প্রতিবেদন : বিদেশে বন্দি হয়ে মৃত্যুর প্রহর গুনছেন ভারতীয় তরুণী নিমিশা প্রিয়া। এক ব্যক্তিকে হত্যার অভিযোগে তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে ইয়েমেনের আদালত। তাঁর প্রাণভিক্ষার আবেদন খারিজ করে দিয়েছে সে-দেশের সুপ্রিম কোর্টও। কেরলের নার্স নিমিশা প্রিয়ার প্রাণ বাঁচাতে এবার ‘ব্লাড মানি’ অর্থাৎ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আর্জি জানিয়েছেন তাঁর মা। গোটা ঘটনায় নাটকীয় টানাপোড়েন চরমে।
আরও পড়ুন-ছটপুজোতেও হাজির ‘অভিষেকের দূত’
ইয়েমেনের জেলে বন্দি কেরলের নার্স নিমিশা প্রিয়ার প্রাণ বাঁচানোর জন্য সেদেশে যেতে চেয়ে দিল্লি হাইকোর্টে আবেদন জানিয়েছিলেন তাঁর মা। সেই আবেদনের ভিত্তিতে দিল্লি হাইকোর্ট এবার কেন্দ্রীয় সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে, তরুণীর মায়ের অনুরোধের বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কেরলের ওই তরুণী পশ্চিম এশিয়ার দেশটিতে নার্স হিসাবে কর্মরত ছিলেন। সেখানে এক ইয়েমেনি নাগরিককে হত্যার অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। তাতেই মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন নিমিশা প্রিয়া। সর্বশেষ, মৃত্যুদণ্ড রদ আবেদনটিও ইয়েমেনের সুপ্রিম কোর্ট খারিজ করে দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে প্রিয়ার মা চাইছেন তাঁর মেয়েকে বাঁচানোর জন্য ‘ব্লাড মানি’ বা ক্ষতিপূরণ নিয়ে আলোচনার জন্য ইয়েমেনে যেতে। গত ১৩ নভেম্বর ইয়েমেনের সুপ্রিম কোর্ট প্রিয়ার আপিল খারিজ করার পরে প্রিয়ার মা দিল্লি হাইকোর্টে আবেদন জানান। প্রিয়ার মায়ের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দিল্লি হাইকোর্ট কেন্দ্রকে এক সপ্তাহের মধ্যে দ্রুত প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নিতে বলেছে।
আরও পড়ুন-চাকরিপ্রার্থীদের ধরনার অনুমতি দিল না আদালত
জানা গিয়েছে, ইয়েমেনের নাগরিক জনৈক তালাল আবদো মাহদিকে হত্যার জন্য কেরলের তরুণীকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। ২০১৭ সালের জুলাই মাসে মাহদি মারা যান। অভিযোগ, প্রিয়ার পাসপোর্ট মাহদি আটকে রেখেছিলেন। প্রিয়াকে তা ফেরত দিতে চাইছিলেন না। মরিয়া হয়ে নিজের পাসপোর্ট মাহদির জিম্মা থেকে উদ্ধার করার জন্য পেশায় নার্স প্রিয়া ওই ব্যক্তিতে অচেতন করার ইঞ্জেকশন দেন। বলা হয়, মাহদিকে সেডেটিভ ইঞ্জেকশন দেওয়ার উদ্দেশ্য ছিল, যাতে ওই ব্যক্তি অচেতন হলে তাঁর হেফাজতে থাকা পাসপোর্টটি ফেরত নিতে পারেন প্রিয়া। ঘটনাচক্রে ইঞ্জেকশনের ওভারডোজে মাহদির মৃত্যু হয়। সেই মামলাতেই বিদেশে মৃত্যুদণ্ডের সাজা পেয়েছেন নিমিশা প্রিয়া। এরপর প্রিয়ার মা উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হন।
আরও পড়ুন-সারের উপর ভরতুকি কমাল কেন্দ্রীয় সরকার, প্রবল সংকটে রাজ্যের আলুচাষিরা
ইয়েমেনে গৃহযুদ্ধ চলায় ভারতীয় নাগরিকদের সেদেশে যাওয়ার নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে। তা সত্ত্বেও বিশেষ পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে যাতে তাঁকে ইয়েমেনে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয় দিল্লি হাইকোর্টে সেই আর্জি জানান প্রিয়ার মা। নিজের আবেদনে তিনি আদালতকে বলেছিলেন, মেয়েকে বাঁচাতে মৃত মাহদির আত্মীয়দের ‘ব্লাড মানি’ (অপরাধী বা তার আত্মীয়দের দ্বারা ক্ষতিপূরণ প্রদান) নিয়ে আলোচনা করতে চান। তিনি হাইকোর্টে বলেছিলেন, এই মুহূর্তে মেয়েকে ফাঁসির মঞ্চ থেকে বাঁচানোর একমাত্র উপায় হল আর্থিক ক্ষতিপূরণ নিয়ে মৃতের পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করা, যার জন্য তিনি ইয়েমেন যেতে চান। কিন্তু ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার কারণে তিনি সেখানে যেতে পারছেন না।
আরও পড়ুন-দুর্যোগ উড়িয়ে চন্দননগরের মণ্ডপে শেষ তুলির টান
দিল্লি হাইকোর্টে শুনানির সময় কেন্দ্রের আইনজীবী বলেছেন, সম্প্রতি জারি করা একটি বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা যেতে পারে এবং ভারতীয় নাগরিকদের নির্দিষ্ট কারণ এবং সময়কালের জন্য ইয়েমেনে ভ্রমণের অনুমতি দেওয়া যেতে পারে। জবাবে বিচারপতি সুব্রহ্মণ্যম প্রসাদ বলেন, বর্তমান আবেদনটিকে একটি প্রতিনিধিত্ব হিসেবে বিবেচনা করা হোক। কেন্দ্রীয় সরকারকে এক সপ্তাহের মধ্যে প্রতিনিধিত্বের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। এর আগে হাইকোর্ট ব্লাড মানি প্রদানের জন্য কেন্দ্রকে নির্দেশ দিতে অস্বীকার করে। কিন্তু ইয়েমেনে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় তরুণীকে যা যা আইনি প্রতিকার দেওয়া সম্ভব তা দিতে বলেছিল আদালত।