সন্দেশখালি (Sandeshkhali) অনেক বড় এলাকা। সন্দেহ নেই, কিছু এলাকায় সমস্যা হয়েছে। কিন্তু এমনভাবে বিষয়টি তুলে ধরা হচ্ছে যাতে গোটা সন্দেশখালি (Sandeshkhali) এলাকার মহিলাদের সম্মান নষ্ট হচ্ছে। আসলে কিছু ভোটের পাখি এসে এমন ঘটনা ঘটাচ্ছে।
এই আবহে একটাই অনুরোধ—
মহিলারা সঙ্ঘবদ্ধ হন, এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। প্রতিটি বুথে গিয়ে মন্ত্রীরা সভা করবেন। তৃণমূল কংগ্রেসের সংগঠনকে ঝালিয়ে নেবেন। এই প্রসঙ্গে সেচমন্ত্রী স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, সন্দেশখালিতে (Sandeshkhali) নতুন প্রজন্ম তৈরি হয়ে গিয়েছে। সংগঠন সামলানোর ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা হবে না। সুতরাং, দেরি না করে মহিলারা সর্বস্তরে জোট বাঁধুন, অপপ্রচারের প্রতিবাদ করে প্রতিরোধ গড়ে তুলুন।
আচ্ছা, বলুন তো, সন্দেশখালিতে (Sandeshkhali) রাজনৈতিক পর্যটনের জন্য কেন এত আদিখ্যেতা! হাতরস বা মণিপুরে তো বিজেপিই যায়। অন্যরা যেতে পারে না। তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিনিধিদের তো বিমানবন্দর থেকেই আটকে দেওয়া হয়। এখন কেন এত ন্যাকাকান্না! এইসব অপপ্রচার, কুমিরের কান্নার বিপ্রতীপে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূমিকা লক্ষ্য করুন।
১০০ দিনের কাজ করেও লক্ষ লক্ষ জবকার্ড হোল্ডার টাকা না পেয়ে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন। কেন্দ্রের টালবাহানায় তিতিবিরক্ত হয়ে সেই প্রাপ্য মিটিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর সেখানেই থেমে থাকেননি। জবকার্ড হোল্ডাররা যাতে সারা বছর কোনও না কোনও কাজ করতে পারেন, সেই ভাবনা থেকে কর্মশ্রী প্রকল্পের সূচনা করেছেন। লোকসভা নির্বাচন ঘোষণা হওয়ার আগেই শ্রমিকদের বিভিন্ন কাজে নিযুক্ত করতে বিভিন্ন দফতরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। গত কয়েক বছর ১০০ দিনের কাজ বন্ধ থাকায় কর্মদিবস কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছে। তবুও বিভিন্ন দফতরের দেওয়া কাজের মাধ্যমে কিছু শ্রমদিবস সৃষ্টি হয়েছে রাজ্যে। এবারে তাই পঞ্চাশ দিনের কাজের মাধ্যমে বেশি সংখ্যক শ্রমিকের হাতে টাকা তুলে দিতে বদ্ধপরিকর মা-মাটি-মানুষের সরকার।
পঞ্চায়েত ছাড়া আরও পাঁচটি দপ্তরের বিভিন্ন কাজে এই শ্রমিকদের নিযুক্ত করা হবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। জবকার্ড হোল্ডারদেরই যাতে বেশি করে কাজ দেওয়া হয়, সেই বার্তা ঠিকাদার সংস্থাগুলিকে দেওয়া হয়েছে। আগামী বছর যে সংখ্যক জবকার্ড হোল্ডারকে কাজ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে পঞ্চায়েত দপ্তর, তার জন্য সরকারের প্রায় সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকা খরচ হতে পারে বলে অনুমিত হচ্ছে।
সংক্ষেপে বলতে গেলে, চলতি মাসেই শেষ হবে ২০২৩-’২৪ অর্থবর্ষ। তার মধ্যেই ১০ লক্ষ জবকার্ড হোল্ডারকে কাজ দিতে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য সরকার। কর্মশ্রী প্রকল্পের মাধ্যমে তাঁরা যাতে বছরে ৫০ দিন কাজ পান, সেই ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর জন্য রাজ্যের খরচ হতে পারে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা। পরবর্তী অর্থবর্ষে (২০২৪-’২৫) এই প্রকল্পের মাধ্যমেই অন্তত ৭৫ লক্ষ জবকার্ড হোল্ডারকে ৫০ দিনের কাজ দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে পঞ্চায়েত দফতর। তার জন্য ইতিমধ্যে স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর (এসওপি) তৈরির কাজ শুরু করে দিয়েছেন রাজ্য সরকারের আধিকারিকরা।
যাদের ভাত দেবার মুরোদ নেই, অথচ যারা কিল মারার গোসাঁই, তাদের গালে বিরাশি সিক্কার থাপ্পড় এই পরিকল্পনা। কেন্দ্র সৃষ্ট সংকটে ত্রাতা সেই জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আগের নির্বাচনে স্লোগান উঠেছিল ‘না খাউঙ্গা, না খানে দুঙ্গা’। এখন দেখতে পাচ্ছি, “লুটনে ওয়ালে কো লুটনে দো।’’ নারদা কাণ্ডে এফআইআর-এ নাম আছে এমন বিজেপি নেতা, ঘুরে বেড়াচ্ছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর আশেপাশে। এটাই মোদিজির একমুখী বিচিত্র রাজধর্ম। ‘সিলেক্টিভ’ রাজধর্ম। বিজেপির যাঁদের হাত পেতে টাকা নিতে দেখা গিয়েছে তাঁদের জন্য এসব প্রযোজ্য নয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সীমিত ক্ষমতার মধ্যেও ৫৯ লক্ষ মানুষের একশো দিনের বকেয়া মিটিয়েছেন গত কয়েকদিনে। নিজের দলের অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করে দেখিয়েছেন। শাহজাহান, শিবু, উত্তম। অন্য দিকে গুজরাত দাঙ্গার সময় তৎকালীন বিজেপি-শাসিত, মোদি সরকারের ভূমিকা কী ছিল? সেই রাজধর্মের নমুনা দেখে শিউরে উঠেছিলেন স্বয়ং দলের প্রতিষ্ঠাতা অটলবিহারী বাজপেয়ী! এত সহজে মোদিজি ২২ বছর আগের ঘটনা ভুলে গেলেন, ভুলে গেলেন মাত্র দু’বছর আগে স্বাধীনতা দিবসে বিলকিস বানোর ধর্ষকদের রহস্যজনকভাবে মুক্তি দেওয়ার ঘটনা! ভুলে গেলেন নোট বাতিল করেও এক শতাংশ কালো টাকা উদ্ধার না-হওয়ার রুদ্ধশ্বাস কুনাট্য!
আরও পড়ুন- ফের ‘দিল্লি চলো’র ডাক অন্নদাতাদের, ১০ মার্চ রেল রোকো
ইন্ডিয়া জোটকে কথায় কথায় ‘ঘামান্ডি’ জোট বলে কটাক্ষ করা হয়, অথচ সেই জোটের অন্যতম কুশীলবদেরই কাউকে দলে টানা হচ্ছে কিংবা তাতেও কাজ না-হলে এজেন্সি দিয়ে ভয় দেখানো চলছে। কেজরিওয়ালকে মাদক মামলায় অষ্টমবার তলবি নোটিশ দেওয়া হল, খনি দুর্নীতিতে অখিলেশকে সমন করা হয়েছে, ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনকে গ্রেফতার, এসবই চলছে একচ্ছত্র রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ভোগ করার সুবাদে। আবার যাঁদের সমনের ভয় দেখানো যাচ্ছে না তাঁদের সরাসরি যোগ দিতে বাধ্য করা হচ্ছে গেরুয়া দলে। এমনকী, রাজ্যসভায় গরিষ্ঠতা পেতে বিরোধী শাসিত রাজ্যে পর্যন্ত ক্রস ভোটিং করে আসন ছিনিয়ে নেওয়া। সবই চলছে রাজধর্মের আড়ালে নৈতিকতাকে ষোলো আনা বিসর্জন দিয়েই। ভাঙন ধরানো হচ্ছে তেলেঙ্গানার কেসিআর জোটেও। কংগ্রেস-শাসিত হিমাচলে যেখানে রাজ্যসভা ভোটে জয়লাভ সম্পূর্ণ অসম্ভব সেখানেও অন্তত ছ’জন কংগ্রেস ও তিনজন নির্দল বিধায়ক বিজেপির পক্ষে ভোট দেওয়ায় একমাত্র রাজ্যসভার আসনটি রহস্যজনকভাবে বিজেপির দখলে গিয়েছে।
চণ্ডীগড়ের স্টাইলে প্রিসাইডিং অফিসারদের ম্যানেজ করে কুর্সি রক্ষা, এটাই মোদিজির নৈতিকতা ও আদর্শ রাজধর্ম!
মনরেগায় নাম লেখানো সক্রিয় শ্রমিকের সংখ্যা ১৫ কোটি ৪০ লক্ষ কেন? উজ্জ্বলার বেনিফিসিয়ারিরা কেন বছরে গড়ে চারটিও সিলিন্ডার কিনতে পারেন না? তাঁরা সিলিন্ডার কিনছেন সারা বছরে গড়ে মাত্র ৩.৭টি!
কেন? উত্তর দিতে পারবেন মোদি? যদি না পারেন, তবে অপপ্রচার বন্ধ করুন। এক্ষুনি।