নকিব উদ্দিন গাজি: প্রায় ৩০০ বছরের বেশি পুরানো এই পুজোর নেপথ্যে রয়েছে এক অদ্ভুত কাহিনি। জমিদারের মৃত ছেলে বেঁচে ওঠার গল্প। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডায়মন্ড হারবার এক নম্বর ব্লকের বাদ্যন গ্রামের ভট্টাচার্য পরিবার। ৩০০ বছরের বেশি সময় ধরে প্রাচীন রীতি মেনে চলে আসছে এই জমিদার বাড়ির পুজো।
আরও পড়ুন-মুখ্যমন্ত্রীর দেখানো পথেই আসছে রাজ্যের সাফল্য, ৩ মাসে বিদেশি বিনিয়োগ ৪৩৮ কোটি
কথিত রয়েছে ১১৩৬ সালে লক্ষ্মীকান্ত ভট্টাচার্য এই পুজোর শুভ সূচনা করেন। সেই সময় দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার বিভিন্ন জায়গায় রাজ্যপাট বিস্তার করেছিলেন রাজা লক্ষ্মীকান্ত ভট্টাচার্য। কিন্তু আচমকাই লক্ষ্মীকান্তের ছেলে হরমোহন ভট্টাচার্য গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। এবং পরিণতিতে মৃত্যু। পুত্র হরমোহনের মৃতদেহ যখন দক্ষিণ বিষ্ণুপুর শ্মশান ঘাটে দাহ করতে নিয়ে যাওয়া হয় তখনই বেঁচে ওঠেন তিনি। এরপরই বাবা লক্ষ্মীকান্ত ভট্টাচার্য সিদ্ধান্ত নিয়েছিল গ্রামে দুর্গাপুজো করবেন তিনি।
আরও পড়ুন-রাজ্যের উদ্যোগ ১ লক্ষ ভ্রাম্যমাণ পশু-চিকিৎসালয়
সেই থেকেই চলে আসছে ভট্টাচার্য পরিবারের দুর্গা পুজো। চিরাচরিত প্রথা মেনে এখনও ভট্টাচার্য পরিবারের পুজো হলেও এখন জৌলুস কমেছে কিছুটা। আগাছায় ঢেকেছে বাড়ির বেশ কিছু জায়গা। চুন-সুড়কির ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে পড়েছে লোহার দাঁত, কাঠামো। কিন্তু ছন্দপতন ঘটেনি পুজোর আনন্দে। এক সময় মাটির দালানেই শুরু হয়েছিল এই পুজো। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সেই দালান এখন ইটের পাকা হলেও ঐতিহ্য ধরে রাখাই এখন কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে পরিবারের সদস্যদের কাছে। প্রথা ছিল পুজোর তিনটে দিন অর্থাৎ সপ্তমী-অষ্টমী-নবমী মায়ের সামনে চড়বে বলি। মায়ের সামনেই থাকত বড় হাঁড়িকাঠ। আর সেখানেই তিনটে দিন পশুবলির প্রথা চালু ছিল।
আরও পড়ুন-চেন্নাই কনসার্টে চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলা, আমি তো ‘বলির পাঁঠা’, বললেন ক্ষুব্ধ রহমান
পুজোর পাঁচটা দিন তখন জমিদার বাড়ি গমগম করত। দূর-দূরান্তের প্রজারা আসতেন মায়ের ভোগ খেতে আর যেখানে ভোগের প্রধান খাবারই ছিল বলির মাংস। তবে সময়ের হাত ধরে অনেক কিছুরই পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু নিয়মের বিন্দুমাত্র পরিবর্তন হয়নি ভট্টাচার্য পরিবারে। এখনও পর্যন্ত বলিপ্রথা একইভাবে চালু রয়েছে। তবে বলির সংখ্যাটা কমেছে। এখনও রীতি মেনে পুজোর প্রত্যেক দিন হয় চল্লিশ কেজি মনের নৈবেদ্য। পুজোর প্রয়োজনীয় জল আসে দক্ষিণ বিষ্ণুপুরের আদি গঙ্গা থেকে। এমনকী ঠাকুরের ভোগ থেকে শুরু করে সমস্ত খাবারও হয় সেই গঙ্গাজলে। এবছর এই পুজো এগারো পুরুষে পা দিল। কাজের ব্যস্ততায় পরিবারের লোকজন দেশ-বিদেশে থাকলেও পুজোর পাঁচটা দিন সবাই ভিড় জমায় ভট্টাচার্য বাড়িতে।