সুখেন্দুশেখর রায়: পরপর দুই সপ্তাহে দুই কক্ষ মিলিয়ে মোট ৯২ সাংসদকে (92 MPs Suspended) সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি দলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন-সহ ইন্ডিয়া জোটের বহু সদস্যের বিরুদ্ধেই সংসদের মর্যাদাহানি করা হয়েছে এই অভিযোগে স্বাধিকার রক্ষার প্রস্তাব প্রিভিলেজ কমিটির কাছে পাঠানো হয়েছে। কমিটিকে এ বিষয়ে উপযুক্ত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তিন মাসের মধ্যে সবাইকে রিপোর্ট পেশ করতে বলা হয়েছে। যদিও এই ঘটনা-পরম্পরার নেপথ্যে রয়েছে একদিকে মোদি সরকারের ব্যর্থতা ঢাকার অপকৌশল, অন্যদিকে বিরোধী কণ্ঠকে স্তব্ধ করার চেষ্টা। কারণ :
(১) ১৩ ডিসেম্বর লোকসভায় সংসদে ওইভাবে হামলা হত না, যদি না বিজেপি সাংসদ প্রতাপ সিমহা ওই দুই ব্যক্তির প্রবেশপত্র অনুমোদন করত। এখানেই ফেঁসেছে শাসকদল। তাই বিষয়টি থেকে নজর ঘোরানোর চেষ্টা।
(২) যে বিজেপি সাংসদ অনুমতিপত্র দিয়েছিল তার বিরুদ্ধে কোনও আইনি প্রক্রিয়া শুরু হল না, অথচ অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধি এবং ইউএপিএ আইনের ধারা প্রয়োগ করা হয়েছে। অথচ বিজেপি সাংসদের বিরুদ্ধে আইপিসির ১২০বি (ফৌজদারি ষড়যন্ত্র) ধারাতেও কোনও অভিযোগ আনা হয়নি। বিজেপি সাংসদ— তাই তিনি সব আইনের ঊর্ধ্বে।
(৩) ভারতের সংসদের ইতিহাসে আজ পর্যন্ত কখনওই একযোগে দুই সভার ৯২ জন সাংসদকে (92 MPs Suspended) সাসপেন্ড করা হয়নি এবং/ অথবা প্রিভিলেজ মোশনও আনা হয়নি।
(৪) ইন্ডিয়া জোটের প্রস্তুতি যখন চূড়ান্ত পর্বে তখন সংসদের অভ্যন্তরে এই ধরনের নজিরবিহীন আক্রমণের ফলে, আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে পরাজয়ের আশঙ্কায় ভীত-সন্ত্রস্ত মোদি সরকারের নগ্ন রূপ বেরিয়ে এসেছে। লোকসভার সাংসদেরা যেমন দেশের মানুষের দ্বারা নির্বাচিত তেমনি রাজ্যসভার সাংসদেরা জনগণের প্রতিনিধিদের দ্বারা নির্বাচিত। তাঁদের দাবি ছিল যে, প্রধানমন্ত্রী বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সংসদে এসে সাংসদদের জানান, সেদিন আসলে ঠিক কী ঘটেছিল? জনপ্রতিনিধি হিসাবে সাংসদদের জানানো সরকারের কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। বিশেষ করে যখন সংসদের অধিবেশন চলছে। তা না করে প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাঁদের নিজেদের পছন্দের সংবাদমাধ্যমে এ-বিষয়ে মন্তব্য করলেন। এত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মোদি সরকার সংসদে আলোচনা করতে চাইছেন না তা হলে কি এটা ক্যাফেতে আলোচনা করতে চান তাঁরা!
বিজেপির প্রতিটি পদক্ষেপে ইতিমধ্যেই দেশের গণতন্ত্র অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। বেকারত্ব, কৃষকেরা ফসলের দাম পাচ্ছে না, মূল্যবৃদ্ধি-সহ একাধিক ইস্যুতে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইন্ডিয়া জোটের অন্যতম কারিগর হিসাবে জোটের আগামী রূপরেখা তৈরির কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেছেন। বিজেপির দাবি, দেশে নাকি অমৃতকাল চলছে কিন্তু এই ঘটনাই প্রমাণ করে অমৃত নয় ওদের বিনাশকাল শুরু হয়ে গেছে।
আরও পড়ুন- আজ ইন্ডিয়ার বৈঠক