আবুধাবি, ২ নভেম্বর : একটা দল দুই ম্যাচে শূন্য। আরেকটা দলের তিন ম্যাচে চার পয়েন্ট। সাধারণ পরিস্থিতিতে মনে হতে পারে শূন্য পয়েন্ট আফগানিস্তানের। কিন্তু উল্টো। তাদেরই চার পয়েন্ট। ভারতের শূন্য। এই অবস্থায় বুধবার আবুধাবির শেখ জায়েদ স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হচ্ছে এই দু’দল। তবে শুধু আফগানিস্তান কেন, পরের দুই ম্যাচে স্কটল্যান্ড ও নামিবিয়াকে হারালেও বিরাট কোহলিদের অবস্থানের কোনও পরিবর্তন হবে কিনা সন্দেহ। পাকিস্তান ও নিউজল্যান্ড ম্যাচ হেরে কার্যত বিদায়ের মুখে ভারত।
আরও পড়ুন : কালীপুজোয় আরও কমবে তাপমাত্রা
তবু এই ম্যাচের আগে রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠছে। দিলীপ বেঙ্গসরকারের মতো ‘লর্ডসের লর্ড’ ইতিমধ্যেই দাবি তুলেছেন, অশ্বিন কেন বাদ তার তদন্ত হওয়া দরকার। গত ইংল্যান্ড সিরিজ থেকে রিজার্ভ বেঞ্চে আছেন তামিলনাড়ুর অফ স্পিনার। ইংল্যান্ডে রবীন্দ্র জাদেজা নিয়মিত খেললেও জায়গা হয়নি অশ্বিনের। আর মরুদেশে টি-২০ বিশ্বকাপে টিম ম্যানেজমেন্টের সমস্ত ভরসা আদায় করে নিয়েছেন বরুন চক্রবর্তী। যদিও প্রথম দুই ম্যাচে বরুনের রহস্য-স্পিন কোনও প্রভাব ফেলতে পারেনি।
বিরাট কোহলি আর তিনটি টি-২০ ম্যাচে দেশের নেতৃত্ব দেবেন। ধরেই নেওয়া যায় বিরাট নক আউটে যেতে না পারলেও আফগানিস্তান, স্কটল্যান্ড ও নামিবিয়ার বিরুদ্ধে জিতে নেতৃত্বের ব্যাটন রোহিত শর্মার হাতে জমা দিতে চাইবেন। আফগানিস্তান কিন্তু স্কটল্যান্ড ও নামিবিয়াকে হারানোর পর পাকিস্তানকেও প্রায় হারিয়ে দিয়েছিল। শেষপর্যন্ত ফিনিশার মহম্মদ আসিফ ম্যাচ বের করে নিয়ে যান। এই ম্যাচে ভারতীয় ব্যাটিংয়ের পরীক্ষা নেবেন দুই স্পিনার মহম্মদ নবি ও রশিদ খান। চাপে থাকা বিরাটদের জন্য আরও চাপ নিয়ে আসতে পারেন এঁরা। অন্তত সেরকম সম্ভাবনা আছে। অশ্বিন তাঁর জমানার অন্যতম সেরা ক্রিকেটার। তাঁকে এখন ‘গ্লোরিফায়েড ট্র্যাভেলার’ হিসাবে ঘুরে বেড়াতে হচ্ছে ভারতীয় দলের সঙ্গে। চার বছর বাদে সাদা বলের ক্রিকেটে ফেরানো হয়েছে অশ্বিনকে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, নির্বাচকদের এই সিদ্ধান্তে টিম ম্যানেজমেন্টের সিলমোহর ছিল না। অশ্বিনের মতো স্পিনারকে বাইরে রেখে আনকোরা বরুনকে খেলানো নিয়ে প্রাক্তনরা অনেকেই বিরক্ত। দেখার বিষয়, আফগানিস্তানের যেহেতু অশ্বিনের মতো স্পিনারকে বেশি খেলার অভ্যেস নেই, এই ম্যাচে অন্তত অশ্বিনের ডাক পড়ে কিনা। তা ছাড়া দুই আফগান ওপেনার মহম্মদ শেহজাদ ও হজরতুল্লাহ জাজাই খুব বেশি ফুটওয়ার্ক ব্যবহার করছেন বলে প্রমান নেই। ফলে অশ্বিন তাঁদের বিপাকে ফেলতে পারেন।
অশ্বিনের মতোই নজর থাকবে রোহিত শর্মার দিকেও। যাঁকে তিনে সরানো নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। শুরুতে রোহিত ও রাহুল থাকলে দুই আফগান পেসার হামিদ হাসান ও নভিন উল হকের ঘুম ছুটে যেতে পারে। সূর্যকুমার যাদবের পিঠের চোট কমে গেলে মিডল অর্ডারে ইশান কিশানের সঙ্গে তাঁকেও দেখা যেতে পারে। সঙ্গে বিরাট, যিনি রানের মধ্যে আছেন। তবে আর একটা ধাঁধা থাকছে হার্দিক পান্ডিয়াকে ঘিরে। প্রথম দুই ম্যাচে পারফরম্যান্স নেই বরোদা অলরাউন্ডারের। আগের ম্যাচে বল করলেও সেটা কোনও কাজে আসেনি। হার্দিকের জায়গায় অন্য কাউকে দেখা গেলে অবাক হওয়ার কিছু নেই।
আরও পড়ুন : নাইট ভিশন ড্রোনে নজরদারি ,নিষিদ্ধবাজি নিয়ে কঠোর পুলিশ ,সীমান্তে নাকা চেকিং
এদিকে, ভারতীয় ব্যাটিং কোচ বিক্রম রাঠোর প্রথম দুই ম্যাচে হারের পর দুবাইয়ের উইকেটের কড়া সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, এই উইকেটে প্রথমে ব্যাট করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। যারাই আগে ব্যাট করছে, তারাই পরে সমস্যায় পড়ছে। ধরেই নেওয়া যায় বুধবারের ম্যাচে রাতের শিশিরের কথা মাথায় রেখে বিরাট আগে বল করতে চাইবেন। তবে সবটাই নির্ভর করছে তাঁর টস ভাগ্যের উপরে। তবে শুধু টসে জিতলেই হবে না, আগের দুই ম্যাচের হারের স্মৃতি পিছনে ফেলে সামনে তাকাতে হবে। বিরাট বলেছেন তাঁরা সাহসী হতে পারেননি। বুধবারের ম্যাচে অন্তত সাহস ফেরাতে হবে।
আরও পড়ুন : কাঁকসায় কিসান মান্ডি
এদিকে অভিজ্ঞ রবিচন্দ্রন অশ্বিনের বাদ পড়া নিয়ে এবার সরব হলেন দিলীপ বেঙ্গসরকার। টি-২০ বিশ্বকাপের প্রথম দুটো ম্যাচে অশ্বিনের দলে না থাকায় রীতিমতো বিস্মিত বেঙ্গসরকার এ নিয়ে তদন্তের দাবি তুলেছেন! এক সাক্ষাৎকারে প্রাক্তন ভারতীয় অধিনায়কের মন্তব্য, ‘‘কেন বারবার অশ্বিনকে উপেক্ষা করা হচ্ছে? এটা নিয়ে তদন্ত হওয়া উচিত। অশ্বিন দলের সেরা স্পিনার। তিন ফরম্যাট মিলিয়ে ওর ঝুলিতে ছশোর বেশি আন্তর্জাতিক উইকেট রয়েছে। তা সত্ত্বেও ওকে দলে রাখা হচ্ছে না!’’
প্রসঙ্গত, কিছুটা অপ্রত্যাশিতভাবেই টি-২০ বিশ্বকাপের স্কোয়াডে সুযোগ পেয়েছিলেন অশ্বিন। বিশ্বকাপ শুরুর আগে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে শেষ প্রস্তুতি ম্যাচে মাত্র ৮ রানে ২ উইকেট দখল করে ফর্মে থাকার ইঙ্গিতও দিয়েছিলেন। কিন্তু পাকিস্তান ও নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে অভিজ্ঞ অফস্পিনারকে ছাড়াই মাঠে নেমেছে ভারতীয় দল। যা বিস্মিত করছে বেঙ্গসরকারকে। শুধু তাই নয়, গত ইংল্যান্ড সফরে অশ্বিনকে একটিও টেস্ট না খেলানোর সিদ্ধান্তেরও সমালোচনা করেছেন বেঙ্গসরকার। প্রাক্তন জাতীয় নির্বাচক প্রধানের তোপ, ‘‘আমি সত্যিই গোটা ব্যাপারটা বুঝতে পারছি না। এর আগে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজেও অশ্বিনকে একটি ম্যাচেও খেলানো হল না! তা হলে কেন ওকে দলের সঙ্গে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল? গোটাটাই আমার কাছে রহস্য।’’
একই সঙ্গে চলতি বিশ্বকাপে ভারতীয় ক্রিকেটারদের শরীরী ভাষা দেখে হতাশ বেঙ্গসরকার। তাঁর মন্তব্য, ‘‘গোটা দলটাকেই বিধ্বস্ত ও ক্লান্ত দেখাচ্ছে। জানি না, এটা দীর্ঘদিন ধরে জৈব সুরক্ষা বলয়ে থাকার ফল কি না। তবে ভারতীয় ক্রিকেটারদের এমন নেতিবাচক শরীরী ভাষা বহুদিন দেখিনি।’’