মণীশ কীর্তনীয়া: বিভাজনের রাজনীতি করতে গিয়ে বাংলায় হেরেছে বিজেপি। একই জিনিস করছে মেঘালয়ে। আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে উত্তর-পূর্বের এই রাজ্যেও হারবে। মেঘালয় সহ গোটা উত্তর-পূর্ব অবহেলিত। এখানে কোনও উন্নয়ন হয়নি। মঙ্গলবার শিলংয়ের উপচে পড়া কর্মিসভা থেকে এভাবেই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একইসঙ্গে বললেন, মেঘালয় থেকেই নতুন সূর্যের উদয় হবে।
আরও পড়ুন-অব পাপ্পু কৌন হ্যায়? বিজেপি সরকারকে তুলোধোনা মহুয়ার
আগামী বছর ফেব্রুয়ারিতে ৬০ আসনের মেঘালয় বিধানসভার নির্বাচন। নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই সফর থেকে নির্বাচনের দু’মাস আগেই কার্যত প্রাক নির্বাচনী প্রচারের শুরুয়াত করে দিলেন। সঙ্গে উজ্জীবিত করলেন মেঘালয় তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের। এদিন শিলংয়ের স্টেট সেন্ট্রাল লাইব্রেরির কর্মিসভার মঞ্চ থেকে কৌশলে বুঝিয়ে দিলেন মেঘালয়ের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী, বর্তমান বিরোধী দলনেতা ড. মুকুল সাংমাকে মুখ করেই নির্বাচনে ঝাঁপাবে তৃণমূল কংগ্রেস। নেত্রীর কথায়, মুকুল সাংমার পারফরম্যান্সে আমরা খুশি। ও আগে মুখ্যমন্ত্রী ছিল। আবার মুখ্যমন্ত্রী হবে না কে বলতে পারে। এদিন ইডি-সিবিআই দিয়ে হেনস্তা করা, বগটুইয়ের লালন শেখের মৃত্যু, সাকেত গোখেলের গ্রেফতারি ও বাংলার লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের আদলে মেঘালয়ে মহিলাদের জন্য ‘উই কার্ড’(এক হাজার টাকা করে) চালুর মতো একাধিক বিষয়ে কার্যত একটার পর একটা ছক্কা হাঁকিয়েছেন। আর বাঙালি বলে বিজেপি তৃণমূলকে বহিরাগত বলছে। এর বিরুদ্ধেও তোপ দেগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, তাহলে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোস এঁরাও তো বাঙালি ছিলেন। কিন্তু এঁরা দেশের জন্য সবটা করেছেন। তাঁর সংযোজন, আমিও দেশের রেলমন্ত্রী, ক্রীড়ামন্ত্রী, যুবকল্যাণ মন্ত্রী ছিলাম। বহুবারের সাংসদ। বাংলার হলেও আমি দেশকেই আগে রাখি। আর আমার দলের নাম অল ইন্ডিয়া তৃণমূল কংগ্রেস। এটা যেন বিজেপি ভুলে না যায়। এদিন সম্মেলনে আসার আগে মুখরোয় গুলিতে নিহতদের পরিবারের হাতে ৫ লক্ষ টাকার চেক তুলে দেন নেত্রী।
আরও পড়ুন-কাশির সঙ্গে পাল্লা দিই
মঙ্গলবার সকাল হতে না হতেই মেঘালয়ের গারো-খাসি-জয়ন্তীয়া সহ বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শিলংয়ের স্টেট সেন্ট্রাল লাইব্রেরিতে আসতে শুরু করেন তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা-কর্মী-সমর্থকরা। বেলা বাড়তেই ভিড় এতটাই হয় যে সেন্ট্রাল লাইব্রেরি হলের ভিতরে জায়গা না হওয়ায় বাইরে আলাদা করে জায়ান্ট স্ক্রিন লাগানোর ব্যবস্থা করা হয়। সেখানেও ছিল উপচে পড়া ভিড়। সঙ্গে টানা বেজে চলেছে মেঘালয়ের ট্রাডিশনাল খাসি বাদ্যযন্ত্র ‘সিঙ্গ’। বেলা ১টা নাগাদ পৌঁছন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গে ড. মুকুল সাংমা, চার্লস পিনগ্রোপ, মানস ভুঁইয়া সহ মেঘালয়ের তৃণমূল নেতৃত্ব। সেন্ট্রাল হলের মূল গেটেই গাড়ি থেকে নেমে যান নেত্রী। তখন তুমুল স্লোগান চারদিকে। সঙ্গে চলছে, লং লিভ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, লং লিভ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ধ্বনি। গেট থেকে প্রবল ভিড় সঙ্গী করে হাঁটা শুরু করেন নেত্রী। সঙ্গে বাকিরা। চলছে হাত জোড় করে নমস্কার। চারদিকে মহিলাদের উচ্ছ্বাস দেখার মতো। সামনে একদল যুবক চলেছে সিঙ্গ বাজিয়ে। আচমকাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একজনের কাছ থেকে হাতে নিলেন অনেকটা খোলের মতো দেখতে খাসি বাদ্যযন্ত্র সিঙ্গ। এবার গলায় ঝুলিয়ে বাজাতে বাজাতে হাঁটা শুরু করলেন। প্রবল হাততালি চারদিকে। হাজারো মোবাইলে ধরে রাখা হচ্ছে সেই বিরল মুহূর্ত। সকলকে অভিবাদন জানিয়ে হলে ঢুকলেন নেত্রী। সঙ্গে অভিষেক সহ গোটা টিম মেঘালয়।
আরও পড়ুন-বাজারি চমক দিয়ে রাজনীতি শুভেন্দুর
উই কার্ড : দল ক্ষমতায় এলে মেঘালয়ে এই প্রকল্পের নাম হবে ‘উই কার্ড’। ইউ সোসো থাম প্রেক্ষাগৃহে কর্মিসভায় একটি তথ্যচিত্র দেখানো হয়। তাতে বলা হয়, তৃণমূল সরকার গড়লে বাড়ি বাড়ি পৌঁছে যাবে উই কার্ড। তা স্ক্র্যাচ করলেই টাকা তোলা যাবে। প্রতি মাসে কার্ডে হাজার টাকা পাঠাবে সরকার। একজনের হাতে প্রতীকী কার্ডও দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ইতিমধ্যেই বাড়ি বাড়ি গিয়ে মহিলাদের ফর্ম ফিলআপ করাচ্ছেন কর্মীরা।
লালন ইস্যু : মঙ্গলবার কর্মিসভার পর সাংবাদিক সম্মেলনে, সিবিআইয়ের ভূমিকার তীব্র নিন্দা করে নেত্রী বলেন, লালন শেখের স্ত্রী এফআইআরের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। গোটা বিষয়টি নিয়ে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ করা হবে। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে জবাবদিহি করতে হবে। যখন হেফাজতে থাকাকালীন এই ঘটনা ঘটেছে, তখন এর দায় সিবিআইকেই নিতে হবে। সিবিআই যদি এতই স্মার্ট হয় তাহলে তাদের হেফাজতে লালন মারা গেল কী করে? প্রশ্ন নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।
আরও পড়ুন-অনশন তুলে বৈঠকে আসুন পড়ুয়ারা
সাকেতের গ্রেফতার প্রতিহিংসা : শিলংয়ে কর্মী সম্মেলনের মঞ্চে সাকেত গোখেলকে সামনে রেখে নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর গ্রেফতারির তীব্র নিন্দা করলেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, এই গ্রেফতার আসলে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা। নেত্রীর কথায়, নেতা হতে গেলে ধৈর্যশীল হতে হয়।
মেঘালয় চালাবে ভূমিপুত্ররা : কলকাতা থেকে মেঘালয় কন্ট্রোল করার কোনও ইচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেই। মেঘালয় চালাবে ভূমিপুত্ররাই। স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিলেন নেত্রী। তাঁরা শুধু গাইড করবেন। উপদেশ দেন। অভিষেককে সুইট ও কিউট বলে নেত্রী বললেন, ও এখন মেঘালয় দেখছে। ইনচার্জ মানস ভুঁইয়াও রয়েছে। আমি বারবার এখানে আসব।