অতি উত্তম

কলকাতার রাস্তায় রঙিন ফ্রেমে, সাদা-কালো 'মহানায়ক'। যাঁকে ছাড়া অস্তিত্বহীন বাঙালি। শহর জুড়ে ছড়িয়ে- ছিটিয়ে যাঁর উপস্থিতি। ৪৩ বছর পর সেলুলয়েডে আবার সেই নস্টালজিয়ার সাক্ষী হবে বাঙালি। আজ মুক্তি পেল পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের বহু প্রতীক্ষিত ছবি 'অতি উত্তম'। মূল চরিত্রে স্বয়ং উত্তমকুমার। তিনি এলেন, দেখলেন, জয় করলেন, রাখলেন ভক্তের মান। লিখছেন শর্মিষ্ঠা ঘোষ চক্রবর্তী

Must read

তিনি বাঙালির উন্মাদনা, মনের গভীরে লুকিয়ে থাকা আবেগ, মুখের হাসি। ঠোঁটের কোণায় আলতো করে লেগে থাকা তাঁর সিগারেট খাওয়ার স্টাইলে তোলপাড় আপামর নারীর হৃদয়। সিনেমা হলে তাঁর ছবিতে উপচে পড়া ভিড়। তিনিই তো প্রেমে পড়তে শেখালেন বাঙালিকে। এ-শহর জুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে তাঁর উপস্থিতি। তিনি বাঙালির এমন এক অস্তিত্ব যাকে ফেলে রেখে চলা অসম্ভব। ম্যাটিনি আইডল মহানায়ক উত্তমকুমার। কলকাতার রাস্তার রঙিন ফ্রেমে সেই সাদা-কালো উত্তম নড়বেন, চড়বেন ঘুরে বেড়াবেন আর শুধু উত্তমপ্রেমীদেরই দেখা দেবেন। এও কি সম্ভব! শুনতে বড় অদ্ভুত ঠেকলেও এমনটাই ঘটল। পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ছবি ‘অতি উত্তম’-এ (Oti Uttam)। আজ মুক্তি পাচ্ছে ছবিটি। পরিশ্রম এবং প্রযুক্তির অনবদ্য এক প্রেজেন্টেশন দেখবেন দর্শক।

এখনও পর্যন্ত সৃজিতের সবচেয়ে বেশি কঠিন পরিশ্রমে ফসল তাঁর এই ছবি ‘অতি উত্তম’ (Oti Uttam)। চিরকালের ম্যাটিনি আইডলকে আধুনিক প্রজন্মের সঙ্গে পরিচয় করাতে পরিচালকের এই প্রচেষ্টার প্রশংসায় পঞ্চমুখ সবাই৷ ‘অতি উত্তম’ (Oti Uttam) ছবির ট্রেলার যেদিন মুক্তি পায় সেদিন থেকেই এই ছবিটি চর্চায়। আর পাঁচটা ট্রেলারের থেকে এই ট্রেলার একদমই আলাদা৷ কারণ পরিচালক সৃজিত পর্দায় তুলে ধরলেন উত্তম কুমারের ‘ভূত’কে ৷
আসলে মহানায়কের একগুচ্ছ নানা স্বাদের চরিত্রের ছবিকে ভিএফএক্সে হাজির করেছেন পরিচালক। ভিএফএক্সের খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে এই ছবিতে। এই প্রযুক্তির সাহায্যেই চলমান হয়েছেন উত্তম। তিনি নড়েছেন, চড়েছেন, সংলাপ বলেছেন ছবির চরিত্রদের সঙ্গে।

ছবি প্রসঙ্গে পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায় সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, এই ছবির একটি চরিত্র উত্তমকুমার। তিনি এক ভক্তর কাছে মহানায়ক হয়েই আসেন, কথা বলেন এবং সেই ভক্তর জীবনের প্রেমের সমস্যা সমাধান করে দেন। এটাই গল্পের নির্যাস। উত্তমকুমারের চরিত্রে কোনও অভিনেতা অভিনয় করেননি বরং উত্তমকুমার স্বয়ং অভিনয় করেছেন। অর্থাৎ উত্তম-অভিনীত চরিত্রের নানান ফুটেজ জুড়ে একটা চরিত্র নির্মাণ করা হয়েছে।
এই প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘এই ছবির চিত্রনাট্য লিখতে আমার তিন বছর লেগেছে। যা যা সংলাপ বা ছবির চলন ইত্যাদি মাথায় রেখে ব্যাক ক্যালকুলেট করে আমাকে চিত্রনাট্য লিখতে হয়েছে।’
কী আছে এই গল্পের চিত্রনাট্যে? কীভাবে বাস্তবের সঙ্গে তিনি জুড়েছেন ফেলে আসা অতীতের মহানায়ককে?
গল্পটা হল কৃষ্ণেন্দু আর সোহিনীর। তাদের প্রেমকাহিনি জুড়েই থাকবে উত্তমকুমার। কৃষ্ণেন্দু গবেষক। তার জীবনে দুই ধ্যানজ্ঞান— এক উত্তমবাবু অর্থাৎ মহানায়ক। তাঁকে নিয়েই পিএইচডি করছে। বিষয় ‘দ্য সোশিওলজিকাল ইমপ্যাক্ট অফ দ্য স্মাইল অফ উত্তমকুমার’। আর এক হল— সোহিনী। সোহিনীকে সে ভালবাসে। উত্তমকুমার বলতে পাগল কৃষ্ণেন্দু। শুধু তাই নয়। যেদিকেই সে তাকায় সেদিকেই দেখতে পায় মহানায়ককে। এমনকী স্বয়ং উত্তমকুমার তাঁকে অনেক বিষয়ে সাহায্যও করেন! এই যেমন সোহিনীকে সে প্রোপজ করেছে। কিন্তু সোহিনী প্রথমেই তা নাকচ করেছে। এমন অবস্থায় কৃষ্ণেন্দুর সহায় হন উত্তমকুমার।
এই ছবিতে মহানায়কের নাতির ভূমিকায় থাকছেন তাঁর আসল নাতি গৌরব চট্টোপাধ্যায়। গৌরব, কৃষ্ণেন্দু দুই বন্ধু। একদিন দুজনে মিলে প্ল্যানচেট করেন উত্তমকুমারকে দেখার জন্য৷ এরপরই তাঁদের জীবনে প্রবেশ করে স্বয়ং মহানায়কের ‘ভূত’। তারপর থেকেই ঘটতে থাকে নানা ঘটনা।

আরও পড়ুন- রাজ্যে এতদিন ধরে ভোট চলবে! কেন? কার স্বার্থে? তাতেও ঝুলি ভরবে তো?

রাজকুমার হিরানি পরিচালিত ‘লগে রাহো মুন্নাভাই’-এর কথা নিশ্চই মনে আছে? সেখানে ‘মুন্না’ অর্থাৎ সঞ্জয় দত্তকে দেখা দিতে থাকেন মহাত্মা গান্ধী৷ ছবিটির সঙ্গে ‘অতি উত্তম’-এর মিল পাচ্ছেন দর্শক। তবে ওখানে মুন্নাই শুধু দেখতে পেতেন মহাত্মা গান্ধীকে। এখানে একমাত্র যাঁরা উত্তমপ্রেমী তাঁরাই দেখতে পান মহানায়ককে৷ যেমন কৃষ্ণেন্দু, সোহিনী এবং গৌরব— যাঁরা উত্তমকুমারকে ভালবাসেন তাঁদের দেখা দেন উত্তম। মহানায়কের সঙ্গে চলতে থাকে নানা আলাপচারিতা-আড্ডা৷ এর মাঝেই গল্পের নায়িকা ‘ভূত’ উত্তমকুমারের প্রেমে পড়েন৷ তারপর কী হয়? কোনদিকে এগোয় গল্প? এখানেই রয়েছে ট্যুইস্ট। বাকিটা জানতে অবশ্যই যেতে হবে সিনেমা হলে।
কিন্তু একটা প্রশ্ন সবার মনেই আসা স্বাভাবিক উত্তমকুমারের ছবি তো জোগাড় করা গেল। তাঁকে ভিএফএক্স-এর মাধ্যমে চলমানও করা গেল। কিন্তু তাঁর কণ্ঠে সংলাপ? সেই সমস্যার সমাধান করেছেন অভিনেতা সুরজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কণ্ঠেই শোনা যাবে উত্তমকুমারের স্বর৷ এই বিষয়ে অভিনেতা বলেন, ‘মহানায়কের অনেকগুলি বয়সের কণ্ঠের দরকার ছিল। তখন আমার একটা বয়সেরই করার কথা। পরে যখন দেখা গেল আমি মহানায়কের সব বয়সেরই কণ্ঠ পারছি। তখন সবটাই করি। আমি মিমিক্রি শিল্পী নই। এটা আমার অভিনয়চর্চার মধ্যে পড়ে। যাঁদের অভিনয় আমাকে মুগ্ধ করে, আমি তাঁদের কণ্ঠে কথা বলতে পারি।’
ছবিতে মহানায়ককে যোগ্য সঙ্গত করেছেন অভিনেতা অনিন্দ্য সেনগুপ্ত, রোশনি ভট্টাচার্য এবং গৌরব চট্টোপাধ্যায়। অন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় দেখা যাবে লাবণী সরকার, শুভাশিস মুখোপাধ্যায়কে। ছবির প্রযোজনায় ক্যামেলিয়া প্রোডাকশন প্রাইভেট লিমিটেড। ১৯৮০ সালের ২৪ জুলাই, মাত্র ৫৩ বছর বয়সেই তাঁর পথচলা শেষ হয়। প্রয়াণের ৪৩ বছর পর ফের বড়পর্দায় ফিরছেন তিনি। সব মিলিয়ে এই ছবি অন্যরকম বিনোদন দর্শকদের উপহার দিতে চলেছে, তা বলা যায়।

Latest article