বর্ষাকালে বেড়ে যায় প্রকৃতির সৌন্দর্য। চতুর্দিকে দেখা যায় সবুজের সমারোহ। তাই বর্ষা অনেকের প্রিয় ঋতু। বহু কবিতা, গান রচনা হয়েছে এই ঋতুকে নিয়ে। গরম থেকে কিছুটা স্বস্তি পেতে অনেকেই এই সময় বেড়ানোর পরিকল্পনা করেন। সবুজ প্রকৃতির পাশাপাশি বর্ষাকালে বেড়ে যায় জলপ্রপাতের সৌন্দর্য। ফলে বৃষ্টির মরশুমে জলপ্রপাত দেখার মজাই আলাদা। চোখ বুজে কান পাতুন, শুনতে পাবেন জলপ্রপাতের ডাক। হাতছানি দিচ্ছে আপনাকে। জেনে নিন এমনই কিছু জলপ্রপাতের কথা, যেগুলোর কথা খুব কম মানুষই জানেন৷
আরও পড়ুন-কেজরিওয়ালের জন্মদিনে শুভেচ্ছা দলনেত্রীর
নোহকালিকাই জলপ্রপাত, মেঘালয়—
নোহকালিকাই জলপ্রপাত ভারতের মেঘালয়ের পূর্ব খাসি পাহাড় জেলায় অবস্থিত। ৩৪০ মিটার উঁচু থেকে সশব্দে আছড়ে পড়ে। ভারতের সবচেয়ে উঁচু জলপ্রপাতগুলির মধ্যে একটি। স্থানীয় খাসি ভাষায় ‘নোহকালিকাই’ নামের অর্থ ‘কালিকাইয়ের লাফ’।
বর্তমানে এটা একটা জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য। চেরাপুঞ্জি থেকে একটি ছোট্ট পর্বতারোহণের মাধ্যমে এই জলপ্রপাতে পৌঁছানো যায়। এখানে আরও কয়েকটি দর্শনীয় স্থান রয়েছে। পর্যটকেরা জলপ্রপাতের গোড়ায় পুলে সাঁতার কাটতে বা কাছাকাছি গুহা এবং জঙ্গলে বেড়াতে পারেন। আশেপাশের জঙ্গলগুলোয় মেঘলা চিতাবাঘ, ভারতীয় হাতি এবং বেঙ্গল টাইগার-সহ বিভিন্ন বিরল এবং বিপন্ন প্রজাতির জন্তুর বাসস্থান। মেঘালয় সরকার এলাকাটিকে সুরক্ষিত এলাকা ঘোষণা করেছে।
আরও পড়ুন-মহামেডান ক্লাবকে ৬০ লক্ষ টাকা অনুদান, ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর
তিরাথগড় জলপ্রপাত, ছত্তিশগড়—
ছত্তিশগড়ের একটি অন্যতম বিখ্যাত জলপ্রপাত হল তিরাথগড় জলপ্রপাত। চারিদিকে পাহাড় ও জঙ্গলের মাঝে এই দুধসাদা ঝরনাটির সৌন্দর্য পর্যটকদের মুগ্ধ করে। জলপ্রপাতটি কাঙ্গের ভ্যালি ন্যাশনাল পার্কের অন্তর্গত। জগদলপুর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার মতো দূরে। কাঙ্গের ভ্যালি ন্যাশনাল পার্কের প্রবেশদ্বারে টিকিট কাটতে হয় ভেতরে প্রবেশের জন্য। গেট থেকে ১০ কিলোমিটার ভেতরে দুপাশে জঙ্গলের মাঝে রাস্তা ধরে এগিয়ে গেলেই পৌঁছে যাওয়া যায় তিরাথগড় জলপ্রপাত। রাস্তায় মাঝে চোখে পড়বে বিভিন্ন জীবজন্তু। জলপ্রপাতটির সৌন্দর্য সামনে থেকে দেখতে হলে ২০০টা সিঁড়ি ভেঙে নিচে নামতে হয়। সিঁড়ি নামতে নামতেই দূর থেকে দেখতে পাওয়া যায় জলপ্রপাতটির সৌন্দর্য। প্রায় ১১০ ফুট উপর থেকে প্রবল জলরাশি নিচে কাঙ্গের নদীতে আছড়ে পড়ে। জলপ্রপাতটির কাছে একটা ছোট্ট সাঁকো আছে। সেখানে দাঁড়িয়ে পিছনের জলপ্রপাতটিকে ব্যাকগ্রাউন্ডে রেখে সেলফি তোলা যায়। এখানে হয়েছে বহু জনপ্রিয় সিনেমার শ্যুটিং।
আরও পড়ুন-লুঙ্গি পরে বজরঙ্গির দৌড়, ‘গো-রক্ষক’-কে ধরল পুলিশ
নুরানাং জলপ্রপাত, অরুণাচলপ্রদেশ—
অরুণাচলপ্রদেশের সবচেয়ে সুন্দর জলপ্রপাত নুরানাং জলপ্রপাত। নুরানাং ছাড়াও এই জলপ্রপাত জং এবং বংবং জলপ্রপাত নামে পরিচিত। তাওয়াং রোডের জং শহরের কাছে অবস্থিত। শহরের নামানুসারেই হয়েছে এই নামকরণ। এটি সৃষ্টি হয়েছে সেলা পাসের ঢালের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া নুরানাং নদী থেকে। এটি মূলত তাওয়াং নদীর একটি উপনদী। নুরানাং নামটির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এক রোমাঞ্চকর কিংবদন্তি। নুরানাং নামটি এসেছে নুরা নামের এক মনপা আদিবাসী মেয়ের নাম থেকে। ১৯৬২ সালে ভারত-চিন যুদ্ধে জশবন্ত সিং রাওয়াত নামে এক ভারতীয় সৈনিক চিনা সৈন্যের হাতে ধরা পড়ে যেতেন। মনপা কন্যা নুরার সাহায্যে জশবন্ত সিং চিনা সেনাবাহিনীকে এড়িয়ে গা ঢাকা দিতে সক্ষম হন। নুরার সাহসকিতার কথা স্মরণ করেই স্থানীয়রা জলপ্রাপাতের নাম দেন নুরানাং। ৩৩০ মিটার উচ্চতা থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ে জলধারা।
আরও পড়ুন-বুলডোজার নীতির সমালোচনায় চন্দ্রচূড়
ধুয়ান্ধর জলপ্রপাত, মধ্যপ্রদেশ—
এই জলপ্রপাতটি মধ্যপ্রদেশের জবলপুরের কাছে অবস্থিত। এটি ৩০০ মিটার উচ্চতা থেকে পড়ে। জলের রং সবুজ। উচ্চতা থেকে পড়ার কারণে সেখান থেকে নির্গত ধোঁয়া মানুষকে আকৃষ্ট করে। তাই হয়তো এমন নামকরণ। সারাবছর বহু পর্যটক ভিড় জমান। বর্ষায় দেখা যায় অন্যরকম রূপ। আরও প্রাণবন্ত। দস্যি মেয়ের মতো।
আরও পড়ুন-আসল লড়াই হবে এই ম্যাচের পরই
ডুডুমা জলপ্রপাত, ওড়িশা—
ডুডুমার ডাক লেখাটা অনেকেই পড়েছেন। সেটা আসলে ডুডুমা জলপ্রপাত নিয়ে। অবস্থান ওড়িশার কোরাপুটে। মাচকুন্দ নদীর জলপ্রপাত ডুডুমা। ১৭৫ মিটার উচ্চতা থেকে জল ঝাঁপিয়ে পড়ে। তখন একটি অদ্ভুত শব্দ হয়। সেই শব্দকেই বলা হয় ডুডুমার ডাক। এই ডাক শুনতে এবং জলপ্রপাতের সৌন্দর্য প্রত্যক্ষ করতে বহু পর্যটক আসেন কোরাপুটে। মাচকুন্দ নদী যেখানে জলপ্রপাত হয়ে পড়ছে তার কাছেই তৈরি হয়েছে বিশাল একটি জলাধার।
আরও পড়ুন-দিনের কবিতা
হোগেনাক্কাল জলপ্রপাত, তামিলনাড়ু—
এই জলপ্রপাতকে বলা হয় ভারতের নায়াগ্রা। হোগেনাক্কাল তামিলনাড়ুর ধর্মপুরী জেলায় অবস্থিত। অসাধারণ একটি জলপ্রপাত। হোগেনাক্কাল জলপ্রপাত যেখান থেকে প্রবাহিত হয়েছে সেখান থেকে কাবেরী নদীর স্রোত একাধিক ভাগে বিভক্ত হয়েছে এবং আকর্ষণ তৈরি করেছে। চাইলে পর্যটকেরা জলপ্রপাতের নিচে যেতে পারেন এবং বাঁশের তৈরি ছোট ছোট নৌকায় চড়ে এর সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন। স্নান এবং নৌকাবিহার ছাড়াও হোগেনাক্কাল ট্রেকিংয়ের জন্যও বিখ্যাত। নিকটতম রেলওয়ে স্টেশন ধর্মপুরী। নিকটতম বিমানবন্দর সালেম বিমানবন্দর।