দায়িত্বজ্ঞানহীন রেল! মর্গে লাশের স্তূপে জীবিত ছেলেকে পেলেন বাবা

Must read

প্রতিবেদন : করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় (Coromandel Express accident) হতাহতদের উদ্ধারের ক্ষেত্রে রেলের দায়িত্বজ্ঞানহীনতার এক ঘটনা সামনে এল। বছর ২৪-এর এক জীবিত তরুণকে রীতিমতো মৃত বলে মর্গে চালান করে দেওয়া হয়েছিল। অথচ সঙ্গে সঙ্গেই চিকিৎসা করলে ওই তরুণ নিশ্চিতভাবেই দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠত। শেষ পর্যন্ত মনের জোর ও সাহসের কারণে নিজের জীবিত ছেলেকে মর্গ থেকে উদ্ধার করতে পেরেছেন হাওড়ার বাসিন্দা হেলারাম মালিক।

জানা গিয়েছে, শুক্রবার শালিমার স্টেশনে অভিশপ্ত করমণ্ডলে (Coromandel Express accident) ছেলে বিশ্বজিৎ মালিককে তুলে দিয়ে গিয়েছিলেন বাবা হেলারাম। সন্ধ্যা গড়াতে জানতে পারেন ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনার কথা। সঙ্গে সঙ্গেই ছেলের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেন তিনি। কিন্তু কয়েক মুহূর্তের জন্য ছেলের গলার ক্ষীণ আওয়াজ তিনি শুনতে পেয়েছিলেন। তারপর মোবাইল বন্ধ হয়ে যায়। কোনওরকম অপেক্ষা না করে সঙ্গে সঙ্গেই অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে ছেলেকে খুঁজতে বেরিয়ে পড়েন তিনি। দুর্ঘটনাস্থলের কোথাও দেখা পাননি ছেলে বিশ্বজিতের। তবে হেলারাম আশাবাদী ছিলেন, কোনওভাবেই তাঁর ছেলের মৃত্যু হতে পারে না। কারণ দুর্ঘটনার পরেও তাঁর ছেলের সঙ্গে সামান্য হলেও কথা হয়েছে। ছেলেকে তিনি নিশ্চিতভাবেই জীবিত অবস্থায় ফিরে পাবেন।

শেষ পর্যন্ত তাঁর সেই মনের ইচ্ছাই পূরণ হয়েছে। দুর্ঘটনাস্থলের আশপাশে কোথাও বিশ্বজিতকে না হেলারাম একের পর এক হাসপাতালে গিয়ে খোঁজ করতে থাকেন। কিন্তু কোথাওই ছেলের দেখা মেলেনি। কিছুটা নিরাশ হয়েই তিনি এবার মর্গেও খুঁজতে থাকেন ছেলেকে। কিন্তু কোথাও দেখা মেলেনি ছেলের। শেষ পর্যন্ত এসে পৌঁছন দুর্ঘটনাস্থলের কাছে বাহনাগা হাইস্কুলের অস্থায়ী মর্গে। তিনি বারবার ছেলের কথা বললেও তাঁকে সেখানে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছিল না। এ সময় তিনি দেখেন, মৃতদেহের স্তূপে হঠাৎই নড়ে উঠল একটি হাত। সঙ্গে সঙ্গেই তিনি বিষয়টি জানান সেখানকার নিরাপত্তা রক্ষীদের। দৌড়ে যান সেই দেহটির কাছে। এবার আর চিনতে ভুল হয়নি। তিনি দেখেন মৃতদেহের মাঝেই শুয়ে রয়েছে জীবিত বিশ্বজিৎ। ছেলেকে জীবিত অবস্থায় ফিরে পেয়ে কিছুক্ষণের জন্য চোখ ঝাপসা হয়ে গিয়েছিল তাঁর। কিন্তু এরপর আর এক মুহূর্তও সময় নষ্ট করেননি হেলারাম। দ্রুত ছেলেকে নিয়ে। রওনা হয়ে যান কটক মেডিক্যাল কলেজে। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর বন্ডে সই করে তিনি ছেলেকে নিয়ে আসেন কলকাতায়। ভর্তি করেন এসএসকেএম হাসপাতালে। কিছুক্ষণের মধ্যেই বিশ্বজিতের পায়ে অস্ত্রপচার হয়। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, বিশ্বজিতের অবস্থা আপাতত স্থিতিশীল। আশা করা যায়, সে দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে। শেষ পর্যন্ত বাবার প্রার্থনাকে সফল করে মৃত্যুকে হারিয়ে সুস্থতার পথে এই যুবক।

আরও পড়ুন: পাকিস্তানে দুর্ভিক্ষ হতে পারে, বার্তা রাষ্ট্রসঙ্ঘের

Latest article