পাইন বনে ঘেরা
আসছে পুজো। এই সময় মনের ডানা উড়ান চায়। বেরিয়ে পড়তে ইচ্ছে করে। একা অথবা দলবেঁধে। কেউ পছন্দ করেন ঐতিহাসিক জায়গা। কেউ পছন্দ করেন প্রকৃতি। আপনি যদি প্রকৃতিপ্রেমী হন, তাহলে আদর্শ জায়গা হতে পারে হিমাচল প্রদেশের সুন্দর সাজানো-গোছানো গ্রাম কাসোল৷ মানালি যাওয়ার আগে কুল্লু জেলার পূর্বে ৪২ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত। ভ্রমণপিপাসুদের কাছে গ্রামটি মিনি ইসরায়েলের তকমা পেয়েছে। কারণ এই পাহাড়ি গ্রামে প্রতি বছর অসংখ্য ইজরায়েল পর্যটক আসেন। সময় কাটান। পাশ দিয়ে প্রবাহিত পার্বতী নদী। এই স্রোতস্বিনী কাসোলের প্রধান আকর্ষণ। নদীর ধারে পাথরের উপর বসে নদীর সৌন্দর্য এবং গর্জন উপভোগ করা যায়। ভরা অক্টোবরে পুজোর মরশুমে পার্বতীর দর্শনে প্রশান্তিতে ভরে যাবে মন। ভারতের অফবিট ডেস্টিনেশনগুলির মধ্যে কাসোল অন্যতম। এলাকাটি পাইন বনে ঘেরা। চতুর্দিকে সবুজের সমারোহ। এককথায় অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমী ও প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য স্বর্গোদ্যান। বসন্তে এবং শরতে প্রকৃতি সাজে অপরূপবরনে। শীতে এই গ্রাম ঢাকা পড়ে যায় সাদা বরফের চাদরে।
আরও পড়ুন-বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স অফিসারদের সঙ্গে বৈঠকে অর্থ দফতর, কােষাগার থেকেই বেতন উপাচার্যদের
বেস ক্যাম্প
সার পাস, ইয়াংকের পাস, পিন পার্বতী পাস এবং ক্ষীরগঙ্গার মতো ট্রেকিং রুটগুলোর বেস ক্যাম্প হল কাসোল। রিভার রাফটিং, প্যারাগ্লাইডিং-এর মতো অ্যাডভেঞ্চার মূলক স্পোর্টসের সুবিধা রয়েছে পার্বতী নদীতে। মুখে হাসি ফুটতে পারে ভোজন রসিকদের। কারণ, এখানকার প্রতিটি ক্যাফে ও রেস্তোরাঁয় পাওয়া যায় সুস্বাদু হিমাচলি এবং অথেন্টিক ইজরায়েলি খাবার। কাসোল হল পারফেক্ট হিপ্পি ডেস্টিনেশন।
ঈশ্বরের দেশ
ক্যানভাসে শিল্পীর তুলিতে আঁকা চিত্রপটের মতো কাসোলের পার্বতী উপত্যকা। অনেকেই একে ঈশ্বরের দেশ মনে করেন। জনশ্রুতি অনুসারে, ভগবান শিব এই উপত্যকায় প্রায় ৩০০০ বছর ধরে ধ্যান করেন। বহু যুগ পর দেবাদিদেব মহাদেব চোখ খোলেন ও আশেপাশের মনোরম দৃশ্য দেখে স্ত্রী পার্বতীর নাম উচ্চারণ করেন। আশেপাশে আয়োজিত হয় দুর্গাপুজো। পার্বতী উপত্যকার মধ্যে অবস্থিত প্রতিটি গ্রামই এক-একটি অফবিট ডেস্টিনেশন। কাসোলের আশেপাশে যেসব গ্রাম আছে, সেগুলো হল :
আরও পড়ুন-বচসা থেকে কসবায় চলল গুলি, ধৃত এক
তোশ : কাসোলের পর পার্বতী উপত্যকার সবচেয়ে জনপ্রিয় হিল স্টেশন হল তোশ। এখানেও কাসোলের হিপ্পি ক্যালচারের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ রয়েছে। তাছাড়া তোশ পক্ষীপ্রেমীদের জন্য স্বর্গোদ্যান। আছে কয়েকটি হোমস্টে।
গ্রহণ : কাসোলের উপরের পাহাড়েই অবস্থিত ছোট্ট গ্রাম গ্রহণ। এখানে এলে হিমাচলের ঐতিহ্যবাহী কাঠের বাড়িগুলো দেখতে পাওয়া যায়। কাসোল থেকে হাইকিং করে এই গ্রামে পৌঁছাতে ৪ ঘণ্টার মতো সময় লাগে।
আরও পড়ুন-সংসদে আলোচনা ও পাশ মহিলা বিল, আগেই প্রাপ্য সম্মান দিয়েছেন তৃণমূলনেত্রী
চালাল : কাসোল থেকে ৩০ মিনিটের হাঁটাপথ চালাল। পার্বতী নদীর ব্রিজ পেরোলেই পৌঁছে যাওয়া যায় এই সুন্দর গ্রামে। গ্রীষ্মকালে এই গ্রামে গেলে হিমাচলের ম্যাজিকা উৎসবের সাক্ষী হতে পারবেন। বসন্তে-শরতে প্রকৃতি বসে রূপের পশরা সাজিয়ে।
রাসোল : চালাল থেকে আর ৪ ঘণ্টা ট্রেক করে পৌঁছে যাওয়া যায় রাসোলে। রাসোল ছবির মতো সুন্দর একটি গ্রাম। যেন কোনও শিল্পীর তুলিতে আঁকা। এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর ভ্রমণের সেরা সময়। আশেপাশে দেখার মতো আছে রসোল পাস, চান্দেরখানি পাস, ম্যাজিক ভ্যালি এবং আরও অনেক কিছু।
আরও পড়ুন-কাতালোনিয়া ও বাংলার টিমের বৈঠক
মণিকরণ : ১৭৬০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত মণিকরণ। কাসোল থেকে ২.৫ মাইল দূরে অবস্থিত। পবিত্র স্থানটিতে দূর-দূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা ভিড় করেন। বিশেষত বসন্তে এবং শরতে। এখানে আছে মণিকরণ সাহেব গুরুদ্বার। বিয়াস নদীর তীরে অবস্থিত গুরুদ্বারটি কাসোল ভ্রমণকারীদের জন্য অবশ্যই একটি দর্শনীয় আকর্ষণ। গুরুদ্বারে আছে উষ্ণ প্রস্রবণ। স্থানীয়দের বিশ্বাস এখানে স্নান করলে সমস্ত পাপ ধুয়ে যায়। মণিকরণের লঙ্গরে পাবেন সুস্বাদু খাবার।
ক্ষীরগঙ্গা : ক্ষীরগঙ্গাও তীর্থস্থান হিসাবে বিবেচিত। উৎসে পৌঁছতে চাইলে ট্রেক করে পৌঁছতে হবে। হিমালয়ের কোলে তাঁবুতে রাত কাটানোর সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে। একবার ক্ষীরগঙ্গার চূড়ায় পৌঁছলে বোঝা যাবে জায়গাটি তুলোর মতো মেঘ দিয়ে ঘেরা। রয়েছে পাইন এবং আপেল গাছের বন। এখানে তুষারে ঢাকা পাহাড়গুলি এমন এক মন্ত্রমুগ্ধকর পরিবেশ তৈরি করে যা কখনই ভোলা সম্ভব হয় না। শিখরে একটি শিবের মন্দির রয়েছে। অনেকেই পুজো দেন। স্নান করা যায় উষ্ণ প্রস্রবণে। কাসোলের আশে-পাশে অবস্থিত এই গ্রামগুলো যেমন সুন্দর, তেমনই শান্ত ও নিরিবিলি।
আরও পড়ুন-রাজ্যে বাংলাদেশের ৩৯৫০ মেট্রিক টন ইলিশ আসছে
কীভাবে যাবেন?
যাওয়া যায় আকাশ পথে। কাসোলের নিকটতম ভুন্তার বিমানবন্দর ৩৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এই বিমানবন্দরটি কুল্লু-মানালি বিমানবন্দর নামেও পরিচিত। বিমানবন্দর থেকে বাসে চড়ে বা বিমানবন্দরের বাইরে থেকে একটি ক্যাবে কাসোল পৌঁছাতে পারেন। আছে ট্রেন যোগাযোগ। জোগিন্দর নগর রেলওয়ে স্টেশনে নামতে হবে। কাসোল থেকে ১৪৪ কিলোমিটার দূরে। ট্রেন থেকে নেমে বাসে চড়ে বা ক্যাবে কাসোল পৌঁছানো যায়।
আরও পড়ুন-কেন্দ্রের তুঘলকি আচরণে ভবিষ্যতে চিকিৎসকদের মান নিয়ে সংশয়
কোথায় থাকবেন?
হাতছানি দেয় কাসোল। আশেপাশে আছে ছোটবড় বেশকিছু হোটেল, অতিথি নিবাস। আছে কিছু হোমস্টে। থাকা-খাওয়ার কোনও অসুবিধা হবে না। যাওয়ার আগে হোটেল বুকিং করে গেলেই ভাল। অনেকেই বসন্তে কাসোল যান। তবে পুজোর মরশুমে পাওয়া যায় অন্যরকমের আনন্দ। থাকে না অকারণ ভিড়ভাট্টা। সঙ্গে নেবেন হালকা গরম পোশাক। ডিসেম্বর থেকেই থাবা বসাতে শুরু করে শীত। কাসোল ঢাকা পড়ে যায় বরফের চাদরে।