নয়ের দশকে পাঠকমহলে ঝড় তুলেছিল ‘বিজল্প’। এই পত্রিকা বরাবর প্রশ্রয় দিয়ে এসেছে তরুণ কবিদের। একটা সময় দাপিয়ে বেড়িয়েছে বইমেলা, কলেজস্ট্রিট, নন্দন চত্বর। আসর বসিয়েছে গান-কবিতার। মাঝে প্রকাশ অনিয়মিত হয়ে পড়েছিল। তবে কিছুদিন হল নিয়মিতভাবে প্রকাশিত হচ্ছে, ‘আবার বিজল্প’ নামে। সম্প্রতি কলকাতা প্রেস ক্লাবে রাজ্যের মন্ত্রী ব্রাত্য বসু, সাহিত্যিক আবুল বাশার, গায়ক প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে প্রকাশিত হয়েছে পত্রিকার তেজস্ক্রিয় বৈশাখী সংখ্যা।
আরও পড়ুন-২০০ আসন জোটানোই কঠিন হবে বিজেপির, ফের বিস্ফোরক নির্মলার স্বামী
পত্রিকাটি সময় এবং সমাজের কাছে দায়বদ্ধ। শুরু থেকেই। সম্পাদক প্রসূন ভৌমিক তাঁর সম্পাদকীয় প্রতিবেদনে মনে করিয়ে দিয়েছেন দেশ জুড়ে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতির কথা। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, ‘বাংলা ভাষায় কথা বলা, লেখালেখি করে ছাপানোর ওপর কি আক্রমণ আসবে? এনআরসি করে আমাদের থেকে উৎখাত হয়ে ডিটেনশন হবে কি? বাড়ির মেয়েদের সম্মান রক্ষা করতে পারব কি আমরা?’ এই সংখ্যার সমস্ত লেখালেখির মধ্যেই ফিরে ফিরে এসেছে সম্পাদকের তোলা এই প্রশ্ন। সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক পরিসরে ক্রমশ যে দমবন্ধকর পরিস্থিতির জন্ম হয়েছে তারই বিরুদ্ধে কলম ধরেছেন এই সংখ্যার গদ্যকারেরা।
আরও পড়ুন-‘বিজেপির ১০ বছরের রিপোর্ট কার্ড আনতে বলুন, বিতর্ক হোক’ সাফ জানালেন অভিষেক
ভয়ানক প্যান্ডেমিক চুক্তি ও স্বাস্থ্য পরিষেবায় বহুজাতিক পুঁজির সন্ত্রাস কীভাবে চলছে, কোন সর্বনাশা ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য, সেই বিষয়ে লিখেছেন ডাঃ ভাস্কর চক্রবর্তী। উঠে এসেছে বিজ্ঞানী সোনাম ওয়াংচুক ও অবহেলিত লাদাখ-এর কথা। ভারতীয় অর্থনীতির ভরাডুবি নিয়ে লিখেছেন বিজয় ঘোরপাড়ে। সেখানে নোটবন্দির সময়ের ভয়াবহ দিনগুলির কথা মনে করা হয়েছে। অরূপশংকর মৈত্র, ভাস্কর গুপ্ত ও সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায় সমকালীন সময়ে ধর্ম নিয়ে গণহিস্টিরিয়া গড়ে তোলার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন। কুন্তল ঘোষ, গৌতম ঘোষ ও অমর মিত্র সংস্কৃতির পরিসরে ফ্যাসিবাদের আক্রমণের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন।
আছে দুটি অন্যরকম গদ্য। শুভময় মণ্ডল লিখেছেন লোরকাকে নিয়ে। অন্যটি হিন্দোল ভট্টাচার্যর ফ্যাসিবাদে আক্রান্ত কয়েকজন বিশ্ববরেণ্য কবিকে নিয়ে। বাংলা থিয়েটার ফ্যাসিবিরোধিতার গালগল্প নিয়ে লিখেছেন বিপ্লব বন্দ্যোপাধ্যায়। নাট্যচর্চায় ব্রাত্য বসুর সাম্প্রতিকতম নাটক ‘এই রাত তোমার আমার’-এর পাঠ-অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিয়েছেন শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়।
হিন্দি ভাষার কবি আলোক ধনওয়ারের কবিতা অনুবাদ করেছেন বেবি সাউ। রয়েছে তরুণতম কবিদের কবিতা। সুদেষ্ণা মৈত্র স্মরণ করেছেন সদ্যপ্রয়াত কবি দেবারতি মিত্রকে। সব মিলিয়ে সংখ্যাটির আবেদন গুরুত্বপূর্ণ এবং সংখ্যাটি অবশ্যই সংগ্রহযোগ্য। প্রচ্ছদশিল্পী রাতুলচন্দ রায়। দাম ১৫০ টাকা।
আরও পড়ুন-বাংলায় করোনার নতুন প্রজাতি, আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ৩০
আলোচনার কাগজ ‘ছাপাখানার গলি’। এপ্রিলে প্রকাশিত হয়েছে বিশ্বসাহিত্য সংখ্যা। দেবাশিস সাহার সম্পাদনায়। মূল্যবান সংখ্যাটি উৎসর্গ করা হয়েছে সন্দীপ দত্ত এবং অমিতাভ মৈত্রকে। পাঠ-প্রতিক্রিয়ায় পত্রিকার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন জয় গোস্বামী। এই সংখ্যায় স্থান পেয়েছে মূলত বিশ্বসাহিত্যের অনালোচিত ও স্বল্পালোচিত বইয়ের আলোচনা।
হিন্দি সাহিত্যে গীতাঞ্জলি শ্রী উল্লেখযোগ্য নাম। তাঁর ‘মাঈ’ উপন্যাসটি নিয়ে লিখেছেন শম্পা রায়। উপন্যাসে উত্তর ভারতীয় প্রাচীনপন্থী এক তিওয়ারি পরিবারের তিন প্রজন্মের নারী ও পুরুষের গল্প বলা হয়েছে, যার কেন্দ্রে রয়েছে মা। বাংলা ভাষার লেখক দেবকুমার সোম-এর সাম্প্রতিক উপন্যাস ‘চর লবণগোলা’র উপর আলোচনা করেছেন সাধন চট্টোপাধ্যায়। লেখক সামাজিক ও অ-সামাজিক ক্রিয়াকাণ্ডের পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা দিয়েছেন, যা উপন্যাসটির সম্পদ।
জুবি দত্ত এবং জিন্তু গীতার্থর সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়েছে ‘নির্বাচিত অসমীয়া কুইয়া গল্প’। এই সংকলন গ্রন্থে রয়েছে কুড়ি জন লেখকের কুড়িটি গল্প। আলোচনা করেছেন অভিজিৎ রায়। ওড়িয়া কথাসাহিত্যিক বিভূতি পট্টনায়েক। তাঁর ‘নতুন দ্রৌপদী’ উপন্যাস নিয়ে আলোচনা করেছেন উপেন্দ্রপ্রসাদ নায়েক। সাঁওতালি ভাষার সাহিত্যিক বাসুদেব বেসরা-র পাঁচটি শ্রেষ্ঠ ছোটগল্পের আলোচনা রয়েছে সুন্দর মনোজ হেমব্রমের লেখায়। মৈথিলী লেখক হলধর নাগ। তাঁর গ্রন্থাবলির সঙ্গে পাঠকদের পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন পার্থসারথি নন্দী।
আরও পড়ুন-সীমান্তে বাংলাদেশি টাকা-সহ গ্রেফতার সিপিম নেতা
আন্তরিকতার সঙ্গে অনুবাদের কাজ সম্পাদন করেন শ্যামল ভট্টাচার্য। তাঁর আলোচনা পাঞ্জাবের লেখক জিন্দরের গল্প সংকলন ‘আওয়াজা’ নিয়ে। রাজস্থানি ঔপন্যাসিক অলকা সারাওগি-র আলোচিত উপন্যাস ‘গান্ধী আর সরলাদেবী চৌধুরানি : বারো অধ্যায়’ নিয়ে চমৎকার আলোচনা করেছেন দ্যুতিমান ভট্টাচার্য। শীর্ষা মণ্ডল লিখেছেন তামিল লেখক রা নটরাজনের ‘আয়েশা’ নিয়ে। এক কিশোরীর মৃত্যু এই কাহিনির মূল বিষয়বস্তু। তুলে ধরা হয়েছে আমাদের দেশের শিক্ষাপদ্ধতির চরম বাস্তবচিত্র।
কন্নড় সাহিত্যিক বৈদেহীর গল্প সংকলন ‘অ্যান ইভনিং উইথ শকুন্তলা অ্যান্ড আদার স্টোরিজ’-এর উপর আলোচনা করেছেন ঔষ্ণীক ঘোষ সোম। এই বইয়ের প্রতিটি গল্পই নারী জীবনের গল্প। তৃষ্ণা বসাকের অনবদ্য আলোচনায় উঠে এসেছে কে পি রামানুন্নি-র মালয়ালাম উপন্যাস ‘সুফির কথা’। বাংলা অনুবাদ করেছেন কৃষ্ণেন্দু ঘোষ।
এছাড়াও রয়েছে পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, চিন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ফ্রান্স, রাশিয়া, গ্রিস, আমেরিকা, লাতিন আমেরিকা, আফ্রিকার বিভিন্ন লেখকের বইয়ের উপর মূল্যবান আলোচনা। সময়ের দলিল হিসেবে থেকে যাবে অসাধারণ সংখ্যাটি। প্রচ্ছদ সুপ্রসন্ন কুণ্ডুর। দাম ৩৫০ টাকা।