প্রতিবেদন : এনআরসি (NRC) আতঙ্কে আত্মঘাতী কলকাতার নেতাজিনগরের যুবক দেবাশিস সেনগুপ্ত। দেশজুড়ে সিএএ লাগু হওয়ার পর থেকেই চরম আতঙ্কে ছিলেন দেবাশিস। প্রয়োজনীয় নথি খুঁজে না পাওয়ায় আতঙ্ক বেড়েছিল চূড়ান্ত পর্যায়ে।
অবশেষে সুভাষগ্রামে মামাতো দাদার বাড়িতে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মঘাতী ৩১ বছরের দেবাশিস। এই ঘটনায় তোলপাড় কলকাতা-সহ গোটা রাজ্য। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল আত্মঘাতী দেবাশিসের বাড়িতে যান। তাঁর বাবার সঙ্গে দেখা করেন। তাঁকে সান্ত্বনা দেন। এই ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী-সহ বিজেপিকে ধিক্কার জানিয়েছে তৃণমূল। দেবাশিসের বাড়ি থেকে বেরিয়ে মন্ত্রী শশী পাঁজা বলেন, আমাদের একজন সহনাগরিক এনআরসির আতঙ্কে মারা গেলেন। দেবাশিসবাবুর আতঙ্ক ছিল তাঁকে দেশছাড়া হতে হবে, মাটি ছাড়া হতে হবে। তাঁর বাবার সঙ্গে কথা বলে জানলাম তিনি কালীঘাটের কাছেই একটি ভাল স্কুলে পড়তেন। মেধাবী ছিলেন। খেলাধুলোতেও ভাল ছিলেন। দেশ জুড়ে বিজেপি যে খেলাটা খেলছে তার জন্য কলকাতার বুকে একজনের প্রাণ চলে গেল। এরকম আর কত প্রাণ গেলে থামবে বিজেপি, থামবেন প্রধানমন্ত্রী! আর কত রক্ত চাই তাঁদের। তীব্র প্রতিবাদ জানাই, ধিক্কার জানাই। তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, ভোটের আগে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করেছে বিজেপি। আমরা এখানে শোক রাজনীতি করতে আসিনি। একটা জীবন চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দিয়ে গেল সিএএ-এনআরসি কোন আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করেছে। এর জন্য দায়ী বিজেপি। তৃণমূলের সবাইকে এর বিরুদ্ধে লড়তে হবে। বৃদ্ধ বাবার সঙ্গে কথা বলেছি, এতটাই আতঙ্ক দেবাশিসকে তাড়িয়ে নিয়ে বেরিয়েছে যে শেষ পর্যন্ত জীবনটাই দিতে হল। ওঁর বৃদ্ধ বাবা ট্রমার মধ্যে আছেন।
আরও পড়ুন- অতি উত্তম
দেশ জুড়ে সিএএ লাগু হওয়ার পর থেকেই দেবাশিস আতঙ্কে ভুগতে শুরু করেন— এইবার এনআরসি (NRC) হলে তাঁকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে অথবা ডিটেনশন ক্যাম্পে যেতে হবে। কারণ, গত কয়েকদিন ধরেই প্রয়োজনীয় নথিপত্র খুঁজে পাচ্ছিলেন না তিনি। এতেই আরও বেশি আতঙ্কিত হয়ে পড়েন দেবাশিস। এই চরম উদ্বেগের কথা গত কয়েকদিন ধরেই তাঁর আত্মীয়-পরিজনদের বলছিলেন তিনি। শেষপর্যন্ত বুধবার মামাতো দাদার বাড়ি গিয়ে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেন বলে জানা গিয়েছে। সোনারপুর গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়। দেবাশিসের এক আত্মীয় (সম্পর্কে মাসি) জানান, দেবাশিস আমার কাছেই থাকত। সবই ঠিক ছিল, তবে যেদিন থেকে সিএএ চালু হয়েছে তারপর থেকেই দেবাশিস বারবার বলতে থাকে, এরপর এনআরসি হবে। আর তাকে ডিটেনশন ক্যাম্পে চলে যেতে হবে। কারণ, কোনওরকম নথি সে খুঁজে পাচ্ছে না। বৃহস্পতিবার দেবাশিসের আত্মীয়রা স্থানীয় কাউন্সিলর অরূপ চক্রবর্তীর কাছে গোটা বিষয়টি জানান ও তাঁর সাহায্য চান। সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন অরূপ। দেবাশিসের দেহ যাতে সৎকারের জন্য দ্রুত হাতে পান আত্মীয়রা, তার ব্যবস্থাও করেন তিনি। অরূপ জানান, এই দানবীয় আইনের জন্য দেবাশিসকে হারালাম আমরা। আর কত বাঙালিকে এভাবে আত্মবলিদান দিতে হবে সিএএ-এনআরসির জন্য? ছিঃ বিজেপি ছিঃ! বিজেপির বিভাজনের রাজনীতি ও এনআরসি আতঙ্কের বলি হয়েছেন দেবাশিস। এই শোকের সময় তাঁর পরিবার-পরিজনের পাশে দাঁড়িয়ে সবরকম সাহায্যের পাশাপাশি অরূপ ধিক্কার জানিয়েছেন বিজেপিকে। অরূপের কথায়, একজন মানুষ কতখানি নাগরিকত্ব হারানোর আতঙ্কে থাকলে এই কাজ করতে পারে! বাংলায় এনআরসি আতঙ্কের প্রথম বলি হলেন দেবাশিস। এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই আমরা। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাঁর নির্দেশে তৃণমূলের ৫ সদস্যের এক প্রতিনিধি দল আজ সন্ধে ৭টায় নেতাজিনগরে দেবাশিসের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছেন। কথা বলবেন দেবাশিসের বাবার সঙ্গেও। এই দলে রয়েছেন মন্ত্রী শশী পাঁজা, নাদিমুল হক, কুণাল ঘোষ এবং অরূপ চক্রবর্তী। এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যও। প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তাঁর বক্তব্য, আর কত রক্তপিপাসু হবেন আপনি? এরপরেও থামবেন না? আপনাদের স্বৈরাচারী সিদ্ধান্তের ফলে আতঙ্কে মানুষের জীবন চলে যাচ্ছে। এসব দেখেও একই কাজ চালিয়ে যাবেন?