প্রতিবেদন : ব্যর্থ হয়েছে অত্যাধুনিক যন্ত্র৷ নানাধরনের বিকল্প পদ্ধতি। শেষমেশ মানুষ নামিয়ে শাবল-গাঁইতির প্রাচীন প্রথায় গর্ত খুঁড়ে কেল্লাফতে হল উত্তরকাশীতে৷ সিল্কিয়ারা সুড়ঙ্গে আটকে পড়া ৪১ জন শ্রমিককে বের করে আনতে শেষ পর্যায়ে এই র্যাট–হোল মাইনিং পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন উদ্ধারকারীরা৷ এই মুহূর্তে খাতায়–কলমে নিষিদ্ধ প্রক্রিয়াই ১৭ দিন পর আলো দেখাল সুড়ঙ্গবন্দি শ্রমিকদের৷
আরও পড়ুন-অবশেষে ১৭ দিন পরে উত্তরকাশীর টানেল থেকে ‘মুক্তি’ ৪১ শ্রমিকের
কী এই র্যাট–হোল মাইনিং? কেনই-বা তা এখন নিষিদ্ধ? উত্তরকাশী বিপর্যয় সূত্রে ফের তা নিয়ে আলোচনা৷ বলা হয়, ইঁদুরের কায়দায় মানুষকে দিয়ে গর্ত খোঁড়ার পদ্ধতিই আদতে র্যাট–হোল মাইনিং৷ সাধারণভাবে কয়লাখনিতে এই পদ্ধতি ব্যবহারের রেওয়াজ আছে৷ খনিতে অতিক্ষুদ্র একাধিক গর্ত খুঁড়ে কয়লা উত্তোলনের প্রক্রিয়াকে বলে র্যাট–হোল মাইনিং৷ এই পদ্ধতিতে সাধারণভাবে চার ফুটের বেশি গর্ত খোঁড়া হয় না৷ খনি শ্রমিকরা যখন কয়লা ভাণ্ডারের কাছাকাছি পৌঁছে যান, তখন চারপাশ থেকে র্যাট–হোল মাইনিং করা হয়৷ সরু, ছোট-ছোট সুড়ঙ্গ বেয়ে কয়লা ভাণ্ডারের কাছে পৌঁছে যান শ্রমিকরা৷ সেখান থেকে কয়লা তুলে আনা হয়৷ এই পদ্ধতি বহুযুগ ধরে প্রচলিত হলেও পরে তাতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে জাতীয় পরিবেশ আদালত৷ এর মূল কারণ হল, এই প্রক্রিয়া যথেষ্ট ঝুঁকির এবং এতে প্রাণহানির আশঙ্কাও বেশি৷ র্যাট–হোল মাইনিংয়ে খুবই অপ্রশস্ত পরিসরে সুড়ঙ্গ খনন করা হয়৷ তাতে যে কোনও মুহূর্তে ভূমিধস নেমে শ্রমিকদের মৃত্যু হতে পারে৷ প্রাচীন এই পদ্ধতি একেবারে সাধারণ কিছু উপকরণ শাবল, গাঁইতির মতো ছোট ছোট হাতিয়ার ব্যবহার করা হয়৷
আরও পড়ুন-দক্ষিণ আফ্রিকায় শুরুতে রোহিতরা নেই
র্যাট–হোল মাইনিং বর্তমানে নিষিদ্ধ হলেও এখনও বিভিন্ন রাজ্যে বেআইনিভাবে এর ব্যবহার হতে দেখা যায়৷ যন্ত্র ব্যবহার হয় না বলে তুলনায় এই পদ্ধতিতে খরচ অনেক কম। তাই সরকারি নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে এখনও তা বহু জায়গায় ব্যবহার হয়ে চলেছে৷ বলা হয়, সুড়ঙ্গের আকার ক্ষুদ্র ও সংকীর্ণ হওয়ার কারণে এই পদ্ধতিতে বেআইনিভাবে শিশুশ্রমিকদের কাজে লাগানো হয়৷ এই পদ্ধতি নিষিদ্ধ হওয়ার আগে দরিদ্র পরিবারের বহু শিশুকে বয়স ভাঁড়িয়ে প্রবল ঝুঁকির এই কাজে নামানো হত৷
আরও পড়ুন-বাংলার আটকে পড়া শ্রমিকদের ফেরাতে উত্তরকাশীতে টিম পাঠালেন মুখ্যমন্ত্রী
উত্তর–পূর্ব রাজ্য মেঘালয়ে র্যাট–হোল মাইনিংয়ের চল এখনও যথেষ্ট৷ কয়লার খনিস্তর সেখানে পাতলা হওয়ায় অল্প খরচের এই পদ্ধতি ব্যবহার করতে দেখা যায়৷ ২০১৪ সালেই ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইবুন্যাল র্যাট–হোল মাইনিং নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে৷ এই পদ্ধতিতে অসংখ্য শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনা ও ভূমিধসের বিপর্যয় সামনে এসেছে৷ পাশাপাশি একেবারে সাবেকি পদ্ধতিতে স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের ব্যবহার ছাড়া কাজ হয় বলে শ্রমিকদের নিরাপত্তার দিক থেকেও এটি বিপজ্জনক৷ ঘটনা হল, সেই নিষিদ্ধ র্যাট–হোল মাইনিং পদ্ধতি উত্তরকাশীর সিল্কিয়ারার সুড়ঙ্গে ৪১ জন শ্রমিকের প্রাণ বাঁচাতে সাফল্য এনে দিল৷ অত্যাধুনিক অগার মেশিন যখন ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গিয়েছে, বিদেশি প্রযুক্তি যখন ব্যর্থ হয়েছে, অন্য বিকল্প পদ্ধতির প্রয়োগে সাফল্য না মেলায় শেষপর্যন্ত এই সাবেকি ও নিষিদ্ধ পদ্ধতি প্রয়োগ করেই কেল্লাফতে হল৷ এরপরেও যদিও সঙ্গতভাবেই প্রশ্ন উঠছে, পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে কেন আগেই এই পদ্ধতিতে উদ্ধারের চেষ্টা হল না শ্রমিকদের? কেন তাঁদের যন্ত্রণা দীর্ঘায়িত করা হল? এর দায় কোনওভাবে অস্বীকার করতে পারবে না উত্তরাখণ্ডের ধামি সরকার তথা কেন্দ্র-রাজ্যের বিজেপি প্রশাসন।