উইনার্স (Winners team)
বেটি বাঁচানোর কথা বলেন কেউ কেউ। অথচ বাস্তবে দেখা যায় উল্টো ছবি। আজও নিষ্ঠুর নির্যাতনের শিকার হতে হয় মেয়েদের। তবে মুখ বুজে সহ্য করার দিন শেষ। নিজেদের আব্রু বাঁচাতে লড়াইয়ের আসরে মেয়েরাই। কলকাতা শহরে মহিলা রক্ষীবাহিনী তৈরি হয়েছে। দিনরাত শহরের নানা প্রান্তে নজর রেখে চলেছেন মহিলা-বাহিনীর লড়াকু অফিসাররা। এই দলের নাম ‘উইনার্স’ (Winners team)।
২০১৮ সালের ১১ জুলাই আত্মপ্রকাশ ঘটে ‘উইনার্স’-এর (Winners team)। মূলত সন্ধ্যা ও রাতের পথে মহিলাদের নিরাপত্তার জন্যই সৃষ্টি হয়েছিল এই বাহিনীর। বাছাই করা মহিলা পুলিশকর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। মোটরবাইকে সওয়ার এই বাহিনী মার্শাল আর্টের পাশাপাশি আধুনিক সব আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারেও সিদ্ধহস্ত। কয়েকজন অফিসারের পাশাপাশি এই মুহূর্তে বাহিনীতে রয়েছেন বেশ কয়েকজন পুলিশকর্মী। থাকেন অতন্দ্রপ্রহরী হয়ে। চষে বেড়ান শহর কলকাতা। শহরের রাস্তাঘাটে মহিলাদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার ক্ষেত্রে এই মহিলা টহলদারি বাহিনীর জুড়ি মেলা ভার। ইতিমধ্যেই কয়েকশো জনকে গ্রেফতার করেছেন বাহিনীর সদস্যারা। রাস্তায় মহিলাদের উত্ত্যক্ত করার অভিযোগে প্রায় রোজই ‘উইনার্স’ (Winners team) বাহিনীর হাতে আটক হন একাধিক। কেউ হয়তো পার্কে গোপনে মহিলাদের ছবি তুলতে গিয়ে নজর এড়াতে পারেননি ‘উইনার্স’দের (Winners team)। কেউ নির্জন এলাকার ক্লাব-রেস্তরাঁর আশেপাশের রাস্তাঘাট বেছে নিয়েছিলেন মহিলাদের উদ্দেশ্যে অশোভন অঙ্গভঙ্গির জন্য। হাতেনাতে ধরা পড়েছেন সদাসক্রিয় এই নারীবাহিনীর হাতে। উইনার্স বাহিনীর দাপটে উল্লেখযোগ্য ভাবে কমেছে ইভ-টিজিংয়ের মতো ঘটনা। অতীতে যেসব জায়গায় মহিলাদের সঙ্গে হওয়া অপরাধের ঘটনা বেশি ঘটেছে, সেখানেই দেখা গিয়েছে এই বাহিনীর বিশেষ তৎপরতা। বিভিন্ন পুজো ও উৎসবের মরশুমে এই বাহিনী দারুণ কাজ করে। তাঁদের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
চোখ খোলা রাখুন। শহরের রাজপথে দেখতে পাবেন কলকাতা পুলিশের বিশেষ প্রশিক্ষিত মহিলা বাহিনীকে। সাদা পোশাক। মোটরবাইকে চড়ে নজরদারি চালান শহরের এ-মাথা থেকে ও-মাথা। ওঁরাই ‘উইনার্স’ (Winners team)। কিছুদিন আগেই পাঁচ বছর পূর্তি হয়েছে দলের।
তেজস্বিনী
মাত্র পাঁচ বছরে দারুণ সাফল্য পেয়েছে কলকাতা পুলিশের প্রকল্প ‘তেজস্বিনী’। এটা সম্পূর্ণ নিখরচায় মহিলাদের আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণের ১০ দিনের কর্মশালা। ইভটিজিং এবং শ্লীলতাহানি রুখতে শহরের মহিলাদের শারীরিক এবং মানসিকভাবে তৈরি করাই এই প্রকল্পের লক্ষ্য। স্কুল-কলেজে পড়েন না বা পাশ করে গেছেন, এমন মহিলারা এই প্রকল্পের আওতায় আসেন। মার্শাল আর্ট, জুডো এবং ক্যারাটে শিখিয়ে মহিলাদের রুখে দাঁড়ানোর জন্য তৈরি করে দেওয়া হয়। গোলাপি রঙের পোশাকে প্রশিক্ষণ নেন মহিলারা। তেজস্বিনীর প্রশিক্ষণ নিয়ে বহু মহিলা আত্মরক্ষা করতে সক্ষম হয়েছেন। তেজস্বিনী দিনে দিনে দারুণ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
স্বয়ংসিদ্ধা
২০১৬-র জানুয়ারি। আলোড়ন তুলেছিল একটি ঘটনা। পাচার হয়ে গিয়েছিল দক্ষিণ ২৪ পরগনার একটি মেয়ে। হয়েছিল মাত্রাছাড়া নির্যাতনের শিকার। মেয়েটি যখন গুরুতর অসুস্থ, দিল্লিতে একটি হাসপাতালের বাইরে তাকে ফেলে রেখে পালিয়ে যায় পাচারকারীরা। প্রায় ২৫ লিটার পুঁজ বের করা হয়েছিল মেয়েটির শরীর থেকে। নিযার্তনের ফলে সে ততদিনে এইচআইভি পজিটিভ। দক্ষিণ ২৪ পরগনা পুলিশের তৎকালীন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার চন্দ্রশেখর বর্ধন সে দিনই পাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার কথা ভেবেছিলেন। ঠিক করেছিলেন, সচেতন করতে হবে সবাইকে। তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন পুলিশেরই ছোট-বড় বহু অফিসার। ইউনিসেফ, শক্তিবাহিনী এবং কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাও এগিয়ে এসেছিল।
২০১৬ সালে দক্ষিণ ২৪ পরগনায় রবীন্দ্র বালিকা বিদ্যাপীঠে রাজ্য পুলিশের হাতে ‘স্বয়ংসিদ্ধা’ প্রকল্পের জন্ম হয়। সুন্দরবন এলাকায় দেখা গিয়েছে, অল্প বয়সি কিশোরীরা আবেগের বশবর্তী হয়ে অনেক সময়ই প্রলোভনে পড়ে নিজেদের জীবনে ভয়ানক বিপদ ডেকে আনে। এইসব অল্পবয়সি মেয়েদের বিপদ থেকে বাঁচাতেই ‘স্বয়ংসিদ্ধা’র সূচনা।
এই প্রকল্পের হাত ধরে উল্লেখযোগ্য ভাবে কমছে পাচারের হার। গ্রেপ্তার করা হয়েছে বহু পাচারকারীকে। রোখা গেছে অসংখ্য বাল্যবিবাহ। একা থেকে এক হচ্ছে বাংলার মেয়েরা।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে স্বয়ংসিদ্ধা প্রকল্প ছড়িয়ে পড়ে সারা রাজ্যে। ইচ্ছুক পড়ুয়াদের নিয়ে স্কুল-কলেজে গঠন করা হয় স্বয়ংসিদ্ধা বাহিনী। ১২ থেকে ২১ বছর বয়সিদের নিয়ে। রাজ্য সরকারের শিশু সুরক্ষা কমিটি এই বাহিনীর দেখাশোনার দায়িত্বে। মেয়েদের পাশাপাশি ছেলেরাও যুক্ত হয়। তারা বাল্যবিবাহের কুপ্রভাব, নারীপাচার সম্বন্ধে তথ্য দিয়ে সচেতনতা বাড়ায়। অপরাধমুক্ত সুস্থ সমাজ গড়ে তোলার পাশাপাশি সমাজের প্রান্তিক মানুষদের কাছে শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, জীবিকা ও খাদ্যসুরক্ষার সুবিধা পৌঁছে দেওয়াও এই প্রকল্পের অংশ। পাচার হতে পারে এই রকম মেয়েদের কাউন্সেলিং করে তাদের আত্মরক্ষায় পারদর্শী করে তোলা হচ্ছে ‘স্বয়ংসিদ্ধা’ শিবিরের মাধ্যমে। দেওয়া হচ্ছে বিশেষ প্রশিক্ষণ। আইনশৃঙ্খলা সম্বন্ধেও সচেতন করা হচ্ছে।
সরাসরি উপকৃত বহু কিশোরী। আলোয় ফিরেছে ‘স্বয়ংসিদ্ধা’ নেটওয়ার্কের মাধ্যমে। এই আলোয় ফেরা মেয়েরা স্কুলে-স্কুলে প্রচারে অংশ নিচ্ছে। ভাগ করে নিচ্ছে নিজেদের অভিজ্ঞতা।
প্রকল্পের সাফল্য দেখে কলকাতার মার্কিন কনস্যুলেট এই মডেলকে গ্রহণ করেছে। তাঁদের সহযোগী এনজিও শক্তিবাহিনী ‘স্বয়ংসিদ্ধা’ মডেলকে নিয়ে গেছে পড়শি তিনটে রাজ্যে। সেগুলো হল ঝাড়খণ্ড, বিহার ও অসম। আগামী দিনে হয়তো বাংলার দেখানো পথে হাঁটবে আরও অনেক রাজ্য। এইভাবেই বাংলা পথ দেখাবে গোটা দেশকে।
নির্ভয়া স্কোয়াড
নারী-সুরক্ষায় মুম্বই পুলিশের মহিলা বাহিনী নির্ভয়া স্কোয়াড। দিনে-রাতে যেখানেই বেআব্রু মহিলাদের নিরাপত্তা, সেখানেই ছুটে যায় এই রক্ষীবাহিনী। নিরাপত্তা দেয় ২৪ ঘণ্টা। মুম্বইয়ের সব ক’টি থানায় কাজ করছে মহিলাদের নিয়ে তৈরি এই নিরাপত্তা বাহিনী। প্রতি টিমে আছেন একজন মহিলা পিএসআই ও এএসআই পদমর্যাদার অফিসার, একজন মহিলা কনস্টেবল, একজন পুরুষ কনস্টেবল এবং ড্রাইভার। প্রতি থানায় পাঁচটি মোবাইল ভ্যান রাখা থাকে টহলদারির জন্য। দিনে-রাতে নির্ভয়া স্কোয়াড এই মোবাইল ভ্যানে গোটা শহর চষে বেড়ায়। গাড়িগুলোকে বলা হয় ‘নির্ভয়া ফটক’।
স্কুল, কলেজ, শপিং মল, সিনেমা হল, থিয়েটার, রেস্তরাঁর আশপাশে টহল দেয় এই মহিলা স্কোয়াড। যেখানে মহিলাদের ভিড় বেশি। শ্লীলতাহানি, ধর্ষণ, ইভ টিজিং-এর মতো ঘটনায় আইনি পদক্ষেপ নেয়, পকসো আইনে অভিযোগ দায়ের করে। নারী ও শিশুর সুরক্ষা নিয়ে শহর জুড়ে প্রচারও চালায়।
মুম্বই পুলিশ মহিলাদের জন্য ১০৩— এই হেল্পলাইন নম্বরটি চালু করেছে, যেখানে ফোন করলে মহিলারা নির্ভয়া স্কোয়াডের তরফ থেকে সাহায্য পাবেন, আশ্বাস দিয়েছে মুম্বই পুলিশ।
এই স্কোয়াডের ভূয়সী প্রশংসা করেছে বলিউড। সলমন খান, শাহিদ কাপুর, ক্যাটরিনা কাইফ, অজয় দেবগণ, সারা আলি খান, অক্ষয়কুমার, রণবীর সিং-সহ অনেকেই সচেতনতার জন্য নিজেদের সোশ্যাল মিডিয়ায় নির্ভয়া স্কোয়াডের প্রশংসার পাশাপাশি হেল্পলাইন নম্বরটিও শেয়ার করেছেন। সম্প্রতি স্কোয়াডের কর্মীদের সংবর্ধিত করেছেন শিল্পা শেঠি। নির্ভয়া স্কোয়াড সাধ্যমতো সুরক্ষা দিচ্ছে মহিলাদের। এর ফলে অনেকটাই কমেছে অপরাধ।
মহিলা গরুড় কম্যান্ডো
কর্নাটক পুলিশ তৈরি করেছে মহিলা গরুড় কম্যান্ডো। ১৬ জনের দল। বেছে নেওয়া হয়েছে কর্নাটকের বিভিন্ন গ্রাম থেকে। তাঁদের দেওয়া হয়েছে বিশেষ প্রশিক্ষণ। বন্দুকের নিশানা কখনও ব্যর্থ হয় না এই মহিলা বাহিনীর। যে কোনও আধুনিক যুদ্ধাস্ত্রই বাগ মানায় হাতে। শারীরিক দক্ষতা যতটা, ততটাই প্রখর এদের বুদ্ধি। পলকের গতিতে আক্রমণের কৌশল ঠিক করে নেয়। গেরিলা যুদ্ধপদ্ধতিও এদের নখদর্পণে। নারী-সুরক্ষায় কর্নাটক পুলিশের মহিলা গরুড় কম্যান্ডো যথেষ্ট সাহায্য পেয়েছে। কমেছে অপরাধমূলক কার্যকলাপ।
আরও পড়ুন- বিধানসভায় দলের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ বিজেপি বিধায়কের
বিএসএফ মহিলা বাহিনী
সুন্দরবন সীমান্তের জলপথে পাহারায় বিএসএফ মহিলা বাহিনী। জলদস্যু ও ম্যানগ্রোভ পাচার রুখতে বিশেষ এই বাহিনীকে নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আধুনিক অস্ত্রেই হয়েছে মহড়া। এই মহিলা বাহিনীর কাজ হল স্পিড বোটের মাধ্যমে অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে পাহারা দেওয়া।
‘মহিলা পুলিশ-বাহিনী যথেষ্ট সক্রিয়’
কলকাতা পুলিশের অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার শোভেন বন্দ্যোপাধ্যায় জানালেন,
তেজস্বিনীর সূচনার পিছনে কী ভাবনা ছিল?
আমাদের এখানে একটা প্রজেক্ট আছে, সুকন্যা। বিভিন্ন স্কুল-কলেজের ছাত্রীদের মার্শাল আর্টস, সেলফ ডিফেন্সের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এটা করতে গিয়ে আমরা দেখলাম, এর বাইরেও থেকে যাচ্ছে বিরাটসংখ্যক মহিলা সমাজ। যাঁরা পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছেন, কলেজ পাশ করেছেন, চাকরি করেন অথবা গৃহবধূ। সেলফ ডিফেন্স, মার্শাল আর্টস শেখার সুযোগ পান না। তাঁদের জন্যই ২০১৮ সালে আমরা শুরু করি তেজস্বিনী। ইতিমধ্যেই বহু মহিলা প্রশিক্ষণ নিয়ে উপকৃত হয়েছেন। স্কুল-কলেজের মেয়েদের নিয়ে সুকন্যা প্রকল্প খুব ভালভাবেই চলছে। পাশাপাশি চলছে তেজস্বিনী। তেজস্বিনীর বয়সসীমা ৪৫ বছর। বছরে চারবার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। কলকাতা পুলিশের ফেসবুক পেজে আমরা বিজ্ঞপ্তি দিই। আগ্রহীরা যোগাযোগ করেন। নাম লেখান। দশ দিনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রতিদিন দু ঘণ্টার। সেলফ ডিফেন্স মার্শাল আর্টস-এর পাশাপাশি শেখানো হয় আরও অনেক কিছু। মানসিকভাবে শক্ত হতে পরামর্শ দেওয়া হয়। আলোচনা করা হয় মহিলাদের অধিকার, আইনগত সুরক্ষা ইত্যাদি বিষয়ে। এটা কলকাতা পুলিশের প্রজেক্ট। তাই কলকাতা-কেন্দ্রিক। বাইরের মহিলারা এসে অংশগ্রহণ করতে পারেন। বর্ষা মিটলেই আবার শুরু হবে তেজস্বিনী-র কর্মশালা। পুজোর আগেই। যথা সময়ে দেওয়া হবে বিজ্ঞপ্তি। এর নবতম সংযোজন ‘দুয়ারে তেজস্বিনী’। পাড়ায় পাড়ায় প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে মহিলাদের। শুরু হবে সেপ্টেম্বরের শেষদিকে।
উইনার্স কতটা সাফল্য পেয়েছে?
কলকাতা পুলিশের উইনার্স বাহিনী দারুণ সাফল্য পেয়েছে। এই বাহিনীর উপস্থিতির ফলে বেড়েছে মহিলাদের নিরাপত্তা। এক সময় যারা মহিলাদের উত্ত্যক্ত করত, তারা এখন স্কুটির ওপর সাদা পোশাকের মহিলা পুলিশ দেখলেই ভয়ে পালায়। যেখানে মহিলাদের ভিড় বেশি, সেখানেই দেখা মেলে উইনার্স বাহিনীর। এই বাহিনী অপরাধ দমনে কার্যকর ভূমিকা পালন করছে। সুরক্ষা দিচ্ছে শহরের মহিলাদের। পুলিশ মানুষের বন্ধু। সাধারণ মানুষ পুলিশকে ভয় পায় না। ভয় পায় অপরাধীরা, দুষ্কৃতীরা।
৯৯ শতাংশ মানুষ সচেতন বলেই আমরা সুস্থ ভাবে কাজ করতে পারছি। মানুষের সহযোগিতায় আগামী দিনে অপরাধমুক্ত সমাজ গড়ব, এই আমাদের অঙ্গীকার। আরেকটা কথা বলি, কলকাতা পুলিশ যেসব কর্মসূচি নেয়, পরবর্তী সময়ে রাজ্য এবং দেশের অন্যান্য শহর সেগুলো অনুসরণ করে। সিনিয়র সিটিজেনদের দেখাশোনার জন্য আমাদের একটি প্রজেক্ট আছে, ‘প্রণাম’। সেটাও অন্য শহর অনুকরণ করেছে। যদিও পরিবর্তিত হয়েছে নাম। বিধাননগর রেখেছে সাঁঝবাতি, হাওড়া রেখেছে শ্রদ্ধা। কমিশনারেট বাড়ার ফলে আরও উন্নত পরিষেবা পৌঁছে যাচ্ছে মানুষের কাছে।
স্বয়ংসিদ্ধা-র মতো প্রকল্প শহরে আসতে পারে?
স্বয়ংসিদ্ধা প্রকল্পটি দারুণ সাফল্য পেয়েছে। এটা পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের প্রকল্প। রুখে দিয়েছে বহু নারী পাচারের ঘটনা, বাল্যবিবাহ। এটা তিনটি পার্টে হয়। সোর্স, ডেস্টিনেশন, ট্রানজিট পয়েন্ট। কলকাতার আরবান অঞ্চলে সোর্স এবং ডেস্টিনেশন খুব কম। এখানে হয় ট্রানজিট। গ্রামের দিকে তিনটি পার্টের প্রাদুর্ভাব অনেক বেশি। তাই গ্রামাঞ্চলের মেয়েদের কথা মাথায় রেখে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশে স্বয়ংসিদ্ধা প্রকল্প চালু করেছিল। আমরাও একটা নতুন উদ্যোগ নিয়েছি। ৮ অগাস্ট থেকে শুরু হবে। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে মহিলাদের নানারকম প্রলোভন দেখানো হচ্ছে। কোনও কোনও মহিলা ফাঁদে পা দিয়ে ফেলছেন এবং মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এটা যাতে বন্ধ করা যায় তার জন্য আমরা সচেতনতামূলক একটি কর্মসূচির উদ্যোগ নিয়েছি। ৫০টি স্কুলের ছাত্রীদের এবং টিচারদের নিয়ে হবে এই কর্মসূচি। প্রত্যেক স্কুল থেকে থাকবেন দুজন টিচার এবং চারজন ছাত্রী। আলোচনার মাধ্যমে আমরা সচেতনতা বাড়াব। জানানোর চেষ্টা করব এইরকম পরিস্থিতি এলে ঠিক কী করতে হবে, কীভাবে সতর্ক থাকতে হবে। যাতে ভয়ঙ্কর পরিণতির দিকে কোনও মহিলাকে না যেতে হয়। এই কর্মসূচি বাস্তবায়িত হবে কলকাতা এবং কলকাতার বর্ডার অঞ্চলে যে-সব থানা আছে, তাদের নিয়ে। যেমন আনন্দপুর থানা, হরিদেবপুর থানা ইত্যাদি। অনেকটা স্বয়ংসিদ্ধার মতোই। নামকরণ করা হয়েছে চেতনা। চেতনা প্রজেক্টের মাধ্যমে এর আগে আমরা ২৩৫টা স্কুলে মাদকদ্রব্যের বিরুদ্ধে সচেতনতামূলক কর্মশালা করেছি।
মাদকদ্রব্য কীভাবে সর্বনাশ করে, বোঝানোর চেষ্টা করেছি। এই কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন মাদক-মুক্ত দুজন। তাঁরা নিজেদের অভিজ্ঞতা ভাগ করেছেন। দারুণ সাড়া পেয়েছি। মাদকজাতীয় দ্রব্যের ভয়ঙ্কর দিকটা আমরা ছাত্র-ছাত্রীদের বোঝাতে পেরেছি। এবার চেতনার মাধ্যমে সোশ্যাল মিডিয়ার প্রলোভন থেকে মহিলাদের সতর্ক করার চেষ্টা করব।
মহিলা পুলিশ কতটা কার্যকর ভূমিকা পালন করছে?
এই মুহূর্তে মহিলা পুলিশ-বাহিনী যথেষ্ট সক্রিয়। আমাদের রাজ্যে তো বটেই, পাশাপাশি সারা দেশে। কারণ মহিলা-কেন্দ্রিক কেসে মহিলা পুলিশ ছাড়া কোনও কাজ হয় না, হবে না। তাই মহিলা পুলিশ বাধ্যতামূলক। এইসব ক্ষেত্রে কোনও ভূমিকা থাকে না পুরুষ পুলিশের। যে কোনও অভিযানে দলের সঙ্গে থাকে মহিলা পুলিশ। কার্যকর ভূমিকা পালন করে। ভুললে চলবে না মহিলারা আমাদের সমাজে অর্ধেক অংশ। পুলিশের উচ্চপদেও রয়েছেন মহিলারা। কাজ করছেন দক্ষতার সঙ্গে। বিএসএফ, সিআরপিএফ-এও মহিলা ব্যাটেলিয়ন তৈরি হয়েছে। তাঁরা যথেষ্ট সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন। আজ নারী-সুরক্ষায় এগিয়ে এসেছে নারীবাহিনী। এ-বড় কম কথা নয়।