প্রতিবেদন : নির্বাচন কমিশনের দফতরের বাইরে থেকে ন্যক্কারজনকভাবে তৃণমূলের ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দলকে যেভাবে টেনে-হিঁচড়ে তুলে নিয়ে গিয়েছে পুলিশ তার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদে গর্জে উঠলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার রাতেই রাজভবনে গিয়ে রাজ্যপালকে জানিয়ে এলেন অবিলম্বে নির্বাচন কমিশন ও বিশেষ করে কমিশনারের বিরুদ্ধে তিনি ব্যবস্থা নিন। আজ, মঙ্গলবার ফের রাজভবনে যাবে তৃণমূলের প্রতিনিধি দল। এদিন রাত ৯টায় তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক-সহ ১১ জনের প্রতিনিধি দল যায় রাজভবনে। রাজ্যপালের সঙ্গে বৈঠক শেষে অভিষেক বলেন, এই দিনটি গণতন্ত্রের কালো দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। তাঁর সংযোজন, আমাদের অভিযোগ বিজেপির বিরুদ্ধে নয়, নির্বাচন কমিশন ও নির্দিষ্টভাবে কমিশনারের বিরুদ্ধে। কেন? তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন-ধর্মনিরপেক্ষতা এখন কোথায়! সংখ্যাগুরুর দাপটে কাঁপছে শিক্ষা
১. এই নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। স্বাভাবিকভাবেই তাঁর ও বিজেপির নির্দেশে কাজ করছেন কমিশনার। ২. বিজেপি নেতা-সহ বিরোধী দলনেতার কথায় ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দু’বার রাজ্যের ডিজি পরিবর্তন করা হলে আমাদের হাতে নির্দিষ্টি তথ্য ও প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও এনআইএ-র এসপি ধনরাম সিংকে কেন সরানো হবে না? ৩. নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে তৃণমূলের প্রতিনিধি দল গিয়েছিল জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ারে ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত ১,৬০০ বাড়ি যাতে অবিলম্বে মেরামত করার অনুমতি দেয় নির্বাচন কমিশন। এর সঙ্গে ছিল ৪ এজেন্সি কর্তার অপসারণের দাবিও। ৪. দুই জেলায় ঘূর্ণিঝড়ের পরে রাজ্য প্রশাসনের তরফে নির্বাচন কমিশনকে বাড়ি তৈরির অনুমতি চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। ৮ দিন পরেও অনুমতি মেলেনি। অসহায় মানুষগুলি রিলিফ ক্যাম্পে রাত কাটাচ্ছেন। ৫. কেন অনুমতি দিলেন না নির্বাচন কমিশনার? কার বা কাদের অঙ্গুলি হেলনে কমিশন চলছে বাংলার মানুষ দেখছেন। ৬. রাজ্যপাল আমাদের দাবির সঙ্গে সহমত পোষণ করেছেন। মঙ্গলবার সকালেই তিনি কমিশনকে সবটা জানাবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন। এরপর তার উত্তর পাওয়ার পরে রাজ্যপাল আমাদের জানালে মঙ্গলবারই ফের রাজভবনে রাজ্যপালের কাছে আসব আমরা। ৭. দেশ একনায়কতন্ত্রের দিকে যাচ্ছে। বিরোধী দলের নেতা-মন্ত্রী এমনকি মুখ্যমন্ত্রীকেও গ্রেফতার করে জেলে ঢুকিয়ে দিচ্ছে। ৮. বিজেপি নেতা জিতেন্দ্র তিওয়ারি এনআইএ এসপির ফ্ল্যাটে ঢোকার সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ্যে আনবহ আমরা। ৯. আমরা রাজভবনে এসেছি অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে। জিতেন্দ্র তিওয়ারি এনআইএ এসপির অফিসে যাননি। অ্যাপয়েন্টমেন্ট চেয়ে মেইলও করেননি। এসপির বাড়ির কাজের লোক তাকে রিসিভ করে নিয়ে গিয়েছে। আবার ছাড়তেও এসেছে। এরপরেও এনআইএ এসপিকে সরানো হবে না? ১০. নির্বাচন কমিশন অবাধ শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের কথা বলে। আমরাও তাই চাই। কিন্তু যেভাবে বিজেপির অঙ্গুলি হেলনে নির্বাচন কমিশনার কাজ করছেন, তাতে কীভাবে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হবে? ১১. রাজ্যপাল নিজেকে রাজ্যের গণতন্ত্রের ধারক ও বাহক বলে থাকেন। আমরাও আশা করি তিনি তাঁর দায়িত্ব যথাযথভাবেই পালন করবেন। ১২. চন্ডীগড়ে যেভাবে নির্বাচন কমিশন অনীল মাসে ব্যালট পেপার নিয়ে ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়ে ছিলেন আগামী দিনে দেশেও একই জিনিস ঘটবে। ১৩. খোঁজ নিয়ে দেখুন এনআইএ-র এসিপ ধনরাম সিং আগে প্রধানমন্ত্রীর সিকিউরিটি অফিসার ছিলেন। স্পেশাল অর্ডার করে পাঠানো হয়েছে এনআইএ-তে। ফলে তাকে তো অঙ্গুলি হেলনে কাজ করতেই হবে। ১৪. দিল্লিতে কমিশন দফতরের বাইরে থেকে যেভাবে মহিলা সাংসদদের টেনে-হিঁচড়ে তোলা হয়েছে, তা লজ্জাজনক। দু’সপ্তাহ আগে দোলা সেনের পায়ে অস্ত্রোপচার হয়েছে। তাঁকে হিঁচড়ে তোলা হয়েছে। ডেরেক ও’ব্রায়েনকে চ্যাংদোলা করে তোলা হয়েছে। ১৫. এনআইএ এসপি ও জিতেন্দ্র তিওয়ারির বৈঠক ফাঁস করে দিয়েছি। কই মামলা করার সাহস হল না তো!
আরও পড়ুন-সাংসদদের টেনে-হিঁচড়ে বাসে তুলল বিজেপির পুলিশ
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়াও রাজভবনের প্রতিনিধি দলে ছিলেন সুদীপ বন্দোপাধ্যায়, সৌগত রায়, শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় ফিরহাদ হাকিম, মালা রায়, অরূপ বিশ্বাস, ব্রাত্য বসু, শশী পাঁজা, অসীমা পাত্র ও কুনাল ঘোষ।