প্রতিবেদন: স্বপ্নভঙ্গের হতাশা এখন লাদাখ জুড়ে। লাদাখবাসী বুঝতে পারছেন, প্রতিশ্রুতি পূরণের নাম করে আসলে তাদের ধোঁকা দিয়েছে বিজেপি সরকার। কাশ্মীরের থেকে আলাদা করা হয়েছে লাদাখকে। কিন্তু মোদি সরকার ২০১৯-২০ সালে এই পদক্ষেপের ঝুড়ি ঝুড়ি যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তা বাস্তবায়িত হয়নি। লোকসভা ভোটের আগে মোদি সরকারের বিরুদ্ধে মিথ্যাচারের অভিযোগ তুলে দাবি আদায়ের লক্ষ্যে প্রতিবাদী অবস্থান বিক্ষোভ শুরু হয়েছে লাদাখে। কেন্দ্রীয় সরকারের উপর চাপ বাড়াতে এবার আমরণ অনশনের ঘোষণা করেছেন লাদাখের প্রতিবাদী সোনম ওয়াংচু। কেন্দ্রের থেকে দাবি আদায়ে টানা ১২ দিন ধরে খোলা আকাশের নিচে তাঁর সঙ্গে শান্তিপূর্ণ অবস্থানে সামিল হয়েছেন লাদাখের ১২৫ জন বাসিন্দা। রবিবার থেকে সেখানেই আমরণ অনশন শুরু করেছেন সোনম। বিজেপিকে সবক শেখানোর চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন লাদাখের এই আন্দোলনকারীরা।
আরও পড়ুন-ফের প্রেসিডেন্ট পুতিনই, একতরফা ভোটের পর তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের হুমকি!
লোকসভা ভোটের আগে মোদি সরকারের সাফল্যের খতিয়ানে তুলে ধরা হয়েছিল লাদাখকে। কিন্তু সেখানে ভোটের মুখে সরকার বিরোধী আওয়াজ ওঠায় বিপাকে বিজেপি। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, লাদাখকে সংবিধানের ষষ্ঠ তফশিলের অন্তর্ভুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও পাঁচ বছর ধরে তা নিয়ে কোনও উদ্যোগই নেয়নি মোদি সরকার। লাদাখের প্রতিবাদী সোনমের দাবি, কাশ্মীর থেকে ভাগ হয়ে আলাদা হয়ে যাওয়ার পরেও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয়নি লাদাখে। এবার তাই স্থানীয়দের দাবি, আর কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের তকমা নয়, তাঁরা চান পূর্ণ রাজ্যের স্বীকৃতি। সেইসঙ্গে নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে লাদাখে বিধানসভা প্রতিষ্ঠা করাই তাঁদের লক্ষ্য ।
আরও পড়ুন-এমবাপের হ্যাটট্রিক, বড় জয় পিএসজির
এর আগেও এই দাবিতে বারবার সরব হয়েছিলেন সোনম ওয়াংচু। ভোটের আগে এবার শুধুমাত্র গণতন্ত্র রক্ষার আন্দোলনেই তাঁরা নামেননি। অন্য অভিযোগও আছে তাঁদের। সোনমের অভিযোগ, ২০১৯-২০ সালে লাদাখের অপরূপ প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদকে রক্ষা করার যে আশ্বাস মোদি সরকার দিয়েছিল, তাও ভেঙে ফেলেছে তারা। এই অনন্য প্রকৃতি একদিকে যেমন উত্তর মেরু, দক্ষিণ মেরুর পরে তৃতীয় মেরু প্রদেশ হিসাবে স্বীকৃতি পায়, তেমনই এই প্রায় ২০০ কোটি মানুষকে প্রতিনিয়ত বাঁচার প্রাকৃতিক রসদ সরবরাহ করে এই অঞ্চল। অথচ এই প্রকৃতিকে রক্ষা করার কোনও উদ্যোগই বিজেপি সরকার নিচ্ছে না। উল্টে বিজেপির নজর শুধুমাত্র তাঁদের শিল্পপতি ও খনি মালিক বন্ধুদের স্বার্থরক্ষার দিকে। লাদাখবাসীর দাবি বিজেপি সরকারের কানে পৌঁছে দিতে এবার চূড়ান্ত কষ্টকর পথ বেছেছেন সোনমরা। এই প্রসঙ্গে তাঁরা বলেন, ভারতের উত্তর-পূর্বের মানুষ দাবি করেন, দেশের ২২টি ভাষার পাশাপাশি ২৩তম যে ভাষা বিজেপি বোঝে, তা হল বন্দুকের ভাষা। আর এবার বিজেপিকে ২৪তম ভাষা শেখানোর পালা আমাদের। তা হল শান্তির ভাষা। লাদাখের মাইনাস ১৭ থেকে ৫-এর মধ্যে ওঠানামা করা প্রকৃতিতে খোলা আকাশের নিচে প্রবল শৈত্যপ্রবাহের কষ্ট মাথায় নিয়ে শান্তিপূর্ণ অবস্থান করছেন সোনম-সহ প্রতিবাদীরা।