যে বিচারক এজেন্সির ভুল ধরছিলেন, তাঁকেই বদলির নির্দেশ অভিজিতের

সেই কারণে বিচারকের প্রশ্নের মধ্যে না গিয়ে বিচারকের বদলির নির্দেশের পরেও কেন পুরনো জায়গাতেই রয়েছেন, সে নিয়ে প্রশ্ন তোলেন৷

Must read

প্রতিবেদন : বেনজির। বিচারকের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন তুলে বিচারপতি বদলির নির্দেশ দিলেন। বুধবার হাইকোর্টে নিয়োগ মামলার শুনানি চলাকালীন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় আলিপুর বিশেষ আদালতের বিচারক অর্পণ চট্টোপাধ্যায়কে অপসারণের নির্দেশ দেন৷ ভরা এজলাসে দাঁড়িয়ে বিচারপতি একজন বিচারককে সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিচ্ছেন, এই ঘটনা বিচারব্যবস্থার উপর মানুষের আস্থাকে জিজ্ঞাসার সামনে দাঁড় করিয়েছে৷ আদালতের স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা এবং বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে মানুষের মনে যে স্পষ্ট ধারণা ছিল, সেই ধারণা শুনানি চলাকালীন বিচারপতির নির্দেশ এবং মন্তব্যের কারণে প্রশ্নচিহ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে৷ আইনমন্ত্রীকে ৪৫ মিনিটের মধ্যে আদালতে তলব এবং দ্রুত সিদ্ধান্ত কার্যকর করার নির্দেশ নিয়েও একাধিক প্রশ্ন৷

আরও পড়ুন-বুমোসের গোলে জয়ী মোহনবাগান

বুধবার নিয়োগ মামলা নিয়ে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে শুনানি চলছিল৷ বিচারপতি কেন্দ্রীয় এজেন্সির কাছে জানতে চান, আপনাদের কাজ করতে কি কোনও অসুবিধা হচ্ছে? উত্তরে এজেন্সির প্রতিনিধিরা আলিপুর সিবিআই কোর্টের বিচারক অর্পণ চট্টোপাধ্যায়ের নাম করেন এবং বলেন, এজেন্সির কাজে তিনি বাধা দিচ্ছেন৷ বিচারপতির বক্তব্য, হাইকোর্ট সিট তৈরি করে দিয়েছে৷ সেখানে নিম্ন আদালত কোন অধিকারে হস্তক্ষেপ করে? বিচারপতি এরপর বলেন, ৪ অক্টোবরের মধ্যে বিচারককে বদলি করতে হবে৷ ২৫ অগাস্ট বদলির নির্দেশের পরেও কেন তাঁকে বদলি করা হয়নি? জানতে চাওয়া হয় আইন দফতরের সচিবের কাছে৷ সচিব জানান, ফাইল মন্ত্রীর টেবিলে৷ ৪৫ মিনিটের মধ্যে আসতে নির্দেশ দেওয়া হয় আইনমন্ত্রী মলয় ঘটককে৷ অসুস্থ মলয় ঘটক সময় চেয়ে নিলে ৬ অক্টোবর পর্যন্ত সময় দেন৷

আরও পড়ুন-১৩ গোলে জয় মেয়েদের

বিচারব্যবস্থার কোনও বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তুললে তার খেসারত দিতে হয় মানুষকে৷ আদালত অবমাননার মামলা হয়৷ কিন্তু বুধবার বিচারপতি প্রশ্ন তুললেন এক বিচারকের বিরুদ্ধে৷ যিনি নিম্ন আদালতের বিচারক৷ তিনি কী করছিলেন? বিচারক অর্পণ চট্টোপাধ্যায় সিবিআই–ইডির কাজ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন৷ কী প্রশ্ন? প্রত্যেকদিনই এজেন্সির আইনজীবীরা এসে বলতেন, বিরাট দুর্নীতি৷ তদন্ত চলছে৷ গভীর চক্রান্ত৷ বিচারক প্রত্যুত্তরে তাঁদেরকে বলেছিলেন, রোজ একই যুক্তি দেবেন না৷ এবার তথ্য–প্রমাণ নিয়ে আসুন৷ আদালত তথ্য–প্রমাণ চায়৷ আপনারা বিরিয়ানি রাঁধতে চাইছেন৷ মশলাটাতো ঠিকমতো দিতে হবে৷

আরও পড়ুন-ব্যর্থ রোহিতের লড়াই, হার ভারতের

এই বক্তব্য বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের মনে হয়েছে উচ্চ আদালতের নির্দেশ অমান্য করা৷ সেই কারণে বিচারকের প্রশ্নের মধ্যে না গিয়ে বিচারকের বদলির নির্দেশের পরেও কেন পুরনো জায়গাতেই রয়েছেন, সে নিয়ে প্রশ্ন তোলেন৷ এরপরই আরও মারাত্মক ভাষায় বিচারক অর্পণ চট্টোপাধ্যায়কে আক্রমণ করেন তাঁরই পেশার উচ্চ আদালতের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়৷ ভরা এজলাসে তাঁর প্রশ্ন, বিচারকের মাথায় কার হাত রয়েছে? অর্থাৎ বিচারপতি কোর্টে দাঁড়িয়ে বিচারকের উপর অনাস্থা প্রকাশ করলেন৷ বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন৷ স্বচ্ছতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করলেন৷ কার্যত বিচার ব্যবস্থার উপর মানুষের যে আস্থা, সেটাকেই ভরা আদালতে চুরমার করে দিলেন৷ মাথায় হাত থাকার প্রসঙ্গ টেনে বিচারপতি বুঝিয়ে দিলেন বিচারক কিংবা বিচারপতির মাথায় কারও কারও হাত থাকে৷ সেই হাতের সৌজন্যেই রায় দান করা হয়৷ অর্থাৎ সেই তালিকা থেকে বাদ যান না খোদ বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ও৷ বেশ কিছু আইনজীবীর বক্তব্য, বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের বহু নির্দেশ ডিভিশন বেঞ্চ কিংবা সুপ্রিম কোর্টে খারিজ হয়েছে৷ তার মানে উচ্চ আদালতের বিচারপতিরাও অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের ভাষায় মন্তব্য করলে তা কি যথার্থ হবে?

আরও পড়ুন-

আইনি মহলের অনেকেই বলছেন, বিচারপতির এহেন মন্তব্য চূড়ান্ত চক্ষুলজ্জাহীন৷ একপ্রকার আদালত অবমাননা৷ ভবিষ্যতে বিচারব্যবস্থার উপর মানুষের অনাস্থা তীব্রতর হলে আইন বিশেষজ্ঞরা এই ঘটনাগুলির দিকেই দিক্ নির্দেশ করবেন৷

Latest article