসনেই যেসব প্রার্থী দাঁড় করিয়েছিল, তাঁদের সবাই কোনও-না-কোনও বিজেপি সাংসদ, বিধায়কদের পরিবারের সদস্য। সারা ভারতে সকল বিজেপি সাংসদের মধ্যে ১২ শতাংশ পরিবারতন্ত্রের তকমাপ্রাপ্ত।
মিথ্যে কথা বলা ছাড়া আর কোনও উপায় নেই বিজেপির কাছে।
আরও পড়ুন-লজ্জা! ছিঃ বিজেপি
NDA-কে চাগিয়ে তোলা ছাড়া আর কোনও উপায় নেই ঝুটগুরুদের থালিতে।
কারণ INDIA গঠিত হওয়ার পর ঝুটগুরু দেওয়াল লিখন পড়তে পারছেন। টের পাচ্ছেন, ২০২৪-এর মসনদ পুনর্দখলের পথ আদৌ মসৃণ নয়, বরং বেনজিরভাবে কণ্টকাকীর্ণ।
আরও পড়ুন-দিনের কবিতা
NDA-এর আটটি শরিকের কোনও সাংসদ নেই। ন’টি শরিক দলের একজন করে সাংসদ আছে। তিনটি শরিক দলের আছে তিনজন করে সাংসদ। গত ১৫ মে যখন NDA-এর ২৩ বছর পূর্তি হল, তখন এসব দলকে নিয়ে বিজেপির কোনও উচ্ছ্বাস ছিল না। বাকি শরিকদের ব্যাপারেও পদ্ম-পক্ষের কোনও মাথাব্যথা ছিল না। কিন্তু এখন INDIA গঠিত হওয়ার পর ভারতের জঞ্জাল পার্টি নড়েচড়ে বসেছে। তাই এত সাজ-সাজ রব।
কিন্তু তাতেও শেষরক্ষা হবে বলে মনে হচ্ছে না। মোদি-ম্যাজিক যে উধাও, সেটা টের পাওয়া গিয়েছিল কর্ণাটক ভোটের সময়েই। আগামী নভেম্বর মাসে রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ-সহ পাঁচ রাজ্যে অনুষ্ঠিতব্য বিধানসভা নির্বাচনে কর্ণাটকের ফলাফল পুনরাবৃত্ত হতে পারে, এমন সম্ভাবনাই সমাধিক। সেজন্যই এখন শরিক জুটিয়ে জোট রাজনীতিতে INDIA-র সঙ্গে ট্ক্কর দেওয়ার পরিকল্পনা।
আরও পড়ুন-কেন বিরোধী দলনেতার বিরুদ্ধে এফআইআর নয়! প্রশ্ন বিচারপতির
বিপদসংকেতের আঁচ পেয়েই ভারতের জঞ্জাল পার্টি বন্ধু জোগাড় করতে পথে নেমেছে।
২০১৪ থেকে ১৯ জন শরিক NDA জোট ছেড়েছে। সর্বশেষ ঘটনাটি ঘটিয়েছেন হনুমান বেনিওয়াল। রাজস্থানের রাষ্ট্রীয় লোকতান্ত্রিক পার্টির এই নেতা কৃষকদের প্রতি মোদি-শাহদের অবজ্ঞা লক্ষ্য করে এনডিএ জোট ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন। এর আগে এনডিএ ত্যাগ করে শিরোমণি আকালি দল। এনডিএ প্রথম ছেড়েছিল হরিয়ানা জনহিত কংগ্রেস, ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনের অব্যবহিত পরেই। ২০১৬-তে কেরলে রেভলিউশনারি সেশ্যালিস্ট পার্টি অব কেরালা (বলশেভিক) ও জনাধিপত্য রাষ্ট্রীয় সভা এনডিএ ছাড়ে, ২০১৭-তে রাজু শেট্টির স্বভিমানী পক্ষ ওই জোট ত্যাগ করে। ২০১৮-তে বিহারের তিনটি পার্টি— হিন্দুস্তান আম মোর্চা, বিকাশশীল ইনসান পার্টি ও রাষ্ট্রীয় লোকসামন্ত পার্টি এনডিএ জোট ছেড়ে দেয়। ২০২০-তে বিহার বিধানসভা নির্বাচনের পর প্রথম দু’জন জিতনরাম মাঝি আর মুকেশ সাহানির নেতৃত্বে এনডিএতে ফিরে যায়।
এরকম আসা-যাওয়ায় এতদিন জঞ্জাল পার্টির কিছু এসে যেত না। কারণ, মোদি-ম্যাজিক তখনও ছিল। এখন মোদি-ম্যাজিক নেই। তাই NDA-কে বাঁচিয়ে রাখার প্রবল প্রয়াস। INDIA যে বিরাট একটা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে।