সব অস্ত্রেই দিয়েছিলে শান,
ছিল পৃথক রাজ্যের সুড়সুড়ি!
তবুও হল না যে শেষরক্ষা,
হাতছাড়া হল ধূপগুড়ি।
মেজো খোকাকে নামিয়ে মাঠে,
ভেবেছিলে করবে মাত!
সব মিছে হল— নিভল বাতি,
এক অভিষেকেই কুপোকাত।
উপনির্বাচনের প্রচার লগ্নের শেষ মুহূর্তে ধূপগুড়ির মাটিতে দাঁড়িয়ে বিরোধী দলনেতার সেই হুঙ্কারটা আজ এই আবহে ভীষণ মনে পড়ছে, ‘ত্রিশ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী এসে গিয়েছে, ধূপগুড়িতে তোলা মূলের আর ভোট নাই’!! ধূপগুড়িবাসী তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তৃণমূল প্রার্থীর কপালে জয়তিলক এঁকে দিয়ে শুভেন্দুবাবুর সেদিনের সেই কথার সত্যতা প্রমাণ করে দিলেন, সত্যিই কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপস্থিতিতে তোয়ালে মোড়া তোলামূলরা জেতেনি, জিতেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আশীর্বাদধন্য, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়য়ের অনুগামী ধূপগুড়ির মা-মাটি-মানুষের প্রতিনিধি তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীরা।
ধর্মীয় বিভাজন, মেকি জাতীয়তাবাদ ও পৃথক রাজ্যের হাওয়ায় বেসামাল হয়ে উনিশের লোকসভার নির্বাচনে সমগ্র উত্তরবঙ্গের ট্রেন্ডের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ধূপগুড়ির জমিও তৃণমূলের হাতছাড়া হয়েছিল। পরবর্তীতে ধূপগুড়ির মোট জনসংখ্যার ষাট শতাংশ রাজবংশী ভাইবোনেদের মনে পৃথক জাতিসত্তার আবেগকে উসকে দিয়ে, এবং চা-বাগানের শ্রমিকদের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে একুশের বিধানসভা নির্বাচনেও বিজেপি ধূপগুড়ি নিজেদের দখলে রাখতে সমর্থ্য হয়, যদিও তৃণমূল কংগ্রেসও তাদের হারানো জমি অনেকটা পুনরুদ্ধার করে উনিশের ব্যাবধান কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়। তবে ধূপগুড়ির মাটিতে বিজেপির সাম্প্রদায়িক ও বিচ্ছিন্নতাবাদী রাজনীতির সঙ্গে সঙ্গে উনিশের লোকসভা ও একুশের বিধানসভা নির্বাচন এটাও প্রমাণ করে দিয়েছিল যে এই অঞ্চলে বিজেপির গোপন বন্ধু হল লাল পার্টি যারা ক্রমাগত নিজেদের নিঃশেষ করে দিয়ে গেরুয়া শিবিরকে অক্সিজেন জুগিয়ে চলেছে।
তেইশের এই উপনির্বাচন ছিল তৃণমূলের কাছে উত্তরবঙ্গের জমি পুনরুদ্ধারের অ্যাসিড টেস্ট। একুশ যে চেষ্টা কিছুটা এগিয়ে রেখেছিল তাকে চব্বিশের মূল লড়াইয়ে পূর্ণতা প্রাপ্তির দিকে পৌঁছে দেওয়ার রাস্তায় ধূপগুড়ি উপনির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের জয়টা ভীষণ প্রয়োজন ছিল। একদিকে শহিদ পরিবারের বধূকে প্রার্থী করে দেশপ্রেম উসকে দেওয়ার প্রবল প্রচেষ্টা, রাজবংশীদের জাতিসত্তাকে উসকে দিয়ে অনন্ত রায়কে রাজ্যসভার সাংসদ করা, তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কমান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যা়য়ের বিরুদ্ধে ইডি ও সিবিআইয়ের তৎপরতাকে চরম পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া এবং বিজেপির এক ও অদ্বিতীয় কৌশল সাম্প্রদায়িক বিভাজনের বিষবাষ্প তৈরি, বিজেপি ধূপগুড়ি দখলে রাখতে চেষ্টার কোনও ত্রুটি রাখেনি। পক্ষান্তরে তৃণমূল কংগ্রেস তার সরকারের বারো বছরের উন্নয়ন ও নাগরিক পরিষেবার খতিয়ান তুলে ধরে ধূপগুড়ির মানুষের দুয়ারে পৌঁছে গিয়েছিল।
ধূপগুড়ির সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মন এবার আর বিজেপির মোহজালে আটকে যায়নি বরং তারা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নকামী রাজনীতির সহযাত্রী হতে চেয়েছেন অভূতপূর্ব স্বতঃস্ফূর্ততায়। তোয়ালে মোড়া আগ্নেয়াস্ত্রের হুঙ্কারে এবার আর চিঁড়ে ভেজেনি ধূপগুড়ির নির্বচনী আবহে। ত্রিশ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে আটকানো যায়নি জোড়া ফুলের ধূপগুড়ি জয় বরং ধূপগুড়ির সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মন চুরি করে ধূপগুড়ির তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীরা আবারও প্রমাণ করে দিয়েছে তারা সবাই ‘চোর’।
মমতাবাদ জিন্দাবাদ।