সংবাদদাতা, ঝাড়গ্রাম : প্রায় পাঁচশো বছরের প্রাচীন প্রথা মেনে কনকদুর্গার (Kanak Durga Temple) পুজো হয় গড় জঙ্গলে। ডুলুং নদীর পাড়ে কেন্দ, বহেড়া, শাল, সেগুন, কুড়চির ঘন সবুজে মোড়া চিলকিগড়ের কনকদুর্গার গড় জঙ্গল। লতা গুল্মের সঙ্গে মাটির সোঁদা গন্ধ। তারই মাঝে একপাল হনুমানের গাছের এডাল বেয়ে ওডাল করে বেড়ানো। এমনই এক পরিবেশে দেবী কনকদূর্গার (Kanak Durga Temple) দূর্গা মন্ত্রে আবাহন। থিমের পুজোর জাঁকজৌলুসের মাঝে গড় জঙ্গলের এ পুজো প্রাচীন বৈচিত্র্য নিয়ে স্বতন্ত্র। দেবি কনকদুর্গাকে পুজোর চারদিন ভোগে হাঁস ডিম, মাছ দেওয়া হয়। দশমীতে দেওয়া হয় পান্তাভাতের সঙ্গে মাছ পোড়া আর শাক ভাজা। কৈলাসে যাওয়ার আগে দশমীতে এটাই দেওয়ার প্রাচীন রীতি। সেই রীতি আজও রয়েছে ঝাড়গ্রামের জামবনির চিলকিগড়ের গড় জঙ্গলের ভেতরে অবস্থান করা দেবি কনকদুর্গার। চিল্কিগড় রাজাদের প্রতিষ্ঠিত কনকদুর্গার পুজো হয় দুর্গা মন্ত্রে। মন্দিরের পুরোহিত কৌশিক ষড়ঙ্গি বলেন, ‘নবমী বাদে দেবীর দৈনিক পুজোর অন্নভোগ হয় আমিষ। কনকদুর্গার মন্দিরে রীতি অনুযায়ী অষ্টমীর রাতে একটি পাঁঠাকে নিশাবলি দেওয়া হয়। নবমীতে হয় মোষ বলি। এদিকে অষ্টমীর রাতে বলি দেওয়া পাঁঠার মাংস মাটির হাঁড়িতে নিয়ে সেদ্ধ করা হয়। পরে সেই পাত্র-সহ মাংস বিরাম কক্ষে রেখে দেওয়া হয়। নবমীর হোমের পর তার মুখ খুলে দেওয়া হয়। একে প্রথা অনুযায়ী বলা হয় বিরাম ভোগ। লোকশ্রুতি রানি গোবিন্দমণি এই ভোগ প্রবর্তন করেন। মন্দিরের পুরোহিত কৌশিক ষড়ঙ্গি বলেন, ‘সমস্ত নিয়মকানুন মেনে এবারও পুজো হচ্ছে।’ গড়জঙ্গলে ঘেরা পর্যটন কেন্দ্র চিলকিগড়ের কনকদুর্গার পুজো দেখতে দূরদূরান্তের বহু মানুষ ছুটে আসেন। দেবী কনকদূর্গার প্রতিষ্ঠা বা পুজো প্রায় পাঁচশো বছরের প্রাচীন। বাংলা ১৩৪৪ সালে পুরানো বিষ্ণু মন্দিরের পাশেই চিলকিগড়ের রাজা জগদীশচন্দ্র ধবলদেব নতুন মন্দিরটি গড়ে তোলেন। আগের সেই সোনার মূর্তি পরবর্তী কালে চুরি যায়। এরপর অষ্টধাতুর মূর্তি প্রতিষ্ঠা করা হয়। সে-মূর্তিও কয়েকবছর পর ২০০৪ সালে চুরি হয়ে যায়। ওই বছর বর্তমান অষ্টধাতুর মূর্তিটি বসানো হয়। পুরনো প্রথা মেনে এখনও চিলকিগড় রাজার প্রাচীন খাঁড়াকে সামনে রেখে ও ডুলুংয়ের জল এনে এই পুজোর সূচনা হয়। সারা বছর এখানে দেবী কনকদুর্গার স্থায়ী মন্দিরে দৈনিক পুজোর চল রয়েছে। গত দুবছর করোনাবিধির জন্য পুজোর সেই আনন্দে হয়তো ছেদ পড়েছিল। এবার প্রকৃতির আপন হাতে সাজানো মণ্ডপে পুজো ঘিরে আবার আনন্দ উন্মাদনা।