বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী, আলিপুরদুয়ার: রীতিটা এখানে একটু অন্য ধরনের। মহাষ্টমীর গভীর রাতে এখানে রক্ষাকালীর পুজো হয় মা দুর্গার (Durga Puja- Alipurduar) সঙ্গেই। মঙ্গলকামনা করা হয় গ্রামবাসীদের। এই পুজোর প্রাচীনত্বকে তুলে ধরতে নেওয়া হয় বিশেষ উদ্যোগ। পুজোর ইতিহাসকে জীবন্ত করে রাখতে বাংলাদেশ থেকে নিয়ে আসা প্রাচীন আমলের পিতলের ঢাল-তরোয়াল প্রদর্শিত হয় পুজোমণ্ডপে। আসলে দেশভাগের যন্ত্রণা বুকে নিয়ে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান থেকে এই বাংলায় এসে নতুন করে শেকড় গেড়েছে শিকদার পরিবার। পুরনো ভিটেমাটি ও আর্থিক প্রাচুর্য সীমান্তের ওপারে ফেলে এলেও সঙ্গে নিয়ে আসতে ভোলেনি পারিবারিক দুর্গাপুজোর সাবেক উপকরণ। মনকষ্টে দেশ ছাড়লেও, মা দুর্গার আশীর্বাদ যে নতুন জায়গায় নতুন মাটিতে সব বিপদ থেকে আগলে রাখবে, সেই বিশ্বাস তাঁদের ছিল। সেই বিশ্বাসের উপরে ভর করেই ফালাকাটা ব্লকের ছোট্ট গ্রাম নবনগরে ডেরা বাঁধেন শিকদাররা। দেখতে দেখতে এই ভিটেতেও মায়ের পুজো পার করে ফেলল প্রায় ৮০টা বছর। কিন্তু বংশপরম্পরায় মায়ের পুজোর নিয়মে কোনও পরিবর্তন হয়নি। যদিও কালের নিয়মে সাবেকিয়ানা আগের চেয়ে ফিকে হয়ে গেছে অনেকটাই। তবুও মায়ের পুজোর আয়োজনে খামতি থাকে না এতটুকুও। এই বাংলাতেও প্রায় দু’শো বছরের পুরনো রীতি মেনেই এখনও দুর্গা পুজো (Durga Puja- Alipurduar) হয় সিকদার বাড়ির ঠাকুর দালানে। পুজোর দিনগুলোতে সিকদার বাড়ি হয়ে ওঠে গ্রামের সকলের মিলনক্ষেত্র। বনেদিবাড়ির পুজো আজ রূপ নিয়েছে সর্বজনীনের। পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে জানা গিয়েছে, বাংলাদেশে সিকদার বাড়িতে এক পূর্বপুরুষের হাত ধরে প্রথম ওই পুজো শুরু হয়েছিল। সময়-তারিখ সঠিক ভাবে না বলতে পারলেও, এই পুজো প্রায় দুশো বছরের পুরোনো বলে জানিয়েছেন তাঁরা। একসময়ে বলি দেওয়া হত মোষ। এখন অবশ্য সেসব উঠে গিয়েছে। তবে খামতি নেই বনেদিয়ানা আর নিষ্ঠায়।
আরও পড়ুন- গোলাপ ও রজনীগন্ধা উৎপাদনে দেশের মধ্যে প্রথম স্থানে বাংলা