২০০৬ সালে মনরেগা প্রকল্প শুরু হয়। শুধু বাংলায় নয়, গোটা দেশের সমস্ত খেটে খাওয়া মানুষের স্বার্থে এই প্রকল্প। এই প্রকল্প গ্রামের গরিব মানুষকে দিয়েছিল কাজের নিশ্চয়তা। কোনও জবকার্ডধারী চাইলেই দিতে হবে কাজ। আর কাজ দিতে না পারলে সরকারকে গুনতে হবে ক্ষতিপূরণের টাকা। কিন্তু সেইসব আইনকানুনের তোয়াক্কা না করে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার বাংলায় বন্ধ করে দিয়েছে ১০০ দিনের কাজ প্রায় দু’বছর।
আরও পড়ুন-দিনের কবিতা
পিতৃপক্ষের শেষপর্বে এই প্রকল্পকে ঘিরে যে রাজনৈতিক টানাপোড়েন বাংলা দেখল, তা এককথায় নজিরবিহীন। এই ঘটনায় প্রমাণ হয়ে গেল বিজেপি ১০০ দিনের কাজ নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের মুখোমুখি হতে চাইছে না। কারণ দুটি হতে পারে। এক, বিজেপি ঠিক এই মুহূর্তে সমস্যার সমাধান চাইছে না। দুই, বিজেপির হাতে কেবল বাংলার টাকা আটকে রাখার মতো জবরদস্ত কোনও তথ্য নেই। সেটা থাকলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাজভবনে গিয়ে তৃণমূলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় বসতেন এবং সেইসব তথ্য তুলে ধরতেন। কিন্তু তার ধারেকাছেও তিনি গেলেন না।
বিজেপির পক্ষ থেকে একটা ফাটা রেকর্ড বাজানো হচ্ছে। জব কার্ড বাতিলের দোহাই দিয়ে টাকা আটকানো জাস্টিফাই করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন-পিতৃপক্ষের অন্তিমক্ষণে একদিনের জন্য পুজো নেন উমা
কিন্তু ২০২২-’২৩ অর্থবর্ষে বাংলায় যদি ২১ লক্ষ ৭৫ হাজার ৮০০টি জব কার্ড বাতিল হয়ে থাকে তবে গুজরাতে ১ লক্ষ ৩৭ হাজার ৪১৮টি, উত্তরপ্রদেশে ৪৪ লক্ষ ৭৫ হাজার ৬৩৪টি জবকার্ড বাতিল হয়েছে। পরের বছর অর্থাৎ ২০২৩-’২৪ অর্থবর্ষে উত্তরপ্রদেশে বাতিল হয়েছে ২৪ লক্ষ ৬৫ হাজার, আর বাংলায় ১ লক্ষ ৫৯ হাজার। যদি গত দশ বছরের পরিসংখ্যান দেখা যায় তাহলেও জবকার্ড বাতিলের শীর্ষে রয়েছে যোগীজির রাজ্য উত্তরপ্রদেশ। ২০১৪ সাল থেকে এ-পর্যন্ত উত্তরপ্রদেশে বাতিল হওয়া জবকার্ডের সংখ্যা ১ কোটি ১১ লক্ষ ৭৭ হাজার। সেখানে বাংলায় ৩৮ লক্ষ ৭৪ হাজার। আর গুজরাত? সেখানে জবকার্ড বাতিল হয়েছে ১৩ লক্ষ ১৪ হাজার। সুতরাং জব কার্ড বাতিল কোনও যুক্তিসঙ্গত কারণ হতে পারে না।
আরও পড়ুন-বিশ্বভারতীতে বসল পড়ুয়াদের নিজস্ব আনন্দবাজার
তৃণমূল কংগ্রেসকে শায়েস্তা করতে গিয়ে গরিবের পেটে লাথি মারা যে ঠিক হয়নি, সেটা গদ্দার অধিকারীর দলবল হাড়ে-হাড়ে টের পাচ্ছে। বিজেপির জনপ্রতিনিধিরা জনসংযোগ সারতে গিয়ে কোথাও ঘেরাও হচ্ছেন, কোথাও তাড়া খাচ্ছেন। টাকা আটকে রাখায় গরিব মানুষ তাদের কাছ থেকে দ্রুত সরে যাচ্ছে। প্রতিটি নির্বাচনে, এমনকী পঞ্চায়েত ভোটেও সেই রায় প্রতিফলিত হয়েছে। তাও সেখান থেকে বের হওয়ার রাস্তা পাচ্ছে না ভারতের জোকার পার্টি। একুশের নির্বাচনের ফল বের হওয়ার পর থেকে একটি দিনও স্বস্তিতে নেই বাংলা। কখনও কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে দিয়ে বাংলাকে দুরমুশ করা হয়েছে, কখনও নাম পরিবর্তন, কখনও দুর্নীতির কথা বলে আটকে দেওয়া হয়েছে বাংলার প্রাপ্য। সুযোগ পেলেই দেওয়া হয় বাংলা ভাগের চক্রান্তে হাওয়া। উদ্দেশ্য একটাই, অস্থিরতা সৃষ্টি। আর এর জন্যই ২০২৪-এ তাদের জন্য অপেক্ষা করছে চরম বিনষ্টি।
আরও পড়ুন-শ্রীলঙ্কার বন্দরে চিনা গুপ্তচর জাহাজ
আদানি অথবা ইজরায়েল, পেগাস্যাস কিংবা ভারতের ইতিহাস বদলে দেওয়া, মোদি সরকারের এই নষ্টামিগুলি অবশ্যই উদ্বেগজনক। কিন্তু সাধারণ মানুষের প্রতিদিনের জীবনের প্রশ্নে গভীরতর উদ্বেগের বিষয় হল মূল্যবৃদ্ধি ও বেকারত্ব বৃদ্ধি। ১৪০ কোটি মানুষের মধ্যে ৮৫ শতাংশের কাছে প্রতিদিনের সংসার চালানো অসম্ভব কঠিন হয়ে গিয়েছে। শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও কাজ পাচ্ছে না কোটি কোটি যুবক। ৪৫ বছরের মধ্যে রেকর্ড বেকারত্ব। কোঝিকোড়ের মৎস্যচাষি ও বিক্রেতারা আগে মোটরসাইকেল করে মাছ সাপ্লাই করতে বেরত। এখন সাইকেল করে যাতায়াত করছে তারা। কারণ পেট্রলের দাম বাঁচিয়ে তারা চাল ডাল তেল কিনে সংসার খরচ সামাল দিচ্ছে।
আরও পড়ুন-পিচাই ও জুকারবার্গকে চিঠি দিল ‘ইন্ডিয়া’
সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, শহরে থাকার খরচ সামলাতে না পেরে হাজার হাজার গরিব পরিবার ও পরিযায়ী শ্রমিক আবার নিজেদের গ্রামে ফিরে যাচ্ছে। যাকে বলা হচ্ছে রিভার্স মাইগ্রেশন। দেশের উন্নত অর্থনীতির রাজ্যগুলিতে পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে, গত এক বছরে সেকেন্ডারি স্কুলের ড্রপ আউটের সংখ্যা বেড়ে গিয়েছে। অর্থাৎ স্কুলে পড়ার খরচ সামলাতে না পেরে ছাত্রছাত্রীরা মাঝপথে পড়াশোনা ছেড়ে দিচ্ছে। আর এই সবই হয়েছে চরম বেকারত্ব ও মূল্যবৃদ্ধির কারণে। এই দুঃসহ অবস্থার সৃষ্টিকর্তা মোদি সরকার। তারা কোন পথে পিঠ বাঁচাবে, ভেবে পাচ্ছে না। তার মধ্যে ১০০ দিনের কাজের ন্যায্য পাওনা না দিয়ে সংকট গভীরতর করেছে।
নিজেদের প্যাঁচে নিজেরাই ফেঁসেছে বিজেপি। এবার ওদের বিদায় করার পালা।