রাজা নবকৃষ্ণ দেব

দুর্গাপুজোর আদি ইতিহাস ছুঁলে কলকাতার শোভাবাজার রাজবাড়ির কথা আসবেই। শোভাবাজার রাজবাড়ির কথা এলে অনিবার্যরূপে উঠবে রাজা নবকৃষ্ণ দেব-এর নাম। তিনি ছিলেন শিক্ষিত, প্রতিভাবান, বিদ্যোৎসাহী। শোনা যায়, নবাব সিরাজউদ্দৌলার পতনে, ইংরেজদের জয়ে ছিল তাঁর বিশেষ ভূমিকা। পুরস্কারস্বরূপ ইংরেজদের কাছ থেকে পেয়েছিলেন ‘রাজা’ উপাধি। হয়ে উঠেছিলেন প্রভাবশালী। পরবর্তীকালে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন শোভাবাজার রাজবাড়ি। ব্রিটিশদের তুষ্ট করতে রাজবাড়িতে জাঁকজমকপূর্ণ দুর্গাপুজোর প্রচলন করেন। পলাশির যুদ্ধের বিজয় উৎসব হিসেবে। ১০ অক্টোবর জন্মদিন। তাঁর উপর আলোকপাত করলেন উৎপল সিনহা

Must read

শরৎ মানেই শ্বেতশুভ্র কাশফুল আর রাশি রাশি অপরূপা শিউলি। মেঘমুক্ত আকাশ। বাতাসে পুজো-পুজো গন্ধ। কী এক অচেনা পরশে অজানা হরষে মন যেন ছুটে বেড়ায় দিক থেকে দিগন্তে। এক অব্যক্ত অনির্বচনীয় আনন্দে ভরে ওঠে মন। শরতে যেন সবাই উদার হয়ে ওঠে। প্রকৃতির জাদুকাঠির ছোঁয়ায় প্রসারিত হয়ে ওঠে হৃদয়। সবাই যেন সবার মনের খবর জানতে চায়। চার দেওয়ালের নিয়মমাফিক সীমাবদ্ধতার আগল ভেঙে যেন বেরিয়ে পড়তে চায় মন। ‘আপন হতে বাহির হয়ে বাইরে’ এসে দাঁড়াতে চায় হৃদয়। বুকের মাঝে বিশ্বলোকের সাড়া পেতে চায়। আনন্দগান গাইতে চায় সবার সুরে সুর মিলিয়ে। আর এভাবেই তো মহামিলনের বার্তা ছড়িয়ে পড়ে দিকে দিকে। আসলে আসন্ন শারদোৎসবের প্রাক্কালে জীবনের বিভিন্ন চাপে দমে থাকা মনগুলো একেবারে শিশুর মতো উচ্ছল হয়ে ওঠে ‘মা আসছেন’ এই আশ্বাসে। এই সময় জেগে ওঠে বিশ্বচরাচর। আনন্দময়ী মায়ের আগমনি সুর ধ্বনিত হতে থাকে আকাশে-বাতাসে।

আরও পড়ুন-বার্ধক্য রুখতে না পারলেও…

সারাটা বছর ধরে শবরীর প্রতীক্ষায় থাকা বাঙালি পুজোর চারটে দিন সব কাজ ফেলে মেতে ওঠে নির্ভেজাল আনন্দ সম্মেলনে।
কিন্তু এই যে বাঙালির প্রাণের উৎসবে আজ এত জাঁকজমক তার আদি ইতিহাসে যেতে হলে কলকাতার শোভাবাজার রাজবাড়ির কথা আসবেই আর শোভাবাজার রাজবাড়ির কথা এলেই অনিবার্যরূপে আসবে রাজা নবকৃষ্ণ দেব-এর নাম, যিনি ছিলেন এই রাজ-পরিবারের প্রাণপুরুষ।
প্রথমেই জেনে নিতে হবে কে এই নবকৃষ্ণ দেব, কী তাঁর পরিচয়। নবকৃষ্ণ দেব-এর জন্ম ১৭৩৩ সালের ১০ অক্টোবর, মৃত্যু ১৭৯৭ সালের ২২ ডিসেম্বর।
তাঁর পিতা রামচরণ দেব। খুব অল্প বয়সে নবকৃষ্ণ তাঁর পিতাকে হারান। মায়ের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় তিনি উর্দু, পার্সি ও পরে আরবি ভাষা শেখেন এবং পারদর্শিতা অর্জন করেন। তিনি নিযুক্ত হন ওয়ারেন হেস্টিংস-এর পার্সি ভাষার শিক্ষক হিসেবে।
সেটা ১৭৫০ সালের কথা। পরে তিনি ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের বিদেশি দপ্তরে দোভাষীর কাজে নিযুক্ত হন। ১৭৫৭ সালে পলাশির যুদ্ধের পর সেই বছরই কলকাতায় শোভাবাজার রাজবাড়ি নির্মাণ করান। ১৭৫০ সালে ওয়ারেন হেস্টিংস ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিতে যোগদান করেন এবং ভারতে আসেন ।

আরও পড়ুন-নানা রূপে দুর্গা

গভীর অধ্যবসায়ের মাধ্যমে অল্প সময়েই সুনাম অর্জন করেন। অবসর সময়ে তিনি ভারত সম্পর্কে জ্ঞানার্জনের জন্য নবকৃষ্ণ দেব-এর কাছে উর্দু ও ফারসি ভাষা শিখতে শুরু করেন। পরবর্তী সময়ে রবার্ট ক্লাইভেরও ভাষা-শিক্ষক হিসেবে পারদর্শিতা দেখিয়ে ক্লাইভের বিশেষ প্রিয়পাত্র হয়ে ওঠেন নবকৃষ্ণ। ১৭৫৭ সালে পলাশির যুদ্ধে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ের পরে রবার্ট ক্লাইভের মুনশি তথা ভাষা-সহায়ক টিকিধারী বৈষ্ণব নবকৃষ্ণ দেব দেশে মুসলিম-আধিপত্য খর্ব করার পুরস্কার হিসেবে কলকাতার বেশ কিছুটা অঞ্চলের জমিদারি স্বত্ব পান এবং সঙ্গে আরও বিপুল পরিমাণ ক্ষমতার অধিকারী হয়ে অর্জন করেন ‘রাজা’ উপাধি। তখনই তিনি পত্তন করেন কলকাতার সবচেয়ে জাঁকজমকপূর্ণ দুর্গোৎসবের এবং পুজোর প্রধান অতিথি হিসেবে নিয়ে আসেন রবার্ট ক্লাইভকে। পুজোটি অচিরেই সার্বজনীন হয়ে ওঠে।

আরও পড়ুন-দুর্গত এলাকা দেখলেন অরূপ, দুর্যোগেও কেন্দ্রের বরাদ্দ-রাজনীতি, ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী

এবার আসা যাক শোভাবাজার রাজবাড়ির কথায়। এটি পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় অবস্থিত একটি রাজবাড়ি। এটির প্রতিষ্ঠাতা রাজা নবকৃষ্ণ দেব। কলকাতা শহরের সবচেয়ে প্রাচীন দুর্গাপুজো এখানেই অনুষ্ঠিত হয়। উত্তর কলকাতার রাজা নবকৃষ্ণ স্ট্রিটে রয়েছে শোভাবাজার রাজবাড়ির মন্দির। ২৪ অগাস্ট এই মন্দিরে কলকাতা শহরের প্রতিষ্ঠা দিবস উদযাপিত হয়, যা সুতানুটি উৎসব নামে পরিচিত। শোভাবাজার নাটমন্দির ও রাজবাড়িটি পুরোনো কলকাতার স্থাপত্যরীতির উজ্জ্বল নিদর্শন এবং ঐতিহাসিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ ও বিশেষরূপে উল্লেখযোগ্য।
রাজা নবকৃষ্ণ দেব-এর দীর্ঘদিন কোনও সন্তান হয়নি। তাই তিনি দত্তক নিয়েছিলেন তাঁর বড় দাদা রামসুন্দরের পুত্র গোপীমোহনকে। পরে নবকৃষ্ণের নিজের একটি সন্তান হয়। তাঁর নাম রাখেন রাজকৃষ্ণ। পরবর্তীতে বড় ছেলে পায় আদি দুর্গোৎসবের দায়িত্ব এবং প্রচুর জমিজায়গা, আর ছোট ছেলে পায় কলকাতার জমিদারি, কুলদেবতা গোপীনাথ জিউ-এর সেবার ভার এবং নবকৃষ্ণের বাস্তুভিটে।

আরও পড়ুন-মেক্সিকোয় খাদে পড়ল বাস, মৃত বহু

এই বাড়িতে নতুন করে দুর্গাদালান বানিয়ে পুজো শুরু হয় ১৭৯০ সালে। এই দুই বাড়িতে দুর্গাপুজোয় পালা করে চলত মচ্ছব সাহেবসুবোদের মনোরঞ্জনের জন্য। পরে কোম্পানির নির্দেশে নেটিভদের পুজোয় ব্রিটিশ কর্তাদের উপস্থিতি একপ্রকার নিষিদ্ধ হওয়ার ফলে মোচ্ছবে লাগাম পড়ে। কিন্তু অন্যান্য জাঁকজমক চলতেই থাকে। ঊনবিংশ শতাব্দীতে বাগবাজারের বিখ্যাত পক্ষীদলকে শোভাবাজার রাজপরিবারের দু’তরফই নিমন্ত্রণ করে নিয়ে যেতেন। কিন্তু একবার পাওনাগন্ডা নিয়ে গোলমাল হওয়ায় এ-সব বন্ধ হয়ে যায়। বিংশ শতাব্দীতে কবিগান, গোপাল উড়ের পালা এবং পক্ষীর দলের কীর্তিনিশানের বদলে হইহই করে চলে এল যাত্রা ও থিয়েটার। পুজোর ক’দিন বাড়িতেই চলতে লাগল পালা করে জমজমাট মঞ্চাভিনয়। রাজারা থিয়েটার দেখতেন বাড়ির দুর্গাপুজোয়। থিয়েটারের একটা-দুটো সিন যেতে না যেতেই শুরু হত বাঈ-নাচ। এসব দেখে রাজারা তো মহাখুশি। নাচ পছন্দ হলে তাঁরা বলতেন
‘এনকোর এনকোর’। মানে, আবার হোক। অর্থাৎ সেই বিশেষ নাচটা এত ভাল লেগেছে যে আবার দেখাতে হবে! সঙ্গে সঙ্গেই আবার নতুন করে শুরু হত সেই একই নাচ। এইসব চলতে চলতে রাত কাবার হয়ে ভোরের আলো ফুটলে অধিকারী মশাই মঞ্চে এসে হাতজোড় করে বলতেন, ‘রাজাবাবুগণ, কিছু মনে করবেন না, আজ আর পালা দেখানো সম্ভব হচ্ছে না, আজ এই পর্যন্তই থাক, বাকি পালা আবার কাল দেখানো হবে।’শোভাবাজারের দেব-পরিবারের পুজোর বিশেষত্ব হল, এখানে দেবী দুর্গাকে বাড়ির মেয়ে হিসেবে পুজা করা হয়। একচালা প্রতিমা। দুর্গা এখনও থাকেন চিকের আড়ালে, রাজবাড়ির মেয়েরা যেমন থাকতেন। একে বলে ‘জগজগা’। মাতৃপ্রতিমার কাঠামো পুজোর সূত্রপাত হয় উল্টোরথের দিন। সেদিনই কার্যত উৎসব শুরু। মাঝে আছে মহালয়ায় দিন পণ্ডিত-বিদায়। দেশদেশান্তর থেকে পণ্ডিতেরা আসতেন পুজোর উপহার গ্রহণ করতে। পেতেন মোহর ও অন্যান্য উপহার। এখন অবশ্য মোহরের বদলে টাকা দেওয়া হয়। কিন্তু রীতি বিসর্জন দেওয়া হয়নি। এখনও রাজানুকূল্য গ্রহণ করতে প্রতি বছর বিদ্বজ্জনেরা উপস্থিত থাকেন। এপার বাংলার যে কোনও বাড়ির মতোই মেয়ে ফিরে যাওয়ার সময় দশমীর দিন চালু আছে কনকাঞ্জলি প্রথা। মেয়েকে রওনা করিয়ে নীলকণ্ঠ পাখি উড়িয়ে কৈলাসে শিবকে বার্তা পাঠিয়ে পুজোর সমাপ্তি হত। কিন্তু এখন আর নীলকণ্ঠ পাখি ওড়ে না। এখন ভরসা মাটির নীলকণ্ঠ। নৌকায় করে মাকে নিয়ে গিয়ে মাঝগঙ্গায় বিসর্জন দেওয়ার প্রথা এখনও বজায় আছে। যেমন বজায় আছে রাজকৃষ্ণের বাড়ির পুজোয় বলিদানের প্রথা, সন্ধিপুজোর সময় ব্ল্যাঙ্ক ফায়ার ইত্যাদি। অন্ন ভোগের রেওয়াজ নেই, তার বদলে আছে রাজবাড়ির ভিয়েনে তৈরি মিঠাই। আগে ৫০-৬০ রকমের মিঠাই বানানো হত, এখন কারিগরের অভাবে ২০ থেকে ৩০ রকমের মিঠাই বানানো হয়।

আরও পড়ুন-নিয়োগ সংক্রান্ত মন্ত্রিসভার বৈঠক এবার কালীঘাটে

পুজো-সংক্রান্ত সমস্ত আনুষঙ্গিক কাজ চলে আসছে বংশ-পরম্পরায়। প্রতিমা-শিল্পী, পুরোহিত, যাঁরা পুজোর ভোগ প্রস্তুত করতেন, যাঁরা দশকর্মার সামগ্রী সরবরাহ করেন, যাঁরা জল সরবরাহ করেন, এমনকী যাঁরা সানাই-ব্যান্ড বাজান তাঁরাও ছ-সাত পুরুষ ধরে এই কাজ করে আসছেন।‌ শুনে আশ্চর্য হতে হয়, যাঁদের নৌকোয় প্রতিমা বিসর্জন হয় তাঁরাও এই কাজ নবকৃষ্ণের আমল থেকে বংশ-পরম্পরায় করে আসছেন।
নবাব সিরাজউদ্দৌলার পতনে এবং ইংরেজদের জয়ে সবচেয়ে বেশি খুশি হন নবকৃষ্ণ দেব ও নদীয়ার মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র রায়। তাঁরা দুজনেই এই জয়কে হিন্দুদের জয় হিসেবে উদ্‌যাপন করতে চান।‌ ধূর্ত রবার্ট ক্লাইভও তাঁদের মনোভাবকে প্রশ্রয় দিয়ে এই জয়কে সেলিব্রেট করার বাসনা প্রকাশ করেন। ‌তাই পলাশির যুদ্ধের বিজয় উৎসব হিসেবে দুর্গাপুজোর আয়োজন করেন নবকৃষ্ণ। উত্তর কলকাতার তৎকালীন বড় ব্যবসায়ী শোভারাম বসাকের কাছ থেকে একটি প্রাসাদোপম বাড়ি নবকৃষ্ণ কিনেছিলেন শোভাবাজার অঞ্চলে অনেক আগেই। পলাশির যুদ্ধের পর সেখানেই তৈরি করালেন লাইব্রেরি, নাচঘর, দেওয়ানখানা, নহবতখানা এবং সুবিশাল এক সাত খিলানের ঠাকুরদালান। একইসঙ্গে নবকৃষ্ণের ইচ্ছায় গড়ে উঠল একচালা প্রতিমা। ঝলমল করে উঠল প্রতিমার গা-ভর্তি সোনার গয়না ও অন্যান্য অলঙ্কার। মা দুর্গার কেশদামে গুঁজে দেওয়া হল ২৬টি স্বর্ণচাঁপা। নাকে ৩০টি নথ। মাথায় সোনার মুকুট।

আরও পড়ুন-খুঁটিপুজোয় ঢাকে কাঠি, মেক্সিকোর দুর্গোৎসবে চিরাচরিত বাঙালিয়ানা

পুজোয় তোপধ্বনি-মন্দ্রিত সন্ধিপুজো ছিল তাক লাগানো। দৈনিক নৈবেদ্য দেওয়া হত ৩০ মন চাল।
পলাশির যুদ্ধের পরে কলকাতার সামাজিক সাম্রাজ্যে মুকুটহীন সম্রাট হয়ে ওঠেন রাজা নবকৃষ্ণ। তাঁর সামাজিক গুরুত্ব তখন রাজনৈতিক নেতাদের চেয়েও বেশি। সরকারি পদ এবং কোম্পানির কর্তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কই তাঁর এই মর্যাদাপ্রাপ্তির কারণ। দু’হাতে অঢেল খরচ করার জন্য তাঁর অনেক অনুগামীও তৈরি হয়েছিল। তাঁর মতো প্রভাবশালী মানুষ তখন কমই ছিল। তাঁর মায়ের শ্রাদ্ধে নাকি সেই আমলে ৯ লক্ষ টাকা খরচ করেন নবকৃষ্ণ, যা ভাবলে আজও বিস্ময় জাগে। তিনি নিজে শিক্ষিত, প্রতিভাবান ও বিদ্যোৎসাহী ছিলেন একথা সত্য, কিন্তু তাঁর সমালোচকেরা বলেন রবার্ট ক্লাইভ-সহ ইংরেজ কর্তাদের খুশি করার অভিপ্রায়েই নাকি তিনি দুর্গাপুজোর প্রচলন করেছিলেন। সমালোচকেরা এ-ও বলেন যে, পলাশির যুদ্ধের আগে নবাব সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্র হয়েছিল, ইংরেজদের পক্ষ থেকে তার মূল প্রতিনিধি ছিলেন শোভাবাজারের নবকৃষ্ণ দেব। এমনকী তিনিই নাকি মিরজাফরের সঙ্গে ব্রিটিশদের যোগাযোগের অন্যতম প্রধান মাধ্যম ছিলেন। রবার্ট ক্লাইভ নিজে খ্রিস্টান ছিলেন এবং মূর্তিপুজোর বিরোধী ছিলেন। তবুও স্রেফ নিজেদের স্বার্থে হিন্দুপ্রেমিক সেজে নবকৃষ্ণের দুর্গাপুজোয় দক্ষিণা-সহ ফলমূল ও মিষ্টির ঝুড়ি পাঠান। সপারিষদ তিনি এই পুজোয় উপস্থিত হন। তাঁর মনোরঞ্জন ও তুষ্টির জন্যই নাকি নবকৃষ্ণ দুর্গাপুজোয় ঠাকুরদালানের বিপরীত প্রান্তে অবস্থিত নাচঘরে ভাড়া করে আনা বিদেশি নর্তকী-সহ মদ, মাংস ও বাঈজিনাচের ব্যবস্থা করেন। সেই হিসেবে কলকাতায় বাঈনাচের প্রবর্তকও নাকি নবকৃষ্ণ। নবকৃষ্ণ দেব-এর এই দুর্গাপুজা দেখে কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকার ধনী ও অভিজাত সম্প্রদায় খুব উৎসাহিত হয়ে ওঠেন এবং তাঁরাও নিজেদের মতো করে শুরু করেন দুর্গাপুজো।

আরও পড়ুন-লোকসভার আগে সেমিফাইনাল, নভেম্বরেই ৫ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন!

শোভাবাজার রাজপরিবারের সর্বোৎকৃষ্ট সদস্যের নাম রাধাকান্ত দেব। তিনি ছিলেন একাধারে শিক্ষাবিদ, ভাষাবিদ, সমাজসংস্কারক ও সাহিত্যিক। তাঁর মহান সৃষ্টি ‘শব্দকল্পদ্রুম’, যা বাংলা ভাষায় লেখা সংস্কৃত অভিধান। সমাজে তথা সারা দেশে শিক্ষার প্রসারে শোভাবাজার রাজবাড়ির অবদান অনস্বীকার্য। সমাজসংস্কারেও রাজবাড়ির অগ্রণী ভূমিকা বিশেষ উল্লেখযোগ্য। স্বয়ং রামকৃষ্ণ ঠাকুরের আনাগোনা ছিল শোভাবাজার রাজবাড়িতে, এমনকী স্বামী বিবেকানন্দ যখন শিকাগো ধর্মসভা থেকে দেশে ফিরে আসেন তখন শোভাবাজার রাজবাড়িতেই বহু বিশিষ্ট মানুষের উপস্থিতিতে তাঁকে নাগরিক সংবর্ধনা জ্ঞাপন করা হয়।

Latest article