আজ আমাদের পার্টি সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠা দিবস। ১৯৯৮ সালের এই দিনে ১ জানুয়ারি নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে এই পার্টির প্রতিষ্ঠা। সেটা ছিল ঐতিহাসিক মুহূর্ত। পশ্চিমবাংলার মানুষ আর বামপন্থীদের হাতে অত্যাচারিত হতে চাচ্ছিলেন না। শোষিত হতে চাচ্ছিলেন না। তৎকালীন শাসকবর্গের কুকীর্তি আকাশ ছুঁয়ে ফেলেছিল। চতুর্দিকে হতাশা। মা-বোন-ভাইয়ের চোখে আতঙ্ক। শ্রমিক কৃষকদের সামনে কোনও প্রত্যাশা নেই। বেকারি ছিল অতি পরিচিত শব্দ। ক্রমাগত কংগ্রেস কর্মীরা শহিদ হচ্ছেন।
আরও পড়ুন-উদ্বোধনের আগেই রাম মন্দিরের নামে দু.র্নীতি
কোনও প্রতিকার নেই। একমাত্র বিরোধী দল কংগ্রেস। তারা এই পরিস্থিতি মোকাবিলা না করে সহযোগিতার রাস্তা নিচ্ছেন। তারা কোনও লড়াই করতে চাচ্ছে না। কেন্দ্রীয় কংগ্রেস নেতৃত্বও এমন অবস্থায় চুপচাপ থাকতে শুরু করলেন। একমাত্র ব্যতিক্রম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি কাকদ্বীপ থেকে কোচবিহার সারা রাজ্যে মানুষের পাশে, আক্রান্ত কর্মীদের পাশে দাঁড়াতে লাগলেন। লক্ষ লক্ষ মানুষ তাঁকে সমর্থন করলেন। কিন্তু তিনিও শেষ পর্যন্ত ঠিক করলেন এভাবে হবে না। কংগ্রেস ত্যাগ করে নতুন দল করতে হবে। তৈরি করলেন তৃণমূল কংগ্রেস। তাঁর জীবনে এটা বড় ঝুঁকির ব্যাপার ছিল। কারণ কংগ্রেস ভেঙে নতুন দল তৈরি হয়েছে সারা দেশে অনেক। সবই বিলীন হয়ে গিয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কি হবেন। অবশ্য তিনি নিজের ব্যাপারে কিছু ভাবেননি। তিনি সবসময় মানুষের কথা ভেবেছেন। সেই কারণে তিনি আলাদা। পশ্চিমবাংলার মানুষ ও প্রকৃত কংগ্রেস কর্মীরা দলে দলে তাঁর পক্ষে দাঁড়াতে শুরু করলেন। বাংলার নতুন ইতিহাস তৈরি হল। নতুন দল তৈরি করার মাত্র ১৩ বছরের মাথায় তিনি পশ্চিমবাংলার জগদ্দল পাথরের মতো চেপে থাকা বামফ্রন্টকে সরিয়ে দলকে সরকারে আনলেন এবং মুখ্যমন্ত্রী হলেন। ভারতের সামাজিক রাজনৈতিক ঘটনায় এটা একটা নতুন ঘটনা। পৃথিবীব্যাপী এটা গবেষণার বিষয়। সেই কারণে শুধুমাত্র তৃণমূল কংগ্রেসের কাছে নয়, সমাজতাত্ত্বিকদের কাছেও তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠা ও কর্মধারা গুরুত্বপূর্ণ।
আরও পড়ুন-ফের অ.শান্ত মণিপুর, পুলিশের ওপর জ.ঙ্গি হা.মলা
আজ একথা উল্লেখ না করলে চলবে না যে, নতুন পার্টি প্রতিষ্ঠা করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যে সরকারে এসেছেন। রাজ্যসভা ও লোকসভার মধ্যে সেই দলকে দ্বিতীয় স্থানে নিয়ে গিয়েছেন এবং তিনি নিজে সর্বভারতীয় রাজনীতিতে প্রধান হিসাবে উদ্ভাসিত হয়েছেন। এমন বর্ণময় ঘটনা ভারতীয় রাজনীতিতে বিরল নয়, বিরলতর। এর সমস্ত কৃতিত্ব মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। আজ দলের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর দিনে আমরা কর্মীরা বিনম্রভাবে সেটা স্মরণ করি। আর এই কারণেই দেশে বিদেশের সমাজতাত্ত্বিকরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও রাজনীতিতে তাঁর অবদান স্মরণ করবেন বহু বহু বছর।
আরও পড়ুন-বছরের শেষ দিনে মহারাষ্ট্রে কারখানায় আ.গুন, মৃ.ত ৬ শ্রমিক
প্রতিষ্ঠা দিবসে আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, বিগত ১ যুগ আমরা পশ্চিমবাংলায় সরকারে আছি। প্রতিটি নির্বাচনে মানুষ আমাদের আগের নির্বাচনের চাইতে বেশি সমর্থন দিয়ে জিতিয়েছে। প্রধান কারণ সরকারের জনমুখী মুখ। নেত্রীর নির্দেশ এই জনমুখী কর্মসূচি সর্বত্র নিয়ে যেতে হবে। পশ্চিমবাংলার এক-একটা কর্মসূচি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সম্মান লাভ করেছে। আবার দেশের বিভিন্ন রাজ্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কর্মসূচিগুলিকে তাদের রাজ্যে চালু করেছে। এমনকী কেন্দ্রীয় সরকারও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কর্মসূচি চালু করেছে। এই মুহূর্তে কৃষকবন্ধু কর্মসূচিটির কথা তো বলতেই পারি। স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত কর্মসূচি তো আকছার আছে। এসব ঘটনা আমাদের গর্বিত করে। কোনও এক পড়ন্ত বিকেলে গ্রামের রাস্তা দিয়ে যখন ঝাঁকে ঝাঁকে কন্যারা সাইকেল চালিয়ে বেণী দুলিয়ে স্কুল থেকে ফেরে তখন মনে হয় নেত্রীর চিন্তা কতখানি সার্থক হয়েছে। মেয়েরা স্কুল/কলেজ ভরিয়ে দিয়েছে। আমাদের দল তো তাই চেয়েছে। নেত্রী তাই চেয়েছেন। আজ পার্টির প্রতিষ্ঠার দিনে তাঁকে আমাদের প্রণাম।
আরও পড়ুন-মঙ্গলবার ভার্চুয়ালি ভাঙড়ের ৪ থানা উদ্বোধন করবেন মুখ্যমন্ত্রী
আমাদের সামনে আজ নতুন চ্যালেঞ্জ। কারণ ভারত, আমাদের প্রিয় স্বদেশভূমি বিপদের মধ্যে আছে। দিল্লির সরকার ভারতের মর্মকথাকে নষ্ট করতে শুরু করেছে। ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করছে। ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র, বহুত্ববাদকে নষ্ট করতে চায়। দেশে এককেন্দ্রিক শাসন ব্যবস্থা চালু করতে চায়। সমস্ত বিরোধী কণ্ঠকে বন্ধ করতে চায়। প্রকৃত অর্থে ফ্যাসিবাদী শাসন ব্যবস্থা চালু করতে চায়। ভারত একটা ফ্যাসিবাদী দেশ হোক, স্বৈরতান্ত্রিক দেশ হোক এটা তাদের কাম্য। আমাদের পার্টি এবং নেত্রী এই ব্যবস্থার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে। নেত্রী গণতন্ত্র সংবিধান, ধর্মনিরপেক্ষতা রক্ষার ব্যাপারে সার্বিক বিরোধী ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন। আমাদের পার্টি সেই পথ ধরে চলেছে। সারা ভারতে সেই পথ অনুসরণ করে জোট তৈরি হচ্ছে। একটা মাত্র উদ্দেশ্য বিভেদকামী বিজেপিকে হারাতে হবে। নেত্রী বলেছেন পশ্চিমবাংলায় আমাদের পার্টি বিজেপিকে হারাতে পারবে। সেই পথেই আমাদের কর্মসূচি তৈরি হচ্ছে। এমন একটা সময়ে পার্টির প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর দিনটি আমাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আজ আমাদের শপথ নিতে হবে, আজ যে নেত্রীর আবেগ, মানুষের প্রতি ভালবাসা ও দেশের প্রতি ভালবাসাকে মর্যাদা দিয়ে আমাদের পথ চলতে হবে।
আজ প্রতিষ্ঠা দিবসে আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে, পশ্চিমবাংলায় যেমন আর্থিক উন্নয়ন হয়েছে, তেমনই সামাজিক সম্পর্ক সুন্দর হয়েছে। সম্প্রীতিতে বাস করছে ১০ কোটি মানুষ। ধর্ম যার যার, উৎসব সবার— নেত্রীর এই কথা সর্বত্র মান্য করে আমরা চলেছি। প্রতিষ্ঠা দিবসে আমাদের শপথ নিতে হবে এই চিন্তাকে আরও গভীরে নিয়ে যেতে হবে।
আরও পড়ুন-রাজ্যের নয়া স্বরাষ্ট্রসচিব হলেন নন্দিনী চক্রবর্তী
আজ আমাদের ভুলে গেলে চলবে না হাজারো বন্ধুর, কর্মীর সংগঠনের আত্মবলিদানের মধ্য দিয়ে দল এমন জায়গায় এসেছে— তাদের শতকোটি প্রণাম জানাতে ভুলবে না।
পশ্চিমবাংলায় বিরোধীরা এখন প্রায় অপ্রাসঙ্গিক। নিজেদের আস্তিত্ব বজায় রাখার জন্য কুৎসার বন্যা চালাচ্ছে। আমাদের ধৈর্য ধরে তার মোকাবিলা করতে হবে। কেন্দ্রের দলটি আবার কেন্দ্রীয় এজেন্সির সাহায্য নিচ্ছে। কিন্তু আমাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। লড়াইয়ের আগুন থেকে তিনি পার্টির প্রতিষ্ঠা করেছেন। পার্টি আছে মানুষের অন্তরে। তাই ক্ষয় নেই। বিরোধীদের সমস্ত কিছু চক্রান্ত চূর্ণ করে আমরা এগব। নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ প্রতিষ্ঠা দিবসে এটাই হোক শপথ। জয় হিন্দ। জয় বাংলা।