এক টুকরো ইউরোপ
স্বপ্ন দেখেন অনেকেই। ইউরোপ বেড়ানোর। সাধ্যে কুলোয় না সবার। স্বপ্ন অধরাই থেকে যায়। সাত সমুদ্র তেরো নদী না-ই বা পেরোলেন, এই রাজ্যে বসেই পেতে পারেন ইউরোপের স্বাদ। কোথায়? উত্তরবঙ্গের সিটং। জায়গাটা কার্শিয়াংয়ের কাছেই। পাহাড়ের কোলে। পুজোর সময় কয়েক দিনের জন্য কাটিয়ে আসতে পারেন। সিটংয়ে পা রাখলেই মনে হবে যেন ইউরোপে এলেন। অবশ্য অনেকেই কাশ্মীরের সঙ্গে মিল খুঁজে পান।
আরও পড়ুন-পুজোর আগে হোর্ডিং ব্যানারে বড় নির্দেশিকা পুরসভার
চায়ের পাশাপাশি দার্জিলিংয়ের কমলালেবু জগদ্বিখ্যাত। এ আর নতুন কী? তবে অনেকের অজানা, দার্জিলিংয়ের বেশিরভাগ কমলালেবুই উৎপন্ন হয় সিটংয়ে। তাই সিটংকে বলা হয় কমলালেবুর গ্রাম।
আশপাশে আছে বেশকিছু বেড়ানোর জায়গা। সিটং-এর উচ্চতা চার হাজার ফুটের কাছাকাছি। তবে এখানকার ঠান্ডা কালিম্পং-মংপুর তুলনায় বেশি। রবীন্দ্র স্মৃতিবিজড়িত মংপু সিটং থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে। মাঝে পথে পড়বে রিয়াং নদী। এই নদীর উৎস কাছের একটি ঝরনা থেকে। নদীর পাড়ে স্থানীয়রা পিকনিকে মেতে ওঠেন। আশপাশে সারাক্ষণই বয় হিমেল বাতাস। জল অল্প। তবে গতি ভালই। এখানে দেখা যায় নানারকমের পাখি। কাছাকাছির মধ্যে ঘুরে আসা যায় লাটপাঞ্চার, বাগোড়া, চটকপুর, কার্শিয়াং, মিরিক। আছে ছোট ছোট ট্রেকিং রুটও। আপার সিটং-এ ট্রেক করে উঠতে হয়। এখান থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। সিটংয়ে রয়েছে অতি প্রাচীন গির্জা এবং শতাব্দীপ্রাচীন একটি গুম্ফা। দুটোই দর্শনীয়। সবমিলিয়ে পুজোর ছুটিতে পাহাড়িয়া সিটং হতে পারে পছন্দের ডেস্টিনেশন।
আরও পড়ুন-পাঠানকোট হামলার মূল চক্রী লতিফ খুন, ঘনাচ্ছে রহস্য
কীভাবে যাবেন?
এনজেপি স্টেশন থেকে শিলিগুড়ি তেনজিং নোরগে বাসস্ট্যান্ড থেকে কিংবা বাগডোগরা এয়ারপোর্ট থেকে গাড়িতে সরাসরি সিটং যাওয়া যায়। অনেকেই শিলিগুড়ি থেকে বাইক ভাড়া নিয়ে চলে যান। এতে পছন্দমতো ঘোরার সুযোগ রয়েছে।
কোথায় থাকবেন?
সিটংয়ে আছে প্রচুর হোম স্টে। অনলাইনে বা ফোন কলের মাধ্যমে আগে থেকে বুক করে নিতে পারেন। ট্যুরিজম দফতরের সাইটেও পাবেন খোঁজ। আশপাশে আছে বেশকিছু হোটেল। সেখানেও থাকা যায়।
হাতির পিঠে জঙ্গলে
পাহাড়ের পর এবার জঙ্গল। উত্তরবঙ্গের ডুয়ার্সে আছে বেশকিছু বেড়ানোর জায়গা। জঙ্গলে ঘোরার পাশাপাশি দেখা যায় পুজো। আয়োজন যে বিশাল, তা নয়, তবে প্রাণ আছে। চাইলে করতে পারেন জঙ্গলে জিপ এবং হাতি সাফারি। তার জন্য সেজে উঠেছে গরুমারা। এই অভয়ারণ্য একশৃঙ্গ গন্ডারের জন্য বিখ্যাত। তবে এই মুহূর্তে আকর্ষণের কেন্দ্রে জেনি আর মাধুরী। কারা তারা? মানুষ নয়, কুনকি হাতি। জলদাপাড়া থেকে নিয়ে আসা হয়েছে গরুমারা অভয়ারণ্যে হাতি সাফারি নিয়মিত করার জন্য। এই দুই হাতি এবার পর্যটকদের কাছে মূল আকর্ষণ।
এমন নয় যে এই প্রথম হাতি সাফারি হচ্ছে গরুমারায়। আগে হত। তবে বন্ধ হয়ে যায় করোনার সময় থেকে। হাতি সাফারি ফিরিয়ে আনার জন্য বহুদিন ধরেই দাবি জানিয়ে আসছিলেন পর্যটকরা। এতদিনে সেই দাবি মিটেছে। পুজোর মুখে, ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে চালু হয়েছে। এর পাশাপাশি পর্যটকদের সুবিধার্থে বেশকিছু প্যাকেজ ট্যুরের পরিকল্পনা করা হয়েছে। জঙ্গলে বেড়ানো থেকে হাতি বা জিপ সাফারি, বন বাংলোতে থাকা, স্টেশন বা বিমানবন্দর থেকে পিকআপ এবং ঘোরার পর এনজেপি বা বাগডোগরায় ড্রপ পর্যন্ত সমস্তটাই মিলবে। কী ভাবছেন, এবার পুজোর ছুটিতে ডুয়ার্স যাবেন? কয়েকদিন কাটিয়ে আসবেন সবুজের সমারোহে?
আরও পড়ুন-বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে মন্ত্রিসভার বৈঠক
কীভাবে যাবেন?
গরুমারার কাছের বিমানবন্দর বাগডোগরা। দূরত্ব প্রায় ৮০ কিলোমিটার। আছে রেল যোগাযোগ। নিউ ময়নাগুড়ি, নিউ মাল এবং চালসা রেল স্টেশনে নেমে যাওয়া যায়।
কোথায় থাকবেন?
গরুমারার কাছেই রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ পর্যটন উন্নয়ন নিগমের নিজস্ব মূর্তি ট্যুরিজম প্রপার্টি। অভয়ারণ্য থেকে মাত্র ১১ কিলোমিটার দূরে। সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। স্বচ্ছন্দে থাকতে পারেন। তবে আগে থেকে বুকিং করে গেলেই ভাল। যোগাযোগ নম্বর ৯৮৭৪০৫৩২৯২।