ঘটনা ১ : হাওয়ায় ঝুলছে কালকা-শিমলা হেরিটেজ রেললাইনের একটি অংশ। রেকর্ড-ভাঙা বৃষ্টিতে ধুয়েমুছে সাফ রেললাইনের নিচের মাটি। গতবছর সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছিল ছবিটি। আঁতকে উঠেছিল গোটা দেশ। শুধু রেলপথ নয়, রাজধানী শিমলা-সহ গোটা হিমাচল প্রদেশের চেনা ছবিটাই যেন পাল্টে গিয়েছিল তুমুল এক বর্ষায়। তাসের ঘরের মতো হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়েছিল বহুতল। ভেসে গিয়েছিল ঘরবাড়ি, মন্দির, রাস্তা, ব্রিজ। মেঘভাঙা বৃষ্টি আর হড়পা বানে মৃত্যুসংখ্যা পেরিয়েছিল ১০০। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে না হতেই ফের তাণ্ডব শুরু করেছিল ভয়াবহ বৃষ্টি। সেই ক্ষত আজও শুকোয়নি।
আরও পড়ুন-ছেলের সামনে নাদালের জয়
ঘটনা ২ : দেবভূমি কেদারনাথ। পবিত্র চার ধামের এক ধাম। বছর বছর অগণিত মানুষ যান পুণ্য লাভের আশায়। কেউ কেউ যান অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের টানে। ২০১৩ সালের জুন মাসে উত্তরাখণ্ডের এই অঞ্চলে আছড়ে পড়েছিল হিমালয়ের সুনামি। তুমুল বৃষ্টির মধ্যে আচমকা হড়পা বান। মন্দাকিনী নদীর ডান দিকের হাঁটাপথ এবং রামওয়াড়া চটি তলিয়ে গিয়েছিল। প্রায় ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল গৌরীকুণ্ড জনপদটিও। এই ভয়াবহ বিপর্যয়ে মৃত্যু হয়েছিল অসংখ্য মানুষের। সরকারি হিসাবেই সেখানে প্রাণহানি ছাড়িয়েছিল সাড়ে পাঁচ হাজারের গণ্ডি। বেসরকারি মতে, এখনও বহু মৃতদেহ চাপা পড়ে রয়েছে কাদামাটির স্তরের মধ্যে।
আরও পড়ুন-বালুরঘাটে পুরুষের চেয়ে ভোটে এগিয়ে মহিলারাই
ঘটনা ৩ : দেশ পেরিয়ে বিদেশ। এই মাসের গোড়ার দিকের ঘটনা। সদ্য ঘুম থেকে উঠে স্কুল, কলেজ, অফিসে যাওয়ার প্রস্তুতি চলছিল বাড়িতে বাড়িতে। আচমকাই শক্তিশালী ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে তাইওয়ানের বিস্তীর্ণ এলাকা। রিখটার স্কেলে কম্পনের মাত্রা ছিল ৭.৪। সেই তীব্র কম্পনের জেরে তাইওয়ানে মৃত্যু হয় বহু মানুষের। আহতের সংখ্যা হাজার ছুঁইছুঁই। দুটি টেকটনিক প্লেটের সংযোগস্থলে অবস্থিত দ্বীপরাষ্ট্রটি এমনিতেই কম্পন-প্রবণ। তবে গত ২৫ বছরে এত ভয়াবহ ভূমিকম্প দেখেনি তাইওয়ান। ১৯৯৯ সালের সেপ্টেম্বরে এমনই জোরালো ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছিল ওই দেশের একটা বড় অংশ। দেশের ইতিহাসে সেটাই ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়। রিখটার স্কেলে সেই কম্পনের মাত্রা ছিল ৭.৬। সেই বার প্রাণ হারিয়েছিলেন অন্তত ২,৪০০ জন।
আরও পড়ুন-কেন্দ্রকে ৫ লক্ষ টাকা জরিমানা করল সুপ্রিম কোর্ট
ঘটনা ৪ : বছরের শুরুতেই ছড়িয়ে পড়েছিল দুঃসংবাদ। পরপর জোরালো ভূমিকম্পের পর সুনামি আছড়ে পড়েছিল জাপানের পশ্চিমাঞ্চলে। ইশিকাওয়ায় ওয়াজিমা শহরে প্রথম আছড়ে পড়ে। জাপানের আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, উপকূলে ১.২ মিটার উঁচু সুনামির প্রথম ঢেউ আছড়ে পড়েছিল। ভারতীয় সময় বেলা ১টা নাগাদ শক্তিশালী ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছিল জাপান। রিখটার স্কেলে কম্পনের মাত্রা ছিল ৭.৬। ভূমিকম্পের পরেই ইশিকাওয়া, নিগাতা ও তোয়ামা অঞ্চলের উপকূলীয় এলাকায় সুনামি সতর্কতা জারি হয়। তীব্র কম্পন অনুভূত হয় জাপানের রাজধানী টোকিয়োতেও। ভূমিকম্পের উৎসস্থল ছিল মাটির ৫০ কিলোমিটার গভীরে। পরপর ২১ বার তীব্র কম্পন অনুভূত হয়। একাধিক শহরে হয় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি। মৃত্যু হয়েছে বহু মানুষের।
আরও পড়ুন-একমাত্র আমাদের মুখ্যমন্ত্রীই পারেন এনআরসি আটকাতে
ধারণ ক্ষমতার বাইরে
প্রশ্ন হল, বারবার কেন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হচ্ছে পৃথিবীকে? হিমাচল এবং উত্তরাখণ্ডের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিজ্ঞানীদের মত, ধারণ ক্ষমতা পরিমাপ না করেই পাহাড়ের কোলে অতিরিক্ত হোটেল, বহুতল তৈরি হয়েছিল। জনসংখ্যা থেকে পর্যটকের সংখ্যা অতিরিক্ত পরিমাণে বেড়েছে। যা ওই এলাকার ধারণ ক্ষমতার বাইরে। সেজন্যই এই ভয়াবহ বিপর্যয়। বিজ্ঞানীদের আরেক অংশের মতে, সাম্প্রতিককালে এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের জন্য আবহাওয়ার চরম পরিবর্তনই দায়ী। বড় ভূমিকা রয়েছে বিশ্ব উষ্ণায়নের। হঠাৎ করে সৃষ্ট নিম্নচাপের জেরেই হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে হচ্ছে অত্যধিক বৃষ্টিপাত। নিম্নচাপের কারণ অতিরিক্ত তাপমাত্রার বৃদ্ধি। এর পিছনে বড় ভূমিকা রয়েছে তথাকথিত সভ্য সমাজের।
শিক্ষা নেয়নি মানুষ
সবচেয়ে আশ্চর্যজনক বিষয়, শোচনীয় অভিজ্ঞতার পরও শিক্ষা নেয়নি মানুষ। মেতে থেকেছে উন্নয়নের নেশায়। ভূমিকম্পপ্রবণ জোশীমঠে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ, পর্যটনশিল্প থেকে নগদপ্রাপ্তির আশায় চার ধামকে একত্র করার জন্য প্রশস্ত হাইওয়ে ও রেলপথ নির্মাণ-প্রকল্প ধাপে ধাপে বাড়ানো হয়েছে। অথচ, আজ একবার ফিরে অতীতের দিকে তাকালে, ধ্বংসের এই চেহারার পাশাপাশি ধ্বংসের গতিটিও বিশেষ রকম অবাক করতে পারে। হাজার বছর ধরে পাহাড় ও মানুষের যে সাহচর্য অক্ষুণ্ণ থেকেছে, সেটা কত দ্রুত ভেঙে চুরমার হওয়ার জোগাড়, দেখলে বিস্ময় যেন বাঁধ মানে না। এই ধরনের ঘটনাকে প্রকৃতির প্রতি মানুষের অপরাধ বলে মনে করেন অনেকেই। এমন ঘটনা আসলে মানুষের প্রতি, মানবসভ্যতার ইতিহাসের প্রতি সংঘটিত অপরাধও বটে। প্রশ্ন হল, তবে কি প্রশস্ত রাস্তা, রেলপথের উন্নয়ন হবে না? নিশ্চয় হবে, কিন্তু সমস্তকিছুই প্রকৃতির সঙ্গে সাযুজ্য রেখে।
আরও পড়ুন-ছেলের সামনে নাদালের জয়
লাগাতার বৃষ্টি
প্রশ্ন উঠছে, হিমালয়ের কোলে অতিবৃষ্টির কারণ কী? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু এবং পশ্চিমি ঝঞ্ঝার জোড়া ধাক্কাতেই পাহাড়ি রাজ্যে এমন লাগাতার বৃষ্টি। পাহাড়ে অবশ্য প্রাকৃতিক বিপর্যয় নতুন নয়। আচমকা বন্যায় এক রাতে ভেসে গিয়েছে আস্ত জনপদ— এমন ঘটনা বহুবার ঘটেছে। কিন্তু সম্প্রতি যেমন ঘন ঘন মেঘভাঙা বৃষ্টি, হড়পা বানের খবর মিলছে, তার নমুনা আগে বিশেষ দেখা যায়নি। বিশেষত গত দশ বছরে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের নিরিখে সংবাদ শিরোনামে উঠে আসা যেন নিয়ম করে ফেলেছে উত্তরাখণ্ড এবং পার্শ্ববর্তী হিমাচলপ্রদেশ। এর মধ্যে ভয়ঙ্করতম ঘটনাটি অবশ্যই ২০১৩ সালের কেদারনাথের মহাপ্লাবন।
আরও পড়ুন-মে দিবসের গল্প
ভাসিয়ে দিচ্ছে এলাকা
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সর্বাপেক্ষা ক্ষতিগ্রস্ত হতে চলেছে ভারতের হিমালয়-লাগোয়া অঞ্চল এবং উপকূলবর্তী এলাকা। সেই পরিণতিই ক্রমে স্পষ্ট হচ্ছে। তবে, এমন অঘটনের জন্য প্রাকৃতিক পরিবর্তন দায়ী। তবে মানুষের কাজকর্মের দায়ভার কিছুমাত্র কম নয়। পাহাড়ি রাজ্য দুটিতে গড়ে ওঠা কংক্রিটের জঙ্গল আর ক্রমশ অদৃশ্য হয়ে আসা সবুজের চিহ্ন দেখলেই সেটা বোঝা যায়। পাহাড়ের ঢাল বেয়ে গায়ে গা লাগিয়ে গড়ে উঠেছে হোটেল-রেস্তোরাঁর সারি। এর মধ্যে কতগুলো নিয়ম মেনে হয়েছে? ভূপ্রাকৃতিক ভাবে স্পর্শকাতর এলাকায় পর্যটনের স্বার্থে যথেচ্ছ চওড়া করা হয়েছে রাস্তা। উপযুক্ত ভূতাত্ত্বিক পর্যবেক্ষণ ছাড়াই। যেভাবে আড়াআড়ি পাহাড় কেটে রাস্তা বানানো হয়েছে, তার ফলে বৃষ্টির পরিমাণ বাড়লেই সৃষ্টি হচ্ছে বিরাট ভূমিধসের। রেহাই পাচ্ছে না নতুন রাস্তাগুলিও। হিমাচলপ্রদেশে সাম্প্রতিক বিপর্যয়ে সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত শিমলা এবং কুলু-মানালি উপত্যকা। গত পাঁচ বছরে সেখানে নির্মাণকাজ তুঙ্গে উঠেছে। ভারী যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে, পাহাড় কাঁপিয়ে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আরও চওড়া করা হচ্ছে রাস্তা। নদীর ঠিক ধার ঘেঁষেই গড়ে উঠেছে হোটেল, রাস্তা। চওড়া দেওয়াল তুলে পাহাড়ি নদীর স্বাভাবিক স্রোতকে ব্যাহত করে তাকে সঙ্কীর্ণতর করে দেওয়া হচ্ছে। ফলে অতিবৃষ্টিতে জল যখন বাড়ছে, তখন মানুষ-নির্ধারিত গণ্ডি ছাপিয়ে জল ভাসিয়ে দিচ্ছে আশপাশের এলাকা, রাস্তাঘাট।
নেই ঈশ্বরের হাত
জাতীয় সবুজ আদালত ২০১৩ সালের কেদারনাথের ভয়াবহ সুনামির পর একটি মোক্ষম কথা উচ্চারণ করেছিল— এই মহাপ্লাবনের পিছনে ঈশ্বরের কোনও হাত নেই। আদালত অলকানন্দা জলবিদ্যুৎ প্রকল্পকে নির্দেশ দিয়েছিল, ৯.২৬ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার। কারণ, তাদের নির্মাণজাত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ছিল ত্রুটিপূর্ণ। আদালতের পর্যবেক্ষণ ছিল— এই কোম্পানি ভালমতোই জানত যে, প্রকল্পটি ভূপ্রাকৃতিক দিক থেকে হিমালয়ের অত্যন্ত স্পর্শকাতর এলাকার মধ্যে পড়ে, যেখানে মেঘফাটা বৃষ্টি প্রায়শই ঘটে। ২০১১ সালে কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রক এই ধরনের প্রকল্পের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে নির্দেশ জারি করেছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও কোনও সাবধানতা নেওয়া হয়নি। ফলে, মেঘভাঙা বৃষ্টি যখন নামে, তখন প্রবল স্রোতের সঙ্গে এই বর্জ্যও নেমে এসে ভাসিয়ে দেয় বিস্তীর্ণ এলাকা। পাশাপাশি দিনে দিনে বাড়ছে ভূমিকম্প। এর প্রধান কারণ টেকটোনিক প্লেটের নড়াচড়া, আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত, ভূগর্ভস্থ বিস্ফোরণ ইত্যাদি। মূলত প্রাকৃতিক কারণ। তবে মানুষের কার্যকলাপের কারণেও ভূমিকম্প হতে পারে। এরজন্য দায়ী সেই বিশ্ব উষ্ণায়ন। সবমিলিয়ে ভাল নেই পৃথিবী।
আরও পড়ুন-মোদি সরকার কৃষকদের স্বার্থ দেখে না,বিজেপিকে পরাস্ত করার ডাক দিল কিসান মোর্চা
খেয়ালে বেখেয়ালে
প্রশ্ন হল, বিশ্ব উষ্ণায়নের জন্য মানুষ কতটা দায়ী? বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, অনেকটাই দায়ী। কারণ নগর বানাতে গিয়ে নির্বিচারে বৃক্ষচ্ছেদন করে চলেছে সভ্য মানুষ। ধ্বংস করছে সবুজ। খেয়ালে বেখেয়ালে নর্দমা, পুকুর, নদী, সমুদ্রের জলে ভাসিয়ে দিচ্ছে প্লাস্টিক, জলের বোতল, বর্জ্য পদার্থ। বাতাসে মিশছে কলকারখানা, যানবাহনের ধোঁয়া। ছড়াচ্ছে দূষণ। ফল হচ্ছে মারাত্মক। এইসব নিয়ে ভাবার লোকজন খুবই কম। বেশিরভাগ মানুষ ক্ষতিসাধন করে চলেছে পৃথিবীর। সেই পৃথিবীর, যে পৃথিবী আমাদের মা। তাকে রক্ষা করার পরিবর্তে একটা শ্রেণি করে চলেছে ধ্বংস। কয়েক বছর পর পৃথিবীর অবস্থা ঠিক কী হবে, কারওর ভাবার সময় নেই। একের পর এক বিপর্যয় দেখেও মানুষ শিক্ষা নেয় না, সতর্ক হয় না।
বাড়ছে কংক্রিটের জঙ্গল
অসহ্য গরম। দিনে দিনে বেড়েই চলেছে তাপমাত্রা। বাড়ির বাইরে বেরোতে ভয়। হিটস্ট্রোক হতে পারে। এইসময় কী করা উচিত এবং কী করা উচিত নয়, জানাচ্ছেন ডাক্তারবাবুরা। গরম পড়ামাত্র ঘরে ঘরে চালু এয়ার কন্ডিশন। বছর দশেক আগে কিন্তু এতে ছিল বিত্তশালীদের অধিকার। পাড়ায় হাতেগোনা বাড়িতে দেখা যেত। এখন বদলেছে পরিস্থিতি। বিভিন্ন কোম্পানি দিচ্ছে বিশেষ অফার। ফলে এয়ার কন্ডিশন এসে গেছে মধ্যবিত্তের নাগালের মধ্যে। এয়ার কন্ডিশন ঘর ঠান্ডা করে। কিন্তু এর গরম হাওয়া বাতাসে দূষণ ছড়ায়। গরম বাড়ার এটা একটা বড় কারণ। আগে পাড়ায় পাড়ায় ছিল পুকুর। বর্তমানে সারা দেশেই পুকুর বুঝিয়ে উঠছে গগনচুম্বী বহুতল। বাড়ছে কংক্রিটের জঙ্গল। আগে ভোর হতেই শোনা যেত পাখির কিচিরমিচির। উড়ে বেড়াত কাক, শালিক, ছাতারে, চড়াই। পুকুর ধারে চরে বেড়াত ইঁদুর, বেঁজি। দেখা যেত সাপ। ধীরে ধীরে গ্রামকে গিলে ফেলছে নগর। বাড়ছে দূষণ এবং গরম। ছোটখাটো পশুপাখি উধাও হয়ে যাচ্ছে। অস্বীকার করার উপায় নেই, পূর্বপুরুষরা পরিবেশগত বিশুদ্ধতার দিক থেকে আমাদের তুলনায় অনেক বেশি ভাগ্যবান ছিলেন।
আরও পড়ুন-স্ত্রীধনে অধিকার নেই স্বামীর: সুপ্রিম কোর্ট
পড়তে হবে মহা সমস্যায়
নগর বাড়াতে গিয়ে এখন নির্বিচারে বৃক্ষচ্ছেদন করা হচ্ছে। ধ্বংস হচ্ছে সবুজ। হিংসায় উন্মত্ত পৃথ্বী। প্রাণী হত্যা পাপ হলে উদ্ভিদ হত্যাও পাপ। গাছের সংখ্যা যত কমছে, সারা পৃথিবীতে গরমের তীব্রতা তত বাড়ছে। এখনই সতর্ক না হলে ভবিষ্যতে পড়তে হবে মহা সমস্যায়। খুব বেশি মানুষ পরিস্থিতি অনুধাবন করছেন না। বিজ্ঞানীরা উদ্বেগ প্রকাশ করছেন প্রতিনিয়ত। তাঁরা জানাচ্ছেন, দিনদিন বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠছে পৃথিবী। দূষণে ভরছে প্রায় প্রতিটি দেশ। এর ফলে কোথাও চরম খরা, কোথাও ভয়াবহ বন্যা হয়েই চলেছে। প্রচণ্ড গরমের ফলেই হিমবাহ গলে যাচ্ছে। জল বাড়ছে নদী, সমুদ্রে। নষ্ট হচ্ছে প্রকৃতির ভারসাম্য। গরমের ফলেই নিম্নচাপ, বৃষ্টি। এও এক চক্র। এরপর অনেক দেরি হয়ে যাবে। তাই এখনই সচেতন হতে হবে মানুষকে। লাগাতে হবে গাছ। প্রতিদিন যদি নিয়ম করে একটিও গাছ লাগানো যায়, তাহলে ভবিষ্যতে গরম নিয়ে হা-হুতাশ করতে হবে না, খরার প্রকোপে ছাড়তে হবে না ভিটেমাটি।
বসুন্ধরা মায়ের মতো
মানুষের মধ্যে এই বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যেই প্রতি বছর ২২ এপ্রিল বিশ্ব বসুন্ধরা দিবস পালন করা হয়। পৃথিবী বা বসুন্ধরা মায়ের মতো। তাকে সুন্দর রাখা আমাদের কর্তব্য। পৃথিবীকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার জন্য ওইদিন একাধিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়। পরিবেশ ও প্রকৃতিকে রক্ষার জন্য পালিত হয় নানা রকম কর্মসূচি। দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি, মাটি ক্ষয়, জল দূষণ, বন উজাড়ের মতো ঘটনাগুলি নিয়ে মানুষকে বোঝানো হয়। কী কারণে পৃথিবীর ক্ষতি হচ্ছে এবং কীভাবে সেটা রুখে দেওয়া যায়, তাই নিয়ে চলে আলোচনা।
বিশ্ব বসুন্ধরা দিবসের উদযাপন শুরু হয়েছিল ১৯৭০ সাল থেকে। ১৯৬৯ সালে সান ফ্রান্সিসকোতে ইউনেস্কো সম্মেলনে কর্মীরা পৃথিবীকে রক্ষার জন্য একটি দিন নির্দিষ্ট করেছিলেন। প্রাথমিকভাবে বসুন্ধরা দিবস ১৯৭০ সালের ২১ মার্চ উত্তর গোলার্ধে বসন্তের প্রথম দিনে অনুষ্ঠিত হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর, গেলর্ড নেলসন পরিবেশ সুরক্ষার জন্য ১৯৭০-এর ২২ এপ্রিল পৃথিবী দিবস উদযাপনের প্রস্তাব করেন। বর্তমানে ১৯২টিরও বেশি দেশে প্রতিবছর পালিত হয় বিশ্ব বসুন্ধরা দিবস। থাকে একটি থিম। দিনটি উদযাপনের ফলে মানবসমাজ পরিবেশবিদদের মাধ্যমে পরিবেশের উপর বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাব সম্পর্কে জানতে পারে। জানতে পারে পৃথিবীর বিভিন্ন দূষণ সম্পর্কে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি প্রাকৃতিক সম্পদের উপর অপ্রয়োজনীয় চাপ সৃষ্টি করছে। সম্পদের সঠিক ব্যবহারের জন্যও বেড়েছে বসুন্ধরা দিবসের মতো কর্মসূচির গুরুত্ব।
আরও পড়ুন-মোদি সরকার কৃষকদের স্বার্থ দেখে না,বিজেপিকে পরাস্ত করার ডাক দিল কিসান মোর্চা
সুন্দর জীবন যাপন
শুধুমাত্র বসুন্ধরা দিবস এবং পরিবেশ দিবসে আমরা পরিবেশ এবং পৃথিবী নিয়ে চিন্তা করব, তা কিন্তু নয়। আমাদের প্রত্যেক দিনই পৃথিবী এবং পরিবেশ নিয়ে চিন্তা করতে হবে। বর্তমানে পৃথিবীর উষ্ণতা হু হু করে বেড়ে চলছে। বহু জায়গায় জলের জন্য হাহাকার পড়ে গেছে। নেমে গেছে জলস্তর। গরমে মানুষ এবং বন্য প্রাণী মারা যাচ্ছে। আমাদের বসুন্ধরা আগের মতো সবুজ, সতেজ ও সুন্দর করে তুলতে হলে একদিন নয়, প্রতিদিনের জন্য অঙ্গীকার করতে হবে, পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখার। এ-ছাড়াও আশপাশের মানুষদের গাছ লাগানোর জন্য সচেতন করতে হবে। পরিবেশকে কীভাবে দূষণমুক্ত রাখা যায়, সেই নিয়ে ছোট ছোট আলোচনাসভা করতে হবে। ঘটাতে হবে তার ব্যবহারিক প্রয়োগ। যদি নিয়ম ও নিষ্ঠার সঙ্গে চলতে পারি, তবেই আগামী প্রজন্মকে একটি নিরাপদ পরিবেশ উপহার দিতে পারব। মনে রাখতে হবে, আমাদের আজকের প্রচেষ্টা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের একটি সুন্দর জীবন যাপন নিশ্চিত করবে।