সৌমালি বন্দ্যোপাধ্যায় হাওড়া: মায়ের পুজো হয় তন্ত্রমতে। মন্ত্রপাঠ হয় তালপাতার প্রাচীন পুঁথি দেখে। যুগে যুগে এই রীতিই চলে আসছে ভট্টাচার্য পরিবারে। এটাই হাওড়ার এই বনেদি বাড়ির পুজোর বৈশিষ্ট্য। সাধক তৈলঙ্গস্বামীর স্মৃতিবিজড়িত মধ্য হাওড়ার রামকৃষ্ণপুরের ভট্টাচার্য বাড়ির পুজোয় আজও তালপাতার পুঁথিতে রক্ষিত আছে দেবীর সাধনামন্ত্র। প্রায় সাড়ে তিনশো বছরের পুরনো তালপাতার পুঁথিতে লিপিবদ্ধ মন্ত্রোচ্চারণের মাধ্যমে দেবী শঙ্করীর আরাধনা চলে ভট্টাচার্য বাড়িতে।
আরও পড়ুন-আজও প্রথা মেনে হয় কাঁচকলার শুক্তো, কচুশাকের ভোগ, বুদবুদের চট্টরাজ পরিবার
আগে মোষ ও ছাগ বলি হত। তবে সেই রেওয়াজ আজ শুধুই স্মৃতি। এখন আখ, শসা, বাতাবি লেবু ও চাল কুমড়ো বলির প্রথা রয়েছে। চিরাচরিত পারিবারিক ঐতিহ্য ও বনেদিয়ানা বজায় রেখে পুজোর আয়োজন করে আসছেন পরিবারের সদস্যরা। তাঁদের কথায়, আজ থেকে প্রায় ৩৫০ বছর আগে পূর্বপুরুষ কাশীনাথ তর্কতীর্থর পৌত্র ভৈরবীচরণ স্বপ্নাদেশ পেয়ে কাশীর মণিকর্ণিকা ঘাট থেকে সিদ্ধেশ্বরী মূর্তি লাভ করেন। ফিরে এসে আন্দুলে সেই মূর্তির প্রতিষ্ঠা করেন। মূর্তি প্রতিষ্ঠার সময় উপস্থিত ছিলেন সাধক তৈলঙ্গস্বামী স্বয়ং। পরবর্তীকালে এই বংশেরই একটা অংশ বসবাস শুরু করেন মধ্য হাওড়ার উমাচরণ ভট্টাচার্য লেনে। সেই সঙ্গেই সিদ্ধেশ্বরী মূর্তিও নিয়ে আসা হয় এই বাড়িতে। ১৬৫৬ সাল থেকে তন্ত্রমতে শুরু হয় এই পুজো। রামকৃষ্ণপুরে সেই থেকেই চলে আসছে পুজো।
আরও পড়ুন-দিনের কবিতা
দেবীপক্ষের শুরু থেকেই সিদ্ধেশ্বরী মূর্তি পুজোর মধ্যে দিয়ে ফি বছর ভট্টাচার্য বাড়িতে দুর্গাপুজোর সূচনা হয়। বংশের অন্যতম সদস্য রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, চিরাচরিত রীতি মেনে প্রতি বছর একই কাঠামোয় একচালার মূর্তি তৈরি হয়। সিংহের রং সাদা ও গণেশের পেটের রং থাকে লাল। রথযাত্রার দিন থেকে আমাদের বাড়িতে প্রতিমা তৈরি শুরু হয়। ৩৫০ বছরের পুরনো তালপাতার পুঁথিতে লিখে রাখা মন্ত্রোচ্চারণের মাধ্যমে দেবীর আরাধনা করা হয়। নবমীর দিন হয় কুমারী পুজো।