বাংলায় ‘লক্ষ্মী’ শব্দটার একটা অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য আছে কিন্তু! আর কোনও দেবদেবীর নাম আপনি পাবেন না, নিজগুণে যা বিশেষ্য থেকে এইভাবে বিশেষণের দিকে মোড় নিয়েছে! ‘দুর্গাপ্রতিমার মতো মুখখানি’, ‘সাক্ষাৎ মা অন্নপূর্ণা’, ‘কলির কেষ্ট’ গোছের যাবতীয় শব্দবন্ধ মাথায় রেখেই বলছি, ‘লক্ষ্মী মেয়ে’ বা ‘লক্ষ্মী ছেলে’র মতো লিঙ্গনির্বিশেষ এমন প্রয়োগ আর কোনও ঠাকুরদেবতার নাম নিয়েই চলে না। ছোটবেলায়, আমাদের দুই যমজ বোনকে আদর করতে করতে দাদু বলতেন, “আমার দুই নাতনির মধ্যে তফাত কত? লক্ষ্মী মেয়ে আর সোনা মেয়ের তফাত যত!” বলাই বাহুল্য, কে কোনজন, সেকথা দাদু বেমালুম চেপে যেতেন। দুজনকেই জিতিয়ে দেওয়ার এই মিষ্টি চালাকিটুকুর মধ্যে পড়ে থাকত শুধু দাদুর চোখে আমরা কে কতটা লক্ষ্মীসোনা হয়ে উঠতে পারলাম, তার একটা নিরুচ্চার প্রতিযোগিতা।
আরও পড়ুন-লিলি
আচ্ছা, ‘লক্ষ্মী মেয়ে’ ঠিক কাকে বলে? এই পুরো সংজ্ঞাটাই তৈরি হয়েছে আসলে কাকে ‘লক্ষ্মী মেয়ে’ বলা যায় না, সেই বৈশিষ্ট্যগুলোর নিরিখে। নেতি নেতি করে ইতিতে পৌঁছোনোর পুরোনো খেলা আর কী! আর লক্ষ্মী বনাম অলক্ষ্মীর এই আসন কাড়াকাড়ির খেলায় ভরকেন্দ্র হচ্ছে ‘সংসার’ নামক সেই চিরকালের বায়বীয় বোঝাটি, যার দায় মেয়েদের, সে দায় রাখতে পারলেই সে দেবীত্বের পরাকাষ্ঠা, যতই জ্বালাপোড়ার পর্ব আসুক না কেন, মুখটি বুজে সব সইতে পারলে পুড়বে মেয়ে উড়বে ছাই, তবেই তার গুণ গাই! সহানুভূতিতে ফেটে পড়তে পড়তে ‘নিমগাছ’ গল্পের কায়দায় লোকে বলবে, “ওদের বাড়ীর গৃহকর্ম-নিপুণা লক্ষ্মী বউটার ঠিক এই দশা”। আর অলক্ষ্মীর সেসব বালাই নেই। কুলোর বাতাস দিয়ে তার বিদেয়পর্ব লেখা থাকে বাড়ির চৌকাঠে।
আরও পড়ুন-দিনভর উত্তর ২৪ পরগনার প্রতিটি ব্লকে হল ধিক্কার মিছিল-পথসভা
বারবার এই লক্ষ্মী আর অলক্ষ্মীর দ্বন্দ্বের মধ্যে দিয়েই তৈরি হয়ে উঠেছে নারীর মুক্তির নতুন পাঠ। এই প্রসঙ্গে মনে পড়বেই যশোধরা রায়চৌধুরীর কবিতা ‘তৃতীয় নয়ন’— “মায়ামমতায় ভরা এ সংসারে এসে/ তুমি তো করেছ শুধু তুমুল অশান্তি, মাগো, বাড়ি যাও,/ আমাকে বলেছে সব প্রতিবেশী, পাড়াপড়শি, এমনকী নিজের ছেলেটিও।/ আমাকে বলেছে আমি অলক্ষ্মী পিচেশ।/ কেন বা বলবে না বল, আমি তো খেয়েছি সিগারেট আর আমি তো সন্ধে পার করে/ বাড়িতে ফিরেছি, কোনও সন্ধেবাতি, হুলুধ্বনি, শঙ্খের বাতাস/ আমাদের বাড়িতে বহেনি।” একের পর এক পঙক্তিতে যশোধরা সাজিয়েছেন লক্ষ্মী আর অলক্ষ্মীর বৈপরীত্যের বাইনারি। ক্রমশ সেখানে স্পষ্ট হয়েছে প্রচলিত প্রথার বাইরে বেরিয়ে পথ হাঁটতে চাওয়া মেয়েটির প্রতি পদক্ষেপে কীভাবে অলক্ষ্মীর পদচিহ্ন ফুটে ওঠে। ‘লক্ষ্মী’ শব্দের শিকলের দাগ সে মেয়ের হাতে পায়ে লেগে আছে, যা কিছু পুরুষের অতি পরিচিত সামাজিক অভ্যাস, তাকে বিনা প্রশ্নে আত্তীকরণ করে নেওয়ার মধ্যে ‘লক্ষ্মী মেয়ে’র পদচ্যুত হওয়ার এই যে আশ্চর্য রদবদলের খেলা, ‘অলক্ষ্মী পিচেশ’ মেয়ে তা টের পায় হাড়েমজ্জায়।
আরও পড়ুন-বাম-শাসিত কেরলে জনসভা হামাস নেতার!
মুখে যতই বলি, “সব দুষ্টু ছেলেরাই লক্ষ্মী, তারা বাঁধনছাড়া পক্ষী/ সব দিগ্বিজয়ী বীর, যদি সঙ্গে থাকে ভয় কী”, গানে গানে দুরন্ত দুর্নিবার ছেলের দল যতই আশকারা পাক না কেন, দস্যি মেয়েদের পায়ে বেড়ি পরানোটাকেই চিরকাল ‘গ্লোরিফিকেশন’-এর রাজনীতি দিয়ে বেঁধে ফেলেছে আমাদের চেনা পরিসর। রবীন্দ্রনাথের ‘সমাপ্তি’ গল্পের মৃন্ময়ীর ভাগ্যেও জুটেছে এই ভোলবদলের খেলা। তার স্বাভাবিক প্রাণবন্ত দুরন্তপনা তার ভাবী শাশুড়ির কাছে তাকে ‘অস্থিদাহকারী দস্যু মেয়ে’ ছাড়া আর কোনওভাবেই গ্রহণীয় করে তুলতে পারেনি। সেই মেয়েকেই বিয়ের পর তার বাবা আশীর্বাদ করে যান, “মা, তুমি শ্বশুরঘর উজ্জ্বল করিয়া লক্ষ্মী হইয়া থাকিয়ো। কেহ যেন আমার মিনুর কোনো দোষ ধরিতে না পারে।” গল্পের নায়িকাপদবাচ্য হয়ে ওঠার জন্য মৃন্ময়ীকে তাই নতুন করে ‘লক্ষ্মী’ হতে হয়। ‘দেশে এত মেয়ে থাকিতে’ যাকে বিয়ে করায় অপূর্বর মা ছেলেকে প্রভূত গঞ্জনা দিয়েছিলেন, সেই মৃন্ময়ীই বিয়ের প্রায় অব্যবহিত পরে প্রকাশিত হয় সম্পূর্ণ বিপরীত চরিত্রবৈশিষ্ট্যে— “শাশুড়ী বধূর মুখের দিকে চাহিয়া আশ্চর্য হইয়া গেলেন। সে মৃন্ময়ী আর নাই। এমন পরিবর্তন সাধারণত সকলের সম্ভব নহে। বৃহৎ পরিবর্তনের জন্য বৃহৎ বলের আবশ্যক।”
আরও পড়ুন-মুকেশ আম্বানিকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে ২০ কোটি দাবি
এই ‘বৃহৎ বলের’ তোড়জোড় বড় কম ছিল না। আজ থেকে নয়, উনিশ শতকের শেষদিক থেকে যখন স্ত্রীশিক্ষার প্রচারপ্রকল্পে একের পর এক তথাকথিত ‘মেয়েদের প্রাইমার’ লেখা হচ্ছে, সেখানেও আলাদা করে ‘লক্ষ্মী মেয়ে’ তৈরির প্রশিক্ষণ নজরে পড়ে। সুবোধ বালক গোপালের ক্ষেত্রে যেমন “খেলিবার ছুটী হইলে, যখন সকল বালক খেলিতে থাকে, গোপালও খেলা করে”— মেয়েদের জন্য লেখা বইগুলিতে যে কোনওভাবেই এমন খেলে-বেড়ানো মেয়ে পাওয়া যাবে না, এ-কথা তাই খুব স্বাভাবিক।
বরং মেয়েদের জন্য লেখা প্রাইমারের রিডার অংশগুলি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হয়ে উঠেছে সমাজের চোখে সার্থক তথা ‘লক্ষ্মীমন্ত’ নারী হয়ে ওঠার ভাষ্য। আর যেসব রিডারে নারীসুলভ গুণগুলি শেখানোর মতো উপাদান নেই, ক্রমশই মেয়েদের উপযুক্ত নয় এই বোধে সেগুলি পরিত্যক্ত হয়েছে।
আরও পড়ুন-‘গাজায় শান্তি চাই’, বিক্ষোভে উত্তাল নিউইয়র্ক
প্রাথমিক বাংলা শিক্ষার শুরুতেও ছিল
লক্ষ্মী মেয়ে তৈরির পাঠ
শিক্ষার্থীর ভাষিক উপাদানের ভাণ্ডার সমৃদ্ধ করার চেষ্টার চেয়ে বেশি তাগিদ ছিল সুগৃহিণী, বিশুদ্ধ মা, বিশুদ্ধ বোন করে তোলার প্রয়াস। এক কথায়, লক্ষ্মী মেয়ে না হলে সংসারে তুমি ব্রাত্য।
আরও পড়ুন-বড়মার একশো বছরে নতুন মন্দিরে কষ্টিপাথরের মূর্তি
ধরা যাক উমাদেবী প্রণীত ‘বালিকা-জীবন’ গ্রন্থটি। বাংলা ১৩৪১ সনে বইটির ‘সংশোধিত ও পরিবর্ত্তিত’ দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয়। বইটির সূচিপত্রে একবার চোখ বুলিয়ে নিলেই বোঝা যাবে, মেয়েদের সুশিক্ষা দেওয়ার উদ্দেশ্যে প্রণীত বইটির মুখ্য লক্ষ্যটি ঠিক কী। ‘পাপের ভাগী কেউ হয় না’, ‘দয়ার চেয়ে ধর্ম্ম নাই’, ‘বিপদে বুদ্ধি হারাইও না’ বা ‘সত্য পথে চলিবে’-এর মতো নির্বিশেষ নীতিশিক্ষার সঙ্গে সেখানে গুঁজে দেওয়া হয় ‘মাতার সহিত পূজার কার্য্য শিক্ষা’, ‘গৃহকার্য্য শিক্ষা’, ‘শিল্পকর্ম্ম আলোচনা’, ‘মহাভারতের সাবিত্রী দ্রৌপদীর দৃষ্টান্ত’, ‘সতী চরিত্র’ কিংবা ‘দোক্তার অপকারিতা’র মতো ছোট ছোট নীতিমূলক প্রবন্ধ। স্পষ্ট অনুধাবন করা যায়, ‘বামাবোধিনী’ পত্রিকা যে দাবি করেছিল, পাঠ্য বিষয়ের বাইরে গিয়েও মেয়েদের ‘বিশুদ্ধ স্ত্রী’, ‘বিশুদ্ধ মাতা’, ‘বিশুদ্ধ কন্যা’ বা ‘বিশুদ্ধ ভগ্নী’ হয়ে ওঠার উপযুক্ত শিক্ষা দান করতে হবে, সেই ‘বিশুদ্ধ’তা অর্জনের উপায় বলতে সামাজিক নীতিনির্ধারকেরা ঠিক কী বুঝেছিলেন।
আরও পড়ুন-লক্ষ্মীপুজো উপলক্ষে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিশেষ সৃষ্টি
বালিকা-জীবন গ্রন্থের ভূমিকাতেও উমা দেবী লিখছেন : “বাল্যকাল হইতে ভাল শিক্ষা না পাইলে, বড় হইয়া হাজার শিক্ষা দিলেও মনটী সহজে বদলায় না। কিন্তু এখনকার ভুল শিক্ষাতেই সব মাটী হইতেছে; এখন যত শিক্ষার ছড়াছড়ি ততই অধোগতি। কোন্ পথে চালিত করিলে যথার্থ কাজ হয়, সেটুকু কৈ দেখি না। সংসারে কিছুই নাই, আবার সংসারে সকলি পাই। এই সংসার নিয়েই যখন মানবকে থাকিতে হবে, তখন সেই সংসারের উন্নতি যাহাতে হয় সেই চেষ্টাই তো সকলের আগে করা উচিত। সংসার কাহাকে নিয়ে? এই দেবীরূপিণী নারীকে নিয়েই তো? কিন্তু কৈ আমাদের সেই লজ্জাভূষণে অঙ্গঢাকা, বঙ্গগৃহের বঙ্গবালা, সত্যনিষ্ঠা প্রেমেভরা; কর্ত্তব্যকর্ম্মপরায়ণা নারী কৈ? এখনকার এই যে শিক্ষা হইতেছে ইহা কি ঠিক? ইহাতে সংসারের কি উপকার হইতেছে, তাহা তো বুঝিতে পারিতেছি না। সেই জন্যই গল্পচ্ছলে “বালিকা জীবন” বই খানিতে, বালিকাদের কর্ত্তব্য কি, সংক্ষেপে তাহার আভাষ দিলাম। আমার মতে এই রকম শিক্ষায় শিক্ষিতা করিলে ভদ্রগৃহস্থ ঘরের বালিকাদের উপকার হবে। জীবন গঠনোপযোগী শিক্ষার বিশেষ প্রয়োজন। সেই জন্য বালিকারা যাহাতে বাল্যকাল থেকে সংযমী হয়, ধর্ম্মজীবনে উন্নতি লাভ করিতে পারে, সেই সকল বিষয়ে চরিত্রগঠন করা মাতার সর্ব্বতোভাবে উচিত। সেইজন্যই লক্ষ্মী-পূজা থেকে আরম্ভ ক’রে সমুদয় বৃত্তান্ত বালিকাদের বুঝাইয়াছি। আমাদের সনাতন প্রথার উপযুক্ত ক’রে বালিকাদের গঠন করিতে মাতাকে কিরূপ ব্যবস্থা করিতে হয়, তাহার চিত্র দেখাইয়াছি। যাহাতে বাল্যকাল থেকে সন্নীতি শিক্ষা করে, সময়ে কন্যাগুলি কল্যাণময়ী সুমাতা, সুগৃহিণী হইয়া রমণী-জীবনের সার্থকতা করিতে পারে, সেই চেষ্টাতেই “বালিকা-জীবন” তৈয়ারী হইয়াছে।”
আরও পড়ুন-হারতে হারতে হারাধন বিজেপি, দিলীপের মন্তব্য ঘিরে ঝড়, তীব্র কটাক্ষ তৃণমূলের
অর্থাৎ, ‘বালিকা’ থেকে ‘রমণী’ হয়ে-ওঠার পথে যে বিশেষ কর্মনিপুণতা কিংবা স্বভাবগত বৈশিষ্ট্য অর্জনের প্রয়োজনীয়তা আছে বলে পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গিতে ধরা পড়ে, ঠিক সেই চারিত্রগুণগুলিই অভ্যাস অথবা ক্ষেত্রবিশেষে অনুশীলনের মাধ্যমে মেয়েরা কীভাবে অঙ্গীভূত করতে পারে, তারই শিক্ষাসহায়ক হয়ে উঠতে চেয়েছিল বালিকা-জীবন বা বালিকা-জীবন-এর মতো মেয়েদের রিডার।
সরাসরি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার বিরোধিতা না করলেও, শুধু প্রতিষ্ঠানের শিক্ষাই যে মেয়েদের পক্ষে যথেষ্ট নয়, তা নানান আকারে প্রকারে, ইঙ্গিতে প্রকাশ্যে বুঝিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা ছিল এই বইয়ের পাতায় পাতায় :
আরও পড়ুন-দুঃখবিলাসী উমার দালান
১) … এ শিক্ষাটুকু মেয়েদের থাক্বে। এখন ছেলে মানুষ এই রকম লক্ষ্মী পূজা, ষষ্টী পূজা, সত্যনারায়ণের পূজার উদ্যোগ আমার সঙ্গে কর্তে কর্তে ক্রমে দোল দুর্গোৎসবের আয়োজনও শিখ্বে; এই রকম মেয়েই হিন্দুনারী নাম সার্থক করে। শুধু বিবি হয়ে পশমের কাজ কার্পেট বোনা সুতার খুঞ্চিবোস বুনিলেই হবে না। হিন্দুর সংসারের প্রধান কাজ পূজার আয়োজন, এটী শেখা একান্ত প্রয়োজন।
২) মাতার কর্ত্তব্য কন্যাকে খুব ভাল রকম সংসারের কর্ম্মে শিক্ষা দেওয়া। কারণ তিনি এখন গৃহিণী হয়ে বুঝেছেন এক সময়ে কি কি কর্ম্মের জন্য তাঁকে শাশুড়ি ননদের কাছে সুখ্যাতি অখ্যাতি সহ্য কর্তে হয়েছিল এবং সেই সকল কর্ম্ম না জানিবার দরুণ তাঁকে কতই অসুবিধা ভোগ কর্তে হয়েছিল। শুধু সাজাইয়া স্কুলে পাঠাইলেই মাতার কর্ত্তব্য শেষ হয় না— স্কুলে খান কতক বই পড়িয়েই শিক্ষার চূড়ান্ত হইল মনে করা বোকামি।
আরও পড়ুন-জল-প্রকল্পের নামে ভাঁওতা, কল থেকে বেরোচ্ছে হাওয়া!
একাধিক সমধর্মী উদাহরণ থেকে বোঝা যায়, শিক্ষার্থীর ভাষিক উপাদানের ভাণ্ডার সমৃদ্ধ করার চাইতেও এই রিডারগুলির উদ্দেশ্য ছিল আদতে শিক্ষার্থীর মনে একটি বিশেষ আইডিয়ার প্রতিষ্ঠা করা। এই আইডিয়া উপনিবেশের দেশে এসেছিল এক্কেবারে কনফুসীয় নৈতিকতার হাত ধরে, যার মূল লক্ষ্য ‘গুড ওয়াইফ’ এবং ‘ওয়াইজ মাদার’ নির্মাণ! সেই নির্মাণের অন্যতম উপকরণ হিসেবে তাই বারবার উঠে এসেছে ‘লক্ষ্মীপূজা’র বিধি শেখানো, ‘লক্ষ্মী মেয়ে’ করে গড়ে তোলার তুমুল প্রণোদনায়।
লেখার শুরুতেই বলেছিলাম ‘লক্ষ্মী’ শব্দটাকে ঘিরে বিশেষ্য থেকে বিশেষণে পদ পরিবর্তনের খেলা। কিন্তু ছোটবেলা থেকে নির্বিরোধী ‘লক্ষ্মী’ করে তুলতে না পারলে, নারী হিসেবে অস্বীকৃতির যে ভয়ানক সমালোচনার কাঁটাভরা পথের ওপর দিয়ে মেয়েদের হাঁটতে হয় সারাজীবন, তাতে টের পাওয়া যায়, অলক্ষ্মী যতই মুক্তির হাতছানি দিক না কেন, ‘লক্ষ্মী’র পদে পদোন্নতি না হলে, সংসারে তুমি ব্রাত্য। এই পদ তো শুধু বিশেষ্য আর বিশেষণে আটকে থাকে না— তার পদে পদে পাথর ছড়ানো।