প্রতিবেদন : যে ২-জি স্পেকট্রাম কেলেঙ্কারি নিয়ে ইউপিএ সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ইস্যুকে হাতিয়ার করে ২০১৪ সালে দিল্লির মসনদ দখল করেছিলেন নরেন্দ্র মোদি, এবার সেই মামলার রায়ের পরিবর্তন চাইল বিজেপি সরকার! সুপ্রিম কোর্টে ২-জি স্পেকট্রাম মামলার রায় বদলের আবেদন জানিয়েছে কেন্দ্র। প্রশ্ন উঠছে, ক্ষমতা দখলের জন্যই কি তাহলে ২-জি স্পেকট্রাম কেলেঙ্কারিকে নির্বাচনী হাতিয়ার করেছিল বিজেপি?
আরও পড়ুন-স্টয়নিসের ব্যাটে স্বপ্নভঙ্গ চেন্নাইয়ের
এই সংক্রান্ত মামলায় ২০১২ সালের রায়ে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল স্পেকট্রাম সম্পদ বরাদ্দের জন্য নিলাম-নীতি অনুসরণ করতে হবে কেন্দ্রীয় সরকারকে। স্পেকট্রাম বণ্টনে যাতে দুর্নীতি না হয় সেজন্যই এই রায় দিয়েছিল শীর্ষ আদালত। তৎকালীন কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকারের বিরুদ্ধে ২-জি স্পেকট্রাম কেলেঙ্কারি নিয়ে দেশ জুড়ে শোরগোল তোলে বিজেপি। ক্ষমতা দখলের পর তাদের ভোল বদল নিয়ে খুব স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে।
আরও পড়ুন-দিনের কবিতা
স্পেকট্রাম মামলার ২০১২ সালের রায়ে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল প্রাকৃতিক সম্পদ হস্তান্তর বা বিচ্ছিন্ন করার সময়ে সরকারকে ব্যাপক প্রচারের মাধ্যমে নিলামের পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। সেসময় ইউপিএ সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কোম্পানিকে দেওয়া ২-জি স্পেকট্রাম লাইসেন্স বাতিল করে শীর্ষ আদালত। কারণ, স্পেকট্রাম বণ্টনে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছিল তৎকালীন বিরোধী দল বিজেপি-সহ বিভিন্ন মহল। যে ইস্যুতে নিজেরা দুর্নীতির কথা বলে রাজনৈতিক ফায়দা তোলে, এখন ক্ষমতায় থাকার সময় আগের সরকারের সেই নীতি কেন নিতে চাইছে মোদি সরকার? অভিযোগ উঠছে, ইউপিএ জমানার দুর্নীতির সহায়ক নীতিতেই এখন ফিরে যেতে চাইছে মোদি সরকার। কেন্দ্রের আর্জি, সুপ্রিম কোর্ট আগের রায় সংশোধন করুক যাতে একটি প্রশাসনিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে স্পেকট্রামের বরাদ্দ করা যায়। তাদের যুক্তি, স্পেকট্রাম ক্রয়ে ইচ্ছুক সংস্থা সরকারি কার্যাবলী, জনস্বার্থ, প্রযুক্তিগত বা অর্থনৈতিক কারণে নিলাম প্রক্রিয়ায় যুক্ত নাও হতে পারেন। পাল্টা প্রশ্ন উঠছে, আগের ব্যবস্থায় দুর্নীতির সুযোগ ছিল বলেই স্পেকট্রাম বণ্টনে নিলাম চালু করেছিল সুপ্রিম কোর্ট। তা জেনেও কেন নিলাম-নীতি তুলে দিয়ে দুর্নীতি করার রাস্তা তৈরি করতে চাইছে বিজেপি সরকার?
আরও পড়ুন-প্রথম মহিলা উপাচার্য পেল আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়
প্রসঙ্গত, ইউপিএ জমানার ২-জি স্পেকট্রাম কেলেঙ্কারিতে শাসক জোটের রাজনীতিবিদ এবং সরকারি কর্তারা জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে। ফ্রিকোয়েন্সি লাইসেন্সের জন্য মোবাইল টেলিফোন কোম্পানিগুলিকে অবৈধভাবে কম অর্থের বিনিময়ে বরাদ্দ করা হয়। কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল অফ ইন্ডিয়ার রিপোর্টে অভিযোগ তোলা হয়, ২-জি স্পেকট্রাম বিক্রিতে অবৈধ হস্তক্ষেপের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের ১ লক্ষ ৭৬ হাজার কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। দুর্নীতির অভিযোগেই ১২২টি লাইসেন্স বাতিল করে দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। আশ্চর্যজনকভাবে সেই দুর্নীতিমূলক পদ্ধতিতেই ফিরে যেতে চায় মোদি সরকার। সেজন্য সর্বোচ্চ আদালতে আবেদন জানিয়েছে তারা।