মে দিবসের গল্প

উত্তর গোলার্ধে বসন্ত ফিরে আসার উদ্যাপনের দিন। দক্ষিণ গোলার্ধে অবশ্য শ্রমিক স্বীকৃতির দিন। শ্রমিকের শ্রমকে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ এবং চৈতন্যদেব। বাঙালির আপন উদযাপন মে মাসের এই প্রথম দিন। সেই দিনের গল্প শোনালেন বিশ্বজিৎ দাস

Must read

সকাল থেকেই বুবুনের মন খারাপ। আজ দাদাভাইয়ের সঙ্গে বেড়াতে যাওয়ার কথা ছিল। দাদাভাই বলেছিল আজ পার্কে গিয়ে একটা ভাল গল্প শোনাবে বুবুনকে। কিন্তু আজও বাবা-মাকে বাইরে বেরোতে হয়েছে মানে কাজে ছুটি পায়নি, তাই দাদাভাই বলেছে আজ আর বেরোনো হবে না। বুবুন কিন্তু বেরোনোর থেকে গল্প শুনতেই বেশি আগ্রহ। বিশেষত দেশ-বিদেশের গল্প। মানুষের বেঁচে থাকার গল্প। তাই জেদ ধরেছে পার্কে না গেলেও বাড়িতে বসেই গল্প শোনাতে হবে দাদাভাইকে। দাদাভাই রাজি হয়েছে একটা শর্তে, গল্প বলবে দাদাভাই কিন্তু বুবুনকে প্যাস্টেল রঙে সেই গল্পের ছবি আঁকতে হবে। একটু চিন্তা করে বুবুন রাজি হয়ে যায়। কঠিন কাজ তবুও বুবুন একগুঁয়ে। দিন বদলের গল্পের ছবি ও আঁকবেই। ভাল মন নিয়ে বুবুন এবার বসে আছে। শুনতে পাচ্ছে বারান্দায় দাদাভাই আপন মনে বলছে— ‘ধ্বংসের মুখোমুখি আমরা,/ চোখে আর স্বপ্নের নেই নীল মদ্য/ কাঠফাটা রোদ সেঁকে চামড়া।/ চিমনির মুখে শোনো সাইরেন-শঙ্খ।’

আরও পড়ুন-২০০ পেরোবে না! বিজেপিকে কটাক্ষ তৃণমূল সুপ্রিমোর

বসন্তে ফুল গাঁথল…
দাদাভাই এবার বুবুনকে বলে— উত্তর গোলার্ধে মে মাসের এই প্রথম দিনটি উৎযাপন করা হয় বসন্ত আবাহন দিবস হিসেবে। অন্ধকারাচ্ছন্ন তীব্র শীতের শেষে এটা ছিল একটু উষ্ণতার উৎসব। কৃষিজীবী এবং শ্রমজীবী মানুষের কাছে বসন্তের এই ফিরে আসা ছিল ঈশ্বরের আগমনের মতো। যাঁরা মাঠে ধান কাটতেন, হাল ধরে থাকতেন, যাদের প্রাসাদ বা দুর্গে থাকার সুযোগ ছিল না নিতান্ত কুটিরে থাকতেন এটা ছিল তাঁদের কাছে পরম পাওয়া। মধ্যযুগে এবং আধুনিক ইউরোপে এই মে দিবস তাই আজও বসন্ত ফিরে আসার দিন। এই উদযাপন বা বসন্ত ফিরে আসার দিনকে উৎসব হিসেবে পালন করতে শুরু করে গ্রিক ও রোমান কৃষকরা। তারপরে বসন্ত ফিরে আসার এই উৎসব নানান আঙ্গিকে বদলে যেতে থাকে। শুরু হয় নতুন নতুন উদযাপনের রীতি— বন্যফুল এবং সবুজ গাছের ডাল সংগ্রহ করা, ফুলের মালা গাঁথা, রাজা ও রানির মুকুট পরানো। বামে পোলানে একটি মেয়ে গাছ তারা বপন করে এইদিন যার চারপাশে সকলে মিলে নাচতে থাকে। এই ধরনের উৎসব রীতি ছিল মূলত ফসলের ঊর্বরতা বাড়ানোর জন্য এবং পশুপালনে মানুষের উৎসাহ বাড়ানোর জন্যে।
আজ কিন্তু ধীরে ধীরে এই রীতির অধিকাংশই হারিয়ে গেছে শুধু উৎসবের উদযাপনটুকুই বেঁচে আছে। তবে উত্তর গোলার্ধে মে মাসের এই প্রথম দিন নিয়ে আদিখ্যেতার ঘাটতি ছিল না। প্রচলিত ছিল নানা কুসংস্কার। এইদিন সকালবেলা শিশিরের জল দিয়ে মুখ ধুয়ে, ত্বকের যত্ন নিলে ত্বক আরও সুন্দর হয়ে উঠত। তবে এই উৎসবে বাদ সাধল নিউ ইংল্যান্ডের পিউরিটানরা। মে দিবসের বসন্তের ফিরে আসার এই উৎসবকে তাঁরা বিধর্মী এবং পৌত্তলিক বলে মনে করল। নিষিদ্ধ করল এর উদযাপন।

আরও পড়ুন-পুলিশকর্মীকে ‘খলিস্তানি’ আক্রমণে কেন চুপ? বিজেপি প্রার্থীকে খোঁচা মুখ্যমন্ত্রীর

দক্ষিণের খোলা জানালা..
অন্যদিকে, দক্ষিণ গোলার্ধে ঠিক এর বিপরীত ভাবনায়— গ্রীষ্মের অবসানে শীতের আগমনে পালিত হত মে দিবস। পরবর্তীকালে এই দিনটি সাংস্কৃতিক উৎসব থেকে বদলে রূপ নিল রাজনৈতিক সংগ্রামের। সেটা ছিল ১৮৮৬ সাল। আমেরিকার সংগ্রামের শ্রমিকরা সংঘবদ্ধভাবে মহামিছিল করেছিলেন শিকাগো শহরের হে মার্কেট স্কোয়ারে। তাঁদের দাবি ছিল শ্রমিকদের ৮ ঘণ্টা কাজ, ৮ ঘণ্টা বিশ্রাম এবং বাকি ৮ ঘণ্টা খেলাধুলার সুযোগ করে দিতে হবে। স্বাভাবিক ভাবেই এই দাবিগুলো সবচেয়ে বেশি ধাক্কা দিল মালিকদের। তারা এতদিন শ্রমিকদের সবরকম চাওয়া-পাওয়া থেকে বঞ্চিত করে রেখেছিল। কিন্তু এবার এই শ্রমিকরাই বিপ্লবের পতাকা নিয়ে শান্তিপূর্ণ মিছিলে হাঁটতে থাকে প্রতিবাদ আর প্রতিরোধের স্লোগান দিতে দিতে। কিন্তু নিরীহ এই মিছিলের উপর নেমে আসে আক্রমণ। মালিকরা ঠিক করেছিলেন যেভাবেই হোক শ্রমিকদের এই বাড়াবাড়ি দমন করতেই হবে যাতে শ্রমিকদের এই আন্দোলন ফের মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে। যেমন ভাবনা তেমন কাজ ১৮৮৬ সালের পয়লা মে নিরীহ নিরস্ত্র শ্রমিকদের উপর শুরু হয় গুলি চালানো। পুলিশের গুলিতে কয়েকজন শ্রমিক মারা যান। বহু শ্রমিক আহত হন। অনেক শ্রমিককে জেলে ভরা হয় এমনকী শিকাগোর এক শ্রমিক নেতাকে ফাঁসি দেওয়া হয়। কয়েক বছর পর ১৮৯০-এর পয়লা মে আমেরিকায় ফের শুরু হয় দেশ জুড়ে শ্রমিক ধর্মঘট। আর সেই থেকেই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এই দিনটিকে মে দিবস হিসেবে পালনের রীতি শুরু হয়। বিশ্বের প্রায় ৮০টি দেশে মে দিবসকে স্বীকৃতি বা মর্যাদা দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন-বালুরঘাটে পুরুষের চেয়ে ভোটে এগিয়ে মহিলারাই

পথে এবার নামো সাথী
ভারতবর্ষে চেন্নাই শহরের মেরিনা বিচে ১৯২৩ সালে প্রথম মে দিবস উৎযাপন শুরু হয়। ১৯২৬ সালে বোম্বাইয়ে শ্রমিকরা মে দিবস পালন করলেন এক বিশাল শোভাযাত্রা করে। শোভাযাত্রার পুরোভাগে ছিলেন এম এন জোশী প্রমুখ। ১৯২৭ সালে সারা ভারত ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেসের পক্ষ থেকে প্রদেশগুলোকে নির্দেশ পাঠানো হল মে দিবস পালন করার জন্য। সেই নির্দেশ মেনে কলকাতা, মুম্বাই, মাদ্রাজ-সহ অন্যান্য রাজ্যের প্রধান শহরগুলিতে বিপুল উৎসাহের সঙ্গে মে দিবস পালিত হয়েছিল।
১৯২৭ সালে গণবাণী পত্রিকার মে দিবস সংখ্যায় শ্রমিক শ্রেণির আন্তর্জাতিক সঙ্গীতকে বাংলায় তরজমা করে প্রকাশ করেছিলেন কবি নজরুল ইসলাম— “অন্তর ন্যাশনাল সংগীত” নামে— “জাগো … জাগো অনশন বন্দী, ওঠো রে যত, জগতের লাঞ্ছিত ভাগ্যহত।”এই বছরেই বম্বেতে মে দিবস পালিত হয়েছিল খুব উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে। ওই মিছিল থেকেই আওয়াজ উঠেছিল— আট ঘণ্টার বেশি খাটুনি নয়, সবেতন ছুটি দিতে হবে।
১৯২৮ সালে যখন সারা ভারতের শ্রমিক আন্দোলনে উত্তাল হয়ে উঠেছে, সেই পরিস্থিতিতে কলকাতায় মে দিবস পালিত হয়েছিল শ্রদ্ধানন্দ পার্কে। পুলিশের পক্ষ থেকে ওই কর্মসূচি বন্ধ করার যাবতীয় প্রচেষ্টা চালানো হলেও, শ্রমিকরা মে দিবস পালন করেছিলেন বিশাল বিশাল মিছিল এবং সমাবেশের মধ্যে দিয়ে।
শ্রমিক কৃষকবন্ধু রবীন্দ্রনাথ
মে দিবস। আজকের দিনে শ্রমের স্বীকৃতির উৎসব। বাঙালির এই উৎসবকে স্বীকৃতি দিয়ে গেছেন রবীন্দ্রনাথও। শ্রমিক কৃষক সাধারণ মানুষদের আর্থিক এবং অন্যান্য সাহায্য করেছেন বহুদিন আগেই। অবিভক্ত বাংলায় শিলাইদহে জমিদারি দেখাশোনার ফাঁকে ফাঁকে তিনি গ্রামের দুঃস্থ, অসহায়, খেতমজুর শ্রমজীবী মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে বহু সামাজিক কাজ করেছিলেন। দরিদ্র মানুষের জন্যে সমবায় ব্যাঙ্ক, কৃষিঋণের ব্যবস্থা, সামান্য খরচে স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়ার উদ্দেশ্যে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসারও ব্যাবস্থা করেছেন। তারই উত্তরসূরি হিসেবে এ-কাজ করেছেন মহম্মদ ইউনুস। গড়ে তুলেছেন মাইক্রো ফাইন্যান্স বাংলাদেশের কৃষক শ্রমিকদের জন্যে। শ্রমিক কৃষকদের স্বীকৃতির পাশাপাশি ইউনেস্কোর এই কাজটিকে স্বীকৃতি দিয়েছেন নোবেল কমিটি।

শ্রীচৈতন্য ও রামকৃষ্ণের সাম্যবাদে শ্রমিক-প্রেম
আজ থেকে প্রায় ৫০০ বছর আগে শ্রেণিহীন সংগ্রামের ভাবনা ভেবেছেন শ্রীচৈতন্য। তিনি ধর্মীয়ভাব আন্দোলনের মাধ্যমে সাম্যবাদের প্রচার করেছেন। রামকৃষ্ণদেবও তাঁর নতুন ভাব-আন্দোলনে স্বামী বিবেকানন্দকে সঙ্গে নিয়ে শ্রেণি, ধর্ম, বর্ণ সব ভেদাভেদ দূর করার জন্যে আমৃত্যু কাজ করেছেন। এখনও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নারী, শিশু, শ্রমিক এবং কৃষকদের চরম অবমাননার শিকার হতে হয়। অবিভক্ত সোভিয়েত দেশে শ্রমের যথাযথ মর্যাদা দিয়ে সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠার চেষ্টাও বেশি দিন সফল হয়নি। সাম্য-অসাম্য কোনওটাই পায়নি চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের রূপ। ভারতের প্রাচীন ঐতিহ্যকে সামনে রেখে ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ-ভেদাভেদ-মুক্ত সমাজের কল্পনা করেছেন সমাজের বহু মানুষ। কিন্তু এই ভেদাভেদের শুরু হয়েছিল সভ্যতার শুরু থেকেই। তৈরি হয়েছিল দুটি শ্রেণি। এক শ্রেণি কৃষিকাজে নিয়োজিত শ্রমিক। অন্য শ্রেণি জমির মালিক। ধীরে ধীরে স্পষ্ট হয়ে উঠল শ্রেণি-বৈষম্য। কিছু সুবিধাভোগী মানুষ এটা সহজেই বুঝতে পারল, বিনা পরিশ্রমে শুধু বুদ্ধি খাটিয়ে অন্যের শ্রমের উপরে নির্ভর করে দিব্যি সুখে থাকা যায়। এই ভাবনা থেকেই মিশরীয় সভ্যতায় দাসপ্রথার জন্ম হল। অন্য দিকে, উত্তর গোলার্ধের দেশগুলোতে বিজ্ঞানের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে গড়ে উঠল কল-কারখানা। আর সেই কল-কারখানার জন্য প্রয়োজন হল শ্রমিকদের। বহুদিন ধরেই মালিকের প্রয়োজন অনুযায়ী চাহিদা অনুযায়ী তারা কাজ করত। তাদের নির্দিষ্ট শ্রমদিবস ছিল না। দৈনন্দিন পারিশ্রমিক ছিল খুবই কম। উনিশ শতকের শেষে এইসব শ্রমিক প্রাণের দায়ে এক হলেন। দীর্ঘদিনের জমে ওঠা ক্ষোভ ধীরে ধীরে শ্রমিকদের এক করে সংগঠন গড়ে তুলতে লাগল। আর তৈরি হল তাদের আন্দোলন। তাদের নিজেদের দিন।

আরও পড়ুন-মুখ্যমন্ত্রীর জোড়া সভা হাবিবপুর ও সুজাপুরে

শ্রমিকের দেশ ভারতবর্ষ
ভারতের শ্রমিক ইনডেক্সের ছবিটা সরকারি হিসেবে নজরকাড়ার মতো। পিএলএফএস-এর সমীক্ষা অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ সালে ৫১ কোটি ৮০ লক্ষ মানুষ কর্মক্ষম। এঁদের মধ্যে ৪৮ কোটি ৮০ লক্ষ মানুষ কর্মরত এবং ৩ কোটি মানুষ কর্মহীন। ২০১৭-১৮ এবং ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষের মধ্যে দেশে কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা ৮৫ লক্ষ বৃদ্ধি পেয়েছে। এদের মধ্যে ৪৬ লক্ষ শহরের এবং ৩৯ লক্ষ গ্রামের। ২০১৭-১৮ থেকে ২০১৮-১৯-র মধ্যে কর্মহীন মানুষের সংখ্যা ৭৯ লক্ষ হ্রাস পেয়েছে। এরা বেশির ভাগই গ্রামাঞ্চলের মহিলা। তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে কর্মসংস্থান বেশি সৃষ্টি হয়েছে।
শিল্পভিত্তিক তথ্য অনুযায়ী, কৃষিক্ষেত্রে ২১ কোটি ৫০ লক্ষ মানুষ যুক্ত। অন্যান্য পরিষেবা প্রদানকারী শিল্প সংস্থাগুলিতে ৬ কোটি ৪০ লক্ষ মানুষ কর্মরত। উৎপাদন শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য, হোটেল ও রেস্তোরাঁয় ৫ কোটি ৯ লক্ষ এবং নির্মাণশিল্পে ৫ কোটি ৭ লক্ষ মানুষ কর্মরত। কৃষিক্ষেত্র, উৎপাদন, পরিবহণ ও যোগাযোগ ক্ষেত্রে ২০১৭-১৮ অর্থবর্ষের তুলনায় ২০১৮-১৯-এ কর্মরত মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। পিএলএফএস অনুসারে, ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ সময়কালের তুলনায় ২০২০-র জানুয়ারি থেকে মার্চ সময়কালে স্থায়ী বেতনভুক কর্মচারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।
সমীক্ষা অনুসারে, কর্মচারী ভবিষ্যনিধি তহবিল সংগঠনে ২০২০-র ২০শে ডিসেম্বরের হিসাব অনুসারে, ৭৮ লক্ষ ৫৮ হাজার নতুন শ্রমিক নাম নথিভুক্ত করেছেন। ২০১৮-১৯ এর নিরিখে এই সংখ্যা বেশি। আর্থিক সমীক্ষা অনুসারে, ভারতে কর্মহীনতার হার হ্রাস পেয়েছে। ২০১৭-১৮ সালে যেখানে এই পরিমাণ ছিল ৬.১ শতাংশ, সেখানে ২০১৮-১৯ সালে তা কমে হয়েছে ৫.৮ শতাংশ। তবে, ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে এই হার ভিন্ন। অরুণাচল প্রদেশ, কেরল, মণিপুর ও বিহারে কর্মহীন যুবক-যুবতীর সংখ্যা বেশি। তুলনামূলকভাবে গুজরাত, কর্নাটক, পশ্চিমবঙ্গ ও সিকিমে তা কম।

আরও পড়ুন-শতবর্ষে নারায়ণ সান্যাল

স্বপ্ন বোনার দিন
আজকের ভারতের শ্রমিকের এই মানচিত্র নতুন করে ভাবনার দিগন্ত খুলে দিয়েছে। এদের কথা ভেবেই বিষ্ণু দে সম্ভবত বাংলা ভাষায় কলম ধরেছিলেন— ‘বিশ্বমাতার এ উজ্জীবনে/ বৃষ্টিতে বাজে রুদ্রগগনে/ লক্ষ ঘোড়ার খুর।’ (‘মে দিন’, ‘সন্দীপের চর’)। ১৯৪০-এ সুভাষ মুখোপাধ্যায় শ্রমিকদের নতুন ছন্দ তৈরি করে দিলেন। লিখলেন— ‘আমি ত্রিশঙ্কু, পথ খুঁজে ফিরি— গোলকধাঁধায় বৃথাই ঘোরা।’ এই গোলকধাঁধা থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে নিজের উদ্দেশ্যেই বলেছেন— ‘কৃষক, মজুর! আজকে তোমার পাশাপাশি/অভিন্ন দল আমরা।’ তাই ‘কৃষক, মজুর! তোমার শরণ- জানি, আজ নেই অন্যগতি;/যে-পথে আসবে লাল প্রত্যুষ/সেই পথে নাও আমাকে টেনে।’
মে দিবসের এই গল্প শুনতে শুনতে বুবুন তার ড্রয়িং খাতায় প্যাস্টেলে ছবি এঁকেছে লাল-হলুদ সূর্যের। অপরিণত রেখা আর আবেগ। ছবির পাতা জুড়ে শুধু স্বপ্ন। নতুন দিনের প্রত্যাশা। নতুন তাত্ত্বিক। মানুষ আর শ্রমিকের মেলবন্ধন। সু-সময়ের অপেক্ষা।

Latest article