পুজো হয়ে যাক, তারপর কলেজের ছাত্র সংসদের নির্বাচনের বিষয়ে পদক্ষেপ করব’ ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের

গান্ধী মূর্তির পাদদেশে হচ্ছে ছাত্র পরিষদের ২৬তম সমাবেশ। ২১শে জুলাইয়ের পর এটাই তৃণমূল কংগ্রেসের (Trinamool Congress) সবথেকে বড় জনসভা

Must read

গান্ধী মূর্তির পাদদেশে হচ্ছে ছাত্র পরিষদের ২৬তম সমাবেশ। ২১শে জুলাইয়ের পর এটাই তৃণমূল কংগ্রেসের (Trinamool Congress) সবথেকে বড় জনসভা। সেই মঞ্চ থেকেই এদিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) নিজের ছাত্র রাজনীতির স্মৃতিচারণা করে বলেন, ‘কংগ্রেস করতাম। একদিন দেখলাম কংগ্রেস সিপিএম এর সঙ্গে আঁতাত করে এমন অবস্থা করল একুশে জুলাইয়ের তেরো জন শহিদ মারা গেল। কংগ্রেস একটা লোক পাঠাল না। তদন্ত করল না। আমতার কান্দুয়ায় হাত কেটে দেওয়া হল লোক পাঠাল না, মেমারিতে চারজন নাকশাল নেতাকে কুচি-কুচি করে খুন করা হয়েছিল একটা লোককেও পাঠায়নি। আমি হলদিয়ায় মিটিংয়ে গিয়েছিলাম আমাদের মাইক দেওয়া হয়নি। এমনকী চা কলকাতা থেকে নিয়ে গিয়েছি। চমকাইতলায় আমরা স্টেজ বেঁধেছি। মিটিং এর অজিতদাকে আটকে দিল রাস্তায়। চারিদিকে চলছে গুলি। আমি বললাম চালাও গুলি আমি কেয়ার করি না।’

আরও পড়ুন-মমতার কেশ স্পর্শ করার ক্ষমতা বিজেপির নেই, হুঙ্কার অভিষেকের

এদিন তিনি আরো বলেন, ‘আমি ছাত্র রাজনীতির প্রোডাক্ট। আমি দীর্ঘদিন ছাত্র রাজনীতি করেছি। ছাত্র রাজনীতি করতে গিয়ে আমি দুধের ডিপোতে কাজ করেছি। সেই টাকা আমি ব্যানার পোস্টার দরিদ্র লোকের জন্য খরচ করতাম। বিএ পার্ট ওয়ান পরীক্ষার দিন ডান হাতের বুড়ো আঙুল বোতলে খ্যাচ করে ঢুকে যায়। তাই নিয়ে পরীক্ষা দিয়েছি। আমাদের কলেজ ছিল ছটা পনেরোয়। আমরা ভোর চারটেয় উঠতাম। আমার সঙ্গে লড়াইয়ে ছিল ডিএসও। ওরা অনেকে টানবার চেষ্টা করেছে। আমি কী করে যাব। আমার বাবা একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী। তাঁর কাছে গল্প শুনে শুনে আমার মনটাই স্বাধীনতা আন্দোলনে জাগরিত হয়েছিল। তাই অন্য কোনও দলে যেতে পারিনি।’

আরও পড়ুন-‘প্রথম রোদে আপনারা দগ্ধ হচ্ছেন, কিন্তু মনটা দগ্ধ হয়নি’ ছাত্রজীবনের রাজনীতির স্মৃতিচারণায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

কলেজের ছাত্র সংসদের নির্বাচন প্রসঙ্গে এদিন তিনি বলেন, ‘পুজো হয়ে যাক। তারপর আপনাদের নির্বাচনের বিষয়ে পদক্ষেপ করব। তবে একটা প্রতিজ্ঞা করতে হবে। শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন করতে হবে। তবে আপনারা ঝামেলা করেন না। ওই ‘গোলি মারো’-র লোকেরা করেন। কলেজে বহিরাগতরা যেন ঢুকতে না পারে। পুলিশকে কড়া পদক্ষেপের নির্দেশ দিচ্ছি।’

আরও পড়ুন-‘ফাঁসির মঞ্চ করো, প্রাণ দেব’ কেন্দ্রকে নিশানা করে ক্ষোভ প্রকাশ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের

রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে এদিন তিনি বলেন, ‘যাঁরা ইংরেজি শিখতে চান, যাঁরা কম্পিউটারের ট্রেনিং করতে চান, তাঁদের জন্য জেলায়-জেলায় কেন্দ্র তৈরি করা হয়েছে। চাকরি বাঁধা একেবারে। চন্দ্রযান-৩ মিশনে পশ্চিমবঙ্গের ২৮ জন আছেন। তাঁদের আমি ব্যক্তিগতভাবে চিঠি পাঠিয়েছি। তাঁরা যদি সময় দিতে পারেন, তাহলে রাজপথে তাঁদের নিয়ে মিছিল করব। তাঁদের সম্মানিত করব। আগামী দুই-তিন বছরের মধ্যে ১০ লাখ চাকরি দেব। ১০ লাখ ছেলেমেয়েকে চাকরি দেওয়া কোনও ব্যাপারই নেই। ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্প এবং বিভিন্ন শিল্পে তাঁদের নিয়োগ করা হবে।’

আরও পড়ুন-‘দড়ি ধরে মারো টান’ তৃণমূল কংগ্রেস ছাত্র পরিষদ প্রতিষ্ঠা দিবসে কেন্দ্রকে নিশানা দেবাংশুর

শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে এদিন তিনি বলেন, ‘শিক্ষকের ক্ষেত্রে ২৪,০০০ শূন্যপদ আছে। কিন্তু কেউ না কেউ কোর্টে গিয়ে মামলা করে দিচ্ছে। কীভাবে নিয়োগ করতে হবে, বলে দিন। সেভাবেই করা হবে। বিচারপতির কমিটির তত্ত্বাবধানে হোক, কোনও সমস্যা নেই আমার। ৩ মাসের মধ্যে পুলিশে ৮,০০০ লোক নেওয়া হবে।’

আরও পড়ুন-মৃত শ্রমিকদের পরিবারকে অর্থসাহায্য রাজ্যের, রাজনীতি করছেন রাজ্যপাল : ফিরহাদ

রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসকে আক্রমণ করে এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘এখন মাথায় একজন ছাতার মতো হয়ে গিয়েছেন। ওঁনার চেয়ারকে সম্মান করি। কিন্তু উনি সংবিধান লঙ্ঘন করছেন। মনে রাখবেন যে রাজ্যপাল এবং মুখ্যমন্ত্রী এক নন। আপনি মনোনীত, আমরা নির্বাচিত। নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে পাঙ্গা নেওয়ার চেষ্টা করবেন না। বিজেপি সেলের লোককে যাদবপুরের উপাচার্যের পদে বসিয়ে দিচ্ছেন।’

আরও পড়ুন-দত্তপুকুরে বিস্ফোরণের দিন ডিজি-নগরপালকে নিয়ে কালীঘাটে বৈঠক করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

বাংলার মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “নিজের বন্ধুকে ভিসি করছেন। আইপিএসকে ভিসি করছেন। অথচ যিনি কোনওদিন প্রফেসারির ট্রেনিংই নেননি। তাঁকে ভিসি করেছেন। যাদবপুরে বিজেপি সেলের প্রেসিডেন্টকে বসিয়েছে ভিসি করে। এটা কি মগের মুলুক? আপনার এক্তিয়ারে আমরা যাই না, আপনিও আসবেন না আমাদের এক্তিয়ারে। আপনি আর মুখ্যমন্ত্রী এক নয়। আপনি মনোনীত আর আমরা নির্বাচিত। আর নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে পাঙ্গা নেওয়ার চেষ্টা করবেন না। আমি শুনতে পাচ্ছি এখান থেকে ওখান থেকে লোক নিয়ে আসা হচ্ছে। রাজভবনে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে কল যাচ্ছে। যাকে ইচ্ছা ডেকে পাঠাচ্ছে। ‌ইউনিভার্সিটির ছাত্রদের ডেকে বলছেন, দুর্নীতি কি বলতে পার! আরে দুর্নীতি তো সবচেয়ে বেশি আপনারা করেছেন। নোটবন্দি থেকে ফরেন ডিল, বেসরকারীকরণ সব করেছেন আপনারা। আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক তো দুর্নীতিতে ভরে গিয়েছে। কই, ইডি, সিবিআই তো ওখানে যায় না।”

 

Latest article