দিচ্ছে ডাক লেহ-লাদাখ

লেহ-লাদাখে বেড়ানোর স্বপ্ন প্রত্যেকের। এই পর্যটনকেন্দ্র দেয় স্বর্গসুখ। এখানকার অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য হাতছানি দিয়ে ডাকে পর্যটকেদের। পুজোর ছুটিতে দলবেঁধে বেড়িয়ে আসতে পারেন। লিখলেন অংশুমান চক্রবর্তী

Must read

পৃথিবীর বুকে স্বর্গসুখ পেতে চান? ঘুরে আসুন লেহ-লাদাখ। অবস্থান হিমালয় পর্বতমালায়। উঁচু উঁচু পাহাড়, বরফে ঢাকা চূড়া, শ্যামল উপত্যকা, মেঘহীন আকাশ, শীতল মরুভূমি, সবমিলিয়ে এখানকার অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পর্যটকেদের হাতছানি দিয়ে ডাকে। লেহ-লাদাখের (Leh- Ladakh) হিমশীতল আবহাওয়া যথেষ্ট উপভোগ্য ও স্বাস্থ্যকর। তাই তো ছোট-বড় নানারকম বাধা উপেক্ষা করে ছুটে যান বহু মানুষ। কী ভাবছেন? পুজোর ছুটিতে ঘুরে আসবেন? যদি যেতেই হয়, যান হাতে বেশ কিছুদিন সময় নিয়ে। কারণ তাড়াহুড়ো করে অন্তত লেহ-লাদাখ (Leh- Ladakh) ঘুরে দেখা উচিত হবে না।

কীরকম হতে পারে সফরসূচি? কী কী দেখবেন? প্রথম দিন লেহতে পা রেখে হোটেলের ঘরে সারাদিন বিশ্রাম। মানিয়ে নিতে হবে পরিবেশের সঙ্গে। তাতে পরের দিনগুলিতে যত উঁচুতে উঠবেন, দ্রুত সেই আবহাওয়া এবং উচ্চতার সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারবেন। প্রথমদিন একান্তই বোর ফিল করলে ঘুরে আসতে পারেন লেহ মার্কেট থেকে। রকমারি পশরা। নেড়েঘেঁটে দেখতে পারেন। কিনে নিতে পারেন পছন্দ হলে।
মূল সফর শুরু দ্বিতীয়দিন। ব্রেকফাস্ট সেরে চেপে বসবেন গাড়িতে। সাঁইসাঁই করে ছুটবে গাড়ি লেহ-শ্রীনগর হাইওয়ে দিয়ে। দুচোখ ভরে আস্বাদন করবেন প্রকৃতির অপরূপ রূপ। এই পথেই দেখবেন ভারতীয় সেনাবাহিনী হল অফ ফেম এবং গুরুদুয়ারা পাথর সাহিব। পাশাপাশি দেখবেন লেহ প্রাসাদ, শান্তি স্তূপা, আলচি মঠ। এইগুলো দেখতে দেখতেই নেমে আসবে রাত।
তৃতীয়দিন নুব্রা ভ্যালির উদ্দেশ্যে রওনা। যেতে হবে খারদুংলা পাস দিয়ে। খারদুংলা পাস লাদাখের সর্বোচ্চ জায়গাগুলির মধ্যে একটি। লেহ থেকে খারদুংলা পাসের দূরত্ব মোটামুটি ৪০ কিলোমিটার। উচ্চতার কারণে পর্যটকরা এখানে অক্সিজেনের অভাব অনুভব করতে পারেন। অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দূর করে দেবে সমস্ত ক্লান্তি।
ফিরি নুব্রা প্রসঙ্গে। নুব্রা উপত্যকা লাদাখের বাগান নামে পরিচিত। নুব্রা মানে ফুলের উপত্যকা। উপত্যকাটি গোলাপি এবং হলুদ বুনো গোলাপ দিয়ে সাজানো। সৌন্দর্য এককথায় অবর্ণনীয়।
লেহতে আছে একটি নয়তলা প্রাসাদ। এই প্রাসাদটি পর্যটকদের আকৃষ্ট করে। এখানে বেশ কিছুক্ষণ কাটিয়ে যাওয়া যায় হান্ডার গ্রাম ও মঠ। উট সাফারি করতে কোনওমতেই ভুলবেন না।
লাদাখের একটি পাহাড় ম্যাগনেটিক হিলস নামে পরিচিত। এই পাহাড়ে গাড়ি নিচে নামার পরিবর্তে উপরের দিকে উঠে যায়। তাই এর নাম ম্যাগনেটিক হিলস। ঘুরে দেখা যায় পাহাড়টি। রাতটা থাকতে হবে নুব্রা ভ্যালিতে। রাতেরবেলা মায়াজাল বিস্তার করে প্রকৃতি।
চতুর্থ দিন গন্তব্য তুর্তুক। অপূর্ব তুর্তুক উপত্যকা আপনার মনের মধ্যে এক অদ্ভুত আনন্দের জন্ম দেবে। একটা সময় এই জায়গায় ছিল সিল্ক রোড। যেটা ব্যবহার করা হত বাণিজ্যিক পণ্য পরিবহণে। এখানেই প্রকৃতির বুকে কেটে যাবে সারাদিন।

আরও পড়ুন-বাকিংহাম প্যালেসে শেষ শ্রদ্ধা আমজনতার

পঞ্চম দিন ভোর ভোর বেরিয়ে পড়তে হবে প্যাংগংয়ের উদ্দেশ্যে। প্যাংগং হল ১৪,২৭০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত একটি ১৩৪ কিলোমিটার দীর্ঘ নোনা জলের হ্রদ। হ্রদের পূর্ব দিকটি তিব্বতের এবং পশ্চিম দিকটি ভারতের অন্তর্গত। সবচেয়ে চওড়া জায়গাটি ৫ কিলোমিটার বিস্তৃত। এখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশ অতি মনোরম। ছড়িয়ে রয়েছে শীতের আমেজ। লেকের জল ঘন নীল। তাকালেই চোখের আরাম। মনে হবে যেন কোনো শিল্পীর তুলিতে আঁকা। এখানে হয়েছে বেশকিছু সিনেমার শুটিং। লেকের ধারে ঘুরতে ঘুরতেই কেটে যাবে সারাদিন। কাছাকাছি আছে হোটেল। রাতে সেখানেই নিতে হবে আশ্রয়।
পরের দিন ভোরবেলা লেকের উপর সূর্যোদয় দেখে লেহর উদ্দেশ্যে রওনা দিতে হবে। এই পথেই দেখবেন থিকসে মনাস্ট্রি এবং শে প্যালেস। লেহ পৌঁছবেন রাতে। হোটেলে সেই রাতটুকু কাটিয়ে পরের দিন সকালে যাত্রা শুরু করবেন আপন বাসায় ফেরার জন্য।
দিন পেরোবে, পেরোবে মাস, বছর। লেহ-লাদাখ ভ্রমণের স্মৃতি মনের মণিকোঠায় থেকে যাবে আজীবন।

কীভাবে যাবেন?
ট্রেনে অথবা বিমানে পৌঁছে যান দিল্লি। সেখান থেকে বিমানে লেহ। দিল্লি থেকে রেলপথে সিমলা মানালি হয়েও লেহ যাওয়া যায়। সেটা সময় সাপেক্ষ। তবে খরচ অনেক কম পড়ে। সঙ্গে নেবেন খাবারদাবার ওষুধপত্র। দীর্ঘ রেলযাত্র সহ্য করার মতোন মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে বের হবেন।

কোথায় থাকবেন?
লেহ-লাদাখের (Leh- Ladakh) বিভিন্ন জায়গায় আছে বেশকিছু হোটেল। থাকা খাওয়ার কোনও সমস্যা হবে না। বিভিন্ন সংস্থা ট্যুর অ্যারেঞ্জ করে। কম খরচে লেহ-লাদাখ বেড়ানোর জন্য স্পেশ্যাল ট্যুর প্যাকেজ নিয়ে এসেছে ইন্ডিয়ান রেলওয়ে। যোগাযোগ করতে পারেন তাঁদের সঙ্গে। দলবেঁধে যেতে পারেন নিজেরাও।

Latest article