প্রতিবেদন : গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ তুলে কাতারে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে ভারতের (Indians sentenced- Qatar) ৮ প্রাক্তন নৌসেনাকর্মীকে। গত বুধবারই ৮ জনের বিরুদ্ধে চরম সাজা ঘোষণা করে কাতারের আদালত। বলা হয়েছে, ইজরায়েলের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে এই শাস্তি। ৮ জনের মৃত্যুদণ্ড রদ করতে সমস্ত সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছে ভারতের বিদেশমন্ত্রক। তবে এই পথে অন্যতম বাধা হয়ে উঠেছে ইজরায়েল ও প্যালেস্টাইনের সাম্প্রতিক যুদ্ধ পরিস্থিতি। হামাসপন্থী কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক লড়াই তাই কঠিন হতে চলেছে বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল।
আট প্রাক্তন নৌসেনাকর্মীর মৃত্যুদণ্ডের (Indians sentenced- Qatar) বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর ভারতের বিদেশমন্ত্রকের তরফে রায় নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। বিদেশের মাটিতে আট ভারতীয়র প্রাণ বাঁচানোর জন্য যাবতীয় আইনি পথ পর্যালোচনা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে বিদেশমন্ত্রক। তবে সেই পথে কাঁটা যুদ্ধ। আর এর অন্যতম কারণ, প্রকাশ্যে নরেন্দ্র মোদির কট্টর ইজরায়েলপন্থী ভূমিকা। ইজরায়েল ও প্যালেস্টাইন যুদ্ধে ভারতের মনোভাব অনেকটা ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’। যুদ্ধ এড়িয়ে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা মেটানোর কথা বলছে ভারত। একদিকে খোদ প্রধানমন্ত্রী হামাসকে সন্ত্রাসবাদী সংগঠন আখ্যা দিয়ে জানিয়েছেন, প্রতিটি ভারতীয় ইজরায়েলের পাশে রয়েছে। তবে মোদির মন্তব্য ভারতের অতীত অবস্থান থেকে ভিন্নমুখী বুঝতে পেরে এরপরই বিদেশমন্ত্রক জানায়, স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনে প্যালেস্টাইনের দাবিকে পূর্ণ সমর্থন করে ভারত। এদিকে আবার গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে ইজরায়েলের হামলা রুখতে রাষ্ট্রসংঘে আনা প্রস্তাব এড়িয়ে গিয়েছে ভারত। সব মিলিয়ে বিশেষজ্ঞদের দাবি, এই যুদ্ধে ভারতের অবস্থান অনেকটাই ইজরায়েল-ঘেঁষা। অন্যদিকে, কাতার পুরোপুরি হামাসপন্থী। গাজায় ইজরায়েলি হামলার কড়া নিন্দা করেছে তারা। এই অবস্থায় আট ভারতীয় বন্দির মৃত্যুদণ্ড ঠেকানো লোকসভা ভোটের আগে মোদি সরকারের উপর যে বিরাট চাপের তা বলার অপেক্ষা রাখে না। প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের অগাস্ট মাসে কাতারের দোহায় কর্মরত আট ভারতীয়কে গ্রেফতার করে কাতারের গোয়েন্দা সংস্থা। তাদের নিভৃত কারাবাসে রাখা হয়েছিল। তবে কী কারণে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছিল, সে সম্পর্কে কাতার সরকারের তরফে প্রকাশ্যে কিছু জানানো হয়নি। ভারত সরকারও এই বিষয়ে চুপই ছিল। চলতি সপ্তাহে ওই আটজনকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা দেওয়ার পরই আসল অভিযোগ সামনে আসে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভারতে কর্মরত কাতারের এক আধিকারিক সংবাদসংস্থা রয়টার্সকে জানান, কাতার কর্তৃপক্ষের তরফে ওই আট ভারতীয়ের বিরুদ্ধে ইজরায়েলের হয়ে চরবৃত্তির অভিযোগ আনা হয়েছে। আদালতের তরফে তাদের মৃত্যুদণ্ডের সাজা দেওয়া হলেও প্রাণভিক্ষা চাওয়ারও সুযোগ দেওয়া হবে। এদিকে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের আগে মোদি সরকার চায় না এই কূটনৈতিক লড়াই কোনও নেতিবাচক প্রভাব ফেলুক। এই লড়াইয়ে মোদি সরকারের মুখরক্ষার কৌশল কী হবে সেটাই এখন দেখার।
আরও পড়ুন- গাজায় যুদ্ধবিরতি চেয়ে রাষ্ট্রসংঘে প্রস্তাব, ভোট দিল না ভারত