প্রধানমন্ত্রী বাংলায় এসে মোদি কি গ্যারান্টির কথা বলছেন, নারীশক্তির কথা বলছেন, কিন্তু আপনার দলই ধর্ষকদের প্রোটেকশন দিচ্ছে। গ্যারান্টি দেওয়ার আগে প্রধানমন্ত্রী একবার তাকিয়ে দেখুন নিজের দলের দিকে। আপনার দলে শুধু অপরাধী, ধর্ষক আর দুর্নীতিগ্রস্তদের সহাবস্থান। ‘মোদি কা পরিবার’-এর সদস্যরা একচেটিয়াভাবে অপরাধী, ধর্ষক এবং দুর্নীতিগ্রস্ত। প্রধানমন্ত্রীর ‘মোদি কি গ্যারান্টি’ কথা বাংলার মানুষ বিশেষ করে মহিলারা বিশ্বাস করেন না। মোদি কি গ্যারান্টি আসলে কী তা ১০ দফা জবাবে বুঝিয়ে দিল তৃণমূল।
প্রথমত, বিজেপি সরকার ধর্ষকদের মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করতে একটি আইন এনেছে বলে দাবি। তার বাস্তবতা হল— বিজেপির নেতৃত্বাধীন গুজরাট সরকার বিলকিস বানোর জেলেবন্দি ধর্ষকদের তাড়াতাড়ি মুক্তির অনুমতি দিয়েছে। আবার মুক্তির পর আসামিদের মালা পরিয়ে বরণ করে নিয়েছে।
আরও পড়ুন-‘বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদে’ নাম না করে অভিজিৎকে নিশানা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের
দ্বিতীয়ত, মোদি কি গ্যারান্টিতে বলা হয়েছে বিজেপি সরকার মহিলাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। তার বাস্তবতা হল— বিজেপির আইটি সেলের প্রধান তথা পশ্চিমবঙ্গের সহকারী পর্যবেক্ষক অমিত মালব্য তাঁর আইটি সেলের জন্য ধর্ষকদের নিয়োগ করেছেন, যারা প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকায় আইআইটি-বিএইচইউ গণধর্ষণকাণ্ডে জড়িত ছিল।
তৃতীয়ত, প্রধানমন্ত্রী মোদি দেশের মহিলাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন এবং তাঁদের কল্যাণে কাজ করছেন৷ কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, কুস্তিগির সাক্ষী মালিক, ভিনেশ ফোগাটের মতো জাতীয়স্তরের ক্রীড়াবিদদের রাস্তায় নামিয়ে ছেড়েছেন। রাজধানী দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে মহিলা ক্রীড়াবিদদের লাঞ্ছিত হতে হয়েছে। সেই ঘটনায় বিজেপি সাংসদ ব্রিজভূষণ শরণ সিং-এর শাস্তি হয়নি। বরং তাকে রক্ষা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন-করবেটে টাইগার সাফারি নিয়ে কড়া অবস্থান সুপ্রিম কোর্টের
চতুর্থত, প্রধানমন্ত্রী দেশ থেকে দুর্নীতি নির্মূল করবেন বলে মোদি কি গ্যারান্টিতে বলা হয়েছে। কিন্তু বাস্তব কী বলছে? প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর কেন্দ্রীয়মন্ত্রীরা গদ্দার অধিকারী এবং হিমন্ত বিশ্বশর্মাদের মতো ঘুষখোর এবং দুর্নীতিবাজ নেতাদের জায়গা দিয়েছেন, তাঁদের নিয়ে প্রচার করছেন। বিজেপি নেতারা একসময় যাঁদের দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদ তকমা দিয়েছিল, তাঁদেরকেই যোগদান করিয়ে বিজেপির ওয়াশিং মেশিনে ফেলে সাদা করে নিয়েছেন।
পঞ্চমত, দাবি করা হয়েছে, বিগত এক দশক ধরে বিজেপি সম্পূর্ণ সততার সঙ্গে বিকশিত বাংলা এবং বিকশিত ভারতের জন্য কাজ করেছে। তার বাস্তব চিত্র হল— ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে অপমানজনক পরাজয়ের মুখোমুখি হওয়ার পরে বিজেপি থমকে গিয়েছে। বাংলার ১.৬০ লক্ষ কোটি টাকা আটকে রেখেছে কেন্দ্র। দেশের মধ্যে বাংলাই একমাত্র রাজ্য য়ে মনরেগার বরাদ্দ পায়নি ২৩-২৪ সালে। গত পাঁচ আর্থিক বছরে, কেন্দ্র বাংলা থেকে করের নামে বাংলা থেকে ৪.৬৫ লক্ষ কোটি টাকা তুলে নিয়ে গিয়েছে।
আরও পড়ুন-প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে ২২ বছরের শিবানী নমো ভারত ট্রেনের পাইলট
ষষ্ঠত, প্রধানমন্ত্রী নারী সম্মানের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং নারীদের সেবায় তার জীবন উৎসর্গ করেছেন বলে দাবি মোদি কি গ্যারান্টিতে। তার বাস্তব চিত্রও ভয়ঙ্কর। বিজেপি নারী-বিদ্বেষী ও নারী-বিরোধী পবন সিংকে প্রার্থী করেছে, যা বাঙালিকে অপমান। গানের মধ্য দিয়ে তিনি বাংলার মহিলাদের অপমান করেছেন। আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রে প্রার্থী হিসেবে তাঁর নাম প্রকাশের পরই মহিলারা জবাব দিয়েছেন।
সপ্তমত, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে তিনি বাংলাকে সম্মান করেন, যে ভূমি দেশকে মা সারদার মতো এক আইকন দিয়েছে। আর বাস্তব বলছে, বিজেপি ইন্টারনেটে মা সারদা দেবীর অশ্লীল ব্যঙ্গচিত্র পোস্ট করেছে। বিজেপির রাজ্য ইউনিট বারবার অপমান করছে বাংলার মানুষের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক অনুভূতিকে। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের আবক্ষ মূর্তি ভাঙা হয়েছে। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকে তাঁর প্রাপ্য সম্মান দিতে ব্যর্থ বিজেপি।
অষ্টমত, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার অধীনে বাংলায় ২৪ লক্ষেরও বেশি বাড়ির অনুমোদিত হয়েছে বলে দাবি। কিন্তু বাস্তব চিত্র হল— মোদি সরকার বাড়ির জন্য বরাদ্দ আট হাজার কোটি টাকারও বেশি আটকে রেখেছে। বাংলার লাখ লাখ মানুষ বঞ্চিত। ১১ লক্ষেরও বেশি মানুষকে বঞ্চিত করা হয়েছে, কারণ তারা ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপিকে ভোট দিতে অস্বীকার করেছিল।
নবমত, প্রধানমন্ত্রী সংসদে মহিলাদের সংরক্ষণের গ্যারান্টি দিয়েছেন এবং তা পূরণ হয়েছে বলে দাবি করেছেন। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, প্রথম তালিকায় মাত্র ৩ জন মহিলাকে প্রার্থী করা হয়েছে বাংলায়। সারা দেশে ১৯৫ কেন্দ্রের মধ্যে মাত্র ২৮টি আসনে মহিলা প্রার্থী। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি মাত্র ১৩ শতাংশ মহিলাকে টিকিট দিয়েছে। সেখানে তৃণমূল কংগ্রেস প্রায় ৩৮ শতাংশ মহিলাকে টিকিট দিয়েছে, যেখানে মহিলা সংরক্ষিত মাত্র ৩৩ শতাংশ।
আরও পড়ুন-শিবরাত্রি উপলক্ষে চলবে বিশেষ ট্রেন, জানুন কখন
দশমত, বিজেপি মহিলাদের সমস্ত সমস্যার সমাধান করতে চায় বলে মোদি কি গ্যারান্টিতে দাবি করা হয়েছে। তার বাস্তবতা হল— এই মাসের প্রথম ছ’দিনে বাংলায় তিনটি সফর করেছেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু মণিপুরের মহিলারা এখনও নরেন্দ্র মোদির বার্তা পাননি। তিনি একটিবারও মণিপুরে যেতে পারেননি। সেখানে মহিলারা জাতিগত হিংসার সাক্ষী, তাঁরা প্রধানমন্ত্রীর সফরের অপেক্ষায় রয়েছেন গত ১০ মাস ধরে।